Home লাইফ স্টাইল ইসলামের আলোকে পিতামাতার অধিকার এবং সন্তানের কর্তব্য

ইসলামের আলোকে পিতামাতার অধিকার এবং সন্তানের কর্তব্য

।। মির্জা মুহাম্মদ নূরুন্নবী নূর ।।

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম। ব্যক্তিগত জীবনে মানবাধিকারের বিষয়টি ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে ইসলাম পিতামাতার অধিকারকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। কেননা একমাত্র পিতামাতাই হচ্ছেন দুনিয়াতে সন্তান আগমনের মাধ্যম। এছাড়া কেবলমাত্র পিতামাতাই সন্তানের জন্য নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে থাকেন। সন্তানের অনাবিল সুখ এবং শান্তির জন্য কেবলমাত্র পিতামাতাই সকল প্রকার দুঃখ-কষ্ট আনন্দের সাথে বরণ করে নেন। সন্তান কখনও পিতামাতার হক আদায় করে শেষ করতে পারবে না। পিতামাতার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব। পিতামাতার নাফরমানী মানেই আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী করা। আলোচ্য নিবন্ধে পিতামাতার অধিকার নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা করব ইনশাআল্লাহ।

পিতামাতা একটি বিশেষ নিয়ামাত

সন্তানের জন্য পিতামাতা একটি বিশেষ নিয়ামাত। পিতামাতাকে খুশি করার মধ্য দিয়ে সন্তানেরা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন। ছোটবেলায় যারা পিতামাতাকে হারিয়েছেন, পিতামাতার আদর সোহাগে বেড়ে উঠার সুযোগ হতে বঞ্চিত ছিলো যারা, তারাই বুঝতে পারেন পিতামাতা কতবড় নিয়ামাত। পৃথিবীর কোন ধর্মই পিতামাতার সাথে অসৎ ব্যবহার করতে বলে না। সকল ধর্মই পিতামাতাকে মান্য করে চলতে নির্দেশ করে। সুতরাং একজন মুমিন হিসেবে পিতামাতার যথাযথ সেবা-যতœ করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। পিতামাতার অবাধ্য হওয়া মানেই কবিরা গুনাহ করা। পিতামাতা কতবড় নিয়ামাত তার বর্ননা দিতে রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহারকারী সন্তান যখন রহমতের দৃষ্টিতে তার পিতামাতার দিকে তাকায়, তখন আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজ্জের সাওয়াব লিখে দেন। সাহাবীগণ আরয করেন, যদি সে একশতবার তাকায়? রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন, যদি সে ইচ্ছা করে একশতবার তাকাতে পারে। আল্লাহ তায়ালা সর্বাপেক্ষা বড় এবং পূতপবিত্র। (মিশকাত, দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, পৃষ্ঠা নম্বর ৪২২)। আলোচ্য হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে পিতামাতা কতবড় নিয়ামাত। তাই আমাদের উচিত উক্ত নিয়ামাতের সদ্ব্যবহার করা।

পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করা

পিতামাতার সাথে একজন সন্তান কেমন আচরণ করবে ইসলাম তা সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমরা আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত কর। আর তাঁর সাথে কোন কিছুই শরীক করোনা এবং পিতামাতার সাথে করো উত্তম আচরণ। (সূরা  আন নিসা, আয়াত ৩৬ )।

এবিষয়ে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, আর তোমার প্রতিপালক এ আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদাত করোনা। আর পিতামাতার সাথে উত্তম আচরণ করো। যদি তাঁদের একজন কিংবা উভয়েই তোমাদের জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাঁদের সাথে উহ্ শব্দ পর্যন্ত বলবে না। তাঁদের ধমক দিওনা বরং তাঁদের সাথে মার্জিত ভাষায় কথা বলবে। আর তাঁদের উদ্যেশ্যে অনুগ্রহে বিনয়ের বাহু অবনমিত কর। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ২৩-২৪)। 

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নিজেকে সর্বতোভাবে এক ও লা-শরীক বলে ঘোষণা করে তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদাত করতে কঠোর ভাষায় যেমন নিষেধ করেছেন ঠিক তেমনি পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করারও তাকীদ দিয়েছেন। এবিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার সম্পর্কে আদেশ করেছি। তার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভধারণ করেছেন। দুই বছর পর্যন্ত তাকে স্তন্য দান করেছেন। তোমরা আমার এবং তোমাদের পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। আমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা লুকমান, আয়াত ১৪)। 

মায়ের দুধ পানের মর্যাদার গুরুত্বের কথা বর্ননা করে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করে। কেননা তার মাতা কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভধারণ করেছেন এবং কষ্ট স্বীকার করেই তাকে প্রসব করেছেন। তাকে গর্ভধারণ করতে ও তার দুধ ছাড়তে সময় লেগেছে ত্রিশ মাস। শেষ পর্যন্ত যখন সে শক্তি অর্জন করল এবং চল্লিশ বছরে পৌঁছলো, তখন সে বলল, হে আমার রব! তুমি আমাকে তৌফিক দাও আমি যেন তোমার সেই সব নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করি যা তুমি আমাকে এবং আমার পিতামাতাকে দান করেছ। (সূরা আহকাফ, আয়াত ১৫)।

আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে আমরা মায়ের কষ্টের কারণ জানতে পারলাম। পিতার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট করেন মা। তাই সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে পিতার চেয়ে মায়ের অবদান অনেক বেশি। সেজন্য পিতার চেয়ে মায়ের অধিকারও বেশি হওয়া স্বাভাবিক। রাসুলুল্লাহ (সা:) এর হাদিস থেকে মায়ের অধিকারের বর্ননা পাওয়া যায়। যেমন- 

হযরত আবু হুরায়রা রা: হতে বর্নিত ‘তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা:) কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা:)! আমার কাছে সর্বোত্তম ব্যবহার পাওয়ার হকদার কে? রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন, তোমার মা। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন, তোমার মা। লোকটি আবারও জিজ্ঞেস করল এরপর কে? রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন, তোমার মা। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করল এরপর কে? রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন, তোমার পিতা। (সহীহ মুসলিম)। 

মায়ের সাথে কেমন সদাচরণ করতে হবে তার প্রমাণ পাওয়া যায় নিম্নোক্ত হাদীসে। হাদিসটি হলো-হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রা:) হতে বর্নিত। তিনি বলেন-আমার মা আমার কাছে আসলেন। তিনি ছিলেন মুশরিকা। এ ঘটনা ঐ সময়ের যখন কুরাইশদের সাথে হুদাইবিয়ার সন্ধি স্থাপিত হয়েছিল। আমি রাসুলুল্লাহ (সা:) কে জিজ্ঞেস করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা আমার কাছে এসেছেন অথচ তিনি ইসলামের প্রতি অসন্তুষ্ট। সুতরাং আমি কি তাঁর সাথে সদ্ব্যবহার করবো? রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন- হ্যাঁ, তাঁর সাথে উত্তম আচরণ করো। (সহীহ বুখারী)। 

দুধ মাতা হালিমার সাথে রাসুলুল্লাহ (সা:) এর আচরণ আরো শক্তভাবে প্রমান করে মায়ের অধিকার কত দামী। যেমন-

হযরত আবু তোফায়েল (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা:) কে জিয়ারানা নামক স্থানে গোশত বন্টন করতে দেখলাম। এমন সময় জনৈক মহিলা এসে তাঁর নিকটবর্তী হলে রাসুলুল্লাহ (সা:) নিজের চাদর বিছিয়ে দিলে তার উপর তিনি বসলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম উনি কে? লোকেরা বললেন, তিনি হলেন তাঁর মা যিনি তাঁকে দুধ পান করিয়েছিলেন। (আবু দাউদ)।

উপরোক্ত হাদিস থেকে আমরা পিতামাতার অধিকার সম্পর্কে জানতে পারলাম। তাই আমাদের উচিত পিতামাতার হক আদায়ে আরো বেশি যত্নশীল হওয়া।

পিতামাতার অসন্তুষ্টির পরিনতি

পিতামাতাকে কষ্ট দিয়ে কেউ দুনিয়ায় কিংবা আখিরাতের কোথাও শান্তি পাবে না। পিতামাতাকে কষ্ট দিলে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কষ্ট পান। যেমন-

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার পিতামাতাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় রেখে হিজরতের উদ্যেশ্যে বাইয়াত করার জন্য নবী করীম (সা:) এর দরবারে হাজির হলো। রাসুলুল্লাহ (সা:) তাকে বললেন, তোমার পিতামাতার কাছে ফিরে যাও এবং তাঁদের খুশি করে এসো যেমনটি তুমি তাঁদেরকে কাঁদিয়ে এসেছো। (আদাবুল মুফরাদ)। শুধু তাই নয় বৃদ্ধ পিতামাতাকে অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারেও রাসুলুল্লাহ (সা:) এর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেমন-

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা: হতে বর্নিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (সা:) এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, আমি কি জিহাদ করব? তিনি বললেন, তোমার পিতামাতা জীবিত আছেন কি? লোকটি জবাবে বললেন, হ্যাঁ জীবিত আছেন। রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন, তবে তাঁদের দুজনের মাঝে জিহাদ করো। অর্থাৎ তাঁদের দুজনের খেদমতের বিনিময়ে জিহাদের মর্যাদা অর্জিত হবে। (সহীহ বুখারী)। শুধুকি তাই যারা পিতামাতাকে অমান্য করে চলে তাদের মত হতভাগ্য আর কেউ নয়। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, তার নাক ধুলোয় মলিন হোক। তার নাক ধুলোয় মলিন হোক। তার নাক ধুলোয় মলিন হোক। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, সে হতভাগ্য ব্যক্তিটি কে হে আল্লাহর রাসুল (সা:)? রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন, সে হলো সেই ব্যক্তি যে তার পিতামাতা উভয়কে অথবা কোন একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও (তাঁদের সেবা করে) জান্নাতে যেতে পারল না। (সহীহ্ মুসলিম)। 

আলোচ্য হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে পিতামাতাকে কষ্ট দিয়ে জান্নাত পাওয়া যাবে না। এছাড়াও আরেকটি হাদিস থেকে পিতামাতা জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত হয়। যেমন-

হযরত আবু উমামা রা: হতে বর্নিত, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা:) এর দরবারে এসে আরয করল, হে আল্লাহ রাসুল (সা:)! সন্তানের উপর পিতামাতার কি কি অধিকার রয়েছে? জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন, তারা তোমার জান্নাত এবং তারা তোমার জাহান্নাম। (ইবনে মাজাহ)।

উপরে আলোচিত কয়েকটি হাদিস থেকে পিতামাতাকে অমান্য করার করুণ পরিনতি সম্পর্কে জানতে পারলাম। তাই আমাদের উচিত পিতামাতার সাথে সর্বদাই সদ্ব্যবহার করা এবং তাঁদের প্রয়োজনীয় সকল চাহিদা পূরনে সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

পিতামাতাকে লানত কবিরা গুনাহ: আমরা অনেকেই পিতামাতাকে লানত করে থাকি বিভিন্ন কারনেই। সেটা হতে পারে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কারণে বা অন্য যেকোনো কারণে। এটি হারাম। যেমন-

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা: হতে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন-কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো- কোন লোকের তার পিতামাতার উপর লানত করা। জিজ্ঞেস করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল (সা:)! কিভাবে একজন লোক তার পিতামাতার উপর লানত করতে পারে? জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন, একজন লোক যখন অপরজনের পিতামাতাকে গালি দেয়, তখন সেও ঐ লোকের পিতামাতাকে গালি দেয়। (সহীহ বুখারী)।  

আলোচ্য হাদিস থেকে পিতামাতার মর্যাদার কথা প্রমাণিত হয়। পিতামাতা যারই হোক না কেন কেউ কারো পিতামাতাকে গালি দেয়া মানে নিজের পিতামাতাকেই গালি দেয়া। তাই আমাদের উচিত অপর কারো পিতামাতাকে গালি দিয়ে নিজের পিতামাতাকে গালির অন্তর্ভুক্ত না করা। তাই আসুন অপরের পিতামাতাকে গালি দেয়া থেকে বিরত থাকি।

পিতামাতাকে কষ্ট দেয়ার দুনিয়াবী শাস্তি: পিতামাতাকে কষ্ট দিলে তার প্রায়শ্চিত্ত্ব দুনিয়াতেই ভোগ করতে হবে। যেমন-

হযরত আবু বকর রা: থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, পিতামাতার অবাধ্য ছাড়া অন্য যেসকল গুনাহ রয়েছে, এগুলোর মধ্য থেকে আল্লাহতায়ালা ইচ্ছা করলে অনেক গুনাহই ক্ষমা করে দিবেন, কিন্তু পিতামাতার অবাধ্যকে আল্লাহ তায়ালা মৃত্যুর পূর্বে দুনিয়াতেই শাস্তি দিয়ে ছাড়েন ।  (বায়হাকী)।  

আলোচ্য হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, পিতামাতাকে কষ্ট দিলে তার শাস্তি দুনিয়াতেই ভোগ করতে হবে। যদি না পিতামাতার কাছ থেকে ক্ষমা করে নেয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সা:) এর একজন সাহাবীর মৃত্যুর ঘটনা থেকে তার জ্বলন্ত প্রমাণ পাওয়া যায়। উক্ত সাহাবী তার মাকে কোন এক সময় কষ্ট দিয়েছিলেন এবং স্ত্রীর কথায় মায়ের সাথে অসৎ আচরণ করতেন। ফলে ম্ত্যৃুর সময় সেই সাহাবীর জবানে কালিমা আসছিলো না। পরে মায়ের ক্ষমা লাভের পরে তাঁর কালিমা নসিব হয়। অতএব আমাদের উচিত পিতামাতার হক আদায়ে সর্বাত্মক সচেষ্ট থাকা। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সচেতন হওয়ার তাওফিক দিন।

মৃত্যুর পরবর্তীতে পিতা-মাতার হক

পিতামাতা যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে পারলৌকিক জীবনে পাড়ি জমাবেন তখনও তাঁদের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব রয়েছে। প্রথমত: তাঁদের জীবনের গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করা। তাঁদের জন্য আল্লাহতায়ালার রহমত কামনা করে দোয়া করা। আল্লাহতায়ালা মরহুম পিতামাতার জন্য দোয়া করার নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন। কুরআনের ভাষায়-

সন্তান তাঁর পিতামাতার জন্য দোয়া করতে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! তাঁদের (পিতামাতা) উভয়কে অনুগ্রহ করো, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছেন। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ২৪)।

রাসুলুল্লাহ (সা:) এর এক হাদিস থেকে জানা যায়, মানুষ যখন মৃত্যু বরণ করেন তখন তার সকল প্রকার আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে প্রবাহমান থাকে। তার একটি হচ্ছে এমন নেক সন্তান যে তার পিতামাতার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করে। তাই মৃত্যু পিতামাতার পারলৌকিক জীবনে মুক্তির প্রয়োজনে আমাদেরকে নেক সন্তান হিসেবে যেমন গড়ে উঠতে হবে ঠিক তেমনি তাঁদের নাজাতের জন্য প্রাণভরে দোয়া করতে হবে। 

এছাড়াও হাদীস থেকে আরো জানা যায়, পিতার অবর্তমানে তাঁর ভাইকে এবং তাঁর আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে সম্মান করতে বলা হয়েছে। ঠিক তেমনি মায়ের অবর্তমানেও তাঁর বোনকে এবং তাঁর আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবীদেরকে সম্মান করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই আমাদের দায়িত্ব হবে পিতামাতার অবর্তমানে তাঁদের নিকটতম আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সর্বোত্তম ভালো ব্যবহার করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে পিতামাতার হক আদায়ে যতœবান হওয়ার সুযোগ দিন।

শেষ কথা: নিবন্ধের শেষে এসে আমরা বলতে পারি যে, আজকে আমরা যারা এখনও পিতামাতা হইনি কোন একদিন তারাও পিতামাতা হব ইনশাআল্লাহ। যেমন কর্ম তেমন ফল বলে একটা কথা আছে। তাই আমরা যদি পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করি তাহলে আমাদের সন্তানেরাও আমাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। অতএব এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে। পিতামাতার খিদমতে নিজেদেরকে সঁপে দিতে হবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে পিতামাতার খিদমত করার মাধ্যমে নিজেকে জান্নাতী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার তাওফিক দিন। আমীন।