Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ মাদকের ভয়ঙ্কর থাবা থেকে আমাদের সন্তানদেরকে আগলে রাখতে হবে

মাদকের ভয়ঙ্কর থাবা থেকে আমাদের সন্তানদেরকে আগলে রাখতে হবে

।। কামরুল হাসান দর্পণ ।।

যুবসমাজ দেশের ভবিষ্যত। তারাই দেশকে নেতৃত্ব দেবে, এগিয়ে নেবে। কথাগুলো এখন অনেকটা পুস্তকীয় ভাষা এবং কথার কথায় পরিণত হয়েছে। দেশের নীতিনির্ধারকরাও বক্তব্য-বিবৃতিতে এসব কথা অহরহ বলেন। তারা অন্তরের বিশ্বাস থেকে কথাগুলো বলেন কিনা, যুবসমাজ তাদের কথার দ্বারা প্রভাবিত হন কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।

বাস্তবে আমরা দেখছি, তাদের এ কথার প্রতিফলন যুবসমাজের উপর খুব কমই প্রতিফলিত হচ্ছে। তরুণ যুবসমাজ এখন কি অবস্থায় আছে, কি সমস্যা মোকাবিলা করছে, কিভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে, এ নিয়ে যদি তাদের চিন্তা ও বিচলন থাকত, তবে তাদের নিঃশেষ করে দেয়ার মতো মাদকের যে ভয়াবহ গ্রাস চলছে, এ নিয়ে সোচ্ছার হতেন।

যুবশক্তিকে দেশের অমূল্য সম্পদ বিবেচনা করে এ শক্তির সংরক্ষণ ও পরিচর্যার পদক্ষেপ নিতেন। জাতির দুর্ভাগ্য এই যে, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হয়ে গেছে ক্ষমতায় টিকে থাকা ও যাওয়া। এ নিয়ে তারা পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত। তাদের এই পাওয়ার প্লে’র আড়ালে যে সিংহভাগ যুবসমাজকে মাদক গ্রাস করে ফেলছে, এ বিষয়টি তারা খুব একট খেয়াল করছেন না, উপেক্ষা করে চলেছেন।

তারা কি বুঝতে পারছেন না, নাকি বুঝতে চাচ্ছেন না, তাদের রাজনীতির মুখ্যশক্তি যুবসমাজ মাদকের নীল ছোবলে ধীরে ধীরে নিষ্প্রাণ ও অথর্ব হয়ে যাচ্ছে? সংসার, সমাজ এবং দেশের উপর বোঝা হয়ে চেপে বসছে? বোঝা স্বরূপ এই মাদকাসক্ত তরুণ সমাজ নিয়েই কি তারা রাজনীতি করবেন? যদি তা না হয়, তবে তরুণদের মাদকাসক্তি এবং যেসব মাদক চোরাকারবারিরা তাদেরকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন কোন কথা বলছেন না?

মাদক চোরাচালান ও চোরাকারবারি চক্র নির্মূলে কেন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না? দেশে মাদকাসক্তির একটি পরিসংখ্যান দিলে বোঝা যাবে, তরুণ যুবসমাজ আজ কোন পথে এবং কিভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুবকরা বেশি মাদকাসক্ত হচ্ছে। মাদকসেবীদের শতকরা ৬০.৭৮ ভাগই এসএসসি পাস করা। ২০ থেকে ৪০ বছরের মাদকসেবীর সংখ্যা শতকরা ৮১.৩৭ ভাগ। এ পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, মাদকের কারণে তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানই যদি এ তথ্য দেয় তবে বোঝার বাকি থাকে না, দেশের তরুণ প্রজন্মের গন্তব্য কোন দিকে। গত মঙ্গলবার একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ইয়াবার আকর্ষণে রাজধানীর অভিজাত এলাকার অনেক তরুণী প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়। বয়ফ্রেন্ড কিংবা থ্রি স্টার, ফাইভ স্টার লবিতে কারো সাথে পরিচিত হয়ে ইয়াবা সেবন করে রাত কাটায়। ধনীর ঘরের মেয়েদের ইয়াবার নেশায় আসক্ত হওয়ার এ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইয়াবা আসক্ত এসব তরুণ-তরুণীরা জীবিত থেকেও মৃত। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না মাদকের ভয়াবহতা কতটা বিস্তৃত হয়েছে।

[ দুই ]

দেশের যারা নীতিনির্ধারক, দেশ চালান এবং চালাবেন, দুঃখের বিষয় তাদেরই একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হয়েছে এবং হচ্ছে। কক্সবাজারে ক্ষমতাসীন দলের এক সাবেক এমপি এবং তার পরিবার সংশ্লিষ্ট লোকজনের ভয়াবহ মাদক ইয়াবার চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার কথা ইতোমধ্যে দেশবাসী জেনেছেন। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ও প্রভাবশালীদের মাদকের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসা করার অভিযোগ অহরহই উঠছে। মাদকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ইয়াবা।

এখন ইয়াবার ভার্সনেও পরিবর্তন এসেছে। আগে একরংয়ের হলেও এখন বিভিন্ন রংয়ের ভার্সন হয়ে দেশে প্রবেশ করছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত দেশের সর্বত্র মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বনের ঘোষণা দিলেও তা থামানো যাচ্ছে না। কিছুদিন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত কিছু লোকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে মারা পড়েছে। এই মারাপরা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক বহনকারী কিংবা খুচরা কিছু ব্যবসায়ী মারা পড়লেও মূল হোতারা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কক্সবাজারের বড় বড় মাদক ডনদের অনেকে বন্দুকযুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে আত্মসমর্পণ করার মাধ্যমে জেলকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে। তারা ভাল করেই জানে কিছুদিন পর তারা বিভিন্ন উপায়ে বের হয়ে আসবে। অর্থাৎ মাদক নির্মূলের যে অভিযান তা অনেকটা অকার্যকরই থেকে যাবে। কারণ মূল হোতাদের এর আওতায় আনা যাচ্ছে না।

এর কারণ, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি, এমপি, রাজনৈতিক নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণীর অসাধু সদস্যর সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী সিন্ডিকেট ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের কারণে কোনভাবেই এই আগ্রাসন ঠেকানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার নতুন কিছু না হলেও এর বিস্তারের ভয়াবহতা এবং প্রভাব দেখে মেক্সিকোর কথা মনে পড়ে গেল। মেক্সিকোতে মাদক চোরাকারবারি সিন্ডিকেট এতটা শক্তিশালী যে, তাদের দমন করতে সরকারকে রীতিমতো ‘ওয়ার অন ড্রাগস’ ঘোষণা দিয়ে সেনাবাহিনী নামাতে হয়।

মাদক সিন্ডিকেট কবলিত এলাকা মুক্ত করতে ২০০৬ সাল থেকে সেনাবাহিনী এই যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি লোক নিহত এবং ২৭ হাজার লোক নিখোঁজ হয়। আমাদের দেশে টেকনাফ এলাকাটি ইয়াবা ও মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে চি‎িহ্নত হয়ে আছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, টেকনাফের ১১টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ঢুকে। বাংলাদেশে ইয়াবা চোরাচালানের জন্য মিয়ানমার প্রায় অর্ধশত কারখানা খুলেছে। শুধু মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমেই নয়, দেশেও ইয়াবা তৈরির কারখানা গড়ে ওঠার সংবাদও প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন অভিযানও তা রুখতে পারছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি মাদক ও মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে নির্মূলের উদ্যোগ না নেয়া হয়, তবে একটা সময় মেক্সিকোর মতো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। ফলে দেশের স্বার্থে, তরুণ সমাজকে রক্ষা করার জন্য মাদকের বিস্তার রোধে জিরো টলারেন্স নিতে হবে। শুধু মুখে বললে হবে না কিংবা বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে কিছু চুনোপুটি মারার মধ্য দিয়ে মাদকের অভিযান দেখালে চলবে না, এর জন্য গোড়ায় হাত দিতে হবে। মাদকের উৎস এবং উৎসের সাথে জড়িতদের দমন করতে হবে। দেশে যেভাবে মাদক বিস্তার লাভ করছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে পারিবারিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না।

ইতোমধ্যে এর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। মাদকাসক্তদের কারণে অনেক পরিবারে অশান্তি লেগে আছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। এমনকি খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। কান পাতলেই শোনা যায় মাদকাসক্ত সন্তানের পিতা-মাতার আহাজারি। মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে মাদকাসক্তরা চুরি, ছিনতাই, রাহাজানির পথ বেছে নিচ্ছে। আবার মাদক চোরাকারবারিদের মধ্যে মাদকের বাজার দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে খুন এবং সন্ত্রাসী কর্মকাÐের ঘটনা অনেকটা নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাদক চোরকারবারি ও মাদকের প্রসারের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যর জড়িয়ে পড়ার খবরও আমরা জানি। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে রাজধানীজুড়েঅর্ধ শতাধিক স্পটে মাদকের হাট বসার খবর ইতোমধ্যে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আর মাদক চোরাচালানের সাথে কতিপয় রাজনৈতিক নেতা, এমপি ও প্রভাবশালীর জড়িত থাকার বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট।

[ তিন ]


এ কথা সবারই জানা, সব ধরনের অপকর্মের অন্যতম উৎস মাদক। মাদকের নেশা মানুষকে ন্যায়-নীতির পথ থেকে বিচ্যুত করে। পরিবার ও সমাজে যে অশান্তির বীজ বপিত হয়, তার মূলে গেলে দেখা যাবে, সেখানে মাদক ও মাদকাসক্তের ভূমিকা রয়েছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে পারিবারিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে যাওয়া, যুবসমাজের বিপথগামী হওয়ার পেছনে মূল কারণ হয়ে রয়েছে মাদক। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যে পারিবারিক প্রথা আশঙ্কাজনক হারে ভেঙ্গে যাওয়া এবং অধিক হারে যুবসমাজের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে মাদককে চি‎িহ্নত করা হয়েছে। এক সময় দেশটির সরকার প্রধানকে মাদক থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করার জন্য মুসলমানসহ বিভিন্ন ধর্মবিশেষজ্ঞদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

পার্শ্ববর্তী ভারতেও মাদকের ভয়াবহতায় অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার প্রথম মেয়াদে দেশের যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষার জন্য মাদকের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি রেডিও এবং টেলিভিশনে ‘মন কি বাত’ বা মনের কথা নামে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের ছাত্র-ছাত্রী ও তরুণদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা শুরু করেছিলেন। তিনি মাদকের বিরুদ্ধে তরুণ সমাজকে সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। তরুণদের সামনে মাদককে তিনি ‘থ্রি ডি’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। এই থ্রি ডি হচ্ছে ডার্কনেস বা অন্ধকার, ড্রেসট্রাকশন বা ধ্বংস এবং ডিভাস্টেশন বা বিপর্যয়।

মাদকাসক্তির সমস্যায় আক্রান্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করে তিনি বলেছিলেন, দেশের মাদকাসক্ত যুব সম্প্রদায়ের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ২৪ ঘন্টার একটি হেল্প লাইন চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, যাদের জীবনে কোনো লক্ষ্য থাকে না, তাদেরই মাদক আকর্ষণ করে। যুব সম্প্রদায়কে লক্ষ্যস্থির করে এগোতে হবে, ঠিক যেভাবে খেলোয়াড়রা এগিয়ে যায়। মোদির এ আহ্বান তরুণদের মন ছুঁয়ে যায়। তারা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। তার সাথে কথা বলার সময় তরুণ-তরুণীরা শপথ করে তারা কখনো মাদক স্পর্শ করবে না এবং মাদকাসক্তকে মাদকমুক্ত করতে ও মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে। রাষ্ট্রের অভিভাবক যখন তরুণদের সাথে আন্তরিকতা ও মমতা নিয়ে কথা বলেন, তখন তা কতটা দ্রুত কাজ করে, মোদির এ উদ্যোগ থেকে বোঝা যায়। কোন রাষ্ট্রনায়ক এভাবে তরুণদের সাথে কথা বললে মাদকের প্রতি তরুণদের আকর্ষণের পরিবর্তে ঘৃণা জন্মানোই স্বাভাবিক। এতে শুধু তরুণ সমাজ মাদকমুক্তই হয় না, মাদক চোরাচালান ও চোরাকারবারি নির্মূলের বিষয়টিও সহজ হয়ে যায়।

মূল কথা হচ্ছে, মাদক ও এর বিস্তার রোধে রাষ্ট্রের মূল অভিভাবককেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হয়। মাদকাসক্ত ও তরুণ সমাজকে উদ্দীপ্ত করে তুলতে এবং লক্ষ্য স্থিরে রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা পালন করতে হয়। দুঃখের বিষয়, মাদকের ছোবলে ক্ষয়ে যাওয়া আমাদের তরুণদের মাদকের হাত থেকে বাঁচাতে এবং নিরাসক্ত করতে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে এ ধরনের কোন উদ্যোগ দেখা যায় না। বরং কোন কোন রাজনৈতিক নেতা, এমপিকে মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার কথা আমাদের দেখতে হয়, শুনতে হয়। এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কি হতে পারে! আমাদের সরকার প্রধান যদি মাদক নির্মূলে এবং মাদকাসক্তি থেকে বিরত থাকতে তরুণদের সাথে নিয়মিত টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলতেন, তবে তরুণরা যেমন উদ্দীপ্ত হতো, তেমনি মাদকের যে ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়ছে, তা অনেকটাই কমে যেত। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া এখন সময়ে দাবীতে পরিণত হয়েছে।

[ চার ]

মাদকের বিরুদ্ধে বন্ধুক যুদ্ধের নামে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে এর বিনাশ সম্ভব নয়। এটা কোনো অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ নয়। এ যুদ্ধের কৌশল ভিন্ন। মাদকের উৎস, আগমন, কারা এর সাথে জড়িত-এর মূলে যেতে হবে। তাদের ধরতে হবে। তা নাহলে ভাসমান মাদক ব্যবসায়ী বা বহনকারীদের হত্যা করে কোনো লাভ হবে না। এক্ষেত্রে মূল হোতাদের ধরতে হবে। তারা যত প্রভাবশালী হোক বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকুক তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। কোনো ধরনের অনুকম্পা নয়।

সরকার জঙ্গিবাদ ও জঙ্গি দমনে যেভাবে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে, ঠিক একইভাবে যদি মাদক ও মাদকবাদী চোরাকারবারি দমনে জিরো টলারেন্স দেখায়, তবে দেশ থেকে মাদক নির্মূল করা কোন অসম্ভব কাজ নয়। দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ এবং দেশের ভবিষ্যত যাদের উপর নির্ভর করছে, সেই যুবসমাজকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে এ ধরনের পদক্ষেপের বিকল্প নেই। প্রয়োজনে র‌্যাবের মতো মাদক নির্মূলে বিশেষ বাহিনী গঠন করতে হবে। যাদের কাজই হবে মাদক চোরাচালান ও চোরাকারবারিদেরকে পাকড়াও করে আইনের হাতে সোপর্দ করা। মাদক চোরাচালানের সাথে যে দলের এবং যত প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত থাকুক না কেন, তাদেরকে আইনের হাত থেকে ছাড় দেয়া যাবে না। এ কাজটি করতে পারলে দেশের তরুণসমাজ ভয়াবহ বিপর্যয়, ধ্বংস ও অন্ধকারের দিকে ধাবিত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।

মাদকের বিস্তার যে ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে, তাতে মাদককে এখন ‘পাবলিক এনিমি’ ঘোষণা করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। যে কোন উপায়ে জাতি বিনাশী মাদক ও মাদকচক্র নির্মূল করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য মাদক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক সংগঠন এবং সমাজের অভিভাবক শ্রেণীকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকের হাত থেকে ছেলেমেয়েদের রক্ষা করতে মা-বাবার দায়িত্ব অনেক বেশি।

ছোটবেলা থেকেই তাদের আদরযতে্নর পাশাপাশি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তোলার দায়িত্ব তাদেরই। প্যারেন্টিং গাইডেন্সের মাধ্যমে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানকে আদরে-ভালোবাসায় রাখতে হয়। ১০ বছর বয়স থেকে শৃঙ্খলাপরায়ণতার ওপর জোর দিতে হয়। আর ১৬ বছর হয়ে গেলে তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশতে হয়। এই বয়ঃসন্ধির সময়েই তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা প্রয়োজন। তারা কোথায় যায়, কাদের সাথে মিশছে, এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা অত্যাবশ্যক।

সন্তানের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি না করে তাদের ভালো লাগা ও সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে। তাদেরকে লক্ষ্য স্থির রাখতে উৎসাহ ও অনুপ্রাণিত করতে হবে। সন্তানদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, অনুশাসন ও চিন্তা-চেতনার বিকাশে অভিভাবকদের কার্যকর ভূমিকার বিকল্প নেই। অভিভাবকরা সন্তানের প্রতি এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে তাদেরকে যেমন হতাশা গ্রাস করবে না, তেমনি হাতাশা বা ফ্যান্টাসির কারণে মাদকও স্পর্শ করবে না।

যুবসমাজকেও বুঝতে হবে মাদক জীবনরক্ষা করে না, জীবন ক্ষয় করে, ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। এটা এক ধরনের আত্মহত্যার শামিল।

darpan.journalist @gmail.com