Home জাতীয় নূরানী তা’লিমুল কুরআন বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৭৪৪ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে

নূরানী তা’লিমুল কুরআন বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৭৪৪ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে

ছবি- উম্মাহ।

নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ পরিচালিত ২০২৩ইং শিক্ষাবর্ষের কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষায় সারাদেশে সর্বোচ্চ মেধা তালিকা ‘টপ-২০’ তে উত্তীর্ণ ১,৭৪৪ জন শিক্ষার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কৃত করা হবে। আজ (৬ ফেব্রুয়ারী) মঙ্গলবার বোর্ডের হাটহাজারীস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দের অংশগ্রহণে এক সভার মাধ্যমে পুরস্কার বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।

বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুঈনে মুহতামিম আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন-এর সভাপতিতে বোর্ড মিলনায়তনে সকাল ১১টায় এই পুরস্কার বিতরণী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী।

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বোর্ডের সাংগঠনিক সচিব মাওলানা জমিরুদ্দীন, সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা ওচমান ফয়জী, সহসভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, অর্থসচিব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল, পুস্তক সম্পাদক মাওলানা মীর মুহাম্মদ আনিস, অফিস সেক্রেটারী, সিনিয়র প্রশিক্ষক ও পরিদর্শক মাওলানা আবুল হাশেম প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেছেন বোর্ডের সিনিয়র প্রশিক্ষক ও পরিদর্শক মাওলানা এমদাদুল্লাহ সালাম।

পুরস্কার বিতরণী সভায় বোর্ড চেয়ারম্যান আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী বলেছেন, গত দুই যুগ আগেও বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম ও মহল্লায় ফোরকানিয়া মক্তব শিক্ষাব্যবস্থা চালু ছিল। এতে প্রায় মুসলিম সন্তানরা পবিত্র কুরআন ও ইসলামের মৌলিক শিক্ষা শিশুকালেই আত্মস্ত করে নিতো। এর এত ব্যাপক উপকারিতা ছিল যে, এসব শিশুরা বড় হয়ে কখনো ইসলাম ও আল্লাহ-রাসূলের বিরুদ্ধে কথা বলতো না। এদেরকে নাস্তিক্যবাদিরা সহজে খপ্পরে ফেলতে পারতো না। কিন্তু ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদিরা সাধারণ মুসলমানদের মজবুত ঈমানী শক্তির এই গুঢ়তত্ত্ব অবলোকন করে ফোরকানিয়া মক্তব শিক্ষাকে টার্গেট করলো। সকাল ১০টার স্কুল সময়কে তারা ভোর বেলায় নিয়ে এসে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি চালু করল। ক্রমান্বয়ে ভোর বেলার মক্তব শিক্ষা সংকুচিত হতে হতে অনেকটা হারিয়ে গেল। আলহামদুলিল্লাহ, এরপর নূরানী শিক্ষাব্যবস্থা চালু হলে এই ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। সারা দেশে হাজার হাজার নূরানী মাদ্রাসার মাধ্যমে মুসলিম শিশু সন্তানরা কুরআন, হাদীস ও ইসলামের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার বাংলা, অংক ও ইংরেজীর প্রাথমিক পাঠও নিতে পারছে। আদর্শ সমাজ ও দেশ গড়ার কাজে এভাবে নূরানী মাদ্রাসাসমূহ বিশাল অবদান রেখে চলেছে।

গত ২০ ডিসেম্বর বুধবার নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ পরিচালিত ২০২৩ইং শিক্ষাবর্ষের কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। ছবি- উম্মাহ।

আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারের কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থীর নাম সর্বোচ্চ মেধা তালিকায় এসেছে, তাদেরকে পুরস্কৃত করার মাধ্যমে বোর্ড অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরকেও মনোযোগের সাথে পড়াশোনায় আরো বেশি আত্মনিবেশ করতে উৎসাহিত করছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পুরস্কৃত হচ্ছে, আমি সেসব শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দকে অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাই। আশা করছি এতে অন্যান্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও উৎসাহিত হবেন।

আরও পড়তে পারেন-

অনুষ্ঠানে বোর্ড মহাসচিব আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের শহর, উপশহর, জেলা-উপজেলা সদরসহ গ্রামগঞ্জে নূরানী পদ্ধতির সিলেবাস অনুসরণ করে প্রায় ২৫ হাজারের অধিক প্রাথমিক নূরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। যার সিংহভাগ নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ এর আওতায় নিবন্ধিত ও পরিচালিত। বর্তমানে শুধুমাত্র এই বোর্ডের আওতায় পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫-১০ বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৮ লক্ষের অধিক। এ বিশাল জনগোষ্ঠিকে দ্বীনি ও জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড অসমান্য অবদান রেখে যাচ্ছে।

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন আরো বলেন, সারাদেশে এবার সর্বোচ্চ মেধাতালিকা “টপ-২০” তে উত্তীর্ণ ১,৭৪৪ জন শিক্ষার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। এতে বোর্ডের প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই পুরস্কারের উদ্দেশ্য হচ্ছে সকল শিক্ষার্থীকে পড়াশোনায় আরো মনোযোগী হতে উৎসাহিত করা এবং ছাত্রদের মাঝে প্রতিযোগিতা তৈরি করে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা। আলহামদুলিল্লাহ, এর ইতিবাচক ফলাফল আমরা লক্ষ করছি।

তিনি এবার  নূরানী বোর্ডের কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষায় ৯৮.৩৮% পাশের হারে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এই গৌরবময় ফলাফলের জন্য বোর্ড আওতাভুক্ত মাদ্রাসাসমূহের পরিচালকসহ সকল শিক্ষককে আমি কৃতিত্ব দেব। পাশাপাশি নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ডের কর্মকর্তা ও পরিদর্শকগণকেও মোবারকবাদ জানাবো, যাঁরা নিরবিচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের একাডেমিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ও শিক্ষার মানোয়ন্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন।

সভায় আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন উপস্থিত শিক্ষবৃন্দের প্রতি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের রাযী-খুশী ও দ্বীনি খিদমত মনে করে গভীর আন্তরিকতা ও আত্মত্যাগী মানসিকতা নিয়ে পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনাদের এই ত্যাগের উত্তম পুরস্কার দুনিয়াতে দেওয়া সম্ভবপর নয়। পরকালে অবশ্যই এর উত্তম বিনিময় পাবেন। আপনারা যে ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কষ্ট স্বীকার করে শিশুদেরকে উত্তম শিক্ষা ও আদর্শ দিয়ে গড়ে তুলছেন, এটা ইসলাম, উম্মাহ ও দেশের জন্য বড় খিদমত হিসেবে বিবেচিত। আপনাদের ভূমিকা ও অবদান মহান।

সভায় বোর্ডের হাটহাজারী অঞ্চলের মাদ্রাসাসমূহের যিম্মাদারদের হাতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কার তুলে দেন বোর্ডের চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। আজকের সভার পর মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ ছাত্রদের পুরস্কার সারা দেশে বোর্ডের আঞ্চলিক ও জেলাভিত্তিক কার্যালয়ের মাধ্যমে বিতরণ শুরু হবে।

উল্লেখ্য, বিগত ২০২৩ খ্রি. শিক্ষাবর্ষে দেশব্যাপী ২ হাজার ৮৮৯টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় বোর্ডের আওতাভুক্ত ৯,৫৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬ লাখ ৬২ হাজার ১৪৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। গড় পাশের হার ৯৮.৩৮%। পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৯,৫৫০ জন। সর্বোচ্চ মেধা তালিকা ‘টপ-২০’ এ স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে ১ হাজার ৭৪২ জন। গত ২০ ডিসেম্বর বুধবার এই ফল প্রকাশ করা হয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।