Home সম্পাদকীয় ইসলামে অহেতুক বাড়াবাড়ির কোন সুযোগ নেই

ইসলামে অহেতুক বাড়াবাড়ির কোন সুযোগ নেই

ইরশাদ হয়েছে- “তোমাদেরকে মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী করেছি, যাতে তোমরা অন্যান্য উম্মাতের সাক্ষী হতে পারো।” (বাক্বারাহ-৪৩)। কথাবার্তা ও কাজকর্ম থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়েই মধ্যপন্থা অবলম্বন করা একদিকে যেমন যুক্তির দাবী, অপরদিকে তা সৃষ্টিকর্তা মহিয়ান গরিয়ান রাব্বুল আলামীনেরও নির্দেশ। বাড়াবাড়ি কখনো প্রশংসার উপযুক্ত নয়, হতেও পারে না। কথায় বাড়াবাড়ি মেজাজ বিগড়ে দেয়, শ্রোতাদের জন্যও হয় বিরক্তির কারণ। কাজকর্মে বাড়াবাড়ি নিজের জীবনকে করে ক্ষতিগ্রস্ত, অপরের জীবনে সৃষ্টি করে বিপত্তি। শক্তির বাড়াবাড়ি নিজেকে করে দিব্ভ্রান্ত ও বিপর্যস্ত এবং অপরকে করে উত্যক্ত।

দুঃসাহস কখনো হিতকর হয় বটে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুকে করে অবধারিত। বাড়াবাড়ি কাউকে সুখ্যাত করেনি বরং করেছে কুখ্যাত ও কুলাঙ্গার। মোটকথা, পার্থিব বিষয়গুলো চিন্তা করলেও দেখা যাবে যে, বাড়াবাড়ি কখনো স্বাচ্ছন্দ ও স্বস্তি আনতে পারেনি, আনতে পারেনি জীবনে আনন্দ ও তৃপ্তি।

পারলৌকিক দিক দিয়ে চিন্তা করলে এবং তার স্বপক্ষীয় প্রমাণ-পঞ্জির নিরীক্ষণ করলেও প্রতিভাত হয়ে যায় যে, বাড়াবাড়ি না আল্লাহ তাআলার পছন্দ, না তা যুক্তিও সমর্থন করে। বরং পারলৌকিক বিষয়সমূহের মধ্যে বাড়াবাড়ি একটি আলাদা পরিভাষার সৃষ্টি করেছে। ইবাদতে বাড়াবাড়ি করলে এ বাড়াবাড়ির নাম ‘গুলু’। আর বাড়াবাড়ি যে করে, তাকে বলা হয়, ‘গালী’। ‘গুলু’ শব্দের আভিধানিক অর্থ সীমালংঘন এবং ‘গালী’ অর্থ সীমালংঘনকারী। পরিভাষায় যে ব্যক্তি শরীয়তের সীমালংঘন করে তাতে কিছু যোগ করে দেয়, তাকে গালী, সীমালংঘনকারী, অতিরঞ্জনকারী, ধর্মে বাড়াবাড়িকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এমনিভাবে শরীয়তের সীমালংঘন করে তাতে কিছু কাটছাট করাকে বলে ‘জফা’ এবং বিয়োজন কারীকে বলে ‘জাফী’।

ধর্মীয় পরিভাষায় ‘গুলু’ ও ‘জফা’ যেমন ব্যবহার হয়, তেমনি আরো দু’টো শব্দও ব্যবহার হয়, যথা- ইফরাত ও তাফরীত। ইফরাত অর্থ ধর্ম-সীমা পার হয়ে তাতে কিছু যোগ করে দেয়া, আর তাফরীত অর্থ ধর্ম-সীমা পার হয়ে তা থেকে কিছু কমিয়ে দেয়া। গুলু ও জফা, ইফ্রাত ও তাফরীত-এর সবকটিই ইসলামে পরিত্যাজ্য।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাযি.) মনের তাগিদে লাগাতার রোযা রাখতেন, রাতভর ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। হযরত আব্দুল্লাহ (রাযি.)এর পিতা তাকে বিবাহ করিয়ে দিলেন। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেলে একদিন শ্বশুর পুত্রবধূর কাছে হযরত আবদুল্লাহ (রাযি.)এর হালাত জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারলেন যে, হযরত আবদুল্লাহ (রাযি.) রাত দিন ইবাদতে এমনভাবে নিমগ্ন থাকেন যে, স্বামী-স্ত্রীর কোন সম্পর্কই অদ্যাবধি স্থাপিত হয়নি। হযরত আমর ইবনুল আস (রাযি.) হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বিষয়টি অবগত করালেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আব্দুল্লাহ (রাযি.)কে ডেকে ইবাদত কম করে স্ত্রীর হক আদায়ের জন্য কড়া নির্দেশ দিলেন এবং স্ত্রীর হক্বের গুরুত্ব তাকে ভালভাবে বুঝিয়ে দিলেন। ইরশাদ করলেন, “তোমার উপর প্রতিপালকের হক্ব রয়েছে, তোমার শরীরের হক্ব রয়েছে, তোমার প্রতিবেশীর হক্ব রয়েছে, তোমার স্ত্রীরও হক্ব রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেকের হক্ব আদায় কর।”

আরও পড়তে পারেন-

মানুষকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপরও হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)তাতে বাড়াবাড়ি ও অতিরিক্ততা ছেড়ে মধ্যপন্থা অবলম্বনের জন্য হযরত আব্দুল্লাহ (রাযি.)কে নির্দেশ দিয়েছেন। ফি-সাবীলিল্লাহ দান করার ফযীলত কুরআন হাদীসের অকাট্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু এ পরিমাণ দান করা নিষিদ্ধ যার কারণে বিষণœ ও চিন্তিত হয়ে পড়তে হয়। বরং মাঝামাঝি পথ অবলম্বন করতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- “হাতকে গন্ডদেশে বন্ধন করো না এবং অতিরিক্ত প্রসারিতও করোনা। অর্থাৎ দান করা একেবারে বন্ধ করে দিও না বা সীমা পার হয়েও দান করো না, বরং মধ্যপন্থা অবলম্বন করো। (সূরা বনি ইসরাঈল)।

মুসলমানদের মধ্যে আমলের যথেষ্ট উৎসাহ থাকা উচিত। কিন্তু একদল এমন, যাদের আমল ও ইবাদতের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপই নাই; আর একদল এমন যাদের আমল ও ইবাদতের প্রতি এত আগ্রহ যে, যে কোন প্রকার আমলের কথা শুনলেই তার আমল করতে শুরু করে দেয়। চাই সে আমল শরীয়তে প্রমাণিত থাকুক আর না-ই থাকুক। এদের অত্যাগ্রহের কারণেই সকল প্রকার বদ-রসূম, বিদআত ও ভিত্তিহীন আমলের দ্বার প্রশস্ত হয়েছে। পাশাপাশি প্রথম দলটির আমল ও ইবাদতের আগ্রহ মোটেই না থাকার কারণে নাফরমানীর দ্বার প্রশস্ত হয়েছে।

নাফরমানী যেমন মহাপাপ, তেমনি ভিত্তিহীন আমল, বদ-রসূম ও বিদআত সৃষ্টি করাও মহাপাপ। হিজরী বর্ষের প্রথম মাস মাহে মুর্হারামও এ দুই ক্রিয়া থেকে খালি নয়। সুতরাং যারা এ মাসে কোন প্রকার অতিরিক্ত ইবাদত করে না, তাদের প্রতি ৯, ১০ তারিখে বা ১০, ১১ তারিখে রোযা রাখার জন্য আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি। কেননা মুর্হারামের ৯, ১০ বা ১০, ১১ তারিখে রোযা রাখা রাসূলুল্লাহ (সা.)থেকে প্রমাণিত ও নির্দেশিত। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)। রোযা ব্যতীত অন্য কোন ইবাদত এ মাসে রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কিরাম (রাযি.) ও আইম্মায়ে কিরাম থেকে করণীয় হিসাবে প্রমাণিত নেই।

হযরত হুসাইন (রাযি.)এর শাহাদাতের কথা মনে আসলে “ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিঊন” পাঠ করতে হবে। কারো প্রতি শোক প্রকাশের জন্য শাফিউল মুজনিবীন (সা.) এতটুকুই শিক্ষা দিয়েছেন। এতদ্ভিন্ন প্রচলিত সকল কাজ যেমন, তাজিয়া বের করা, গোসল করা, বিলাপ করা, পুঁথি পড়া ইত্যাদি সব কিছুই ভিত্তিহীন এবং আল্লাহ ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপছন্দনীয় এবং নাফরমানীর পর্যায়ভুক্ত ও অহেতুক বাড়াবড়ি। যা সচেতন প্রতিটি মুসলমানের জন্য পরিহার করা অবশ্যই কর্তব্য।

– মুনির আহমদ, সম্পাদক- উম্মাহ ২৪ ডট কম।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।