Home অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শুল্কের ঝুঁকি: তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার নতুন সংকট

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শুল্কের ঝুঁকি: তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার নতুন সংকট

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্প, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ জোগান দেয়। কিন্তু এই খাতটি এখন এক গুরুতর ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে—বিশেষ করে যদি যুক্তরাষ্ট্র ৩৫ শতাংশ “পাল্টা শুল্ক” কার্যকর করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর এই শঙ্কা দৃশ্যমান হয়েছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাকের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর। সেটি যদি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ৫০ শতাংশ হয়, তাহলে সাশ্রয়ী মূল্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত মারাত্মকভাবে প্রতিযোগিতার বাইরে চলে যেতে পারে।

বিশেষ করে যখন ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক হ্রাস নিয়ে সক্রিয় আলোচনা চালাচ্ছে। যদি তারা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (PTA) বা কম শুল্ক পায়, তবে বাংলাদেশের সঙ্গে ১৫ শতাংশীয় শুল্কবৈষম্য তৈরি হবে—যা অতিক্রম করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা।

মূল্য প্রতিযোগিতায় নতুন সংকট

প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর জানান, “বাংলাদেশ মূলত তুলাভিত্তিক (কটন-মেইড) পণ্য রপ্তানি করে। এই পণ্যে ভারত ও পাকিস্তান আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। যদি আমাদের ওপর ১০-১৫ শতাংশ বেশি শুল্ক বসে, তাহলে আমরা আমাদের মূল্যের যে সুবিধা তা হারিয়ে ফেলব।”

তার প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক রপ্তানির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ — প্রায় ৫০ কোটি ডলারের পণ্য — যুক্তরাষ্ট্রে যায়। তিনি সতর্ক করে বলেন, “শুল্ক বাড়লে ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে ফেলবে, অন্য দেশে চলে যেতে পারে।”

ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার বলেন, “বায়াররা এখন থেকে দাম নিয়ে কঠিনভাবে দর কষাকষি শুরু করবে। যেসব ফ্যাক্টরি যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর, তারা ইউরোপমুখী হবে। কিন্তু ইউরোপের বায়াররাও দাম কমাতে চাইবে, ফলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হবে।”

বায়ারদের সতর্কতা ও অর্ডার হ্রাস

চট্টগ্রামের এইচকেসি অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী জানান, যুক্তরাষ্ট্রে অর্ডার অনেক কমে গেছে। “আমরা ইংরেজি নববর্ষ ও বড়দিন সামনে রেখে অর্ডার পেতাম, এবার মাত্র ২০ শতাংশ অর্ডার পেয়েছি। অনেক অর্ডার ইতোমধ্যেই ভিয়েতনামে চলে গেছে।”

স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম খালেদ বলেন, “আমরা কনফার্মড অর্ডারও কমিয়ে দিচ্ছি। একজন বায়ার সম্প্রতি ১৮ লাখ পিস স্পোর্টসওয়্যারের অর্ডার কমিয়ে ১৩ লাখে এনেছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে ইউরোপীয় বাজারে আমরা ১০ শতাংশ কম দামে অর্ডার নিচ্ছি।”

আরও পড়তে পারেন-

প্রতিযোগীরা এগিয়ে যাচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্র যখন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পোশাক আমদানিতে নতুন শুল্ক কাঠামো তৈরি করছে, তখন ভারত এই সুযোগ কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ভারত যদি আমদানি বাজারের মাত্র ৫ শতাংশ শেয়ারও বাড়াতে পারে, তাহলে তাদের জিডিপি ০.১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আলোচনায় অগ্রগতি থাকলেও, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কূটনৈতিক উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

রাতারাতি অর্ডার হারিয়ে যাবে না, কিন্তু…

যদিও রপ্তানিকারকরা মনে করেন যে একদিনে সব অর্ডার চলে যাবে না, কারণ বাংলাদেশের অবকাঠামো, দক্ষতা ও সরবরাহ ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে অন্য দেশে প্রতিস্থাপনযোগ্য নয়—তবু উচ্চমূল্য সংযোজনযুক্ত পণ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার বলেন, “এখনই সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের অবস্থান ধরে রাখতে হলে বাণিজ্য চুক্তি, উৎপাদন খরচ হ্রাস ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কৌশল হাতে নিতে হবে।”

ডিবিএল গ্রুপের এম এ জব্বার বলেন, “বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নেতৃত্ব ধরে রাখতে হলে সরকারকে শক্তিশালী নীতিগত সহায়তা ও গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।”

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে। অগ্রাধিকারমূলক শুল্কের লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়া মানে শুধু রপ্তানি হারানো নয়, বরং একটি শিল্পখাত, লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান ও জাতীয় অর্থনীতির ভিত নড়ে যাওয়া।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।