Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ বর্তমান সঙ্কট থেকে রক্ষা পেতে ইসলামী আদর্শের পূর্ণ অনুসরণ এবং ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে...

বর্তমান সঙ্কট থেকে রক্ষা পেতে ইসলামী আদর্শের পূর্ণ অনুসরণ এবং ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই

।। সরদার সিরাজ ।।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, চীনের উইঘোর, ভারতের কাশ্মীর এর মুসলিম নির্যাতন এখন ‘টক অব দি ওয়ার্ল্ড’-এ পরিণত হয়েছে । ভারতের অধীনস্থ হওয়ার পর থেকেই কাশ্মীরের মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে। তবুও জাতিসংঘ তার সিদ্ধান্ত-‘গণভোটের ভিত্তিতে কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ’ কার্যকর করতে পারেনি । সর্বোপরি গত ৫ আগস্ট রাজ্যটির বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে অঞ্চলটিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সব সেবা খাত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। গ্রেফতার হয়েছে হাজার হাজার মুসলমান। সাবেক মূখ্যমন্ত্রীগণও তা থেকে রক্ষা পাননি।

এভাবে সেখানকার বাসিন্দারা চরম হুমকির মধ্যে নিপতিত হয়েছে। তবুও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভায় এই চরম ঘৃণিত কাজের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত জি-৭ এর শীর্ষ বৈঠকেও নয়। বরং চীন ছাড়া সব শক্তিশালী দেশ ভারতের পক্ষেই কথা বলেছে। কাশ্মীরের মুসলমানদের মতো অবস্থা হতে যাচ্ছে আসামের মুসলানমদেরও। কারণ, সেখানকার মুসলমানদের সরকার বহিরাগত বলে ট্রিট করছে। যাদের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। তারা এনআরসির প্রাথমিক তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। ইতোমধ্যে মুসলমান অনাগরিক হিসেবে গণ্য হওয়াদের জন্য ১০টি বন্দি শিবির বানানো শুরু হয়েছে।

এরপর হয়তো ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদেরও তাই করা হবে। যাদের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। গত জাতীয় নির্বাচনের সময় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা সেরূপ প্রতিশ্রুতিই দিয়ে বলেছে-ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ মুসলমান বহিরাগত, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী। এছাড়া, সরকার ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর ঘোষণা দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ঘর আবছা বলে বহু মুসলমানকে জোর করে হিন্দু বানানো হয়েছে। গরুর মাংস রাখার অভিযোগে বহু মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এভাবে ভারতের প্রায় ২০ কোটি মুসলমান চরম হুমকির মুখে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের খ্যাতিমান লেখক অরুন্ধতী রায়-এর মন্তব্য স্মরণযোগ্য। তিনি গত ২৭ আগস্ট সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, ‘দেশের সংখ্যালঘু জনগণের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে ভারত সরকার। স্বাধীনতার পর থেকেই ‘নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধেই’ বারবার সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে। কাশ্মীরিদের তাদের ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখা হয়েছে। রাজবন্দী করা হয়েছে সব রাজনৈতিক নেতাকে। সব যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবন স্থবির করে দেয়া হয়েছে। একেবারে নতুন ধরনের দমন-পীড়ন চালাচ্ছে সরকার’। তবুও বিশ্ববাসীর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই ।

এক সময় রাশিয়ার দাগেস্তান ও চেচনিয়ায় মুসলিমদের নির্যাতন বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক আলোচিত ছিল । এর আগে বিশ্বের অতি প্রাচীন সংকট ফিলিস্তিনও বিশ্বের সর্বাধিক আলোচিত বিষয় ছিল। কিন্তু কালক্রমে তাদের বিষয়ে আলোচনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। থেমে নেই সংশ্লিষ্ট এলাকার মুসলমানদের দু:খ-দুর্দশা ও হত্যা-নির্যাতন। যেমন: সা¤প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইহুদী বসতি স্থাপন করা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন ইসরাইলী সেনাদের গুলিতে নারী ও শিশুসহ বহু ফিলিস্তিনী নিহত-আহত হচ্ছে । সেখানে বিশ্বের অন্য দেশের ইহুদীরা এসে যুদ্ধ করছে। ফিলিস্তিনে ইসরাইলের পক্ষে যুদ্ধ করছে ইউরোপ ও আমেরিকার অন্তত ৭ হাজার যোদ্ধা।

ইসরাইল রাষ্ট্র ও এর নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য দেশটির সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে তারা । এ সেনারা ইসরাইলের জন্য উৎসর্গ প্রাণ হওয়ায় বেশিরভাগ সেনাকে সম্মুখযুদ্ধে পারদর্শী ‘কমব্যাট ইউনিটে’ মোতায়েন করা হয়। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী- সব বিভাগেই রয়েছে তারা। প্রায় প্রতিদিনই বিদেশ থেকে নতুন নতুন যোদ্ধা ইসরাইলে আসছে। অর্থাৎ ইসরাইলকে রক্ষা করার জন্য সারা বিশ্বের ইহুদীরা সেখানে গিয়ে যুদ্ধ করছে।

কিন্তু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য কয়টি দেশের মুসলমান সেখানে লড়াই করছে? মাঝে-মধ্যে জাতিসংঘ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তাতে ইসরাইল বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনা। তারা যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সহায়তার কারণে বিশ্বকে পাত্তা দিচ্ছে না। একই অবস্থা চলছে পশ্চিমা দেশগুলোতেও। সেখানে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদের ছদ্মাবরণে উগ্র খৃস্টীয় বাদের জন্মলাভ করেছে। ফলে মুসলমানরা প্রায়ই আক্রান্ত ও চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।

কয়েকটি দেশে মুসলিম নারীদের হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ যেখানেই মুসলিমরা সংখ্যালঘু, সেখানেই তারা নির্যাতন ও নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছে। কেউ নেই তাদের পক্ষে কথা বলার বা রক্ষা করার। মুসলিম দেশগুলোও তাদের পক্ষে তেমনভাবে দাঁড়াচ্ছে না। বরং মুসলিম দেশগুলোর শাসকরা মুসলিম নির্যাতনকারী দেশগুলোর সাথেই ব্যাপক হারে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ করছে।

অন্যদিকে কতিপয় মুসলিম দেশের দ্বারাও মুসলমানরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন: ইয়েমেন। মুসলিম এই দেশটি কয়েক বছর ধরে সউদী নেতৃত্বাধীন জোটের আক্রমণে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ নিহত-আহত হয়েছে। দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়া, বহু মুসলিম দেশ অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াইয়ে বা যুদ্ধে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। অসংখ্য নারী ও শিশুসহ লাখ লাখ নিরীহ মুসলমান নিহত-আহত হয়েছে। উদ্বাস্তু হয়ে বিভিন্ন দেশে রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া যার সা¤প্রতিক উদাহরণ।

এতে মুসলমানরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল হচ্ছে। কিছু মুসলিম দেশের শাসকের কারণে শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারছে না। অংকুরেই তাদেরকে বিনষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।

এভাবেই বহু বলিষ্ঠ মুসলিম নেতাদের ধ্বংস করে দিয়ে মুসলিম নেতৃত্ব শেষ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, অগণতান্ত্রিক মুসলিম দেশগুলোতে তো নেতৃত্ব সৃষ্টিই হতে পারছে না। বেশিরভাগ মুসলিম দেশ খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। কিন্তু সে সম্পদ তারা আহরণ করতে পারছে না জ্ঞান-বুদ্ধি ও অর্থের অভাবে। কিছু অমুসলিম দেশ সে সম্পদের কিয়দংশ আহরণ করে বেশিরভাগ নিয়ে যাচ্ছে, আর সামান্য অংশ সংশ্লিষ্ট মুসলিম দেশকে দিচ্ছে। সে অর্থ জনগণের জন্য ব্যয় হচ্ছে না, শাসকরা ব্যক্তিগত ভোগ বিলাসে ব্যবহার করছে। কিছু মুসলমান অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন করে তা ভোগ বিলাসে মত্ত রয়েছে।

এভাবে সাধারণ মুসলমানের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। এসব অগণতান্ত্রিক মুসলিম দেশেই বেশি হচ্ছে। স্মরণীয় যে, বেশিরভাগ মুসলিম দেশে গণতন্ত্র নেই। অপরদিকে, কিছু সংখ্যক মুসলমান ইহুদী ও নাসারাদের ইন্ধনে সন্ত্রাসী গ্রæপ তৈরি করে ইসলাম বিরোধী কর্ম করছে, যা জঙ্গীপনা বলে খ্যাত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। অথচ তারা সংখ্যায় অতি নগণ্য এবং তা মাত্র কয়েকটি মুসলিম দেশের মধ্যেই সীমিত। শান্তিপ্রিয় মুসলমান তাদেরকে সমর্থন করে না। তবুও তাদের কারণেই আজ শান্তিকামী সমগ্র মুসলিম জাতির ওপর অপবাদ দেয়া হচ্ছে। অথচ এই মুসলিম জঙ্গিদের চেয়ে হাজারগুণ বেশি বিধর্মী জঙ্গি রয়েছে।

যেমন: হিন্দু জঙ্গি, বৌদ্ধ জঙ্গি, খ্রিস্টান জঙ্গি ইত্যাদি। তাদের জঙ্গীপনা মুসলিম সন্ত্রাসীদের চেয়ে অনেক বেশি । গত ২৭ আগস্ট সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাংবাদিকদের যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক শ্বেতাঙ্গদের সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করলেই কেবল যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্ণবাদ নির্মূল করা সম্ভব’। তারপরও শ্বেতাঙ্গদের জঙ্গি বলা হচ্ছে না। বরং তারা বাহবা পাচ্ছে। কারণ, তারা জাতিগতভাবে শক্তিশালী। আর মুসলমানরা জাতিগতভাবে দুর্বল। তাই তাদেরকে নানাভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। দুর্দশাগ্রস্ত মুসলিমদের পক্ষে মুসলিম দেশগুলোর জোট-ওআইসিও তেমন কোন ভূমিকা পালন করতে পারছে না। শুধুমাত্র বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে।

নানা কারণে মুসলমানরা আজ দুর্বল জাতিতে পরিণত হয়েছে। জাতিগতভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, বর্তমান বিশ্বে যতগুলো জাতি রয়েছে, তার মধ্যে সর্বাধিক অশিক্ষিত ও দারিদ্র লোক মুসলমানদের মধ্যে। সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, মিডিয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রেও দুর্বল। অর্থাৎ সার্বিক দিক দিয়েই মুসলিমরা আজ পিছিয়ে রয়েছে। আর দুর্বলের পক্ষে কেউ থাকে না। মাইট ইজ রাইট অত্যন্ত খারাপ হলেও মানুষ সেটার পক্ষেই থাকে। দ্বিতীয়ত: মানুষ শক্তের ভক্ত আর নরমের যম।

এটাই এখন চলছে বিশ্বব্যাপী । আর যেহেতু মুসলমানরা অতি দুর্বল,তাই শক্তিশালী বিধর্মীরা মুসলমানদের যমে পরিণত হয়েছে। আর ইহুদীরা সংখ্যায় অতি নগণ্য (সারাবিশ্বে এক কোটিরও কম) হয়েও তারা আজ পরাক্রমশালী জাতিতে পরিণত হয়েছে। যেমন- যে আমেরিকা বিশ্বের প্রধান পরাশক্তি, সেই আমেরিকাকে চালায় ইহুদীরা। তাই ইহুদী তোষণ ছাড়া সেখানে কেউ ক্ষমতায় যেতে পারেনা। কারণ, ইহুদীরা শিক্ষা-জ্ঞান বৃদ্ধি ও সামরিক শক্তিতে বলিয়ান। তার বিপরীতে মুসলিমরা সংখ্যায় ১৬০ কোটির মতো, যা জাতিগতভাবে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে, তবুও দুর্বল হয়ে রয়েছে। বলা বাহুল্য, বর্তমান বিশ্বে শক্তির উৎস মানুষের সংখ্যায় নয়-আধুনিক জ্ঞান-বুদ্ধি এবং আর্থিক ও সামরিক শক্তি। আর এসব দিক দিয়ে মুসলিমরা খুবই পিছিয়ে আছে।

অথচ মুসলমানরাই আধুনিক সভ্যতার সৃষ্টিকারী, অর্ধেক বিশ্ব শাসন করেছে কয়েক শ’ বছর, সেই ইতিহাস, সৌর্য-বীর্য এবং ইসলামী নীতি ও আদর্শ ভুলে গিয়ে তারা এখন চরম দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এর নানাবিধ কারণ রয়েছে। যার অন্যতম হচ্ছে, অনৈক্য, অশিক্ষা ও দারিদ্র্য। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, ইসলামী নীতি থেকে বিচ্যুত হওয়া। এসব থেকে রক্ষা পেতে হবে মুসলমানদের। এ কাজটি অন্য কোন জাতি করে দেবে না। নিজেদেরই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের মুসলমান এমপি ওআইসি’র মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। ভারতের মিম প্রধান ব্যারিস্টার ওয়াইসি এমপি স¤প্রতি বলেছেন, ‘বিজেপি সরকার মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করতে চাচ্ছে।

ভারতের মুসলিমরা তা বুঝতে পারছে না। ভারতের মুসলিমদের বুঝতে হবে যে, আমরা দীর্ঘকাল ধরে ধর্মনিরপেক্ষতার ‘কুলি’ হতে পারি না। তাহলে আমাদের ভোট কেন ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর কাছে যাওয়া উচিত। মুসলিমদের উচিত নিজ স¤প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সন্ধান করা। এটাই একমাত্র উপায়, যার মধ্য দিয়ে এটা সুনিশ্চিত হবে যে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার দেয়া হয়েছে’।

তিনি আরও বলেন, ‘দয়া করে আপনারা নিজেদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি করুন। আপনারা নিজেরাই নিজেদের পরিবর্তন করুন। কারণ আসমান থেকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেউ আসবে না। তার এই বক্তব্য বর্তমান মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ মুসলমানদের জান-মাল রক্ষা এবং অতীত ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার জন্য তাদের নিজেদেরকেই তৈরি করতে হবে। অন্য কেউ তাদের উন্নতির জন্য চেষ্টা করবে না। এ ক্ষেত্রে পরম শ্রষ্টারও নির্দেশ হচ্ছে: যে নিজের জন্য কিছু করে না, তার জন্য স্বয়ং শ্রষ্টাও কিছু করেন না ।

মুসলমানদের বর্তমান দুর্দশা থেকে রক্ষা পেতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আদর্শ তথা ইসলামী নীতি পূর্ণভাবে অনুসরণ করা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলা। এছাড়া, সর্বজনীন নৈতিক ও আধুনিক শিক্ষালাভ করা এবং সব মুসলিম দেশে মানুষের মৌলিক ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তাহলেই সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও সুষমবন্টন হবে। তাতে করে সার্বিক উন্নতি হবে।

এছাড়া, মুসলমানদের মধ্যে জাতিগত দৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলা আবশ্যক। কে সুন্নি, কে কোন মাজহাবের, কে কোন দলের, তার বিচার বিশ্লেষণ না করে তারা মুসলমান এটা মনে করে সকলের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। তাহলেই মুসলমানরা শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হবে। এছাড়া, মুসলমানদের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মুসলিম দেশগুলোকেই অগ্রাধিকার দেয়া আবশ্যক। ওআইসিকে শক্তিশালী ও কার্যকর করা অপরিহার্য্য। অর্থাৎ যেখানেই মুসলমান নির্যাতিত হবে, সেখানেই এই সংগঠনকে শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে ন্যাটোর ন্যায় কয়েক লাখের সেনাবাহিনীও গঠন করা যেতে পারে।

এসব হলেই মুসলিম দেশগুলোর উন্নতি ঘটবে এবং তা শিক্ষা, অর্থ এবং সামরিক তথা সার্বিকভাবে। জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং আর্থিক ও সামরিক দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারবে। তখন কোন অমুসলিম, সে যতই শক্তিশালী হোক না কেন, সে মুসলিমদের বিন্দুমাত্র অবহেলা, নির্যাতন, শাসন-শোষণ ইত্যাদি করার সাহস পাবে না। বরং সমীহ করে চলতে বাধ্য হবে, ইনশাল্লাহ।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট ।