Home রাজনীতি জমিয়তের সফল কর্মী সম্মেলন: দলের অভূতপূর্ব অগ্রগতি ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা সবার নজর...

জমিয়তের সফল কর্মী সম্মেলন: দলের অভূতপূর্ব অগ্রগতি ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা সবার নজর কেড়েছে

উম্মাহ প্রতিবেদন: বিগত ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর ঢাকাস্থ আমেলা সদস্যদের বৈঠকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কর্মী সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দলের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফীকে আহ্বায়ক করে ১টি কর্মী সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। বাস্তবায়ন কমিটি ১৪ ফেব্রুয়ারীকে সামনে রেখে কার্যক্রম শুরু করে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কর্মী সম্মেলন উদযাপনের জন্য লাখ লাখ কর্মীর উপস্থিতির লক্ষ্যে দেশ ব্যাপী জটিকা সফর করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। দেশের স্বক্রীয় ৪২ টি শাখায় সফর সম্পন্ন করে দেশব্যাপী কর্মীদের মধ্যে কর্মী সম্মেলনের আবেদন তৈরী করতে সক্ষম হয় বাস্তবায়ন কমিটি। সারা দেশের জনশক্তি দলবদ্ধভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়েছিলো। সিদ্ধান্তের পরপরই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ে ও ডিএমপি কমিশনার বরাবরে যথারীতি দরখাস্ত করা হয়। গণপূর্ত বিভাগ পুলিশ প্রশাসনের অনুমোদনের শর্তে মাঠ ব্যবহারের অনুমোদন প্রদান করে।

কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের একাংশ। ছবি- উম্মাহ।

পুলিশ প্রশাসন আশ্বাস দিলেও নির্ধারিত তারিখের ২ দিন পূর্বে নানা অজুহাতে অনুমোদন বাতিল করে দেয়। তাৎক্ষনিক বাস্তবায়ন কমিটি গুলিস্থানস্থ কাজী বশির মিলনায়তন বুকিং দিয়ে নতুন করে অনুমোদনের প্রচেষ্টা চালান। অবশেষে সম্মেলনের আগের রাত ৮.০০ টার পর অনুমোদন পাওয়া যায়।

রাত ৮.০০ টার পর সারা দেশের নেতা-কর্মীদের কাছে কাজী বশির মিলনায়তনের সংবাদ জানানো হয়। অনুমোদনের ব্যাপারে জনশক্তির মধ্যে অনিশ্চয়তা থাকায় সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে উন্মুখ হয়ে থাকা নেতা-কর্মীরা কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ে যায়। ফলে জনশক্তির একটি বিরাট অংশ সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেনি।

জমিয়তের কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। ছবি- উম্মাহ।

১৪ই ফেব্রুয়ারী ভোরেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা কাজী বশির মিলনায়তনে এসে উপস্থিত হতে থাকে। জুমআর নামাযের পূর্বে কাজী বশির মিলনায়তনের মাঠ ভর্তি হয়ে যায় জমিয়ত নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে। মাঠেই জুমআর নামায আদায় করা হয়। মাও. খালেদ সাইফুল্লাহ সা’দী সাহেবের ইমামতিতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী জুমআর নামায আদায় করেন। নামাজের পরপরই দলীয় নেতা-কর্মীদের পদাভরে হলের ভিতর ও বাহির কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়।

সদরে জমিয়ত আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ী, মহাসচিব আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী, বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী সহ দলের সিনিয়র নেতা-কর্মীরা নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই প্রোগ্রামস্থলে উপস্থিত হন। ২ টা বাজার সাথে সাথে আসন গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কর্মী সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীনের সঞ্চালনায় একে একে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন দলের সভাপতি, মহাসচিব, সহসভাপতিগন ও যুগ্মমহাসচিবরাসহ জাতিয় নেতৃবৃন্দ।

আসন গ্রহণ শেষ হলে পবিত্র কালামুল্লাহ থেকে তেলাওয়াত করেন লালবাগ শাহী জামে মসজিদের খতিব জাতীয় কারী মাওলানা আবু রায়হান। তেলাওয়াতের পরপরই একটি ইসলামী সঙ্গিত পরিবেশন করা হয়। অত:পর জমিয়তের সহসভাপতি ও কর্মী সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।

স্বাগত বক্তব্যের পর শুরু হয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য। সভাপতির বক্তব্য রাখেন- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর সভাপতি আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ী, প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন- জমিয়তের সংগ্রামী মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।

সম্মেলনস্থল শুরুতেই কানায় কানায় ভরপুর হয়ে পড়ায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী মাঠে অবস্থান নিয়ে প্রজেক্টর ডিসপ্লেতে নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনেন।

বক্তব্য রাখেন- সহসভাপতি আল্লামা শায়েখ জিয়াউদ্দীন, মাওলানা জহীরুল হক ভূঁইয়া, আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, খুতবায়ে সাদারত পাঠ করেন- যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, সম্মেলনের প্রস্তাবনা পেশ করেন- যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া।

আরো বক্তব্য রাখেন- যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজীজ, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মুফতী মুনীর হোসাইন কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা নাজমুল হাসান, সহকারী মহাসচিব মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী, প্রিন্সিপাল মাওলানা শোয়াইব আহমদ, মাওলানা আতাউর রহমান, মাওলানা জামিল আহমদ আনসারী, মাওলানা আব্দুল্লাহ হাসান, মাওলানা ছানাউল্লাহ মাহমূদী, ঢাকা মহানগর সহসভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাসিক মদীনা সম্পাদক আহমদ বদরুদ্দীন খান, অর্থ সম্পাদক মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী, দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা লোকমান মাজহারী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা বশীর আহমদ, মাওলানা আব্দুর রহমান সিদ্দীকী, মাওলানা আফজাল হোসেন রহমানী, মাওলানা নাসীরুদ্দীন মুনীর, মাওলানা শাহজালাল, সহকারী প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল জলিল ইউসুফী, সমাজ সেবা সম্পাদক- মাওলানা ফেরদাউছুর রহমান, দফতর সম্পাদক মাও. আব্দুল গাফফার, যুব জমিয়ত সভাপতি মাওলানা তাফহীমুল হক, ছাত্র জমিয়ত সভাপতি মাওলানা এখলাছুর রহমান রিয়াদ।

কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপদেশ ও দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্যে তৃণমূল পর্যন্ত সকল নেতাকর্মী ব্যাপকভাবে উজ্জীবিত ও প্রেরণা লাভ করেন।

নেত্রকোনা জেলার সভাপতি মুফতী তাহের কাসেমী, নরসিংদী জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুর রহিম, রাজবাড়ী জেলা সভাপতি মাওলানা মাহবুবুর রহমান, ময়মনসিংহ মহানগর সভাপতি মাওলানা নূরুল আবছার মাছূম, ফরিদপুর জেলার সহসভাপতি হাফেজ কবির আহমদ, সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফখরুজ্জামান, সুনামগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তৈয়বুর রহমান চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক মুফতী সিদ্দীকুর রহমান, কিশোরগঞ্জ জেলা সেক্রেটারী মাওলানা শফীকুর রহমান, ঢাকা মহানগর যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা বশীরুল হাসান খাদিমানী, নারায়নগঞ্জ জেলা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হারুনুর রশিদ, যুব জমিয়ত সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইছহাক কামাল, ছাত্র জমিয়ত সাধারণ সম্পাদক হাফেজ হুজাইফা বিন ওমর।

এছাড়া প্রবাসী জমিয়ত নেতা মাওলানা বেলাল উদ্দিন, মাওলানা আহমদ মাদানী, মাওলানা মাসউদ আজহার, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েছসহ গন্যমান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সমগ্র সম্মেলন সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাছির উদ্দিন খান।

সভাপতির মুনাজাতের মধ্য দিয়ে কর্মী সম্মেলন শেষ করে আছরের নামায আদায় করা হয় প্রোগ্রাম স্থলেই। তারপর বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কর্মীরা গাড়ি বহর নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যান। বাস্তবায়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ রাস্তায় কোনো সমস্যা হলো কি না তারও খোঁজ-খবর রাখেন। আল্লাহর রহমতে সকল কর্মীরাই সহীহ সালামতে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে গিয়েছেন। কর্মী সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটি এ সম্মেলনের সাফল্যের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন এবং সকল নেতা-কর্মীদের ত্যাগ-কুরবানীর জন্য তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আল্লাহ এ কর্মী সম্মেলনের অনুপ্রেরণা নিয়ে সারা দেশে জমিয়তের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও বেগবান করার তৌফিক দিন। আমীন।