Home ওপিনিয়ন এই হলো আমাদের সেক্যুলার বন্ধুদের যুক্তি!

এই হলো আমাদের সেক্যুলার বন্ধুদের যুক্তি!

।। মাওলানা আহমাদ উল্লাহ ।।

আপনি কাউকে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম বা ময়লার ট্যাংকি পরিস্কারের কাজ দিলেন, লোকটি যদি আপনার প্রস্তাবিত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সম্মত হয়; তাহলে সেটা বেআইনী নয়।

বেশ্যাপল্লীর কাউকে কিছু টাকার বিনিময়ে যৌনকর্মের জন্য ভাড়ায় নিলেন; সেটাও আইনে সিদ্ধ।

কাউকে রাজনৈতিক সভা বা মিছিলের জন্য ভাড়ায় নিলেন; সেটাতেও আপত্তি নাই।

যতোসব আপত্তি হলো শ্রমিককে শ্রমঘন্টার মধ্যেই যদি নামাজ পড়তে নির্দেশ করেন তাহলে।

ধর্মীয় কাজে কাউকে বাধ্য করা যাবে না, এই যুক্তিতে গাজীপুরে (রপ্তানীতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত) মাল্টিফ্যাবস লিমিটেডের কারখানার শ্রমিকদের নামাজের নির্দেশ দেওয়া বে আইনী বলে দাবি করেছেন আইনমন্ত্রী এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে চিহ্নিত কয়েকটি মিডিয়া।

আপনি শ্রমিককে ৮ ঘন্টা শ্রমের বিনিময়ে বেতন দিয়ে ময়লার ট্যাংকিও সাফ করাতে পারবেন, পারবেন সবই করাতে, কিন্তু মুসলিম শ্রমিককে শ্রম ঘন্টার মধ্যে কাজ বাদ দিয়ে নামাজ পড়তে বলতে পারবেন না। কী অদ্ভুত বৈপরিত্য!

কারখানাটির কর্তৃপক্ষের যুক্তিগুলো আমি পড়েছি। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে অসাধারণ মনে হয়েছে। ফ্যাক্টরিটির অপারেশন্স বিষয়ক পরিচালক মেসবাহ ফারুকী বিবিসিকে জানিয়েছেন- “সবাই আমরা নামাজ পড়ি। আমরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী, আমাদের নামাজ পড়া ফরজ। এখানে মুসলমান যারা আছেন তারা সবাই নামাজ পড়েন। কিন্তু তারা নামাজ পড়েন বিক্ষিপ্তভাবে।”

তিনি আরো বলেছেন- “আমাদের এখানে বিভিন্ন মতভেদের লোক আছে। এখানে একটা টিম হিসেবে কাজ করতে হয়। এখানে ফেব্রিক ডিপার্টমেন্টের সাথে নিটিং সেক্টরের হয়ত একটা সমস্যা থাকে। একেকজন একেকজনের উপর দোষারোপ সারাদিন চলতেই থাকে। তো আমি এটার সমাধান হিসেবে চিন্তা করলাম তাদের যদি একসাথে বসানো যায়, একসাথে কিছু সময় যদি তারা কাটায়, তাদের মধ্যে দূরত্বটা কমবে।”

জনাব মেসবাহ ফারুকী তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্বাস্থ্যগত ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি বলছেন, সারাদিন বসে বসে কাজ করায় কোলেস্টেরল বাড়ছে, ডায়াবেটিস বাড়ছে। “মসজিদ চারতলায় হওয়াতে কিছুটা ব্যায়ামও হচ্ছে।”

তাছাড়া মেসবাহ ফারুকী এটাও পরিষ্কার করে বলছেন, বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, তারা অন্য কোন ধর্মাবলম্বীকে নামাজ পড়তে বাধ্য করছেন না।

এখন কথা হচ্ছে, শ্রমিকরা কাজে যে শ্রম দিয়ে থাকেন তাতে সব সময় সবাই সন্তুষ্ট থাকেন না, নিছক টাকার জন্যই বাধ্য হয়ে করে থাকেন। তবুও সেটা কিন্তু আইনসিদ্ধ। আপত্তি কেবল নামাজের ব্যপারে!

আপনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শার্ট, প্যান্ট, হাফ প্যান্টসহ যেকোনো ড্রেস নির্ধারণ করতে পারবেন, কিন্তু পারবেন না স্কার্ফ বা হিজাবকে ড্রেসের আওতায় আনতে। সেটা করলে স্বাধীনতা খর্ব হয়ে যাবে।

গান-নাচের অনুষ্ঠানে সবার অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে পারবেন, কিন্তু মুসলিমদের নামাজের নির্দেশ দিলেই স্বাধীনতা নষ্ট হয়ে যাবে! চাকুরি করতে হলে ক্লীন শেভড হতে হবে বা নেকাব পরা যাবে না, এমন শর্ত দিলে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নষ্ট হয় না, স্বাধীনতা নষ্ট হয় উল্টো শর্ত দিলে!

এ হলো আমাদের সেক্যুলার বন্ধুদের যুক্তি!