জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করা তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গত কয়েকদিনে বেশ আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য আসছে দলটির শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আক্রমণ করেও তাদের বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, রাষ্ট্র সংস্কার ও গণহত্যার বিচার প্রশ্নে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে এনসিপি নেতারা হঠাৎ করে অ্যাগ্রেসিভ হয়ে উঠেছেন। এর পেছনে আরো রয়েছে নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি আদায়। সরকার অতিসম্প্রতি বিএনপির দিকে ঝুঁকে পড়েছেÑএমনটা মনে করেও দলটির নেতারা কঠোর ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছেন। পরিবর্তনের রাজনীতিতে ‘গেম চেঞ্জার’ হওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চাচ্ছে বলে দলটির সূত্র জানিয়েছে। এদিকে নতুন এই দলের অন্দরেও বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য দলটির অন্তত ১৫ নেতাকে শোকজসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এনসিপির অন্তত ছয়জন শীর্ষ নেতা আমার দেশকে বলেছেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন মহল থেকে তাদের দলকে ‘কিংস পার্টি’র তকমা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিংস পার্টির বদনাম তাদের ঘাড়ে চাপলেও সরকারের কাছ থেকে বস্তুত তারা কোনো ধরনের সুবিধা পায়নি। এ ধরনের সুবিধা তারা প্রত্যাশাও করে না। বিপরীতে জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের সব শক্তিকে বাইপাস করে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্বাচনি সময়সীমায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার অভিযোগ এনসিপির। সরকারের এ অবস্থানকে বিএনপির দিকে সরকারের ঝুঁকে পড়ার ইঙ্গিত বহন করে বলে মনে করে এনসিপি। সরকারের পরবর্তী বেশকিছু পদক্ষেপে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে তাদের অভিযোগ।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসকেও আক্রমণ করে বসেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে সিজদা দিয়ে এসেছেন।’
এনসিপি মনে করে, তারেক রহমানের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠকের পর যেভাবে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, জুলাই ঘোষণাপত্র কাটছাঁট করে যেভাবে দিয়েছে সরকার, বিএনপির আপত্তিতে জুলাই সনদে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার নিয়ে যে জটিলতা দেখা যাচ্ছে, বিচার প্রক্রিয়ার যে ধীরগতি লক্ষ করা যাচ্ছে এবং ছাত্র উপদেষ্টাদের নিয়ে অন্তরালে যা হচ্ছে, এতে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করার কোনো বিকল্প নেই। সে কারণে এনসিপি আক্রমণাত্মক ভূমিকায় যাওয়ার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে।
এনসিপির নীতিনির্ধারণী রাজনৈতিক পরিষদের একাধিক নেতা বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেটি দেওয়ার কথা বলে আটকে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ওই ঘোষণাপত্র দেওয়া হলো অভ্যুত্থানের এক বছরপূর্তির দিন, যখন জুলাই সনদ দেওয়ার কথা। তারপর বিএনপিসহ কয়েকটি দলের আপত্তির কারণে ঘোষণাপত্র যেভাবে কাটছাঁট করে দেওয়া হয়েছে, তাতে রীতিমতো অসন্তুষ্ট জুলাই ছাত্রনেতারা এবং এনসিপি। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে দলীয়ভাবে সেটি প্রত্যাখ্যান বা এর বিরুদ্ধে কোনো কর্মসূচি দেয়নি এনসিপি। তবে ৬০ ছাত্রনেতা যৌথ বিবৃতি দিয়ে ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান ও নতুন ঘোষণাপত্রের দাবিতে কড়া ভাষা ব্যবহার করেন।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা এনসিপির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বিচার, সংস্কার, জুলাই সনদ এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা বলে আসছি। জুলাই ঘোষণাপত্রের যে অপব্যবহার হয়ে গেছে এবং আমাদের আশা ভঙ্গ হয়ে গেছে, সে বিষয়টি আমাদের সত্যিই সরকারের বিষয়ে চিন্তায় ফেলেছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের সিংহভাগই এখন এনসিপি করছেন। কিন্তু ঘোষণাপত্রের অনুষ্ঠানে দলটি থেকে মাত্র তিনজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সরকার গঠনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য হওয়ার পরও নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং আরিফুল ইসলাম আদীবকে দাওয়াত দেয়া হয়নি। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে ১০-১৫ জনের মতো দাওয়াত পান। বাকিরা দাওয়াত না পাওয়ায় আগের রাতে ফেসবুকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও দেখান। সেটা বিবেচনায় নিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম দাওয়াত পাওয়ার পরও অনুষ্ঠানে যায়নি। তারা ওই দিন কক্সবাজারে অবস্থান করেন।
এনসিপির শীর্ষ ছয় নেতার একজন বলছেন, বিএনপিসহ কয়েকটি দলের কারণে জুলাই সনদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হওয়ার সমূহ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়েও জটিলতা হতে পারে। এমনটি হলে তা প্রত্যাখ্যান এবং আগামী নির্বাচনও বর্জন করতে পারে এনসিপি। এছাড়া বিচার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে। এরমধ্যেই বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচনের ডামাডোল চলছে। সেক্ষেত্রে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর প্রতি একই আহ্বান রেখে সবাইকে রাজপথে নামার ডাক দেবে দলটি।
আখতার হোসেন আমার দেশকে বলেন, সামনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকার যদি জুলাই ঘোষণাপত্রের মতোই ঢিমেতালে বা নাজুক অবস্থান গ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে জুলাই সনদের সংস্কারের বিষয়গুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে একটি অনিশ্চিয়তা তৈরি হবে। সে জায়গা থেকেই আমদের দাবি, সরকার যেন জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দিয়ে সামনে গণপরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করে। সে কারণেই শুরু থেকে বলে আসা আমাদের কথাগুলো পুনর্ব্যক্ত করছি।
এনসিপির একজন যুগ্ম আহ্বায়ক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একদিকে সরকার মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন না করে এবং বিচারের অগ্রগতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে দৃশ্যমান না করেই বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচনে যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। এর সঙ্গে বিএনপির পক্ষে যায় এমন অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারে থাকা দুজন ছাত্র উপদেষ্টাকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। ফলে সরকারের ওপর চাপ তৈরির পাশাপাশি জুলাই স্পিরিট, সংস্কার ও বিচারের দাবি এবং নতুন সংবিধানের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব আমার দেশকে বলেন, জুলাইয়ের দুজন উপদেষ্টাকে নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আমরা চাইলে সব মন্ত্রণালয়ে এপিএস ঢুকিয়ে দিতে পারতাম, আমাদের সে সুযোগ ছিল কিন্তু আমরা তা করিনি। আমরা একটি দল দাঁড় করিয়েছি, যে দলটি বাংলাদেশের মানুষের ও স্বাধীনতার কথা বলবে। কোন উপদেষ্টার কে পিএস, তার তো নামই জানা গেল।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত জুলাই সনদের খসড়া প্রস্তুত করে তাদের কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। দলগুলোর মতামত নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণার কথাও বলছে কমিশন। জুলাই সনদ নিয়ে বিভিন্ন আলোচনার পর এর বাস্তবায়ন নিয়ে বড় সংকট দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপির অবস্থানÑআগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠিত হলে নির্বাচিত সংসদই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে। তবে ঠিক বিপরীত অবস্থান নিয়েছে এনসিপিসহ অধিকাংশ দল। তারা গণভোট বা গণপরিষদ নির্বাচন কিংবা অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে অনড় অবস্থান জানিয়ে আসছে।
আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, আমরা ধারাবাহিক বলেছিলাম যেমন বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধান ও রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন। আমরা যেটা দেখলাম বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো যে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট দিয়েছিল, সে কমিটমেন্টগুলো কিন্তু রাখেনি। যেটা হয়েছে, আপনি দেখবেন যে অল্প সংস্কার নাকি বেশি সংস্কারÑএ আলাপগুলো আসছে। এরপর আস্তে আস্তে ঢুকে গেল বিচার, সংস্কার নাকি নির্বাচন। এরপর বিচার-সংস্কার বাদ, এখন আসছে শুধু নির্বাচন। কবে কখন কীভাবে নির্বাচন, এ আলোচনায় ঢুকে গেছে। আমরা দেখছি যে, সময় যত যাচ্ছে একটি সংস্থা বা দুয়েকটি রাজনৈতিক দল একটি রাজনৈতিক বোঝাপড়ার ইলেকশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনও ওই রকম একটি রাজনৈতিক বোঝাপড়ার প্রি-ডিসাইডেট বা পূর্বনির্ধারিত ফলাফল ধরে একটি নির্বাচন হয়। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে নতুন বাংলাদেশ।
দলটির আরেকজন যুগ্ম সদস্য সচিব বলেন, এনসিপিকে কিংস পার্টির তকমা দেওয়া হবে আর সরকারের বিভিন্ন কাজের সুবিধা পাবে অন্যান্য দল। গোয়েন্দা সংস্থা এননিপির বিরুদ্ধে কাজ করছে, যা গোপালগঞ্জ ও কক্সবাজারের ঘটনায় স্পষ্ট। জুলাই নেতাদের টার্গেট করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপিপন্থি আমলারা বঞ্চিত দাবি করে সরকারের সুবিধা নিলেন। সবশেষ দীর্ঘ ১৮ বছর আগে চাকরিচ্যুত বিএনপিপন্থি ৮৫ জন উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তাকে পুনর্বহাল করা হলো। তাহলে সরকারের রাজনৈতিক দায় কেন এনসিপি নেবে? এটা হতে পারে না। এজন্যই এনসিপির এখন ডিফেন্সিভ থেকে অ্যাগ্রেসিভ হওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে। এক্ষেত্রে কেবল সরকার নয়; সিভিল-আর্মি স্টাবলিশমেন্ট, অলীগারদের বিরুদ্ধেও একই নীতি নেওয়া হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সম্প্রতি চিকিৎসক সমাজকে নিয়ে ‘অবমাননাকর’ মন্তব্য করেছেন উল্লেখ করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এনসিপির হেলথ উইং। তারা বলেছে, দায়িত্বশীল পদে থেকে জাতির অগ্রগামী স্বাস্থ্যসেনাদের বিরুদ্ধে এমন অপমানজনক বক্তব্য কেবল অগ্রহণযোগ্যই নয়, এটি চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থানের শামিল। উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন আমার দেশকে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের এ সরকারের প্রতি জনগণের মতো আমাদেরও অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। শুধু সাংবিধানিক সংস্কার নয়; দুদক, স্বাস্থ্য খাত, পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচনব্যবস্থাসহ অন্যান্য যেসব সংস্কারের বিষয়ে আগেই সব দল একমত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা সরকারের দায়িত্ব। শুরুর দিকের বিভিন্ন সংকট কাটিয়ে সরকার এখন স্থিতিশীল হলেও অনেক ক্ষেত্রে কাজের গতি ধীর, যা আমাদের হতাশ করছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে গঠনমূলক সমালোচনা করে সরকারকে তাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেওয়ার কাজটিই এনসিপি করছে।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেড় শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে দুই দিনব্যাপী সাধারণ সভা করে এনসিপি। সূত্র জানায়, সেখানে দলের আগামীদিনের রাজনীতি কেমন হবে এবং এজেন্ডা কী হবে, তা ঠিক করা হয়। সেখানে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন না হওয়া, জাসদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা, ফ্রিডম পার্টির নেতাদের ফাঁসি হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাত্ত্বিক ও বাস্তবতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও বিপ্লব পর্যালোচনা করে বিপ্লবের অতিবিপ্লবী বা হঠকারী রাজনীতি না করার নীতি গ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি দলের বিস্তার, সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালীকরণ, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় কঠোর হওয়া, যে কোনো বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সব নেতার একই লাইনে কথা বলার সিদ্ধান্ত হয়। পাঁচ নেতার কক্সবাজারে যাওয়া নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে গুজব ছড়ানো, ৫ আগস্ট ওখানে যাওয়ায় এ সুযোগ তৈরি হওয়ায় ওই নেতারা দুঃখ প্রকাশ করেন। তারাসহ অন্য নেতাদের শোকজগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এনসিপির সভায় বেশ কয়েকজন নেতা আগের ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা, বিদ্যমান কাঠামোর অধীন অতর্বর্তী সরকারের আগামী নির্বাচন করার বৈধতা না থাকার বিষয়টি যুক্তিতর্ক দিয়ে তুলে ধরেন। কেন সংস্কার, বিচার, নতুন সংবিধান দরকার এবং সেজন্য গণপরিষদ নির্বাচন দরকার, তা ব্যাখ্যা করা হয় এবং এই এজেন্ডা নিয়ে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষর করার পর রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে অধ্যাদেশ জারি করে ঐকমত্যকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেওয়া হয়। এ দাবির প্রতি সমর্থন আদায়ে দেশব্যাপী কর্মসূচি এবং রাজনৈতিক কর্মশালা করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপির একজন যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আমার দেশকে বলেন, বয়স ছয় মাস হলেও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করায় রাজনীতির গেম চেঞ্জার হবে এনসিপি। আগামীদিনের রাজনীতি জুলাই স্পিরিটের ধারায় রাখতে এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে এটি ক্রমান্বয়ে জোরালো ভূমিকার মাধ্যমে স্পষ্ট দেখা যাবে।
এর আগে গত ১১ আগস্ট ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংস্কারের রূপরেখা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে মতবিনিময় হয়।
পরদিন এনসিপির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তির যুব সম্মেলনে নাহিদ ইসলামসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে শক্ত বক্তব্য দেন। নাহিদ বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দিতে এবং প্রজন্মকে প্রতারিত করতে সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আমরা বলতে চাই, সমীকরণ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ফলে যারা এখনই সমীকরণ মিলিয়ে ফেলছে, তারা ভুল পথে হাঁটছে। রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্য ধরে রাখতে না পারলে দেশে আরেকটি ১/১১ আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, আমরা গত এক বছর অনেক ছাড় দিয়েছি। জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি। কিন্তু আমরা জুলাই সনদে কোনো ছাড় দেব না। আমরা নির্বাচন চাই। নির্বাচন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্যই আমাদের লড়াই ছিল। কিন্তু আমরা এও বলি যে, পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে যেতে হবে।
এনসিপির নেতাদের শোকজ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠনের ছয় মাস যেতে না যেতেই দলটির নেতাদের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। এসব ঘটনায় দলটির দায়িত্বশীল নেতাসহ অন্তত ১৫ জনকে শোকজ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনই কেন্দ্রীয় নেতা, যার মধ্যে দলটির সর্বোচ্চ ফোরাম রাজনৈতিক পর্ষদের পাঁচ সদস্য রয়েছেন। আছেন চারজন মহানগর-জেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতাও। তবে সম্প্রতি পাঁচ শীর্ষ নেতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিন একসঙ্গে কক্সবাজারে যাওয়া এবং ওই ঘটনায় গণশোকজ করা নিয়ে দলটির ভেতরে-বাইরে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। বিতর্ক ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। এছাড়া সারা দেশে দেওয়া কমিটিগুলোর মধ্যে বেশকিছু কমিটিতে বিতর্কিতরা স্থান পেয়েছেন আবার বিভিন্ন কারণে কমিটি থেকে পদত্যাগের হারও বাড়ছে। এসব বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেভাবে কিছু জানানো হয়নি। ফলে এনসিপির অন্দরে কী হচ্ছে, সে প্রশ্ন সামনে এসেছে। গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে গোপনে কক্সবাজার যান জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা এবং যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ। বিষয়টি গণমাধ্যমে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। এর জের ধরে ওই পাঁচ নেতাকে শোকজ করা হয়। তবে তাদের জবাব বিশ্লেষণে উপরোক্ত ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলার ব্যত্যয় না ঘটায় আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নির্দেশক্রমে উল্লিখিত শোকজ নোটিসগুলো প্রত্যাহার করা হয় এবং বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। সূত্র: আমার দেশ।
উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ
উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com
দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।