বায়তুল মুকাররাম জাতীয় মসজিদের খতীব মুফতি আব্দুল মালেক বলেছেন, সুন্দর কথা বলা, সুন্দরভাবে বলা কুরআনের নির্দেশনা। এর মাধ্যমে ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্রসহ সকল পর্যায়ে মানুষের মাঝে শান্তি-সম্প্রতি বজায় থাকবে। যে কোনো বিষয়ে কথা বলতে হলে ইনসাফের সাথে সুন্দরভাবে বলতে হবে। কাউকে ঘায়েল করে বা আক্রমণাত্মকভাবে কথা বলা অনুচিত। সৎকাজের আদেশ অসৎকাজ থেকে নিষেধ করার ক্ষেত্রে যে কোনো প্রকার জুলুম করা, আক্রমণাত্মকভাবে ঘায়েল করা, কাউকে গালমন্দ করা বা তিলকে তাল বানিয়ে প্রকাশ করা গুনাহের কাজ। সর্বদা নসিহতের নিয়তে কল্যাণকামী হয়ে সুন্দরভাবে সুন্দর কথা হবে। এর মাধ্যমেই সমাজের সংশোধন হবে।
আজ (৩ জুনায়ারী) শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতীব মুফতি আবদুল মালেক জুমার খুতবাপূর্ব বয়ানে এসব কথা বলেন।
বয়ানে তিনি আরো বলেন, ইনসাফের সাথে সুন্দর কথা সুন্দরভাবে বলার কারণে স্বার্থপর মানুষ যদি কষ্ট পায়, তাহলে গুনাহ হবে না। কিন্তু উপস্থাপনের অসৌন্দর্য বা কথায় মাধুর্যতা বা মার্জিতভাব না থাকার কারণে যদি কেউ কষ্ট পায়, তাহলে এতে গুনাহ হবে। অসুন্দর কথার কারণে দূরত্ব তৈরি হয়, বিভেদ তৈরি হয়; যা অনেক সময় হাতাহাতি বা মারামারির দিকেও নিয়ে যায়। এটি কখনো মুসলমানের কাজ হতে পারে না।
বিশেষভাবে উম্মাহর মাঝে মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে সতর্ক করে মুফতি আবদুল মালেক বলেন, বিদআতের পথে চলতে চলতে কেউ যদি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত এর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, তাকেও হকের পথে দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে আচরণ-উচ্চারণ মার্জিত হতে হবে। তাকে বুঝানোর জন্য দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু তাকে কষ্ট দিয়ে কোন কথা বলা যাবে না। আর যাদের গোমরাহী এতটা কঠিন নয়, যা আহলে সুন্নাহ আল জামাত থেকে তাদেরকে বের করে দেয় না, যা বিভিন্ন মুসলিম দল-উপদলের মধ্যে হয়ে থাকে, তাদেরকে আহলে সুন্নাহল জামাতের পথে আহবানের ক্ষেত্রে আরো বেশি মার্জিত আচরণ করতে হবে। এই বিষয়টির জন্য কুরআনের দুইটি আয়াত খুব ভালোভাবে মনে রাখতে হবে। প্রথমটি হচ্ছে, ১৫ পারার ১৭ নাম্বার সূরা বানি ইসরাইলের ৫৩ নাম্বার আয়াত। এতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন—
وقل لعبادي يقول التي هي أحسن إن الشيطان ينزغ بينهم إن الشيطان كان للإنسان عدوا مبينا
অর্থ: হে নবী আপনি আমার বান্দাদেরকে বলে দিন, তারা যেন এমন কথা বলে, যা অতি সুন্দর। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বৈরিতা সৃষ্টি করে; নিশ্চয় শয়তান মানুষের স্পষ্ট শত্রু।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
দ্বিতীয় আয়াত হচ্ছে সূরা আহযাবের শেষে। তাতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন— يا أيها الذين آمنوا اتقوا الله وقولوا قولا سديدا —অর্থ: হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং ভালো কথা বল। আমাদের ঘরে বাহিরে সকল জায়গার জন্য নির্দেশনা পালন করা অপরিহার্য।
বয়ানে জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল মালেক রজব মাসের ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন। রজব আরবি শব্দ যার অর্থ সম্মানিত। এই মাসকে আল্লাহ তায়ালা বিশেষ চারটি সম্মানিত মাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এই সম্মানিত মাসগুলোতে আল্লাহ জুলুম এবং অন্যায় করতে নিষেধ করেছেন। জুলুম এবং অন্যায় তো সর্বাবস্থায় নিষেধ, তবুও এই সম্মানিত মাসে এর শাস্তি আরো বেড়ে যাবে। তাই সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা জরুরী।
তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম রজব মাস আসলেই রমজানের জন্য দোয়া করতেন এবং রমজানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। সম্মানিত চার মাসের মধ্যে রমজানের নাম নেই, কারণ এটি এমনি সম্মানিত। অনেকের রমজানের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চান, এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হল, রমজানের আলাদা কোন প্রস্তুতি নেই।
তিনি বলেন, একজন মুমিন পুরো বছর যদি ঈমানী জীবন যাপন করে তাহলে সেটাই তার জন্য রমজানের প্রস্তুতি। মুমিনের সব সময় জীবন গুনাহ মুক্ত হবে। গুনাহ থেকে মুক্ত অবস্থায় রমজানকে প্রবেশ করতে হবে। এটাই রমজানের ইস্তেকবাল এবং প্রস্তুতি। পানাহার, পোশাক, লেনদেন সকল কিছু হালাল হওয়া রমজানের প্রস্তুতির অংশ। অনেকে হারাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করেও পারে না, তাদের জন্য আল্লাহর নির্দেশনা হলো—
ومن يتق الله يجعل له مخرجا ويرزقه من حيث لا يحتسب
অর্থাৎ- কেউ যদি আল্লাহর ভয়ে চেষ্টা করে আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন, এবং এবং তাকে অভাবনীয় স্থান থেকে রিজিক দান করবেন। মুমিন হিসাবে তার দায়িত্ব হলো হালালের পথে চলার জন্য চেষ্টা করা।
এছাড়াও রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে কুরআন তিলাওয়াত করা জামাতের সাথে পূর্ণ খতমের সাথে আদায় করা ইত্যাদি বিষয়ক তিনি আলোকপাত করেন।
অনুলিখনে- মুহাম্মাদ লুতফেরাব্বী আফনান
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ