Home সম্পাদকীয় বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি রোধ করা না গেলে ক্রমবর্ধমান অপরাধ প্রবণতার রাশ টেনে ধরা...

বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি রোধ করা না গেলে ক্রমবর্ধমান অপরাধ প্রবণতার রাশ টেনে ধরা যাবে না

গত ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক) দায়িত্বরত কর্মকর্তা, যারা কিশোরদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করতেন, তারাই তিন কিশোরকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে পৈশাচিকভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

গত ৩ আগস্ট এক আনসার সদস্যকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোরদের উপর নিপীড়ন ও ৩ জনকে হত্যা করা হয়। ১৫ কিশোরকে একই কায়দায় পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। ঘটনাটিকে জড়িতরা কিশোরদের মধ্যে সংঘর্ষ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও খুলনা রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি বলেছেন, তিন কিশোর খুনের ঘটনা শুনে কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পেরেছি, কিশোরদের মধ্যে সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাটি একপক্ষীয়। কেন্দ্রের কর্মকর্তারা কিশোরদের একজন একজন করে ডেকে নিয়ে পিটিয়েছেন।

এ মর্মান্তিক ঘটনায় কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়কসহ ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

কিশোর সংশোধনাগারে অপরাধী কিশোরদের প্রতি বৈরি ও অন্যায্য আচরণ এবং নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। প্রায়ই সংশোধনাগারে কিশোর অপরাধীরা দায়িত্বপ্রাপ্তদের দ্বারা নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়।

সুশিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধের অনুশীলন এবং নৈতিক, সামাজিক আচরণের অভাবে এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণু ও অসহনশীল মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। খুন-খারাবি, নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে শুরু করে আইন হাতে তুলে নেয়ার মতো গর্হিত অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এক ধরনের বেপরোয়া মনোভাব লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। এই মনোভাব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যদের মধ্যেও ব্যাপকভাবে রয়েছে। তারাও খুন, নিপীড়ন, নির্যাতনের মাধ্যমে মানুষকে তটস্থ করে রেখেছে। কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনাটি ঐ শ্রেণীর পুলিশের বর্বর আচরণকে নতুন করে সামনে এনেছে।

আরও পড়তে পারেন-

তুরস্কের ঐতিহাসিক ‘আয়া সোফিয়া’ যেভাবে মসজিদে রূপান্তরিত হয়েছিল!

ফেরাউনি জমানার পাপাচার এবং মহামারির ইতিবৃত্ত

মহিলা মাদ্রাসায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনে শরীয়তের বিধান কি

শান্তি, উন্নতি ও গণতন্ত্র শক্তিশালী হওয়ার জন্য সুশাসন অপরিহার্য

স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাত ভেঙে পড়া এবং রাষ্ট্রের ব্যর্থতা

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ঘটনায় সাবেক ওসি প্রদীপ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত ধরা পড়লেও দেশে কম-বেশি তাদের মতো অপরাধপ্রবণ পুলিশ আরো রয়েছে। এরই মধ্যে কিছু দিন আগে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় পুলিশ কর্তৃক তিন ব্যবসায়ীকে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়, লালমনিরহাট সদর পুলিশ স্টেশনের ওসির ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ক্লিপ প্রকাশসহ পুলিশের অপকর্মের নানা ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এ শ্রেণীর সদস্যর এসব ঘটনা নতুন তা নয়, বছরের পর বছর ধরেই চলে আসছে। কোনো ঘটনা যখন প্রকাশিত হয়, তখন এর সাথে অন্য কিছু ঘটনাও বের হয়ে আসে। দেখা যাচ্ছে, পুলিশের এ শ্রেণীটি অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ তাদের দ্বারা নিপীড়ন ও ভয়-ভীতির শিকার হচ্ছে। ঘটনা প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে দায়ীদের প্রত্যাহার বা বদলির মতো সহজ পন্থা অবলম্বন করা হয়। যথযথ বিচার করা হয় না।

এই যে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, এ কারণেই পুলিশের একটি শ্রেণীর অপরাধ প্রবণতার রাশ টেনে ধরা যাচ্ছে না। এ শ্রেণীর পুলিশ কোনো না কোনোভাবে সরকারের প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয় পায় বলেই তাদের মধ্যে এ ধারণার জন্ম হয়, অপরাধ করলেও তাদের কিছু হবে না এবং তাদের সাত খুনও মাপ হয়ে যাবে।

বাস্তবিকই অপরাধী পুলিশের তেমন কোনো শাস্তি হয় না। তারা পার পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধের অভিযোগে প্রতিবছর শত শত পুলিশের অপরাধের শাস্তির পরিসংখ্যান প্রকাশিত হলেও দেখা যায়, পুলিশের একটি শ্রেণীর মধ্যে কোনো হুঁশ হচ্ছে না। ফলে একটি অসাধু শ্রেণীর অপরাধের দায় পুরো পুলিশ বাহিনীকে নিতে হচ্ছে।

পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ ইতোমধ্যে পুলিশ সদস্যদের বারবার হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, অপরাধ করে কোনো পুলিশ পার পাবে না। তারপরও পুলিশের দুর্বিনীত ঐ শ্রেণীটি তার কোনো তোয়াক্কা করছে না। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে যে বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য এই তোয়াক্কা না করার অপসংস্কৃতিই দায়ী।

উল্লেখ্য, শিশু সংশোধনাগার করাই হয়েছে, অপরাধে জড়িয়ে পড়া কিশোরদের অপরাধের ধরণ বিশ্লেষণ করে যথাযথ গাইডেন্স, কাউন্সেলিং এবং গ্রুমিংয়ের মাধ্যমে সংশোধন করে সুপথে নিয়ে আসার জন্য। পাশাপাশি তাদেরকে পড়ালেখা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মক্ষম করে তুলে সমাজে পুনর্বাসিত করতে। সেখানে গিয়ে তারা অপরাধ প্রবণতার কারণে বাড়াবাড়ি করতেই পারে। এ কারণেই তাদের সেখানে পাঠানো হয়। তা নাহলে, এর প্রয়োজন পড়ত না। ফলে এখানে যারা দায়িত্ব পালন করেন, তাদের অত্যন্ত দায়িত্ববান, সহনশীল, ধৈর্য্যশীল ও সহানুভূতিশীল হওয়া অপরিহার্য। তাদের আচরণ হতে হয়, অবুঝ শিশুকে শিক্ষা দেয়ার মতো। এর পরিবর্তে যদি অপরাধী কিশোর উল্টো নির্যাতন এমনকি হত্যার শিকার হয়, সেটা হয় খুবই অনাকাঙ্খিত ও হতাশার।

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের যারা কিশোর হত্যা ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত, তাদের যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। এটা তাদের অমার্জনীয় অপরাধ। কিশোরদের নির্যাতন ও হত্যা না করে তারা পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারতেন। তারা তা না নিয়ে নিজেরা আইন হাতে তুলে নিয়েছেন। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংশোধনের নামে যাতে আর কখনোই শিশু-কিশোরদেরকে নির্যাতনের শিকার হতে না হয়, সমাজসেবা অধিদপ্তরকে এ জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে এখনই পূর্ণ মনোযোগ ও কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।