Home শিক্ষা ও সাহিত্য ঈমান-আক্বিদার হেফাজত  ও আদর্শ সমাজ গড়তে নূরানী শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে: মুফতি...

ঈমান-আক্বিদার হেফাজত  ও আদর্শ সমাজ গড়তে নূরানী শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে: মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী

প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী। ছবি- উম্মাহ।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মহাপরিচালক ও নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী বলেছেন, ইসলাম নির্মূলবাদী চক্র দেশে-বিদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে ও মুসলমানদেরকে ঈমানহারা করার জন্য অনেক প্রজেক্ট ও ষড়যন্ত্র পরিচালনা করে যাচ্ছে, অনেক টাকা-পয়সা ব্যয় করছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা যদি মুসলিম উম্মাহর ভবিষ্যত প্রজন্মকে শিশুকালেই কুরআন-হাদীস ও ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা দিতে পারি, তাহলে বড় হওয়ার পর তাদের সামনে যতো লোভলালসা ও অর্থকড়ি হাজির করা হোক, তারা কখনোই বিভ্রান্ত হবে না, ঈমানহারা হবে না এবং শত ঝড়ঝাপ্টার মধ্যেও তারা ঈমানের উপর অটল ও অবিচল থাকতে পারবে, ইনশাআল্লাহ। তাই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নূরানী মাদ্রাসা ও ফোরকানিয়া মক্তব প্রতিষ্ঠা করে মুসলিম শিশুদের মাঝে দ্বীনের বুনিয়াদী শিক্ষা জারি রাখতে হবে।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ পরিচালিত ২০২৩ইং শিক্ষাবর্ষের কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী এসব কথা বলেন। এর আগে বেলা ১২টায় বোর্ডের হাটহাজারীস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলপ্রকাশ করেন বোর্ড চেয়ারম্যান ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী এবং মহাসচিব ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন। এ সময় বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্তা ও বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও মিডিয়ার স্থানীয় সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইনে কেন্দ্রিয় পরীক্ষার ফলপ্রকাশ করছেন বোর্ড চেয়ারম্যান আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী ও মহাসচিব আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন।

ফলপ্রকাশের পর প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী বলেন, একটা কথা মনে পড়লো, আজকে থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগের ঘটনা। ভারতের মাধ্যে যতো মুসলমান আছেন এককভাবে পৃথিবীর কোন দেশেই ওই পরিমাণ মুসলমান নাই। তখনকার রিপোর্ট ছিল ভারতে ৪০ কোটির মতো মুসলমান আছে। যদিও ভারত সরকার সবসময় সে দেশের মুসলিম জনসংখ্যা কম করে দেখাতে তৎপর থাকে। যে সমাবেশের কথা বলছি, তখন সেখানে ভারতের বড় বড় উলামায়ে কেরাম, যেখানে তখনকার জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি উপস্থিত ছিলেন, আরো অনেক শীর্ষ উলামায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আমি অধমও উপস্থিত ছিলাম। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদেরকে ঈমানহারা করার জন্য যতো উদ্যোগ চলছে, যতো হামলা হচ্ছে, এসব প্রতিরোধে কী করা যায়, এই নিয়ে কী করা যায়, সে নিয়ে উলামা সমাবেশে আলোচনা চলছিল। তখন সেই মজলিসে একটা প্রস্তাব পাশ হলো যে, দেশব্যাপী জায়গায় জায়গায় মক্তব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে সময়ে জমিয়তে উলাময়ে হিন্দের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয় যে, ভারত বর্ষের জায়গায় জায়গায় মক্তব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কারণ, নতুন প্রজন্মের শুরুটা যদি ইসলামের আলোকে গড়ে তোলা যায়, তাহলে তাদের ঈমানের ভিত্তি মজবুত হবে এবং তাদেরকে দ্বীন থেকে ষড়যন্ত্রকারীরা সহজে বিচ্যুত করতে পারবে না।

তিনি বলেন, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে সেই তখন থেকে শুরু হওয়া মক্তব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগটা ভারতবর্ষে এখনো চলমান আছে। যেসব এলাকায় মক্তব না থাকার তথ্য অথবা মক্তব প্রতিষ্ঠার চাহিদা আসে, জমিয়ত থেকে উদ্যোগ নিয়ে সেখানে মক্তব প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমি নিজেও এই উদ্যোগ অবলোকন করেছি যে, জমিয়ত থেকে সকল খরচ নির্বাহ করে মক্তব প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং মক্তবের শিক্ষকদের বেতন-ভাতাও সরবরাহ করা হয়।

আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী আরো বলেন, আমাদের দেশে যে নূরানী শিক্ষার ধারা চালু হয়েছে, আমি মনে করি এটা আমাদের আকাবির হযরাতগণের সেই মক্তব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগেরই ধারাবাহিকতা। আজকে এই তথ্য শুনে আমার খুবই খুশি লাগছে যে, দেশব্যাপী নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশের আওতায় পরিচালিত মাদ্রাসাসমূহে বছরে প্রায় ৩৯ লাখ মুসলিম শিশু নূরানী পদ্ধতিতে ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে। সারা দেশে হাজার হাজার নূরানী মাদ্রাসার মাধ্যমে মুসলিম শিশু সন্তানরা কুরআন, হাদীস ও ইসলামের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার প্রাথমিক পাঠও নিতে পারছে এবং সেই মতে অনুশীলনও করছে। এতে করে আদর্শ ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ এবং দেশ গড়ার কাজে নূরানী মাদ্রাসাসমূহ বিশাল অবদান রেখে চলেছে।

তিনি বলেন, আমাদের বোর্ড মহাসচিব মুফতি জসিমুদ্দীন সাহেব আমাকে জানালেন যে, সারা দেশে প্রায় ৮০ হাজার গ্রাম আছে। নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ডের লক্ষ্য হচ্ছে, এই সকল গ্রামে অর্থাৎ ৮০ হাজার নূরানী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা। তাঁর এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের কথা শুনে আমার খুবই ভাল লেগেছে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা এই উদ্যোগকে কবূল করুন; আমিন।

আরও পড়তে পারেন-

তিনি বলেন, আজকাল দেশে-বিদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে ও মুসলমানদেরকে ঈমানহারা করার জন্য ইসলাম নির্মূলবাদী চক্র অনেক প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে, অনেক টাকা-পয়সা ব্যয় করছে। নানা ধরণের ষড়যন্ত্র করে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা যদি ভবিষ্যত প্রজন্ম তথা মুসলমানদের সন্তানদেরকে শিশুকালেই কুরআন-হাদীস ও ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা দিতে পারি, তাহলে বড় হওয়ার পর তাদের সামনে যতো লোভলালসা ও অর্থকড়ি হাজির করা হোক, তারা কখনোই বিভ্রান্ত হবে না, ঈমানহারা হবে না। তারা ঈমান-আক্বিদা ও দ্বীনের উপর কায়েম থাকবে, ইনশাআল্লাহ।

এ পর্যায়ে আল্লাহ তাআলার শোকরিয়া আদায় করে আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী বলেন, বাংলাদেশে নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ডের উদ্যোগে শিশুদের জন্য কুরআন-হাদীস ও ইসলামী তাহযিব-তামাদ্দুন সমৃদ্ধ যে শিক্ষাক্রম পরিচালিত হচ্ছে, এটা অত্যন্ত মূল্যবান ও জরুরি উদ্যোগ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা এই উদ্যোগকে কবুল ও বরকতময় করুন। বিশেষ করে চলতি শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক চূড়ান্ত পরীক্ষার আজ যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তাতে শিক্ষার্থীদের ৯৮% এর সফলতা অনেক বড় অর্জন। এতে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বোর্ডের বিশাল কৃতিত্ব প্রমাণ করে। কারণ, এমন ফলাফল অর্জন সহজসাধ্য কাজ নয়। এ জন্য ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অভিবাক ও বোর্ড সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক মেহনত ও সাধনা করতে হয়েছে। আমি তাদের সকলকে অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাই।

আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী বলেন, আমি এ পর্যায়ে নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ডের নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সাধারণ তাওহিদী জনতার প্রতিও আহ্বান জানাবো, এই শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো এগিয়ে নিতে আন্তরিকতার সাথে যার যার অবস্থান থেকে গভীর আন্তরিকতা নিয়ে বিরামহীনভাবে কাজ করে যেতে হবে। পাশাপাশি যেসব এলাকা বা গ্রামে এখনো নূরানী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হয়নি, সেসব জায়গায় নূরানী মাদ্রাসা ও ফোরকানিয়া মক্তব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা সাধনা করে যেতে হবে। এতে করে আমাদের পরকালীন স্থায়ী যিন্দেগী যেমন সফল হবে, তেমনি আমাদের সন্তানদের পরকালীন জীবনকেও সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সকলের মাঝে এ বিষয়ে মজবুত হিম্মত ও বরকতপূর্ণ হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমিন।

বোর্ডের সিনিয়র প্রশিক্ষক মাওলানা কামরুল ইসলামের সঞ্চালনায় ও পুস্তক হিসাব নিয়ন্ত্রক মাওলানা হেলাল উদ্দিনের পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বোর্ডের সহ-সভাপতি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতি মুহাম্মদ আলী কাসেমী।

উপস্থিত ছিলেন- বোর্ড সহ-সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান, সাংগঠনিক সচিব মাওলানা জমির উদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর মুহাম্মদ আনিস, অর্থ সচিব হাফেজ মাওলানা ইসমাইল, সহ অর্থ সচিব মাওলানা ওসমান ফয়েজী, সদস্য মাওলানা ইউনুস, মাওলানা ওসমান শাহানগরী।

প্রশিক্ষক ও পরিদর্শকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মাওলানা আবুল হাসেম, মাওলানা সলিমুল্লাহ, মাওলানা এমদাদুল্লাহ, মাওলানা মনজুরুল ইসলাম-মনজুর, মাওলানা নুরুল আবসার মাস্টার আনিসুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।

এ সময় প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও স্থানীয় সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ দেশব্যাপী নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ-এর কার্যক্রম এবং কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষা গ্রহণ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য ও সংক্ষিপ্ত চিত্র উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।