দীর্ঘ ১৬ বছরে একচেটিয়া ক্ষমতা দখল করে অবশেষে গত বছর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ থেকে পালিয়েছে আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা। দুই হাজারের অধিক ছাত্র জনতাকে খুন করা এবং অগণিত মানুষকে শারিরীকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার দায় হাসিনার উপর থাকা স্বত্তেও জনপ্রিয় ব্রিটিশ-বাংলা গণমাধ্যম হাসিনাকে হোয়াইট ওয়াশিং করে জয়-পুতুলকে প্রমোটের খেলায় নেমেছে। এমনকি তারা দাবি করেন, হাসিনা ভারতে অতিথি হিসেবে রয়েছে। শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের পুরো ভার ছিল হাসিনার কাঁধে। ফলে শেখ হাসিনা ৪৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। ফলে, দলটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে কোনো স্পষ্ট উত্তরাধিকার পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আলোচনা হয়নি, যা অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দলটির কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করেছে। শেখ হাসিনা বর্তমানে মোদি সরকারের অতিথি হিসেবে ভারতে রয়েছেন। সেখানে তাঁর চলাফেরা ও দলের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার ওপর রয়েছে বিধিনিষেধ। এই পরিস্থিতিতে তিনি তাঁর ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে একটি উত্তরাধিকার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছেন।
হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি একাধারে বাংলাদেশ ও মার্কিন নাগরিক। সম্প্রতি গুঞ্জন উঠেছে তাঁকে দলের প্রধান মুখ ও মুখপাত্র হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। তিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সক্রিয়ভাবে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। সায়মা ওয়াজেদ তাঁর মায়ের সঙ্গে একই শহরে থাকায় সরাসরি সহায়তা করছেন, যেমন বক্তৃতা তৈরি করা, সময়সূচী পরিচালনা করা এবং মায়ের পক্ষে অতিথিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা।
আরও পড়তে পারেন-
- ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
- কিশোর অপরাধ রোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
- আদর্শ পরিবার গঠনে যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরী
- ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার গুরুত্ব
- মানুষ মারা যাওয়ার পর, তাঁর আত্মার কি হয় ?
সম্প্রতি বিবিসির ভিডিও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, শেখ হাসিনা ভারতীয় কংগ্রেসের মতো একটি মডেল গ্রহণ করছেন। যেখানে রাহুল গান্ধী প্রধান নেতা এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। এই মডেলটি সজীব এবং সায়মার মাধ্যমে আওয়ামী লীগে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা এই রাহুল-প্রিয়াঙ্কা মডেলের অনুসরণ সম্পর্কে সচেতন হলেও, এর সংবেদনশীল প্রকৃতির কারণে রেকর্ডে কথা বলতে অনিচ্ছুক। একজন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন যে দলে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।
এদিকে সায়মা ওয়াজেদকে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক পদ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সরকারের অসহযোগিতা এবং তাঁর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এই সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হয়েছে। এই পদক্ষেপ তাঁকে সক্রিয় রাজনীতিতে ঠেলে দিয়েছে। সায়মা ওয়াজেদ তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবারও রাজনৈতিক পোস্ট করা শুরু করেছেন, যা থেকে বোঝা যায় যে তাঁর WHO-তে ফিরে আসার সম্ভাবনা কম।
বিবিসি প্রকাশিত ভিডিওটি ভারতীয় কংগ্রেসের গান্ধী পরিবারের ভূমিকা এবং আওয়ামী লীগের শেখ পরিবারের ভূমিকার মধ্যে তুলনা করেছে। উভয় দলকেই পরিবার-কেন্দ্রিক হিসেবে দেখা হয়, যা নেতৃত্বকে পরিবারের মধ্যে রাখা স্বাভাবিক করে তোলে। এছাড়াও দাবি করা হচ্ছে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম একটি ত্রিভুজাকার নেতৃত্বের কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। যেখানে শেখ হাসিনা এবং সায়মা ওয়াজেদ দিল্লিতে, সজীব ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায়, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কলকাতায় রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, নতুন এই ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে একপাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি দশ মাস ধরে ভারতে থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। এর পরিবর্তে, শেখ হাসিনা কলকাতার তিনজন অন্য নেতার ওপর নির্ভর করছেন।
উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ
উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com
দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।