Home ধর্মীয় প্রশ্ন-উত্তর মহিলা মাদ্রাসায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনে শরীয়তের বিধান কি?

মহিলা মাদ্রাসায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনে শরীয়তের বিধান কি?

প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম। আমার একটা মাসাআলা জানার ছিল- আজকাল অনেক মহিলা মাদ্রাসায় নিরাপত্তাগত কারণে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকে। বিশেষ করে ক্লাস টাইমে। তখন ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের মুখ খোলা থাকে, তবে ছতর ঢাকা থাকে।

সিসি ক্যামেরাযর ধারণকৃত ভিডিও চিত্র মনিটরে বোরকা পরা মহিলা বুঝা গেলেও চেহারা স্পষ্ট বুঝা  যায়  না। এ ক্ষেত্রে এই ছবি কোন পুরুষ দেখলে গোনাহ হবে কি? তাছাড়া অন্য কোন পুরুষ সিসি ক্যামেরায় ছবি দেখার ক্ষেত্রে মেয়েরা তো জানে না। এ পর্যায়ে মেয়েদের কি কোন গোনাহ হবে? শরীয়তের আলোকে অনুগ্রহ করে সমাধান জানাবেন।

– আসমা আনসারী, পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা।

জবাব: মুহতারামা  আসমা আনসারী, আমাদের উম্মাহ’র  ই-মেইলে প্রেরিত আপনার  প্রশ্নটি আমার হস্তগত হয়। আপনার দ্বীনি চেতনা ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে খুব খুশি হয়েছি। আল্লাহ তায়ালা  আপনাকে খোদা ভীরু দ্বীনদার সচেতন বান্দী হিসেবে কবুল করুন। আমীন।

আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন, সিসি ক্যামেরায় চেহারা বুঝা যায় না, এটা বর্তমানে সব ক্যামেরার ক্ষেত্রে সঠিক নয়। কারণ, বর্তমানে বাজারে অনেক উচ্চ মাত্রার রেজ্যুলেশন সমৃদ্ধ সিসি ক্যামেরা পাওয়া যায়, তাতে ধারণকৃত ভিডিও চিত্র জুম করে সুস্পষ্ট দেখা যায়।

এখন কথা হল, মহিলা মাদ্রাসাসমূহে তথা এ ধরনে দ্বীনি প্রতিষ্ঠান বা/অনুষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের অনুমতি নিরাপত্তাগত বিশেষ প্রয়োজনের তাগিদে দেয়া হয়ে থাকে। কারণ, ক্যামেরা ব্যবহারে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে মন্দ দিকও রয়েছে। অতএব-

প্রথমত: প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের কর্তব্য এমন মানের সিসি ক্যামেরা নির্ধারণ করা, যাতে চেহারা ঝকঝকে বা সুষ্পষ্ট বুঝা যাবে না, তবে  নিরাপত্তাগত সংকটের সমাধান মিলবে। তদুপরি সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মনিটর সবসময় সক্রিয় না রাখা। শুধু তদারকীর প্রয়োজনে মাঝে মাঝে বা বিশেষ জরুরত দেখা দিলে মনিটর সক্রিয় করে দেখবে।

দ্বিতীয়ত: যথাসম্ভব মনিটরে জুম না করে বা চেহারা স্পষ্ট হয় পরিমাণ বড় না করে পড়া-লেখার পরিবেশ, ক্লাসের শৃঙ্খলা যথাযথ আছে কি না বুঝতে পারার মতো সাইজে ধারণকৃত ভিডিও চিত্র জরুরত পরিমাণ দেখবে।

তৃতীয়ত: দায়িত্ববান নারী শিক্ষিকা বা কর্মকর্তা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় মহিলা মাদ্রাসার ক্লাস রুম বা ছাত্রী নিবাসের সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ কোনভাবেই পুরুষ কর্মকর্তাদের আওতায় না রাখা চাই। তবে বিশেষ জরুরতের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের আস্থাভাজন, তাক্বওয়াবান, পরহেযগারীর অধিকারী কর্মকর্তা বা শিক্ষককে মনিটরিং এর দায়িত্বে রাখা যেতে পারে, যিনি পরকালীন জীবন নিয়ে স্পষ্টত: চিন্তাশীল থাকেন।

চতুর্থত: প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরার মনিটরিং এর নিয়ন্ত্রণ যেহেতু কোন ছাত্রীর যিম্মায় থাকে না। অতএব, যদি কোনো ব্যক্তি নিষ্প্রয়োজনে বা অসৎ উদ্দেশ্যে অথবা কোন কর্মকার্তার দায়িত্বে অবহেলার সুযোগে অন্য কেউ ছাত্রী /শিক্ষিকার সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও চিত্র দেখে, তাতে সংশ্লিষ্টরা গুনাহগার হবে; ছাত্রী/ শিক্ষিকা নয়।

(সূত্র- ক্বাওয়ায়িদুল ফিক্বহ, পৃষ্ঠা-৮৯, ফাতাওয়ায়ে শামী, খণ্ড -৬, পৃষ্ঠা-৩৭২, জাওয়াহিরুল ফিক্বহ, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-২৩৯, টিভি আওর ভিডিও কে শরয়ী আহকাম, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১০৩-১০৭, সূরায়ে বাক্বারা, আয়াত-২৮৬)।

ফতোয়া দিয়েছেন- মুফতী মুহিউদ্দীন মাছূম

প্রধান মুফতী- জামিয়া সুবহানিয়া মাহমূদনগর, তুরাগ, ঢাকা ও জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

আরও পড়তে পারেন-

স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে কি?

অনুমতি না নিয়ে কারো কথাবার্তা বা ফোনালাপ রেকর্ড করা সম্পর্কে ইসলামের বিধান

বিধবা স্ত্রী সন্তানদের ভরণ-পোষণ ও ব্যয় নির্বাহের জন্য চাকুরী করতে পারবেন কিনা?

স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে কি?

ফজরের আযানের পর নফল নামায পড়া যাবে কি?