আগামী কাল (২০ ডিসেম্বর) শুক্রবার রাজধানী ঢাকার অন্যতম স্বনামধন্য দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খিলগাঁও তিলপাপাড়া মদীনাতুল উলূম ইসলামীয়া মাদ্রাসার উদ্যোগে হাদীসে মুসালসালের মোবারক দরস অনুষ্ঠিত হবে। দরস শুরু হবে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে।
হাদীসে মুসালসাল-এর দরস প্রদান করবেন দারুল উলূম দেওবন্দের শায়খুল হাদীস আল্লামা আবদুল হক আযমী (রহ.) এবং ভারতের মাজাহেরুল উলূম সাহারানপুরের শায়খুল হাদীস শায়েখ ইউনুস (রহ.)এর যৌথ ইজাযতপ্রাপ্ত প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা তাজুল ইসলাম আশরাফী (দা.বা.)।
উল্লেখ্য, হযরত মাওলানা তাজুল ইসলাম আশরাফী (দা.বা.) বরিশালের বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া মাহমূদিয়া মাদ্রাসার সাবেক শায়খুল হাদীস হিসেবে দীর্ঘ দিন দরস দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি রাজধানী ঢাকার বাড্ডাস্থ জামিয়া মিফতাহুল উলূম মাদ্রাসায় শায়খুল হাদীসের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি তিলপাপাড়া মদীনাতুল উলূম মাদ্রাসার শায়খুল হাদীসের দায়িত্বে থেকে দীর্ঘ দিন ধরে সহীহ বুখারী শরীফের দরস দিয়ে আসছেন।
তিলপাপাড়া মদীনাতুল উলূম ইসলামীয়া মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, আগামী কাল শুক্রবার হাদীসে মুসালসালের দরস উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজধানা ঢাকার বিভিন্ন মাদ্রাসার তাকমিলুল হাদীস, মিশকাত ও তাখাসসূসাত জামাতের ছাত্রদের মাঝে উক্ত দরসে শরীক হওয়ার বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হাদীসে মুসালসালের দরসে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন মাদ্রাসার তাকমিল, মিশকাত ও তাখাসসূসাতের ছাত্রদের অংশগ্রহণকে সহজতর করার লক্ষ্যে তিলপাপাড়া মদীনাতুল উলূম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সেবামূলক সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। দরসে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য তিলপাড়া মদীনাতুল উলূম ইসলামিয়া মাদ্রাসার পক্ষ থেকে সকালের নাস্তা এবং দুপুরের খাবারের ইন্তেজাম করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে তিলপাপাড়া মদীনাতুল উলূম মাদ্রাসার মুহতামিম হযরত হাফেজ মাওলানা ইউনুস ঢালি সাহেব রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের প্রত্যেক দ্বীনি মাদ্রাসার তাকমিল, মিশকাত ও তাখাসসুসাতের শিক্ষার্থীদের প্রতি উক্ত মোবারক দরসে শামিল হওয়ার জন্য বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
জামিয়া মদীনাতুল উলূম তিলপাপাড়া মাদ্রাসার পক্ষ থেকে হাদীসে মুসালসালের উক্ত মোবারক দরসে অংগ্রহণেচ্ছুক শিক্ষার্থীদের প্রতি ০১৮৬৫-৬৭৭১২৭ মোবাইল নম্বরে ফোনকল দিয়ে বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। দরসদান শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করা হবে।
যাতায়াত: দেশের যেকোন স্থান থেকে ঢাকা খিলগাঁও রেলগেট মোড় থেকে ১০০ গজ পূর্ব দিকে এসে ঢাকা হোটেলের সামনে ৮নং কাপড়ের গলির শুরুতে তিলপাপাড়া জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
হাদীসে মুসালসালের পরিচিতি ও ইতিহাস
হাদিসে মুসালসাল হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রতিটি হাদিস প্রথম বর্ণনাকারী থেকে একেবারে শেষ বর্ণনাকারী পর্যন্ত একইভাবে হওয়া বা একই গুণে গুণান্বিত হওয়া৷ অথবা হাদিসে যে আমলের কথা রয়েছে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক বর্ণনাকারী হাদিসটি বর্ণনা করার সময় সাথে সাথে ওই আমল করা ৷
এ ছাড়াও রয়েছে আরো অনেক কথা৷ যেমন- এক হাদিসে আছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেহমানদারীর ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে সব সাহাবাকে পানি ও দুটি খেজুর দিয়ে মেহমানদারী করান৷ এরপর সাহাবায়ে কেরাম রা. ওই হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে তাদের ছাত্রদেরও একইভাবে মেহমানদারী করান৷ এভাবে আসতে আসতে একেবারে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক মুহাদ্দিস তার ছাত্রদের পানি ও দুটি খেজুর দিয়ে মেহমানদারী করান৷
আবার আরেক হাদিসে আছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসাফাহার ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে সাহাবিদের সাথে মুসাফাহা করেন৷ এরপর সাহাবায়ে কেরামও সে হাদিস বর্ণনা করার সময় ছাত্রদের সাথেও মুসাফাহা করেন৷ এভাবে আসতে আসতে একেবারে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক মুহাদ্দিস তার ছাত্রদের সাথে মুসাফাহা করেন৷
এ ধারাবাহিকতা আজও পর্যন্ত প্রত্যেক মুহাদ্দিসের থেকে চালু রয়েছে৷ সেই হিসেবেই দারুল উলুম দেওবন্দেও প্রতি বছর হাদিসে মুসালসালের বিশেষ দরস দেওয়া হয়। দরসের প্রক্কালে মেহমানদারীর হাদিস এলে ছাত্রদের মাঝে দুটি খেজুর ও যমযমের পানি দ্বারা মেহমানদারী করানো হয়৷ মুসাফাহার হাদিস পড়িয়ে ছাত্রদের সাথে মুসাফাহার আমল করা হয়।
বহির্বিশ্বে হাদিসে মুসালসালের প্রচলন বহু পুরাতন৷ তবে হিন্দুস্থানে এর প্রচলন শুরু হয় শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবির সময় থেকে৷ তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান মাদরাসায়ে রহিমিয়ায় শুরু করেন হাদিসে মুসালসালের দরস৷ এরপর থেকেই ভারতে ছড়িয়ে পরে এর প্রচলন৷
শায়েখ যাকারিয়া রহ. ছিলেন সাহরানপুর মাদরাসার শাইখুল হাদিস৷ তিনিও সাহরানপুর মাদরাসায় দরস দিতেন হাদিসে মুসালসালের৷ তার শাগরেদ ছিলেন সাহরানপুরের সাবেক শাইখুল হাদিস আল্লামা ইউনুস রহ. এবং দেওবন্দের সাবেক শায়খে সানি আল্লামা আবদুল হক আজমি রহ. ও বর্তমান শায়খে সানি আল্লামা কমরুদ্দীন আহমাদ৷
এরপর শায়েখ যাকারিয়া রহ.-এর ইন্তেকালের পর সাহরানপুরে শাইখুল হাদিস হন আল্লামা ইউনুস রহ. ৷ দেওবন্দে শায়খে সানি হন আল্লামা আবদুল হক আজমি রহ.৷ এরপর শায়েখ ইউনুস রহ. সাহরানপুরে এবং আবদুল হক আজমি রহ. দেওবন্দে শুরু করেন৷
সেই থেকেই দারুল উলুম দেওবন্দের সাবেক শায়খে সনি আল্লামা আবদুল হক আজমি রহ. প্রতি বছরই দেওবন্দে দরস দিতেন হাদিসে মুসালসাল৷ যিনি প্রায় ৪৫ বছর শায়খে সানি ছিলেন দেওবন্দে৷ গত ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময় তিনি পাড়ি জমান পরপারে৷
শায়খে সানি আল্লামা আবদুল হক আজমি রহ.-এর ইন্তিকালের পর ২০১৮ সালে দেওবন্দে শায়খে সানি হন দেওবন্দের সাবেক নাযেমে তালিমাত আল্লামা কমরুদ্দীন আহমাদ৷ পূর্বের ধারাবাহিকতায় গত বছর তিনিও দিয়েছিলেন হাদিসে মুসালসালের দরস৷ সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরও দরস অনুষ্ঠিত হয়েছে যথাযথভাবেই৷
দারুল উলূম দেওবন্দে হাদীসে মুসালসালের দরসের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও এই দরস দিয়ে আসছেন দারুল উলূম দেওবন্দের শায়খুল হাদীস আল্লামা আবদুল হক আযমী (রহ.) এবং ভারতের মাজাহেরুল উলূম সাহারানপুরের শায়খুল হাদীস শায়েখ ইউনুস (রহ.)এর যৌথ ইজাযতপ্রাপ্ত প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা তাজুল ইসলাম আশরাফী (দা.বা.)।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ