Home জাতীয় বিএনপিতে শুরু হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান

বিএনপিতে শুরু হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান

বিএনপিতে শিগগিরই শুরু হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন-পূর্ব আন্দোলনে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে দলের সব পর্যায়ের কমিটি। এরই মধ্যে ছাত্রদল-যুবদলের কমিটি ভেঙে দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জেলাপর্যায়ে নতুন কমিটি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে আসন্ন রমজান মাস থেকে। রমজান মাস দলটি সংগঠন পুনর্গঠনের মাস হিসেবে কাজে লাগাতে চায়। পাশাপাশি বিএনপিতে ফিরতে ইচ্ছুক নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে সিরিজ বৈঠকে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন জনগণ বর্জন করেছে। সরকার পরিবর্তনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত না হলেও হতাশার কোনো সুযোগ নেই। নতুন করে ফের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ কারণেই দলকে নতুন নেতৃত্বে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।

মাঠের নেতারা বলেছেন, দল পুনর্গঠন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে এ উদ্যোগ তখনই শতভাগ সফল হবে যখন যোগ্য ও ত্যাগীদের নেতৃত্বে আনা হবে। আর যদি পকেট কমিটি করা হয়, তা হলে তার সুফল দল পাবে না।

বিএনপি এক বছরের বেশি ধরে রাজপথে আন্দোলন করলেও চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। প্রত্যাশিত হারে নেতাকর্মীরা রাজপথে না নামায় গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি থেকে প্রথম ধাক্কা খায় দলটি। পরে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতে সেটা প্রকাশ্যে চলে আসে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের পর হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে নামে দলটি। কিন্তু পুলিশের সাথে সংঘর্ষের জেরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। দলটির দাবি, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তাদের ২৬ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় গ্রেফতার এড়াতে বাকি নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। ঘুরেফিরে অল্প কিছু নেতা হরতাল-অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করেন। এ চিত্র রাজধানী ঢাকা থেকে দলের তৃণমূল পর্যন্ত সর্বত্র। হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও নেতাকর্মীরা প্রত্যাশিত হারে মাঠে নামেনি। এর মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি সামনে চলে আসে, যা হাইকমান্ডের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে একপর্যায়ে জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট বর্জনের আহ্বান জানায় বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির আন্দোলন ও বর্জনের মধ্যেই গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। বিএনপির দাবি, তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ভোট বর্জন করেছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারের নৈতিক পরাজয় এবং তাদের নৈতিক বিজয় হয়েছে। তবে রাজপথের কর্মসূচিতে সরকারের পতন না হওয়ায় নির্বাচনের পরপরই আন্দোলনের সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন শুরু করে বিএনপির হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে এই পর্যালোচনা শেষ করেছে দলটি।

বিএনপির সিদ্ধান্ত হচ্ছে ছাত্র ও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়া হবে। কারণ এই দু’টি সংগঠনের যারা নেতৃত্বে আছেন, আন্দোলনে তাদের অধিকাংশের পারফরম্যান্সে হাইকমান্ড তেমন সন্তুষ্ট নয়। দলের মূল্যায়ন, বিক্ষিপ্তভাবে পাঁচ-দশ জন নিয়ে পৃথক মিছিল হলেও একত্রে মাঠে নামতে পারেনি গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সংগঠনের নেতারা। সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে সমন্বয় ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে এমনটি হয়েছে বলে দল মনে করে। এ ছাড়া জেলা নেতাদের সাথেও কেন্দ্রীয় নেতাদের তেমন সমন্বয় ছিল না, যেটা নির্বাচনের পরে ধারাবাহিক জুম মিটিংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে তারা অভিযোগ করেন।

জানা গেছে, যুব ও ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃত্বে যারা আছেন নতুন কমিটিতে তাদের রাখার সম্ভাবনা কম। একেবারে নতুন নেতৃত্ব আনা হতে পারে। এর প্রাথমিক প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। যুবদলের নতুন কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সাবেক ছাত্রনেতারা আসতে পারেন, যারা এখন বিএনপির নির্বাহী কমিটির কম গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন কিংবা এ মুহূর্তে অঙ্গসংগঠনের কমিটিতে নেই। এর মধ্য দিয়ে রাজপথে সক্রিয় থাকা সাবেক ছাত্রনেতাদের ভাগ্য খুলতে পারে। যুবদলের মধ্যম সারির নেতাদের মধ্য থেকেও নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে।

অন্য দিকে ছাত্রদলের কমিটি ইলেকশনে না সিলেকশনে গঠিত হবে, শীর্ষ পদের জন্য সর্বনিম্ন কোনো শিক্ষাবর্ষ রাখা হবে, বিবাহিতদের জন্য সুযোগ থাকবে কি না- সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপযুক্ত পরিবেশ থাকলে ঢাকা মহানগর, ঢাকা জেলা ও মহানগরের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি রয়েছে, তাদের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন করার আলোচনা রয়েছে; অন্যথায় সিলেকশনে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে।

আরও পড়তে পারেন-

সারা দেশে বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। দলের মূল্যায়ন, আন্দোলনে এগুলোর মধ্যে ২০-২৫টি জেলার পারফরম্যান্স সন্তোষজনক ছিল না। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কেবল এসব জেলা ও মহানগরে দল ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি ভেঙে আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয়দের দিয়ে কেন্দ্র থেকে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও ওই কমিটির নেতারা আন্দোলনে সক্রিয় থাকলে সেই কমিটি বিলুপ্ত করা হবে না।

এ দিকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা কারণে বিভিন্ন সময় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়া নেতাদেরও দলে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড। এ ক্ষেত্রে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে আন্দোলনে যেসব নেতা নিজেরা সরাসরি মাঠে সক্রিয় ছিলেন কিংবা তাদের তত্ত্বাবধানে অনুসারী নেতাকর্মীরা রাজপথে ছিল এবং আন্দোলনজুড়ে কেন্দ্রের সাথে সমন্বয় রক্ষা করেছেন, তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। তাদেরকে পদোন্নতি দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে শূন্য পদগুলোও পূরণের চিন্তা করছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রেও যোগ্যদের পদ প্রাধান্য দেয়া হবে বলে জানা গেছে।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।