হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর হেফাজত আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজতের চার রাহবার সম্পর্কে বলেন, উনাদের অনুসরণ করতে পারলেই আমরা সিরাতে মুস্তাকিমের উপর থাকব। প্রত্যেক নামাজের পরে সিরাতে মুস্তাকিমের উপর চলার জন্য দোয়া করারও আহ্বান জানান তিনি। কুরআনে সুলাহা-নেককারদের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সুলাহাদের প্রথম স্তরই হলো সাহাবায়ে কেরাম। এখন কোনো দল যদি বলে ও মনে করে, সাহাবারা সত্যের মাপকাঠি না, তারা অবশ্যই বিভ্রান্ত। আল্লামা বাবুনগরী বলেন, আমরা যদি হেদায়েত পেতে চাই তা’হলে নবী (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের তরিকায় চলতে হবে। তা’ না হলে জাহান্নাম ছাড়া পথ নেই। নবী (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে ৭৩ দল হবে। এদের মধ্যে একমাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে। বাকি সবাই জাহান্নামে যাবে। নবী (সা.) বলেন আমি যে তরিকায় এবং সাহাবায়ে কেরাম যে তরিকা অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে যাবেন। যারা সাহাবায়ে কেরামের তরিকা না মেনে বেয়াদবি করছে তারা পথভ্রষ্ট। এদের সর্ম্পকে সর্তক থাকতে হবে। গতকাল শনিবার শায়খুল হাদীস পরিষদের উদ্যোগে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে হেফাজতের চার রাহবার-আল্লামা শাহ আহমাদ শফী (রহ.) আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.), আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রহ.), আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী (রহ.) নেতৃত্ব, ত্যাগ ও সংগ্রাম শীর্ষক জাতীয় কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এসব কথা বলেন।
কনফারেন্সে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের আলেমদের রক্তের সিঁড়ি বেয়েই ২০২৪ এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। এই সফলতা একক কারোর কৃতিত্ব নয়। সারা দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম আত্মত্যাগের মাধ্যমেই ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। এক দল একক কৃতিত্ব নিতে চায়, তারা ঐক্য নষ্ট করতে চায়।
ইসলামপন্থীদের ত্রয়োদশ নির্বাচনে এক বাক্স হবে এই বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ। যারা ইসলামপন্থীদের একবাক্স করতে চায়। এটা রাজনৈতিক বাক্স। ইসলামের নামে দোছরা নির্বাচনী বাক্স কোথায় পেলেন। আমরা কি ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছি। আমরাও তো মুসলমান। বিএনপি নেতা বলেন, এদেশের মসজিদের ইমাম ৯০ ভাগ কওমি আলেম। যারা মসজিদের ইমামদেরকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করতে চায়, তারা বিভক্তির রাজনীতি করছে। আমাদের বিভক্ত করতে পারলে কাদের লাভ? তিনি বলেন, নবী (সা.) বাণী শুনলাম হাশরের ময়দানে ৭৩ দলের মধ্যে একমাত্র ১টি দলই জান্নাতে যাবে। বাকিরা জাহান্নামে যাবে। বিএনপি নেতা বলেন, আলেমদের পরামর্শেই জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহ যুক্ত করেছেন। তাই বিএনপিকে ইসলামবিরোধী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
এ সময় তিনি পার্শবর্তী দেশের যে কোনো ষড়যন্ত্রকে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যই হবে আগামী দিনের মূল চালিকাশক্তি। আওয়ামীলীগের রাজনীতি এদেশে আর চলতে দেওয়া হবে না। ভারতকে আওয়ামী লীগের প্রভু দাবী করে তিনি বলেন, বিদেশে আমাদের কোনো প্রভু নেই বন্ধু আছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে ঢাকায় আর দাফন হবে দিল্লিতে। যাদের প্রভু দেশের বাহিরে, সেখানেই তাদের দাফন হবে। এসময় তিনি শাহবাগের ঘটনাকে নাস্তিক-মুরতাদদের নেতৃত্বে বিদেশী প্রযোজনায় মঞ্চস্থ এক নাটক আখ্যায়িত করে বলেন, হেফাজতে ইসলাম এই নাস্তিক-মুরতাদদেরর বিরুদ্ধে বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি হেফাজতকে বাংলাদেশের মুসলিম সমাজকে নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর উপরে চলা নির্মম নির্যাতনের বিবরণ দিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রলোভন সত্ত্বেও তিনি সরকারের সামনে মাথা নত করেননি। তাদের প্রস্তাবকে তিনি উপেক্ষা করে আপোসহীনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। আমাদেরও তার অনুসরণ করতে হবে।
শায়খুল হাদীস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মাওলানা মাহফুজুল হকের সভাপতিত্বে এবং মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, সাধারণ সম্পাদক হাসান জুনাইদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক ও আল আবিদ শাকিরের যৌথ পরিচালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের সভাপতি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী। জাতীয় কনফারেন্সে আরও বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর সহকারী পরিচালক মাওলানা জসিমউদ্দীন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হুসাইন, নেজামে ইসলাম পার্টি বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী,বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুছ আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাও. সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, জামিয়া কুরআনিয়া মেরাজুল উলুম নরসিংদীর মুহতামিম মাওলানা ইসমাইল নুরপুরী, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা নাসিরুদ্দীন মুনির।
উম্মাহ২৪ডটকম:আইএএ