Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন অমুসলিমদের সাথে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি

অমুসলিমদের সাথে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি

।। মুফতি মুহাম্মাদ তাকী উসমানী ।।

[বিশ্বখ্যাত ইসলামী স্কলার শাইখুল ইসলাম মুফতী তাকী উসমানী হাফি. গত ৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ইং আরব আমিরাতের আবুধাবির এক ইসলামী কনফারেন্সে ‘অমুসলিমদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি’ শীর্ষক এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। বিষয়বস্তুর গুরুত্ব এবং সময়ের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে মূল্যবান বক্তব্যটি (ঈষৎ সংক্ষেপিত) উম্মাহ পাঠক সমীপে উপস্থাপন করা হল]

হামদ, সালাতের পর, আজকের আলোচ্য বিষয় হল, ‘ফিকহুল মুআহাদাত ওয়াল মাওয়াছীক ফিল ইসলাম’। আমি আপনাদের সামনে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা তুলে ধরব। আমি আপনাদের সামনে মুসলমান অমুসলমানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষার কিছু উজ্জল দৃষ্টান্ত তুলে ধরব।

আমার প্রথম কথা হল, যদি আমরা ইসলামের জীবন পদ্ধতির প্রতি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাব যে, ইসলামের শুরু শেষ সবটাই বিভিন্ন ওয়াদা ও প্রতিশ্রতিতে আবদ্ধ। ইসলামে শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতিই বা শুধু দ্বীনদারীর প্রতিশ্রুতিই নয়, বরং আমরা দেখতে পাই যখন আমরা ইসলাম গ্রহণ করি, এই সাক্ষ্য প্রদান করি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আমাদের সরদার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার রাসূল। এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তাআলার  সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে যাই। এভাবে আমাদের পুরো জীবনটাই নানা রকমের চুক্তি ও প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ।

যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় ছিলেন, তিনি ও সাহাবায়ে কেরাম মক্কার মুশরিক কর্তৃক নানা রকম অসহনীয় যুলুম নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন। এসময়েও প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যাপারে সূরা বনী ইসরাঈলের আয়াত নাযিল হয়। তাতে বলা হয়, ‘তোমরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা কর, কেননা সে সম্পর্কে মানুষকে জিজ্ঞাসা করা হবে। নির্যাতন শিকারের একঠিন মুহূর্তেও আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অঙ্গীকার রক্ষার আদেশ করেছেন।

মক্কায় মুশরিকদের সঙ্গে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের যেসব অঙ্গিকার ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তার সবই সম্মান ও মর্যাদার দাবী রাখে। অতঃপর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করলেন, সেখানে গিয়ে বৈচিত্রময় এক রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। যেখানে মুসলমান, ইয়াহুদী ও কিছু খ্রীস্টান ছিলেন। এসময়ে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৈচিত্রময় সমাজে [শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য] অঙ্গিকার ও চুক্তির কিছু ধারা নির্ধারণ করেন। এবং সেসব ধারা বাস্তবায়ন করে দেখান।

আমাদের স্বর্ণোজ্জল ইতিহাসে অঙ্গিকার ও চুক্তি রক্ষা করার যে দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই, আমার দৃষ্টিতে এমন কোন রাস্ট্র, এমন কোন সমাজ নেই- যেখানে এর কোন নমুনা খুঁজে পাওয়া যাবে। উদাহরণরস্বরূপ আপনাদের সামনে বিখ্যাত সাহাবী হুযাইফা ইবনে য়ামান (রাযি.)এর ইতিহাসখ্যাত ঘটনাটি তুলে ধরছি। যা সহীহ মুসলিমসহ হাদীসের বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করার কারণ হল, আমি ও আমার পিতা হুসাইল মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। পথিমধ্যে কাফেররা আমাদের পথ আগলে ধরল। বলল, তোমরা কি মুহাম্মদের সাথে যোগ দেওয়ার উদ্দ্যেশ্যে বের হয়েছ? তারা উত্তর দিল, না তার উদ্দ্যেশ্যে নয়। আমরা মদীনার উদ্দ্যেশ্যে বের হয়েছি। তখন তারা আমাদের কাছ থেকে এ অঙ্গিকার নেয় যে, আমরা মদীনায় যাব কিন্তু তাঁর সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করব না। আমরা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে এ অঙ্গিকারের কথা জানালাম। সঙ্গে সঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা ফিরে যাও। আমরা তাদের সঙ্গে কৃত অঙ্গিকার রক্ষা করব, আর তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইব। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ১৭৮৭)।

কী কঠিন সাহসী পদক্ষেপ! ইসলামী ইতিহাসের প্রথম যুদ্ধ। ইসলাম ও মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ। আল্লাহ তাআলা হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য রেখা টেনে দিলেন। এবং এদিনটিকে পার্থক্য নির্ণয়ের দিন হিসেবে আখ্যা দিলেন। ইসলামী ইতিহাসের এই প্রথম যুদ্ধে, এক হাজারের সঙ্গে তিনশত তের জনের এই জিহাদে অংশগ্রহণে যে ছাওয়াব, গৌরব ও মর্যাদা রয়েছে তা আর কখনোই লাভ করা সম্ভব নয়। মুসলমানের সংখ্যা স্বল্পতার কারণে একজন হলেও যোদ্ধাদের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। অপরদিকে এই অঙ্গিকারটি যেহেতু আবু জেহেল ও তার বাহিনীর পক্ষ থেকে জোরজবরদস্তিমূলক ও অপমানমূলক ছিল, তাই তা ভঙ্গ করারও যথেষ্ট সুযোগ ছিল। এতদসত্ত্বেও রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাহ্যিকভাবে কৃত এই চুক্তি ও অঙ্গিকারকে ভঙ্গ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করলেন। চুক্তি ভঙ্গ করার সুযোগ সত্ত্বেও এমন এক কঠিন মুহূর্তে, চুক্তি ভঙ্গ না করা ও অঙ্গিকার রক্ষা করার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

আমার বক্তব্যের উদ্দেশ্য হল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু স্পষ্ট শব্দে কৃত অঙ্গিকারকেই রক্ষা করার শিক্ষা দিয়ে যাননি। বরং কোন অঙ্গিকার ভঙ্গ করা যদি পরিবেশ পরিস্থিতির দাবিও হয়, এতদসত্ত্বেও অঙ্গিকার রক্ষা করতে আদেশ করেছেন।

এর দৃষ্টান্ত কুরআনুল কারীমেই রয়েছে। হাকীমুল উম্মাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রাহ.) যিনি হিন্দুস্তানের একজন বিজ্ঞ আলেম ছিলেন, হাজারেরও বেশি রচনা রেখে গেছেন। তিনি তা বলেছেন। অতঃপর আমার পিতা মুফতী শফী রহ. তার কিতাব ‘আহকামুল কুরআন’ এ উল্লেখ করেছেন।

হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ঘটনা। যখন তিনি অমুসলিম এক কিবতিকে হত্যা করেছিলেন। যদিও এই হত্যাকাণ্ড ছিল ভুলক্রমে, ইচ্ছাকৃত ছিল না। কিন্তু নবী মূসা আলাইহিস সালাম তাকে অভিযোগের বিষয় আখ্যা দিচ্ছেন। এবং বললেন, ‘আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ রয়েছে। তাই আশংকা হচ্ছে যে, আমাকে তারা হত্যা করে ফেলবে।’ (সূরা শুআরা- ১৪)।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, এটাকে কিভাবে চুক্তিভঙ্গ আখ্যা দেয়া যায়? মূসা আলাইহিস সালাম তো একজন মুসলমান। তাদের মাঝে তো চুক্তি বা অঙ্গিকার ছিল না। কিন্তু আমার পিতা মুফতী শফী (রাহ.) মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রাহ.)এর অনুস্বরণে তার ‘আহকামুল কুরআন’ এ উল্লেখ করেন যে, যদিও তাদের মাঝে স্পষ্টত কোন চুক্তি ছিল না। কিন্তু তবুও পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে এক পরোক্ষ চুক্তি ছিল। যেহেতু সেটা ছিল মুসলিম ও অমুসলিমদের সম্মিলিত সমাজ। এটাকে বলা হয় ‘বৈচিত্রময় সমাজ’। যে সমাজে মুসলিম-অমুসলিম একসঙ্গে শান্তি ও নিরাপত্তায় বসবাস করে। সেখানে এমন পরোক্ষ চুক্তি থাকে যে, কেউ কারো ক্ষতি করতে পারবে না। সে কারণেই মূসা আলাইহিস সালাম তার ভুলক্রমে হত্যাকেও অভিযোগের বিষয় বলে আখ্যা দিয়েছেন।

পরোক্ষ চুক্তি রক্ষার আরেকটি দৃষ্টান্ত সুনানে আবু দাউদে হযরত রাফে ইবনে খাদীজ রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে।  তিনি বলেন, কুরাইশ আমাকে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে ‘দূত’ হিসেবে পাঠাল। যখন আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখলাম আমার অন্তরে ইসলাম গ্রহণের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর কসম, আমি আর তাদের কাছে ফিরে যাব না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, আমি চুক্তি ভঙ্গ করি না, আর কোন দূতকে আটকেও রাখি না, তুমি বরং ফিরে যাও। এখন তোমার অন্তরে যে আগ্রহ জন্মেছে তা যদি বহাল থাকে তবে তুমি পুণরায় ফিরে এসো। তিনি বলেন, তখন আমি চলে যাই। পরে আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে ফিরে এসে মুসলমান হয়ে যাই। (আবু দাউদ, হাদীস নং- ২৭৫৮)।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও যারা আবু রাফে’ কে প্রেরণ করেছেন, তাদের মাঝে কোন লিখিত স্পষ্ট চুক্তি ছিল না। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ফিরে যেতে বললেন পাছে না সামাজিকভাবে বিবেচ্য চুক্তি লঙ্ঘন হয়ে যায়।

এমন আরো অনেক উজ্জ্ব দৃষ্টান্ত রয়েছে, যা ভিন্ন কোন সমাজে পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। আমি আরো একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করছি। সুনানে আবু দাউদে এসেছে। সাহাবী হযরত মুআবিয়া রাযি. ও রোমের মাঝে চুক্তি ছিল। চুক্তি শেষ হওয়ার কিছু কাল আগেই তিনি রোমকদের অঞ্চলের দিকে অগ্রসব হচ্ছিলেন, যাতে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেই হামলা করতে পারেন।

এদিকে এক ব্যাক্তি ঘোড়ায় চড়ে এসে বলতে লাগল, আল্লাহু আকবার, চুক্তি রক্ষা করুন। চুক্তি ভঙ্গ করবেন না। সবাই তাকিয়ে দেখে, সাহাবী আমর ইবনে আবাসা। হযরত মুআবিয়া (রাযি.) তার কাছে লোক পাঠিয়ে বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, কোন ব্যক্তির মাঝে ও অন্য কোন সম্প্রদায়ের মাঝে যদি কোন চুক্তি থাকে তাহলে সে যেন তা ভঙ্গ না করে । যদি তাদের পক্ষ থেকে বিশ্বাস ভঙ্গ করার আশংকা থাকে তবে তাদেরকে স্পষ্ট করে তাদের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করার বিষয়ে জানিয়ে দিবে।’ এহাদীস শুনে হযরত মুআবিয়া (রাযি.) ফিরে আসলেন। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং- ২৭৫৯)।

হযরত মুআবিয়া (রাযি.) এসময়ের মধ্যে যে অঞ্চল বিজিত হয়েছিল তা তাদেরকে ফেরত দিলেন। এরকম আরো অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে যা কেবল ইসলামী সমাজেই পাওয়া সম্ভব।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে তিনি যে হিলফুল ফুযুলে অংশ গ্রহণ করেছিলেন, স্বয়ং তিনি নবুওয়াত প্রাপ্তির পরও বলেছিলেন, “যদি এরকম শান্তিচুক্তির সুযোগ আবার আসতো, তাহলে অবশ্যই সাড়া দিতাম। এই হিলফুল ফুযুল ছিল মাজলুমের সাহায্যের জন্য। চাই সে মুসলমান হোক অথবা অমুসলিম”।

সবশেষে আমি দুটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেষ করছি। এক. হিলফুল ফুযুল ছিল মুসলমান ও অমুসলিমদের মাঝে শান্তি চুক্তি, যা দেশ, গোত্র ও দল নির্বিশেষে হতে পারে। এর মৌলিক স্লোগান ছিল- আমরা মাযলুমের পাশে থাকব। এ চুক্তিতে রাসূল (সা.) ছিলেন এবং নবুওয়াত প্রাপ্তির পরও এমন চুক্তিকে সমর্থন দিয়েছেন, বহাল রেখেছেন। এ জাতীয় চুক্তিকে শান্তি চুক্তি বলা হয়।

জাতিসংঘের ক্ষেত্রে এমনটা আশা করা হচ্ছিল যে, সে এই চুক্তিগুলো রক্ষা করবে। জাতিসংঘের চুক্তির ধারাগুলোর উদ্দেশ্য হিলফুল ফুযুলের মতই। এজন্য জাতিসংঘের কর্ত্যব্য হবে- এগুলো বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। মাযলুমকে সাহায্য করা। যাই হোক, যেখানেই হোক। কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের বিষয় হল, আজ জাতিসংঘ মযলুম জনতার সাহায্যে, পূর্ব-পশ্চিমে দুর্বল মানুষের সাহায্যে কাজে আসছে না। জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণ আজ প্রতাপশালিদের হাতে। আর মাযলুম জনতার কোন গুরুত্ব জাতিসংঘের কাছে নেই। হ্যাঁ, কিছু জনকল্যাণমূলক কাজ সে করেছে। আমরা তার শুকরিয়া আদায় করছি। কিন্তু আমরা চাই জাতিসংঘ আজও হিলফুল ফযুলের মত কাজ করে যাক। মাযলুমের পাশে দাঁড়াক, যেই হোক, যেখানেই হোক। মুসলিম হোক বা অমুসলিম হোক। খৃষ্টান হোক বা ইয়াহুদি হোক বা হিন্দু হোক। মোটকথা মাযলুমের পাশে থাকতে হবে। তাকে সাহায্য করতে হবে।

দ্বিতীয় ও সর্বশেষ বিষয় হল, আমি মুফতী শাওকী আল্লাম এর কথা শুনে খুবই আশ্চর্যান্বিত হলাম, আমি হতবাক হলাম যে, মুসলমান ও অমুসলিমদের পরস্পর বসবাস ও লেনদেন জায়েয কি জায়েয নয়- এ বিষয়ক ফতোয়ার একটি পরিসংখ্যান তিনি তৈরি করেছেন। এতে তিনি দেখেছেন যে, শতকরা নব্বইভাগ ফতোয়াই হল মুসলিম ও অমুসলিমদের পরস্পর বসবাস ও লেনদেন নাজায়েযের পক্ষে।

আল্লাহর কসম! এমন ফতোয়ার কথা আমাদের জানা নেই। আমার যদ্দুর জানা আছে, সকল উলামায়ে কেরামই মুসলিম ও অমুসলিমদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে। এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটা তো নিষিদ্ধ নয়ই, বরং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান একটি প্রশংসনীয় বিষয়। তবে এই সহাবস্থান যদি দ্বীনি সব সীমারেখাকে নস্যাৎ করে দেয়, তবে তা ফুকাহায়ে কেরামের দৃষ্টিতে নাজায়েয। আর যদি মুসলিম ও অমুসলিমদের সহাবস্থান শান্তিপূর্ণ উপায়ে হয়, তবে তা শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাকসাদ।

তবে সহাবস্থাস গ্রহণ করতে গিয়ে যাতে ইসলাম ও কুফরের মাঝে নির্ধারিত সীমারেখা বা ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যবোধ মুছে না ফেলা হয়। আর এটাই আমার জানামতে শরীয়তে নিষিদ্ধ। ফুকাহায়ে কেরাম যেটাকে নিষিদ্ধ মনে করেন সেটা হলো, মানুষ সহাবস্থানের কারণে ভিন্ন ধর্মের শিআর বা ধর্মীয় পরিচিতিকে গ্রহণ করে নিবে। এমন আশংকা ছাড়া স্বাভাবিকভাবে শুধু শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে কোন ফকীহ বা ইসলামী আইনবিদ কখনোই নিষিদ্ধ করতে পারেন না।

যারা কোন শর্ত ছাড়াই মুসলিম ও অমুসলিমের সামজিক সহাবস্থান নিষিদ্ধ বলে দিয়েছেন, তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী। তাদের এমন ফতোয়া বিভ্রান্তিকর। আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। এমন বিভ্রান্তিকর ফতোয়া যদি ইসলামী বিশ্বে প্রচারিত হয়, তবে তা হবে অমুসলিমদের সামনে ইসলামের রূপরেখাকে বিকৃত করার নামান্তর।

এখানেই আমার বক্তব্য সমাপ্ত করছি। আমি আমার জন্য ও সকল মুমিনদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

ভাষান্তর: মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হাকীম

শিক্ষক- জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া, মুহাম্মদপুর, ঢাকা।