Home শিক্ষা ও সাহিত্য ছাত্র জীবনে ইসলাহ বা আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব

ছাত্র জীবনে ইসলাহ বা আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব

।। মুফতি শাহ নূরুল আমীন ।।

যখনই কেউ প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে সে শরীয়তের মুকাল্লাফ হয়ে যায়। অর্থাৎ- তার জন্য শরীয়তের সকল বিধি-বিধান মেনে চলা জরুরী হয়ে যায়। যদি কোন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুআক্কাদাহ না মেনে চলে, কিংবা হারাম ও মাকরুহ কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা থেকে বিরত না থাকে, তাহলে সে গুনাহ্গার বলে বিবেচিত হবে। গুনাহ দু প্রকার- (১) যাহেরী (২) বাতেনী।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “ওয়াযারু যাহিরাল ইসমী ওয়াবাতিনাহ্”, অর্থাৎ- তোমরা প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল প্রকার গুনাহ বর্জন করো। আল্লাহ তাআলার ভয়ে গুনাহ বর্জন করাকেই বলা হয় তাক্বওয়া। আল্লাহ তাআলা তদ্বীয় কালামে পাকে তাক্বওয়া অর্জন করার জোর তাকীদ প্রদান করেছেন বারংবার।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে পাকের শুরুতেই বলেছেন, “হুদাল্লিল মুত্তাক্বীন”। অর্থাৎ- এই পাক কুরআন মুত্তাক্বী তথা তাক্বওয়া আবলম্বনকারীদের জন্য হিদায়াত স্বরূপ। তাক্বওয়া বা গুনাহ বর্জনের সিফাতকেই বলা হয়- “তাযকীয়্যাহ বা ইসলাহ্”। ইসলাহ বা তাযক্বীয়াহ ব্যাতিরেকে কখনই গুনাহ বর্জন করা সম্ভব নয়। পরকালে নাজাত বা সফলতা পেতে হলে তাযকিয়্যাহ বা ইসলাহ অতীব জরুরী।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “ক্বাদ আফলাহা মান যাক্কাহা ওয়া ক্বাদ খাবা মান দাস্সা হা” অর্থাৎ- যে যে তাযক্বীয়া অর্জন করেছে, সেই সফলকাম হয়েছে, আর যে তাযকিয়্যাহ অর্জন করেনি, বরং গুনাহে নিমজ্জিত রয়েছে, সে ব্যর্থ হয়েছে।

এখন বিবেচনার বিষয় হলো, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্র, সে কোন একটি গুনাহে লিপ্ত রয়েছে। (যেমন- চোখের গুনাহ বা অবৈধ প্রেম, হাসাদ, গীবত, ক্রোধ, লাওয়াতাত, বদগুমানী, আহংকার প্রভৃতি)। আপন চেষ্টায় উক্ত গুনাহ সমহ থেকে পরিত্রাণ পেতে সক্ষম হচ্ছে না। সে যদি এ আশা নিয়ে গুনাহে লিপ্ত থাকে যে, ইলম অর্জন শেষ হোক, দাওরা বা শিক্ষাকাল শেষ হয়ে যাক, তারপর তাযকিয়্যাহ বা ইসলাহের ফিকির করবো।

এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা ও তদ্বীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথা শরীয়ত তাকে কি কোন প্রকার অনুমতি প্রদান করবে যে, তুমি আগে ইলমে যাহেরী অর্জন করো, দাওরা বা কামেল ফারেগ (পাশ) হও এবং ফারেগের পূর্বে পর্যন্ত যে সকল গুনাহ (তোমার রূহানী রোগের কারণে) হবে, তা সব ক্ষমা করা হবে বা এর জন্য তোমাকে ধরা হবে না।

কিংবা গুনাহে লিপ্ত উক্ত ছাত্র কি এ নিশ্চয়তা পেয়েছে যে, দাওরা ফারেগের পূর্বে তার মৃত্যু হবে না, বা দাওরা-কামিল পাশের পর ইসলাহ ও তাওবার সুযোগ দেয়া হবে? কেননা, অঢেল গুনাহের কারণে অনেক সময় তাওবার তাওফীক ছিনিয়ে নেয়া হয়। “তাম্বীহুল গাফিলীন” কিতাবে হযরত ফকীহ আবুল্লাইস সমরকন্দী (রাহ.) লিখেছেন, “বহু লোক এমন রয়েছে যে, অতিরিক্ত গুনাহের কারণে অবশেষে তার ঈমান ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং দুনিয়া হতে কুফরী অবস্থায় বিদায় গ্রহণ করে।”

হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে- “এক যুবকের মৃত্যুর অবস্থায় কোন ক্রমেই তার মুখ হতে কালেমা বলানো যাচ্ছিল না। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবগত করানো হলে তিনি যুবকের নিকট তাশরীফ নিয়ে গেলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হয়েছে? সে আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)! মনে হচ্ছে যেন আমার অন্তর তালাবদ্ধ। অনুসন্ধান করে জানা গেল যে, তার মা তার উপর অসন্তুষ্ট। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাকে অনুরোধ করে ক্ষমার ব্যবস্থা করলেন, ছেলেটি তৎক্ষণাৎ কালিমা পড়তে লাগল।” (ফাযায়েলে যিকির- ১০৮)।

এরূপ অসংখ্য নযীর রয়েছে যে, গুনাহের কারণে মারাত্মকভাবে পদস্খলন ঘটেছে। বনী ইসরাঈলের প্রখ্যাত বুযুর্গ ও আলেম, বালআম বিন বাওরা নারী ঘটিত কারণেই গোমরাহ হয়ে যান। (তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন, সূরা আরাফ)। হযরত আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলুসী (রাহ.) সামান্যতম অহংকারের কারণে শিক্ষার নিমিত্তে শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাকে এক জঘন্যতর ইশকে মাজাজীতে গ্রেফতার করেন। দু’বছর যাবৎ একজন খ্রীস্টান মেয়েকে বিবাহ করার জন্য শকর চরাবার মত হীন কাজ করতেও তাঁর দ্বিধাবোধ হয়নি। অবশ্য আল্লাহ তাআলা আপন মেহেরবানীতে পুণরায় তাঁর মর্যাদা ফিরিয়ে দেন। (দরসে ইবরাত, উম্মুল আমরাজ, আত্মসমালোচনা)।

যদি কোন মুরুব্বী গুনাহে লিপ্ত উক্ত ছাত্রকে ইলম বা লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর ইসলাহে বা বায়াতের পরামর্শ প্রদান করেন, কিংবা সাধারণ ভাবে বলেন যে, দাওরা বা কামেল পাশের পূর্বে তাযকিয়্যাহ এর মেহেনাত বা বায়াত অনুচিত। চাই তিনি ছাত্রদের থেকে গুনাহ সংঘটিত হওয়ার খবর রাখুন বা না রাখুন। এমতাবস্থায় তার দর্শন ও পরামর্শ অনুযায়ী যদি কোন ছাত্র ইসলাহী মেহনতের পূর্বে পর্যন্ত কোন গুনাহে লিপ্ত থাকে, তাহলে কি উক্ত মুরুব্বীও উক্ত গুনাহের অংশীদার হবেন না?

যারা বলে থাকেন যে, আমাদের পূর্ববর্তী মুরুব্বীয়ানে কেরাম ছাত্র জীবনে বায়আত হতে নিষেধ করতেন, এর জবাব বুযুর্গানে দ্বীনের জীবনাদর্শ পর্যালোচানা করলে এটাই পাওয়া যায় যে, পূর্ববতী উলামায়ে কেরাম সরাসরি বায়আত হতে নিষেধ করলেও তারা ছাত্রদেরকে যে কোন একজন কামেল উস্তাদের সঙ্গে ইসলাহী সম্পর্ক স্থাপনের জোর তাকীদ প্রদান করতেন। দ্বিতীয়তঃ পূর্ববর্তী বুযুর্গানে দ্বীনের সকলেরই যে এরূপ অভিমত ছিলো, তা নয়, বরং অনেকে ছাত্র জীবনে বায়আত হওয়া ও বায়আত করানোকে জরুরী মনে করতেন।

অনেক বুযুর্গ এমনো আছেন যে, তারা স্বয়ং ছাত্র জীবনে বায়আত হয়েছিলেন। অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তিমাত্রই অবগত আছেন যে, হযরত হাকিমুল উম্মত থানভী (রাহ.)কে ছাত্র জীবনেই হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (রাহ.) বায়আত করিয়ে ছিলেন। শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া (রাহ.) হযরত ডা. আব্দুল হাই (রাহ.), হযরত মুফতী শফী (রাহ.), হযরত শাহ আব্দুল গণী ফুলপুরী (রাহ.), হযরত মসিহুল্লাহ খান জালালাবাদী (রাহ.) প্রমুখ বুযূর্গ ছাত্রদেরকে বাইআত করাতেন। হযরত হাফেজ্জী হুযূর (রাহ.) এবং হযরত সদর সাহেব হুযূর (রাহ.) ছাত্র জীবনেই বাইয়াত হয়েছিলেন এবং ছাত্রদেরকে বায়আতও করতেন। (মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রাহ.) এর স্মরক গ্রন্থ-২)।

আমার মুহতারাম উস্তাদ ইলমে দ্বীনের বিশ্ব মারকাজ দারুল উলম দেওবন্দের প্রাক্তন মুফতী আযম হযরত মুফতী মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী (রাহ.)কেও ছাত্রদেরকে বায়আত করাতে দেখেছি। নিকট অতীত যমানার সর্বজন স্বীকৃত বুযুর্গ মুহীউসসুন্নাহ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক (রাহ্.) এবং আমার প্রাণ প্রিয় শাইখ হযরত মাওলানা শাহ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার সাহেব ছাত্র জীবনেই বায়আত ছিলেন এবং ছাত্রদেরকে বায়আত করাতেন।

বিশ্ব বিখ্যাত ইলমী মারকাজ হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতারাম মুহতামিম হযরত আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব (দা.বা.)ও ছাত্রদেরকে বায়আত করান এবং ঢাকা লালবাগ মাদ্রাসার দীর্ঘকালীন মুহতামিম ও বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা হিদায়াতুল্লাহ (রাহ.)ও ছাত্র জীবনেই বাইয়াত হয়েছিলেন। এ সকল বুযুর্গানে দ্বীন স্বীয় অভিজ্ঞতায় হাড়ে-হাড়ে উপলবদ্ধি করেছেন যে, অধিকাংশ ছাত্রই কোন না কোন গুনাহে মারাত্মকভাবে লিপ্ত থেকে আপন ঈমান আমল বিনষ্ট করছে।

বর্তমান যামানায় অধিকাংশ ছাত্রের মধ্যে ইশকে মাজাযী তথা নারী ও আমরোদের প্রতি অবৈধ প্রেম, লাওয়াতাত, হস্তমৈথুন, বেপর্দা, টিভি, ভিসিআর, সিনেমা, হাসাদ, গীবত, বদগুমানী, ক্রোধ, অহংকার প্রভৃতি ঈমান বিধ্বংসী গোনাহ মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। অবৈধ প্রেম (স্বীয় বাড়ী বা লজিং, টিউশনী)। এর কারণে লেখা পড়ায় ও নামায ইবাদতে মন বসে না। কোন কোন ছাত্র নামাযও ঠিকমত পড়ে না।

বড় আফসোসের বিষয়, যাহেরী ইলমে সুনাম অর্জনকারী ছাত্রকে সকলেই বাহবা ও পুরস্কার প্রদান করে থাকেন। কিন্তু যদি কোন ছাত্র নেক্কার হয়ে উঠে, সুন্নাতের প্রতি আশেক হয়, একটু তাক্বওয়া নিয়ে চলতে চায়, সে পুরুস্কারের পরিবর্তে প্রাপ্ত হয় তিরস্কার, ভর্ৎসনা এবং অধিকাংশের নিকট সে ঠাট্টা বিদ্রূপের পাত্র হয়ে যায়।

হযরত হাকীমুল উম্মাত শাহ আশরাফ আলী থানভী (রাহ.) যথার্থই লিখেছেন যে, “আশ্চর্যের বিষয় হলো শিক্ষকেরা ঐ সব ছাত্রদেরকে দেখছেন, যারা হালাল-হারামের প্রতি লক্ষ্য রাখে না, নির্দ্বিধায় মিথ্যা, ধোঁকা, গীবত, অহংকার, হিংসা, আত্মগরিমা, কুদৃষ্টি, বা ইশকে মাজাযী প্রভৃতিতে লিপ্ত, কিন্তু কিছুই বলেন না। যদি পরীক্ষায় ভালো নম্বর পায়, তাহলে তার বদ আমল সম্পর্কে বেখবর থাকেন, অথচ ইল্মের আসল পরীক্ষা হলো আমল দুরস্ত হওয়া।”

হযরত শাহ থানভী (রাহ.) আরো লিখেছেন, বর্তমানে ছাত্রদের ধারণা, পড়াশোনা শেষ করে আমলের মেহনত শুরু করবে, এটা একেবারেই শয়তানের কুমন্ত্রণা। যার ফলে সারা জীবন আমলের তাওফীক হয় না। যদি কোন ছাত্র এ সিদ্ধান্ত নেয় যে, এখন বেশী আমলের সময় নয়, ইলম অর্জনের সময়। তাহলে হে প্রিয়! এ আশা করো না যে, তুমি ফারেগ হওয়ার পরে তোমার দিলে তা কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। স্মরণ রেখো! প্রত্যেক বস্তুর প্রথম বারে যে প্রতিক্রিয়া হল, সে প্রতিক্রিয়া পরবর্তীতে আর হয় না”। (আদাবুল মুতাআল্লীমিন)।

হাদীস শরীফে রয়েছে, কোন ব্যক্তি তার পাঁচ প্রকারে হিসাব দেয়া ব্যতিরেকে হাশরের ময়দানে কদম নাড়াতে পারবে না। তন্মধ্যে একটি হলো- “যৌবনকাল”। কোন ব্যক্তি তার যৌবন কালের যাবতীয় আমলের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ হিসেব না দেওয়া পর্যন্ত এক কদমও অগ্রসর হতে পারবে না। (মিশকাত)।

হযরত আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী (রাহ.) বলেন, তোমরা যতবারই বুখারী শরীফ খতম করো না কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ওয়ালাদের জুতা সোজা না করবে এবং তাদের সুহবাতে সময় না ব্যয় করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার হাকীক্বত ও ইল্মের রূহ থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে।” (কাশকুলে মারিফাত-৩৪ পৃষ্ঠা)।

হযরত সদর সাহেব হুযূর (রাহ.) ছাত্রদের উদ্দেশ্যে এ কথাটি খুবই বলতেন, “ছোট থেকেই বাচ্চাদের চরিত্র গঠনের প্রতি যত্নবান হতে হয়, নতুবা পরে তা কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা “কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাস ঠাস”। (স্মরক গ্রন্থ-২১৭ পৃষ্ঠা)।

হযরত মাওলানা সুলতান আহ্মাদ নানুপুরী হুযূর (রাহ.) বলতেন, “অধিক সংখ্যক ছাত্র বা বড় বড় অট্টালিকার নাম মাদ্রাসা নয়, বরং প্রকৃত মাদ্রাসা হলো ২টি বিষয়ের নাম- ১. হিফাযাতে আত্-ফালুল মুসলিমীন (মুসলমানদের সন্তানদের হিফাজত), ২. হিফাজতে আমওয়ালুল মুসলীমিন (মুসলমানদের মাল-সম্পদ তথা দানের বস্তুর হিফাজত)। কাজেই হিফাযাতে আতফালুল মুসলিমীন-এর প্রকৃত হক আদায় করতে হলে তাদের যাবতীয় আমল আখলাকের প্রতি কড়া দৃষ্টি দেয়া অত্যন্ত জরুরী।

তবে ছাত্র জীবনে বাইআত ও ইসলাহের অর্থ এ নয় যে, তাদের উপর যিকির অজীফার পাহাড় চাপিয়ে দিতে হবে, যার কারণে তারা ইলমে দ্বীন অর্জনে পশ্চাতে থেকে যাবে। ছাত্রদের ইসলাহ বা আখলাকী সংশোধনের জন্য কোন যিকির বাতানো প্রয়োজন হয় না। বরং তারা তো প্রায় সময় কিতাব পড়া-পড়িতে সময় কাটিয়ে থাকে। যার মাধ্যমে নফল যিকির আযকারের হক্ব আদায় হয়ে যায়। জরুরী হলো তারা বেহুদা সময় অপচয় না করে সর্বদা কেতাব পড়া শুনাতে মশগুল থাকবে। সাথে সাথে স্বীয় হালাত (আখলাকে যে যে ত্রুটি আছে) আপন শাইখকে অবগত করতে থাকবে। মাঝে মাধ্যে অবসর বা ছুটিতে স্বীয় শাইখ-এর সুহবাতে কাটাবে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী আমল করতে থাকবে।

হযরত শাহ থানভী (রাহ.) লিখেছেন, যেহেতু ছাত্ররা কিতাব পড়া-শুনার কারণে সময় পায় না, তাই আমি যে বলি ছাত্রদেরকে ছাত্র যামানায় বেশী নফল যিকিরের মধ্যে লাগানো ঠিক নয়। তার অর্থ এটা নয় যে, ছাত্রদের হালাল হারামের প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে না যে, নির্দ্বিধায় কুদৃষ্টি বা ইশ্কে মাজাযী, মিথ্যা, গীবাত, হিংসা, ধোকা, আত্মগরিমা, অহংকার ইত্যাদিতে লিপ্ত থাকলে, জামাতে নামায ও শরীয়াত বা সুন্নাতের পাবন্দীর প্রয়োজন নেই।” (আদাবুল মুতাআল্লীক্বিন)।

ছাত্ররা যাতে ইলমে ও কিতাবে মজবুত হতে পারে এবং পাশাপাশি আমল আখলাক দুরস্ত ও ইসলাহ হয়ে যায়। সে দিকে তীক্ষ দৃষ্টি রেখে, যে সকল ছাত্র আমার সংগে ইসলাহী সম্পর্ক রাখে, তাদেরকে নিম্নোক্ত অজীফা বা আমল বাতলে থাকি। আল্লাহ তাআলার ফযলে লক্ষ্য করেছি যে, এতে লেখা পড়ায় দুর্বল ছাত্ররাও লেখা-পড়ায় খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং দিন দিন আখলাক দুরস্ত হয়ে যাচ্ছে।

ছাত্রদের দৈনন্দিনের আমল ও অজীফাঃ

১। দিনের অধিকাংশ সময় কিতাব পড়া-শুনায় মশগুল থাকা।
২। ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও (ঘুম, খানা-পিনা, অযূ-গোসল, পেশাব-পায়খানা প্রভৃতি যথাসাধ্য সময় কম ব্যয় করা ও বেহুদা সময় নষ্ট না করা।
৩। প্রত্যেকটি কাজ সুন্নাত তরীক্বা অনুযায়ী করা।
৪। সকল প্রকার গুনাহ থেকে দূরে থাকা।
৫। ছুটি ইত্যাদি অবসর সময়ে পরামর্শ মুতাবিক স্বীয় শাইখ-এর সুহবাতে কাটান।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তাযকিয়াহ অর্জন পূর্বক সুস্থ অন্তর এবং মাওলা পাকের রেযামন্দী নিয়ে কবরে যাওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন॥

লেখকঃ হযরত আল্লামা শাহ হাকীম আখতার সাহেব (পাকিস্তান)এর বিশিষ্ট খলীফা, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া দারুল উলম-খুলনা-এর স্বনামধন্য সাবেক মুহাদ্দিস।