মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের নতুন নীল নকশার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। তিনি মনে করেন, পশ্চিমারা কুখ্যাত সাইকস-পিকো চুক্তির নয়া বন্দোবস্ত নিয়ে এগোচ্ছে।
আজ শনিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাদের অঞ্চলে নতুন কোনো সাইকস-পিকো বন্দোবস্তের প্রতিষ্ঠা আমরা মেনে নেব না, যেখানে সীমান্তরেখা টানা হবে রক্ত দিয়ে।”
এসময় তিনি জায়নবাদী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে ইরানের জনগণের অদম্যতার ওপর আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমরা নিঃসন্দেহ—ইরানি জনগণ তাদের পারস্পরিক সংহতি ও কঠিন সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দৃঢ় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে এই দিনগুলো অতিক্রম করবে।”
প্রথম মহাযুদ্ধের সময় তুরস্ক অক্ষশক্তির পক্ষে যোগ দেয়। কিন্তু তারও আগে থেকেই চলছিল ওসমানীয় বা অটোমান সাম্রাজ্যকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে নিতে পশ্চিমাদের গোপন পরিকল্পনা। কিন্তু, তুরস্ক অক্ষশক্তির পক্ষে যোগ দিলে ১৯১৬ সালের ১৬ মে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স লন্ডনে এক গোপন চুক্তি করে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তিটি এশিয়া মাইনর চুক্তি হিসেবে পরিচিত। কূটনীতিক মার্ক সাইকস ও ফ্রাঁসোয়া জর্জ পিকো ছিলেন এর মূল কারিগর। পরবর্তীকালে এই চুক্তিটিই সাইকস-পিকো চুক্তি নামে মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম বিশ্বে কুখ্যাতি লাভ করে।
এই চুক্তির দৌলতেই যুদ্ধশেষে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়।
‘ইরানের পরমাণু আলোচনা ভেস্তে দেওয়াই ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্য’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান আজ শনিবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে পারমাণবিক বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে ইরানে ইসরায়েলি হামলা মূলত সেই আলোচনাকে নস্যাৎ করার উদ্দেশেই চালানো হয়েছে। এ থেকে এটাই স্পষ্ট হয় যে ইসরায়েল কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চায় না।
ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এ বৈঠকে দেওয়া বক্তব্যে এরদোগান ইসরায়েলের ওপর প্রভাব রাখতে সক্ষম এমন দেশগুলোকে ইসরায়েলের ‘বিষে’ কান না দেওয়ার এবং আলোচনার মাধ্যমে এ সংঘাতের সমাধান খোঁজার আহ্বান জানান।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
এরদোয়ান মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রচেষ্টা জোরদার করে।
এদিকে বার্তা সংস্থা তাসনিম এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি আজ ইস্তাম্বুলে পৌঁছেছেন। তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে তেহরানের ক্রমবর্ধমান সংঘাত নিয়ে আলোচনার জন্য ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নিতে ইস্তাম্বুলে গিয়েছেন।
ওআইসির এই বৈঠকে প্রায় ৪০টি দেশের কূটনীতিকরা অংশ নিচ্ছেন।
আরাগচি গতকাল শুক্রবার জেনেভায় ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের আগে তিনি বলেছিলেন, ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে তিনি কারও সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত নন।
একটি কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে তুরস্কের গণমাধ্যম আনাদোলুর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইরানের অনুরোধে ইস্তাম্বুলে ওআইসির সব সদস্যের অংশগ্রহণে একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের মতে, আজ স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ