Home সোশ্যাল মিডিয়া আবাবিল নেমেছিল জুলাইয়ে

আবাবিল নেমেছিল জুলাইয়ে

।। ফারুক ওয়াসিফ ।।

প্রত্যেক মানুষের ভেতরে নিজের একটি মহান সংস্করণ থাকে—যে রূপটা সে তার খোদাকে, সন্তানকে কিংবা প্রিয়জনকে দেখাতে চায়। আবার একইসাথে একটি সাধারণ ও নিকৃষ্ট সংস্করণও থাকে। এই ক্ষুদ্র রূপকে নিয়ন্ত্রণ করাই জীবনের মানসিক মেহনত।

ঐতিহাসিক মুহূর্তে মহৎ কাজের—যেমন গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, মানবকল্যাণ, সন্তান ও প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসার—ক্ষেত্রে মানুষ নিজের ভেতরের সেরাটা, larger than life রূপটা নিয়ে হাজির হয়। এজন্যই গণঅভ্যুত্থান বা মুক্তিযুদ্ধ সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। অনেক ছোটোমাপের মানুষও এমন সময় মহৎ কর্ম সম্পাদন করে ফেলে। এই অস্বাভাবিক ও অলৌকিক মহত্ব ও বিশালতা ছাড়া, রুহানী আত্মত্যাগ ও সাহস ছাড়া কোনো মহৎ লড়াই কখনো জয়ী হতো না। একারণেই গণঅভ্যুত্থান মহান, আর এর নায়কেরা বীর।

যে ছেলেটি উত্তরার আবাসিক এলাকায় একা একা সবাইকে রাস্তায় নামার ডাক দিয়েছিল, কিংবা যাত্রাবাড়ীতে যে ছেলেটি গুলিবিদ্ধ বন্ধুকে বুকে আগলে রেখেছিল—তাদের ওপর গুলি চলতে থাকলেও ছেলেটি দীর্ঘ সময় বন্ধুর দেহ আঁকড়ে নিয়ে আসছিল। আবু সাঈদের শহীদের মতো অসংখ্য অলৌকিক বীরত্ব ছাড়া জুলাই সম্ভব হতো না। সত্যিই, আবাবিল নেমে এসেছিল।

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে প্রতিটি মিছিলের সামনে এরকম বীরেরা দাঁড়াতেন। তারা বাকিদের থেকে শত কদম এগিয়ে গিয়ে অবস্থান নিতেন, যাতে পেছনের লোকেরা সাহস ও ভরসা পায়, এবং সামনে অগ্রসর হয়। জুলাই-আগস্টে যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাঁরা সকলেই এরকম বীর। তাঁদের সাহস ও ত্যাগ বাকিদের ছাপিয়ে গেছে। এ কারণেই তাঁদের সবার ওপরই সরাসরি গুলি চালানো হয়েছিল, কিংবা স্নাইপার রাইফেল দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এজন্যই বলি—জুলাইয়ে আমরা আমাদের সেরা সন্তানদেরই হারিয়েছি।

আরও পড়তে পারেন-

কিন্তু যখন গণঅভ্যুত্থানের জলোচ্ছ্বাস থেমে যায়, যখন হিসাবনিকাশের বাস্তবতার ভাটার টান ফিরে আসে, তখন অনেক সাহসী বীরই আবার নিজের ক্ষুদ্র সংস্করণে ফিরে যায়। কারণ তখন সেটাই বাস্তবতা। এই স্বার্থসংঘাত ও প্রতিযোগিতার ঊর্ধ্বে উঠতে নতুন আরেক ধরনের বীরত্বের প্রয়োজন হয়—যেখানে অন্যরা আশ্রয় নেবে, ভরসা খুঁজে পাবে। এই বীরত্ব হয়তো জীবন দেওয়ার চাইতেও কঠিন।

যদি প্রতিষ্ঠান থাকত, যদি বড় ও ছোটো মানুষের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা না থাকত, যদি জীবনের নতুন ঝুঁকি বারবার তৈরি না হতো—তাহলে গণঅভ্যুত্থানের জোয়ারের পানি অন্তত কিছুটা হলেও সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর আধারে সংরক্ষণ করা যেত। মানুষকে আগের দেবতার রূপে না হোক, অন্তত নিজের ক্ষুদ্র সংস্করণের চাইতেও উন্নত রূপে টিকিয়ে রাখা যেত। আফসোস, সেইরকম প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক সংস্কৃতি ছিল না। তাই গণঅভ্যুত্থানের মহানায়কদের ফিরে যেতে হয় নিজের ক্ষুদ্রতর সংস্করণে।

মানুষ তখন হতাশ হয়। কিন্তু ভেবে দেখলে—এমন ঘাসলতার দেশে বড় বৃক্ষ টিকে থাকে না। থাকলেও একা হয়ে পড়তে বাধ্য হয়। আমাদের ভুল-ভ্রান্তি আছে, কিন্তু আমরা যেন আমাদের বৃহৎ রূপকে, আমাদের মহৎ সম্ভাবনাকে নিজেরাই বিশ্বাসঘাতকতা না করি। আমিন।

– ফারুক ওয়াসিফ
কবি, সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

[লেখকের ১৭ আগস্ট এর ফেসবুক পোস্ট থেকে]

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।