Home সোশ্যাল মিডিয়া হত্যা করে ধর্ষণ বন্ধের চিন্তা সঠিক ভাবনা নয়

হত্যা করে ধর্ষণ বন্ধের চিন্তা সঠিক ভাবনা নয়

।। মো মুক্তাদির রশীদ রোমিও ।।

সম্প্রতি ভারতে ধর্ষণের সন্দেহভাজন আসামিদেরকে পুলিশ কাস্টডিতে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশেও সমালোচনা এড়াতে হারকিউলিসের নামে হত্যা করার প্রবণতা দীর্ঘদিনের। পুর্বে বড় সংখ্যক মানুষ এধরণের হত্যা সমর্থন করেছে এবং মনে করে যে ধর্ষণের বিচার হত্যার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। তবে তার ভিন্নতা পেলাম গতকাল সকালে এক পুলিশ কর্মকর্তার ভাষায়।

মেধাবী ও গ্রহণযোগ্য এই পুলিশ কর্মকর্তা লিখেছেন- “পুলিশের এনকাউন্টারে ধর্ষকদের হত্যা করলে ধর্ষণ বন্ধ হবে এমন ধারণা পোষণকারীরা নিতান্তই নাবালক”।

এ কথাটি তিনি সাহস করে বলেছেন, যা কিছু সংখ্যক লোকজন বলে আসছিল বহুদিন ধরেই।

ঢাকা শহরের ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে ভয়ঙ্কর কিছু তথ্য আছে যা খুব কমসংখ্যক মানুষই সত্যিকারার্থে জানে। সে বিষয়গুলোতে আমি আলোকপাত করতে চাই। তবে ধর্ষণ কখনো যুদ্ধাস্ত্র বা কখনো বিকারগ্রস্থ মানুষের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

ধর্ষণে যে শারীরিক ক্ষতি হয় তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি হয় মানসিক। অনেকে ধর্মীয় অনুশাসনের কথা বলেন। তবে পরবর্তীতে দেখা যায় প্রায় সকল মতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে একইভাবে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠছে।

সুশীল সমাজের একাংশ অবশ্য তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী মিউচুয়াল কন্সেন্ট দিয়ে ধর্ষণকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কখনো চাকরির প্রলোভন, বিশেষ সুবিধা ও পরিবারকে প্রভাবিত করেন । সভ্য সমাজে অনেকে কঠিন কঠিন আইন প্রয়োগের কথা বলেন।

তারপরেও পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী প্রত্যেকদিন ১ ডজন করে ধর্ষণের ঘটনা রেকর্ড করা হচ্ছে। যদিও আমি মনে করি, বড় সংখ্যক ধর্ষণ ঘটনা কখনো কোনো আইনগত সংস্থার কাছে আসে না। তবে আমার কাছে ধর্ষণের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন রকম।

কঠোর আইনের মধ্য দিয়ে বা হত্যার মধ্য দিয়ে যে ধর্ষণ বন্ধ করা যায় না এটা আজ স্বতঃসিদ্ধ। ধর্ষণের জন্য বরং অধিকাংশক্ষেত্রে অভিযুক্ত পরিবারকে আমি দোষী বলে মনে করি। যদিও মিথ্যা মামলার গল্পও আমাদের অজানা নয়।

আমার কাছে বারবারই মনে হয়েছে, ধর্ষণের যে বিষয়টি অনেকটা পরিবার থেকে সৃষ্ট সমস্যা। আমি মনে করি, পরিবারে বাবা মা তাদের যৌক্তিক আচরণ এবং সন্তানকে যোগ্য করে তোলার মধ্য দিয়েই ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব।

দেখুন, যদি সন্তান দেখে তার মায়ের সঙ্গে বাবার মিথস্ক্রিয়াটি একেবারে যুক্তিযুক্ত নয় এবং দুর্ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তার মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক চলমান, সে ক্ষেত্রে সন্তানের ভিতর অন্যকোন নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার মতো কোনো যৌক্তিক কারণ হয়ে ওঠে না।

আবার দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাবশালী কর্মকর্তা যখন তার মাঝ বয়সী কোন গার্লফ্রেন্ড নিয়ে নিজ বাচ্চার মাকে দেশে রেখে, সিঙ্গাপুরের মালয়েশিয়াতে ঘুরেন, নিশ্চয়ই সন্তানের মনে এক অদৃশ্য যৌন নির্যাতনের বাসনা ভর করে বসে।

কিংবা বাবার সম্পর্ক যদি দেখে, কোনো বাসার কাজের লোকের সঙ্গে বা অফিসের স্টাফ এর সঙ্গে, সে ক্ষেত্রে সন্তানের ভেতরে যৌনবিকৃতি আসাটা খুবই স্বাভাবিক।

তদ্রুপ মায়ের ভূমিকা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মা যদি তার সন্তানকে অর্থাৎ নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না করেন। কেবল ছেলে তাই মাছের মাথা খাবে দর্শন রাখেন, তাহলে কারো জীবন নিয়ন্ত্রিত হয় না। অর্থাৎ আপনি যখন আপনার সন্তানকে বড় মাথা পরিবেশন করবেন, কিন্তু নারীর প্রতি সম্মান শেখাবেন না। তখন দিন শেষে বড় হয়ে নারীর প্রতি আমার বা আপনার অসম্মানমূলক আচরণ আসাটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়।

পুনশ্চঃ উপরোক্ত কথাগুলো কোনক্রমেই আত্মজাহির মূলক নয়, বরং কেবলমাত্র আত্মোপলব্ধি থেকে। এর মধ্য দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে, সেই দাবিও করছি না, বরং আমি কেবলমাত্র বলার চেষ্টা করছি, পরিবারে যার যার জায়গায় দায়িত্বশীল হতে পারলে ধর্ষণের মতো অভিশাপ কমার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।

লেখক: সাংবাদিক ও সমাজ চিন্তক।