Home রাজনীতি ফরিদপুর-১: আল্লামা কাসেমীর আমানত রক্ষায় নির্বাচনী মাঠে মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী

ফরিদপুর-১: আল্লামা কাসেমীর আমানত রক্ষায় নির্বাচনী মাঠে মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থীদের নিয়ে ‘জমিয়ত প্রার্থীদের নির্বাচনী ভাবনা’ ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজকের আয়োজনে থাকছে ফরিদপুর-১ আসনের খেজুরগাছ প্রতীকের প্রার্থী মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী। ফরিদপুর-১, দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন। এই আসনে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪,৭৭,৯৮৬ জন। কৃষিপ্রধান অঞ্চল হলেও এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী ও ব্যবসায়ী শ্রেণির উপস্থিতি রয়েছে। ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ এই আসনটি রাজনৈতিকভাবে সচেতন অবস্থানে থাকা জনগোষ্ঠীর বসবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।

মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী একজন সুপ্রতিষ্ঠিত আলেম ও সংগঠক। রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার সিনিয়র মুহাদ্দিস এবং টঙ্গী তিস্তা গেইট জামে মসজিদের খতীব হিসেবে কর্মরত আছেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের পাশাপাশি ঈমান-আকিদা ভিত্তিক দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে, দ্বীনদার ও সমাজসচেতন। আল্লামা নূর হোসেন কাসেমী (রহ.)-এর স্নেহভাজন ছাত্র হিসেবে সর্ব মহলে পরিচিত তিনি। আল্লামা কাসেমী (রহ.)-এর সান্নিধ্য, দিকনির্দেশনা ও সহবত তাঁকে আলেম হওয়ার প্রেরণা দেয় এবং রাজনীতির অনুপ্রেরণা হিসেবে তাকেই উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর ভাষায়- আল্লামা কাসেমী (রহ.) আমাদেরকে দেওবন্দী ধারার রাজনীতির পথে পরিচালিত করতে জমিয়তের রাজনীতি আমানত হিসেবে রেখে গেছেন। এই আমানত হেফাজতের দায়িত্ব আমরা কাঁধে তুলে নিয়েছি এবং তা আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সংকল্প করেছি, ইনশাআল্লাহ।

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী? নির্বাচনী মাঠে তাঁর অগ্রাধিকার কী? এবিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন উম্মাহ টুয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিনিধি-মুহাম্মদ নূর হোসাইন।

উম্মাহ: ফরিদপুর-১ আসনে আপনি নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা কতটা বাস্তব বলে মনে করেন, এবং এর পেছনে কী কী উপাদান কাজ করছে?

মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী: আমার দল আমাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে, ফরিদপুর-১ আসনের মাটি ও মানুষের সাথে আমার সম্পর্ক আগেও ছিলো, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা কোরআন সুন্নাহর এলেম অর্জন করে জনমানুষের সেবা করার যে প্রেরণা ও নির্দেশনা পেয়েছি, সেটা শুধু সংসদ নির্বাচনে পাশ হওয়ার সাথে সীমাবদ্ধ নয়। তবে এতটুকু বলতে পারি, এলাকার মানুষ আমাদেরকে ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে, তাদের রাজনৈতিক আস্থা দিন দিন আমাদের উপর বৃদ্ধি পাচ্ছে। জোটের রাজনীতির হিসেব যদি এর সাথে মিলে যায়, তাহলে জমিয়তের খেজুর গাছ প্রতীক বিজয়ী হয়ে সংসদে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

উম্মাহ: নির্বাচনী প্রচারণায় আপনি কী ধরনের কৌশল গ্রহণ করছেন, বিশেষ করে তরুণ ও প্রথমবারের ভোটারদের আকৃষ্ট করতে?

মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী: সবেমাত্র মনোনয়ন পেলাম। সরকার এখনো পর্যন্ত নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা করেনি। আমরা তরুণদের কাছে যাবো, ঘরে ঘরে বৃদ্ধ ও নারীদের কাছে যাব। বিভিন্ন পেশাজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, কৃষক সবার দ্বারে যাব। অনলাইন-অফলাইনে আমাদের নির্বাচনী প্রচারণা চলবে। স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় আমাদের প্রচুর সমর্থক রয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ লোকবলের অভাব নেই। যথেষ্ট পরিমাণ সময় পেলে আর্থিক অসঙ্গতি বিজয়ের পথে বাধা হতে পারবে না।

আরও পড়তে পারেন-

উম্মাহ: আপনার দল বা দলীয় প্রতীকের আদর্শিক অবস্থান সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে জানাতে কী কার্যক্রম হাতে নিচ্ছেন?

মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী: আমরা আদর্শের রাজনীতি করি, ভোট ও ক্ষমতার রাজনীতি করতে গিয়ে আমরা আদর্শ বিসর্জন দিতে পারি না। রাজনৈতিক শালীনতা, আর্থিক স্বচ্ছতা, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা, ধর্মীয় দায়িত্ববোধ, জনসেবার মানসিকতা, উন্নয়ন ও ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ গড়া, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপসহীনতা এবং শরীয়ত মোতাবেক গণতান্ত্রিক রীতিনীতি যতটুকু রক্ষা করা আবশ্যক, তা রক্ষা করা। এগুলোই আমাদের আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি।
আমরা যতটুকু জনগণের কাছে যেতে পারি, জুমার বয়ানের মাধ্যমে, ওয়াজ মাহফিলের মাঠে, স্কুল মাদরাসায়, বাজারে ঘাটে, সব জায়গায় মানুষ আমাদেরকে যে পরিমাণ শুনে, অন্যদের সেইভাবে শোনে না। আমরা খুব সহজে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারবো এবং জমিয়তের আদর্শ চিন্তাধারা তাদের নিকট আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে পারবো।

উম্মাহ: স্থানীয় অবকাঠামো, শিক্ষা, সুবিচার, স্বাস্থ্য, পানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট ইত্যাদি ক্ষেত্রে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে চান?

মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী: সংসদ সদস্যের একটি প্রধান দায়িত্ব সংসদ অধিবেশনে অংশগ্রহণ করে দীন, দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর আইন প্রণয়ন করা। বিদ্যমান আইনে ইনসাফ ও শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে কোন অসংগতি থাকলে তা দূরীভূত করা। সংসদে নিজ নিজ এলাকার প্রয়োজন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দ নিজ এলাকায় যথাযথভাবে কাজে লাগানো।

উম্মাহ: আপনি নির্বাচিত নির্বাচিত হলে প্রথম ৬ মাসের মধ্যে কোন কোন পরিকল্পনাগুলো অগ্রাধিকার দেবেন?

মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী: প্রথম ছয় মাসে আমি আমার এলাকার বেকার যুবক, অসহায়, নারী ও বৃদ্ধদের তালিকা করবো। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবো। পুরো এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ও বনায়ন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসায়িক মোকামগুলো নিয়ে একটি উন্নয়নের মাস্টার প্ল্যান তৈরি করবো। এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও সার ব্যবস্থাপনার জন্য আমি কৃষি কার্ড চালু করবো। শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য একটি শিল্পাঞ্চল তৈরির প্লান চূড়ান্ত করবো। আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রত্যেক এলাকায় মসজিদে মসজিদে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, মন্দিরে আমরা সচেতনতামূলক সপ্তাহ পালন করবো। এলাকার মুরুব্বী ও যুবকদের নিয়ে নিরাপত্তা সহায়ক কমিটি গঠন করবো।

উম্মাহ: তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ বিষয়ে আপনার কী পরিকল্পনা রয়েছে?

মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী: এলাকায় এক লক্ষ তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের প্লান আমার রয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে মৎস্য খামার, পোলট্রি খামার, ডেইরি ফার্ম, যানবাহন খাত ইত্যাদিতে নতুন গতি সৃষ্টির পরিকল্পনা আমার রয়েছে। তরুণদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে আরো সমৃদ্ধ ও গতিশীল করবো।

উম্মাহ: নারীদের নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও নেতৃত্ব উন্নয়নে আপনি কী উদ্যোগ নিতে চান?

মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী: নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য উপযুক্ত স্থানে কিছু গার্মেন্টস স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। সুদ মুক্ত ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে কুটির শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিবো।

উম্মাহ: ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় আপনার অবস্থান কী?

মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী: সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বাংলাদেশের নাগরিক। সমস্ত নাগরিক সুবিধায় তারা আমাদের অংশীদার। তাদের বাড়তি নিরাপত্তা ও অভয় দানের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রথম ছয় মাসের মধ্যে আমি সংখ্যালঘু কমিউনিটির সাথে যোগাযোগ করে তাদের সাথে আমার অফিসের সাথে হটলাইন চালু করে দিবো। যাতে কোথাও কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে মুহূর্তের মধ্যে প্রশাসনকে আমি অবহিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।

উম্মাহ: আসন্ন নির্বাচনকে আপনি সহযোগিতামূলক না প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মনে করছেন?

মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী: এবারের নির্বাচনে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সহযোগিতা পূর্ণ হবে বলেই মনে করি। ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা সবাই ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল পক্ষ ঐক্যবদ্ধ। তবু নির্বাচনের পিছনে কিছু প্রতিযোগিতা থাকেই।

উম্মাহ: আপনার নির্বাচনী এলাকার অন্যান্য প্রার্থীদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? আপনি কী ধরনের রাজনৈতিক সৌজন্য বজায় রাখতে চান?

মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী: আমরা ভদ্র সজ্জন মানুষ হিসেবে রাজনৈতিক সিস্টাচার মেনে চলবো। নির্বাচনী আচরণবিধি যদি আমরা সবাই অনুসরণ করি, তাহলে কোন সমস্যা হয় না। আরো যারা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন, তারা আমার এলাকার ভাই। তারাও আমি নির্বাচিত হলে খুশি হবেন বলে আশা করি।

উম্মাহ: আপনি কেমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চান? যদি এককথায় “আপনার স্বপ্নের বাংলাদেশ” ব্যাখ্যা করতেন?

মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী: ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন, ইনসাফপূর্ণ উন্নত সার্বভৌম বাংলাদেশ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।