Home সাক্ষাৎকার এ দেশে কোনো আইন নেই, কোনো ন্যায়বিচার নেই: ভিপি নুর

এ দেশে কোনো আইন নেই, কোনো ন্যায়বিচার নেই: ভিপি নুর

সাবেক ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর।

ডেস্ক রিপোর্ট: ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর সাংবাদিকদের এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমার ওপরে ৮ বার হামলা করেছে, ডাকসুর ভিপি হওয়ার পরেও কয়েকবার হামলা করেছে,এখন পর্যন্ত তার কোনো বিচার হয়নি।

আমাকে পিস্তল নিয়ে গুলি করে হত্যা করার হুমকি দিয়েছে,তারপরে থানায় জিডি করতে গিয়েছি,পুলিশ আমার জিডি নেয়নি। এ দেশে কোনো আইন নেই,কোনো ন্যায়বিচার নেই।

ছাত্র সংগঠনগুলো আছে দেশনেত্রী নিয়ে, এটা কোনো ছাত্র রাজনীতি? ছাত্র রাজনীতির মধ্যে কতগুলো বাটপার আছে যারা জাতীয় নেতা। যে ছেলে হলে ছাত্রনেতা থাকা অবস্থায় ফাও খায় ও জাতীয় নেতা হয়ে দেশের কি উপকার করবে?

সাংবাদিকরা বলেন, সম্প্রতি আবরারের যে ঘটনা ঘটেছে, এ ঘটনার পর দেশ জুড়ে একটা আলোচনা শুরু হয়েছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলছে। আমরা দেখেছি যে, শুধু আবরারের ঘটনাই না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন জায়গায় এই যে একধরনের দখলদারিত্ব, নির্যাতন এটা কিন্তু আগে থেকেই ছিল। এটা কেন হচ্ছে আপনে কি মনে করেন?

এ প্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের একটা প্রবণতা থাকে যে বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাঙ্গনকে নিয়ন্ত্রণ করার। তখন তারা ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে এবং দলীয় আনুগত্য যারা খুব ভালোভাবে পালন করতে পারে সেরকম কিছু লোককে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার জন্য প্রশাসন হিসেবে নিয়োগ দেয়।

যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো ধরনের আন্দোলন তৈরি না হয়। কারণ আন্দোলন তৈরি হলে সেখানে সরকারের বিরুদ্ধে যেতে পারে। এ কারণেই যেখানে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছাত্রসংগঠনগুলো হিংস্র বর্বর হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসে ভিন্নমত দমনে কিংবা বিরোধী ছাত্র বা বিরোধীমনা শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে তাদের বাজে না। শুধু খারাপ আচরণ না, গায়ে হাত তোলা বা খুনের মতো ঘটনাও কিন্তু ঘটে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাশাসন সর্বোচ্চ অভিভাবক।কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনা, বিশেষ করে বুয়েটে একজন উপাচার্য যার ছাত্রকে পিটিয়ে মারা হলো। ছাত্রলীগের ছেলেরা পিটিয়ে মেরে ফেললো, কিন্তু তিনি ক্যাম্পাসে আসেননি। তিনি একটা স্টেটমেন্ট দেননি যে, এটা একটা নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যে হলে মারা হয়েছিল সে হলের সিসিটিভির ফুটেজ পর্যন্ত সরিয়ে ফেলতে চেয়েছিল খুনিদের রক্ষা করা জন্য।এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, বর্তমানের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি ধরনের লোক দায়িত্ব পালন করছে, যারা ছাত্রলীগের অপরাধকেও মুছে ফেলতে চায়, অপরাধীকে বাঁচিয়ে দিতে চায়।

এই অভিভাবক যারা অভিভাবক নামে শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ করছে এ অভিভাবকরাই বিশেষ করে ছাত্ররাজনীতি নামে ক্ষমতাসীন দলের দখলদারী বা দলীয় দাসত্বের যে রাজনীতি এ মূলে যারা শিক্ষক বা অভিভাবক বলে দাবী করেন তাদের দায় রয়েছে। ছাত্র সংগঠনের অপকর্মের সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।

এখানে যখন ছাত্রসংগঠনগুলো নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয় তখন একটা ঘটনারও সুষ্ঠু বিচার হয় না। যখন একটা অন্যায়কে আপনি চেপে যাবেন তখন পরবর্তি অন্যায় ঘটবেই। ১৯৭৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত জরিপে ১৫১ বার তার বেশি হতে পারে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। একটা হ্ত্যাকাণ্ডেরও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি। প্রথম দুই-চারটা ঘটনার যদি জোরালোভাবে তদন্ত করা হত পরবর্তিতে কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।

আজ আবরার ঘটনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আবারার বুয়েটে মারা গেছে। আবরার তো একা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মারা যায়নি। ২০১০ সালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু বক্কর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মারা গেছে সেই ঘটনার কারো বিচার হয়নি। সবাইকে নির্দোষ বলে আদালত রায় দিয়েছে যে, কারো দ্বারা সে খুন হয়নি।

২০১৬ সালের দখলদারিত্বের শিকার হয়ে হাফিজ মোল্লা নামে একজন মারা গেছে এ ঘটনায় রাজপথও উত্তাল হয়নি, মিডিয়া টকশোতেও আলোচনা হয়নি, ঘটনার কোনো বিচারও হয়নি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ে সাম্প্রতিক কয়েকবছরে ৮-১০ জন ছাত্র মারা গেছে।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র ছাত্রলীগের হাতে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে প্রায় ৫৪ জনের মতো খুন হয়েছে। একটা ঘটনারও বিচার হয়নি। ডাকসুর ভিপি হয়ে আমি ছাত্রলীগের হাতে পাঁচবার হামলার শিকার হয়েছি। একটা হামলারও বিচার হয়নি। এই ঘটনাগুলোর বিচার না হওয়ায় ছাত্রলীগ আরো বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে এবং তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মূল দলের নির্দেশনা থেকেই।

এ কারণেই ঘটনাগুলো ঘটিয়ে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে বিচার হচ্ছে না। খুনির অপরাধিদেরকেও রাষ্ট্রপতির আদেশে মাফ করে দেয়া হয়। তাহলে অপরাধ তো কমবে না। পাবলিক হলগুলো চালায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রদল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রলীগ।

প্রশাসন তাদের দায়িত্ব পালন না করে ছাত্রসংগঠনের হাতে দায়িত্ব তুলে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের একটা বৈধ প্রক্রিয়া ছাত্রনেতাদেরকে দিয়ে দিচ্ছে। তারা হলে উঠাচ্ছে। মিছিল মিটিং করাচ্ছে না গেলে হল থেকে বের করে দিচ্ছে। যখন তাদের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে তখন তাদের জামাত শিবির বলে তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। আবরারের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে, দেশের স্বার্থবিরোধী যে চুক্তি করেছে সরকার, সেটার সমালোচনা করেছিলো বলে তাকে জামাত-শিবির বলে পিটিয়ে মেরেছে।

আবরার সর্বোচ্চ মেধাবী প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। সে-তো দেশ নিয়ে ভাববেই। সে সমালোচনা করতেই পারে। সেটা পর্যন্ত মানতেই পারেনি ছাত্র সংগঠন। এটা কিন্তু ছাত্র সংগঠনের মাথা ব্যাথা না। এটা তাদের ওপরের নির্দেশনা আছে এরকম যে, যারা সরকারের সমালোচনা করেছে কিংবা সরকারবিরোধী কাজ করবে তাদেরকে তোমরা দমন-পীড়ন করবে। ওখান থেকে নির্দেশনা আছে বলেই তারা এখানে এধরনের কাজ করছে। ছাত্রসংগঠনের এধরনের কাজে যুক্ত হওয়ার কথা নয়। [সংবাদ উৎস- দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা]