কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরআন ও হাদিসে কোরবানির গুরুত্ব অপরিসীম। ‘কোরবানি’ শব্দটি বাংলায় ব্যবহৃত আরবি ভাষার একটি শব্দ, যার অর্থ নিকটবর্তী হওয়া বা সান্নিধ্য লাভ করা। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোরবানি করল না, সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে।’
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোরবানির দিন কোরবানির চেয়ে উত্তম আমল নেই।’ কিয়ামতের দিন কোরবানির পশুকে শিং, পশম ও খুরসহ পেশ করা হবে এবং কোরবানির জন্তুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহ তায়ালার কাছে তা কবুল হয়ে যায়। তাই তোমরা আনন্দচিত্তে কোরবানি কর।
তবে অনেকেই এ নিয়ে দ্বিধায় পড়েন— ঋণ থাকলে কি কোরবানি দেয়া যাবে?
যাকাত ও কোরবানির জন্য নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা জরুরি। যাকাত আদায়ের জন্য সম্পদ পুরো এক বছর থাকা আবশ্যক, কিন্তু কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে বছর অতিক্রম করা শর্ত নয়। বরং জিলহজের ১০ তারিখ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের সময়ের মধ্যে যেকোনো সময় নিসাবের মালিক হলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যাবে। বছর অতিক্রম হয়েছে কি হয়নি, তা দেখা হবে না। (আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫০৬)
যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কোরবানির দিনগুলোতে সাময়িক ঋণগ্রস্ত থাকে এবং ঋণ পরিশোধের পর তার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে, তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না। তবে যদি ঋণ আদায় করে দিলেও নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি থাকে, তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯২)
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
নেসাব: স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি এবং রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ। স্বর্ণ বা রুপার কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হয়, তবে স্বর্ণ-রুপা উভয়টি মিলে কিংবা এর সাথে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অন্য বস্তুর মূল্য মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে গেলে কোরবানি ওয়াজিব হবে। স্বর্ণ-রুপার অলঙ্কার, নগদ অর্থ, যে জমি বার্ষিক খোরাকীর জন্য প্রয়োজন হয় না এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র— এ সবই কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
অতএব, যদি কারো কাছে এতো সম্পদ থাকে যে, ঋণ আদায় করার পরও নেসাব পরিমাণ সম্পদ প্রয়োজনের অতিরিক্ত অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তার ওপর কোরবানি আবশ্যক হবে। আর যদি এতোটুকু সম্পদ না থাকে, তাহলে কোরবানি আবশ্যক হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬)
ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা শায়খ আহমাদুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘ঋণ থাকা মানেই কোরবানি নিষিদ্ধ নয়।’ বরং বিষয়টি নির্ভর করে ওই ঋণ কী পরিমাণ এবং তা শোধ করার সময় ও সামর্থ্যের ওপর। যদি কারো ওপর এমন কোনো ঋণ থাকে যা খুব শিগগির শোধ করতে হবে এবং সেই ঋণ শোধের পর কোরবানির জন্য অর্থ অবশিষ্ট না থাকে, তাহলে তার ওপর কোরবানি ফরজ হবে না। কিন্তু যদি ঋণ দীর্ঘমেয়াদি হয়, বা শোধ করার সময়সীমা এখনও অনেক বাকি থাকে, এবং সে কোরবানির সামর্থ্য রাখে, তাহলে তার জন্য কোরবানি দেয়া ওয়াজিব হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, কেউ ঋণের মধ্যে থেকেও আর্থিকভাবে সচ্ছল— বাড়ি-গাড়ি আছে, ব্যবসা আছে, আয়ও ভালো। এমন ব্যক্তি যদি ঈদের সময় কোরবানি করতে না চায় শুধুমাত্র ঋণের অজুহাতে, তাহলে সেটা শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে না।’
তিনি মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন কোরবানির ব্যাপারে শরিয়তের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করেন এবং দ্বীন ও দুনিয়ার ভারসাম্য বজায় রেখে সিদ্ধান্ত নেন।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ