Home সোশ্যাল মিডিয়া কওমি মাদরাসা খোলা প্রসঙ্গ: ক্রেডিট নিয়ে টানাটানি

কওমি মাদরাসা খোলা প্রসঙ্গ: ক্রেডিট নিয়ে টানাটানি

।। মাওলানা এহসানুল হক ।।

লকডাউনের শুরুতেই আমাদের সরকার প্রধান বলেছিলেন- সেপ্টেম্বরের আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়তো খুলবে না। কথাটা তখন অনেকেরই বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু অবশেষে সেটাই বাস্তবায়িত হলো। দেখতে দেখতে কেটে গেলো পাচঁটি মাস। এমন পরিস্থিতি এই জীবনে হয়নি। বাকি জীবনে আর না হোক। অনাকাংখিত এই দীর্ঘ ছুটির এখন শেষ বেলা। করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির পথ না পেলেও জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষ আর ঘরে নেই। ধীরে ধীরে সব কিছু সচল হয়ে গেছে। যে কোনো দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খুলে দেয়ার ঘোষণা আসবে।

এমন সময় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, মাদরাসা খোলার ক্রেডিট নিয়ে এক অসুস্থ প্রতিযোগীতা। ইতিপূর্বে হেফজখানা খোলা নিয়ে এমন হয়েছে। সরকারের সঙ্গে কিছু আলোচনার ভিত্তিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অগ্রিম ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে ক্রেডিট নেয়ার প্রবণতা কিছু মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

গতকাল সারাদিন দেখলাম ‘মাদরাসা খোলার অনুমতি মিলেছে’ এই খবর। একজন আলেমের ভিডিও বার্তায় দেখলাম- ‘সচিব বলেছেন- পরিক্ষার প্রস্তুতি নিতে’। শুধু এতটুকুর উপর ভিত্তি করে কীভাবে দাবি করা যায়- মাদরাসা খোলার অনুমতি মিলেছে!

কিছু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় অগ্রীম ঘোষণা দিচ্ছেন। আর ফেসবুকের বন্ধুরা এটাকে ঢাকা বোর্ডের সফলতা এবং বেফাকের ব্যর্থতা হিসেবে চিত্রিত করছেন। অথচ এটা বেফাক বা ঢাকা বোর্ডের দায়িত্ব নয়। আমাদের এখন একটা সম্মিলিতি বোর্ড আছে। হাইআতুল উলয়া। এই বোর্ড থেকে চার সদস্যের একটা সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সাব কমিটিতে এই দ্বীনিয়া বোর্ডের দায়িত্বশীলবৃন্দও আছেন। তারা অসংখ্যবার এক সাথেই সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলেছেন। এখন হাইআর নেতৃবৃন্দ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়নি বা ভিডিও বার্তা দেয়নি বলে তাদের কোনো অবদান নেই?

আরও পড়তে পারেন-

ওয়েব সিরিজের নামে নোংরামি ও নগ্নপনার চর্চা বন্ধ করুন

গীবত ও পরনিন্দার ভয়াবহ পরিণতি এবং শরয়ী বিধান

রাসূলুল্লাহ (সা.)এর দাম্পত্য জীবনে খাদিজা (রাযি.)এর ভূমিকা

এশিয়ায় ইসলামফোবিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ‘ভারত’

বিদেশনীতিতে প্রবল ধাক্কা খেল ভারত

সময়টা এখন এমন যে, বেফাকের পক্ষে কেনো কথা বলাটাও অন্যায়। পরিস্থিতি এখন বেফাকের প্রতিকূলে। এখন বেফাকের বিপক্ষে বললেই ফেসবুক প্রজন্ম খুশি। দুর্নীতি, ফোনালাপ ফাঁস, কিছু ব্যক্তির অপসারণ আর কিছু ব্যক্তির পদ আঁকড়ে থাকাসহ বিভিন্ন কারণে বেফাক এখন সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু। আমি বলছি না- মাদরাসা খোলার অবদান বেফাকের বা বেফাকের নয়। বেফাকের অনেক ত্রুটি থাকতে পারে। কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্থও হতে পারে। তাই বলে বেফাককে ক্ষতিগ্রস্থ করা, অন্যায় অন্যয্য দাবি বেফাকের উপর চাপিয়ে দেয়া কতটা ঠিক হচ্ছে? বেফাক ব্যর্থ হলে কার লাভ আর কার ক্ষতি; এই বিবেচনা মাথায় রাখা দরকার।

আমার বুঝে আসে না মাদরাসা খোলা নিয়ে অবদানের কি আছে? করোনা পরিস্থিতি কিছুটা ভালো বলেই মানুষ এভাবে কর্মক্ষেত্রে সক্রিয় হতে পারছেন। দেশ স্বাভাবিক হলে মাদরাসা তো খুলবেই। এতে কোনো বোর্ডের সফলতা আর কোনো বোর্ডের ব্যর্থতার কি আছে? সরকারী বেসরকারী কত প্রতিষ্ঠানই তো খুলছে। কোথাও তো এমন অসুস্থ প্রতিযোগীতা দেখলাম না। তাহলে কওমি মাদরাসা খোলার ক্রেডিট নিয়ে টানাটানি কেনো? অবদান থাকলে সবচেয়ে বড় অবদান করোনাকে দেওয়া যায়। কারণ, করোনা কমছে বলেই তো সব কিছু স্বাভাবিক হচ্ছে, তাই না?

মাদরাসা খোলার জন্য যে কোনো ব্যক্তি বা বোর্ড চেষ্টা করতে পারে। সেটা অবশ্যই ভালো কথা। ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। সামর্থ থাকার পরও কেউ যদি কাজটা না করে তাহলে সেটা অনুচিত, অন্যায়। কিন্তু সম্মিলিত একটা উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা থাকার পরও সস্তা জনপ্রিয়তা লাভের জন্য কিছু মানুষের সোশ্যাল মিডিয়ায় অগ্রিম ঘোষণা দেয়া এবং এরপর ভিত্তি করে মাদরাসা খোলার বিষয়টাকে একটি বোর্ডের সফলতা ও অন্য আরেকটি বোর্ডের ব্যর্থতা হিসেবে বিচার করা অন্যায়।

– মাওলানা এহসানুল হক, তরুণ আলেমে-দ্বীন, সমাজ চিন্তক, শিক্ষক- জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া ঢাকা, দৌহিত্র- শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক (রাহ.)।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।