Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন পবিত্র কুরআনে আখেরী নবী হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বর্ণনা

পবিত্র কুরআনে আখেরী নবী হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বর্ণনা

- মাওলানা মাসউদ আহমদ।

।। মাওলানা মাসউদ আহমদ ।।

হযরত আয়েশা (রাযি.)কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তাঁর চরিত্র হলো পবিত্র কুরআন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে সে কুরআন আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। তাঁর দীর্ঘ তেইশ বছরের নবুওয়াতী জীবনে এ কুরআনই ছিল তাঁর দিক নির্দেশক। সেই পবিত্র কুরআনে তাঁর পরিচয় কিভাবে বিধৃত হয়েছে; তা আমাদের জানা প্রয়োজন। কেননা, অন্য যে কোন ঐতিহাসিক তত্ব ও তথ্যের চেয়ে পবিত্র কুরআন তার বাহকের যে পরিচয় দিয়েছে তা একশ’ ভাগ নির্ভুল ও তত্ত্ব সমৃদ্ধ। তাই পবিত্র কুরআনকে অবলম্বন করে আমরা আবিস্কার করার চেষ্টা করি সেই শাশ্বত সত্যের বাহকের পরিচয়।

তিনি আল্লাহর রাসূল; অন্যদের মত তিনিও মরণশীলঃ

ওহূদ যুদ্ধের সাময়িক পরাজয়ের সময় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাহাদাতের গুজব রটার ফলে কিছু সংখ্যক সাহাবা হতোদ্যম হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের সেই নৈরাশ্যের জন্য আল্লাহ তায়ালা সাহাবাদেরকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেনঃ আর মুহাম্মদ তো একজন রাসূল মাত্র; তাঁর পূর্বেও বহু রাসূল গত হয়েছে। তাহলে কি যদি তিনি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে কি তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? (সূরা আলে-ইমরান- ১৪৪)।

তিনি সার্বজনীন রাসূল; তাঁর রিসালত বিশ্বজনীনঃ

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিগত নবী (আ.)গণের মত কোন বিশেষ জাতি কিংবা বিশেষ ভূখন্ড অথবা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে তাঁর রিসালত সীমিত নয়, বরং তাঁর রিসালত সমগ্র বিশ্ব মানবের জন্য বিশ্বের প্রতিটি অংশ প্রতিটি দেশ ও রাষ্ট্র এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ক্বিয়ামত কাল পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত। এছাড়া জ্বীন জাতির জন্যও তিনি আভির্ভূত।

এ ক্ষেত্রে কুরআনের ঘোষণা, আপনি বলুন- হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য সেই আল্লাহর রাসূল, যিনি আসমান ও যমীনের সার্বভৌমত্বের মালিক। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর বাণীবাহক উম্মী নবীর প্রতি, যিনি ঈমান রাখেন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর বাণীতে। আর তোমরা তাঁর অনুসরণ কর যাতে তোমরা সঠিক পথ প্রাপ্ত হও। (সূরা আ’রাফ- ১৫৮)।

আমরা তোমাকে সমগ্র মানুষের জন্য সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী রূপেই পাঠিয়েছি। (সূরা সাবা- ২৮)।

আমরা তোমাকে মানুষ মাত্রের জন্য রাসূল রূপে পাঠিয়েছি। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট। (সূরা নিসা- ৭৯)।

মহান পবিত্র বরকত ওয়ালা সেই আল্লাহ্; যিনি পার্থক্যকারী কিতাব নাযিল করেছেন তাঁর বান্দাহ্র উপর, যেন সে সমগ্র বিশ্বলোকের জন্য সতর্ককারী হতে পারে। (সূরা ফুরক্বান- ১)।

আর এই রাসূলের আগমন অন্যান্য সেই লোকদের জন্যও, যারা এখনও তাদের সাথে এসে মিলিত হয়নি (অর্থাৎ পরে এসে মিলিত হবে)। (সূরা জুমুআহ- ৩)।

তিনি জগদ্বাসীর জন্য রহমত স্বরূপঃ

তিনি ছিলে মানবতার পরম বন্ধু। সার্বিক মঙ্গল ও কল্যাণের আধার। তাঁর আগমন ছিলো বিশ্ববাসীর জন্য রহ্মত স্বরূপ। কুরআনের ভাষায়- আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহ্মত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া- ১০৭)।

তাঁর পাঁচটি গুণঃ

হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহ্বায়করূপে ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। (সূরা আহযাব- ৪৫, ৪৬)।

এতদুভয় আয়াতে আল্লাহ তাঁর হাবীবের পাঁচটি বিশেষ গুণের বর্ণনা করেছেন। এগুলো হলো-

১. ক্বিয়ামত দিবসে উম্মতের জন্য সাক্ষদাতা।
২. মু’মিনদের জন্য সুসংবাদ প্রদানকারী।
৩. তাগুতের অনুসারীদের ভীতি প্রদর্শনকারী।
৪. সত্যের পথে আহ্বানকারী।
৫. তিনি জ্যোতিস্মান আলোক বর্তিকা।
(সংক্ষিপ্ত বাংলা মাআরিফুল কুরআন- ১০৮৭-৮৮ পৃষ্ঠা)।

তিনি শুধুমাত্র সতর্ককারীঃ

এই লোকেরা বলেছে যে, এই লোকটির ব্যাপারে তার রবের পক্ষ থেকে নিদর্শনাবলী কেন নাযিল করা হলো না? বলুন- নিদর্শন সমূহ তো আল্লাহর নিকট, আর আমি তো শুধুমাত্র প্রকাশ্যভাবে সতর্ককারী। (সূরা আনকাবুত- ৫০ আয়াত)।

তিনি সরল-সঠিক পথের দিশারীঃ

আর এমনিভাবে- হে নবী! আমরা আমাদের নির্দেশে একটি রূহ তোমার দিকে ওহী করে পাঠিয়েছি। তুমি কিছুই জানতে না; কিতাব কাকে বলে, ঈমান কি জিনিস? কিন্তু সেই রূহ্কে আমরা একটি আলো বানিয়ে দিয়েছি, যার সাহায্যে আমরা আমাদের বান্দাদের মধ্যে যাকে চাই পথ দেখাই। নিঃসন্দেহে তুমি সরল-সঠিক পথ লোকদের প্রদর্শন করছ। (সূরা আশ্-শূরা- ৫২)।

তিনি খোদায়ী নির্দেশেরই আনুগত্য করেনঃ

তাহলে বলে দাও, হে নবী! এই কুরআনকে নিজের পক্ষ থেকে পরিবর্তিত করা আমার কাজ নয়। আমি সে নির্দেশেরই আনুগত্য করি, যা আমার কাছে আসে। আমি যদি স্বীয় পরওয়াদিগারের নাফরমানী করি, তবে কঠিন দিবসের আযাবের ভয় করি। (সূরা ইউনুস- ১৫)।

তিনি উম্মী নবীঃ

আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত প্রমাণ করার জন্য যেসব মু’জিযা প্রকাশ করেছেন, তন্মধ্যে তাঁকে পূর্ব থেকে নিরক্ষর রাখাও অন্যতম। তিনি লিখিত কোন কিছু পাঠ করতে পারতেন না এবং নিজে কিছু লিখতেও সক্ষম ছিলেন না। এই অবস্থায়ই তিনি জীবনের চল্লিশটি বছর মক্কাবাসীদের সামনে অতিবাহিত করেন।

এরপর হঠাৎ তাঁর পবিত্র মুখ থেকে এমন কালাম উচ্চারিত হতে থাকে, যা বিষয়বস্তু ও ভাবের দিক দিয়ে ছিল মু’জিযা, তেমনি শাব্দিক ব্যাপকতা ও অলংকারের মোহনীয়তার দিক দিয়েও ছিল অনন্য। (সংক্ষিপ্ত তাফ্সীরে মাআরিফুল কুরআন-১০৩২ পৃষ্ঠা)।

কিন্তু কাফির মুশরিকরা এ সত্য উপলব্ধি করতে পারেনি। তারা বলতে লাগলো- এই কুরআন এক মনগড়া জিনিস, যা এই ব্যক্তি নিজেই রচনা করে নিয়েছে এবং অপর কিছু লোক এই কাজে তার সাহায্য করেছে। ….. এতো আগের কালের লোকদের রচিত কথাবার্তা, যা এই ব্যক্তি নকল করিয়ে থাকে। আর তা সকাল সন্ধ্যা তাকে শোনানো হয়েছে। (সূরা ফুরক্বান- ৪-৫)।

এই একই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলিষ্ঠ ভাষায় তাদের এই ধারণা এই বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ওরা বড়ই যুলুম ও অতীব কঠিন মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। তাছাড়া নিুোক্ত আয়াত সমূহেও তাদের এই ধারণা অমূলক প্রমাণিত করেছে।

আপনিতো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করেন নি এবং স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা কোন কিতাব লিখেন নি। এরূপ হলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করত। (সূরা আনকাবুত- ৪৮ আয়াত)।

যে সমস্তলোক, যারা আনুগত্য অবলম্বন করে এ রাসূলের, যিনি উম্মী নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকর্মের, বারণ করেন অসৎ কর্ম থেকে; তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষণা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুসমূহ এবং তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়ে দেন ও বন্দিত্ব অপসারণ করেন, যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল।

সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচার্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নরের অনুসরণ করেছে যা তাঁর সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, কেবল তারাই নিজেদের উদ্দেশ্যে সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। ….. সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর উপর, তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর পথ অনুসরণ কর যাতে সরল পথ প্রাপ্ত হতে পার। (সূরা আ’রাফ- ১৫৭-৫৮)।

উপরোদ্ধৃত দু’টি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবীবের দশটি পরিচয় প্রদান করেছেন। সে দশটি গুণ বা পরিচিতি এই-

১. তিনি রাসূল।
২. তিনি নবী।
৩. তিনি উম্মী।
৪. তাঁর নাম তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
৫. তিনি মা’রূফ- ভালো কাজের আদেশ করেন।
৬. তিনি মুনকার- মন্দ ও শরীয়ত বিরোধী কাজ থেকে নিষেধ করেন।
৭. তিনি যাবতীয় উত্তম, উৎকৃষ্ট, পবিত্র দ্রব্যাদিকে হালাল ঘোষণা করেন।
৮. তিনি সব খারাপ, নিকৃষ্ট, দুর্গন্ধময় জিনিসকে হারাম ঘোষণা করেন।
৯. তিনি লোকদের উপর চাপানো অস্বাভাবিক ও দুর্বহ বোঝাসমূহ দূর করে দেন (মানুষের উপর থেকে আল্লাহদ্রোহী শক্তির আইন পালনের বাধ্যবাধকতা সরিয়ে দেন)।
১০. তিনি মানুষকে নানা প্রকারের দাসত্ব ও শৃংখল থেকে মুক্ত করেন। (আল-কুরআনে নবুওয়্যাত ও রিসালাত- ১৭৩ পৃষ্ঠা)।

তিনি আমাদের মতই মানুষঃ

বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ই একমাত্র ইলাহ্। (সূরা কাহাফ- ১১০)।

তিনি গায়েবের খবর জানেন নাঃ

গায়েবের খবর জানেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, জানেন তিনি উপস্থিতকেও। এ ‘গায়েব’ তিনি ছাড়া আর কারোরই জানার কোন সাধ্য নেই। তবে তিনি যাকে ইচ্ছা জানাতে পারেন। আর তিনি যাকে জানাবেন, তার পক্ষেই সম্ভব তা জানা- ততটুকুই জানা সম্ভব, যতটুকু আল্লাহ তাকে জানাবেন বা জানতে দিবেন।

অতএব, এসব গাইব পর্যায়ের জিনিস সম্পর্কে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু বলেছেন, তা সবই আল্লাহর জানানো ইলম, আল্লাহর নিকিট থেকে জেনে নিয়েই তিনি তা দুনিয়ার মানুষকে জানিয়েছেন। তাই বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাইবের খবর জানতেন; তা বলা যায় না। যদি কেউ তা বিশ্বাস করে, তবে সে আল্লাহর সাথে স্পষ্ট র্শিক করল।

এ পর্যায়ে কুরআনের ষোষণা- “বলুন হে নবী! আমি তোমাদের বলছিনা যে, আমার নিকট আল্লাহর ধনভান্ডার রয়েছে। আর আমি গাইব জানি না। …. আমি তো শুধু তা-ই অনুসরণ করে চলি, যা আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়”। (সূরা আনআম- ৫০)।

আমি তো তোমাদের বলিনা যে, আল্লাহর ধনভান্ডার আমার নিকট রয়েছে। আর আমি তো গাইব জানিনা; এও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশ্তা। (সূরা হূদ- ৩১)।

বলুন হে নবী! আমি আমার নিজের জন্য কল্যাণ ও ক্ষতির মালিক নই। তবে ঘটবে তা-ই যা আল্লাহ চাইবেন। আমি যদি গাইব-ই জানতাম, তাহলে আমি বিপুল কল্যাণ লাভ করে নিতাম এবং কোনরূপ অনিষ্টই আমাকে স্পর্শও করত না। আমি তো আর কিছু নয়ই, শুধু সতর্ককারী ও ঈমানদার লোকদের জন্য সুসংবাদদাতা। (সূরা আ’রাফ- ১৮৮ আয়াত)।

তিনি কবিও নন গণকও ননঃ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়্যাত অমান্যকারী কাফিররা মানুষের মনে কুরআনের বিস্ময়কর প্রভাবের কথা অস্বীকার করতে পারত না। তাই তারা কখনও কুরআনকে যাদু এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যাদুকর বলত। কখনও কুরআনকে কাব্য এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কবি বলে আখ্যা দিত।

এভাবে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করত যে, এই বিস্ময়কর প্রভাব আসমানী কালাম হওয়ার জন্য নয়, বরং হয় এটা যাদু, যা মানুষের মনে প্রভাব বিস্তার করে, না হয় কবিতা যা সাধারণের মনে সাড়া জাগাতে পারে। আল্লাহ তায়ালা তাদের এই ধারণাকে অসার প্রমাণিত করেন এবং বলেন-

আমি রাসূলকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তা তার জন্য শোভনীয়ও নয়। এটা তো এক উপদেশ ও প্রকাশ্য কুরআন। (সূরা ইয়াসীন- ৬৯)।

এবং এটা কোন কবির কালাম নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস কর এবং এটা কোন গণকের কথাও নয়; তোমরা কমই অনুধাবন কর। (সূরা হাক্কাহ- ৪১, ৪২)।

তিনি বিভ্রান্ত নন, মস্তিষ্ক বিকৃত নন, উন্মাদ নন, তিনি ভীতি প্রদর্শনকারী-

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়্যাত দাবীর পূর্ব পর্যন্ত মক্কাবাসী কাফিরদের কাছে ছিলেন সত্যবাদী। তাঁর চরিত্র, অভ্যাস, সততা ও বিশ্বস্ততার জন্য তারা তাঁকে আল্ আমীন বলে সম্বোধন করত। কিন্তু তিনি যখন তাওহীদের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন, তখন তারা তাঁকে মিথ্যবাদী, মস্তিষ্ক বিকৃত পাগল ও বিভ্রান্ত বলে অপপ্রচার শুরু করে দিল। মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন। তীব্র ভাষায় তাদেরকে জানিয়ে দিলেন-

তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হননি, বিপথগামীও হননি এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কুরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়। (সূরা নাজ্ম- ২-৪ আয়াত)।

তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, তাদের সঙ্গী লোকটির মস্তিষ্কে কোন বিকৃতি নেই? তিনি তো প্রকৃষ্টভাবে ভীতি প্রদর্শনকারী। (সূরা আ’রাফ- ১৮৪ আয়াত)।

আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহে আপনি উন্মাদ নন। (সূরা ক্বলম- ২)। এবং তোমাদের সাথী উন্মাদ পাগল নন। (সূরা তাক্বীর- ২২)।

তিনি ও তাঁর সাথীবৃন্দঃ

মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সাথীরা কাফিরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল, আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু, সিজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সিজাদর চিহ্ন। (সূরা ফাতহ- ২৯)।

তিনি আদর্শ চরিত্রের অধিকারীঃ

আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা ক্বলম- ৪ আয়াত)।

আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন। পক্ষান্তরে আপনি যদি রুঢ় ও কঠিন হৃদয় হতেন, তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেতো। (সূরা আলে ইমরান- ১৫৯)।

তিনি মুমিনদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজনঃ

নবী মু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতা। (সূরা আহযাব- ৬)।

তিনি অনুসরণীয়ঃ

রাসূলুল্লাহ’র মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের আকাংখা করে এবং আল্লাহ্কে অধিক স্মরণ করে। (সূরা আহযাব- ২১)।

তাঁর আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যঃ

আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যকে সকলের উপর ফরয করেছেন। যারা তাঁর আনুগত্য করবে তারা প্রকারান্তরে আল্লাহ্রই আনুগত্য করলো। আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য বাধ্যতামূলক। তাই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। (সূরা ফাতহ- ১০ আয়াত)।

তিনি সর্বশেষ নবীঃ

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন নবুওয়্যাত ও রিসালাতের এ ধারার সমাপ্তিকারী। তাঁর মাধ্যমেই দ্বীন ইসলাম পূর্ণতা লাভ করেছে। তাঁর পরে আর কোন নবী বা রাসূল আসবেন না। পবিত্র কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতখানা অত্যন্ত জোরালোভাবে সেকথারই প্রমাণ দেয়-

মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তির পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। (সূরা আহযাব ৪০)।

উক্ত আয়াত তো স্পষ্টভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খাতামুন্ নাবিয়্যীন বলে ঘোষণা দিচ্ছে। এছাড়াও প্রায় ১০০খানা আয়াত রয়েছে, যা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত নবুওয়্যাত ও রিসালাত ধারার সামাপ্তির ইঙ্গিত দেয়।

উপরোক্ত আয়াতসমূহ থেকে পবিত্র কুরআন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমাদের সামনে কীভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, তা সহজে স্পষ্ট হল। পরম করুণাময় আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর নির্দেশ পরিপূর্ণ ও যথাযথভাবে পালন করতে তাঁরই রাসূলের প্রদর্শিত সুন্নাহ মোতাবেক জীবনকে সাজানোর তাওফীক দান করুন। আমীন॥

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা, খতীব- বারিধারা জামে মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার এবং উপদেষ্টা- উম্মাহ ২৪ ডট কম।