Home সম্পাদকীয় অর্থনৈতিক দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের টিকে থাকার সংগ্রামে সরকারী সহযোগিতা জরুরী

অর্থনৈতিক দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের টিকে থাকার সংগ্রামে সরকারী সহযোগিতা জরুরী

মহামারি করোনা প্রাদুর্ভাবের ফলে দীর্ঘ লকডাউন ও স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্যে স্থবিরতা চলতে থাকায় কাজকর্ম হারিয়ে সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। তার ওপর নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন- চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, সবজি, মসলা ইত্যাদি সবকিছুরই দাম বেড়ে গেছে, যা সংসারের খরচ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বেকায়দায় পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষজন। বাজারে দাম যখন বাড়তি, তখন মানুষের আয় পরিস্থিতি খারাপ।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া বেশির ভাগ চাকরিজীবীর বেতন কমেছে। কিন্তু নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে খরচ বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। যেমন জীবাণুনাশক ও মাস্ক কেনা এবং বাসের বদলে অটোরিকশায় চলতে এই বাড়তি খরচ। আইসিডিডিআর, বি এবং ওয়াল্টার এলিজা হল ইনস্টিটিউট, অস্ট্রেলিয়ার এক যৌথ গবেষণা বলছে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ঘরে থাকার নির্দেশনার সময়কালে ৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় আয় কমেছে। ব্যয় সঙ্কোচন করে জীবনমান নামিয়ে সাধারণ মানুষ টিকে থাকার সংগ্রামে ব্যস্ত। কিন্তু খুব সাধারণ এই কৌশল নিয়েও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সয়াবিনের দাম প্রতি লিটারে বেড়েছে তিন-চার টাকা। অ্যাংকর ডালের দাম প্রতি কেজি পাঁচ টাকা বেড়েছে। বেশির ভাগ সবজির কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। ডিমের দাম কোনোভাবেই কমছে না। প্রতি ডজন ১১০ টাকা। দাম কম কেবল ব্রয়লার মুরগির। কিন্তু মুরগি রান্না করতে আদা কিনতে হবে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২৪০ টাকা দরে, যা ঈদুল আজহার আগেও ১৪০ টাকার মধ্যে ছিল। আর মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম প্রতি কেজি ৪৩ টাকা। এ চাল পুরনো ও গন্ধযুক্ত। ভালো মানের মোটা চাল কিনতে লাগছে প্রতি কেজি ৪৬ টাকা, যা সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে এক বছর আগের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি।

আরও পড়তে পারেন-

স্বস্তি নেই মাঝারি মানের বিআর-২৮ ও সরু মিনিকেট চালের দাম নিয়েও। মাঝারি মানের বিভিন্ন চাল কিনতে প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা লাগছে। সরু মিনিকেট চালের কেজি বাজারভেদে ৫৬-৬০ টাকা। টিসিবির হিসাবে, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় এখন মাঝারি মানের চালের দাম ৯ শতাংশ ও সরু চালের দাম ১৫ শতাংশ বেশি।

বাজারে দাম বেড়ে গেলে সাধারণত ট্রাকে খোলাবাজারে চাল বিক্রির কর্মসূচি (ওএমএস) নেয়া হয়। এখন তা নেই। তবে বিভাগীয় শহরের ২৮১টি দোকানে দিনে এক হাজার কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। সরকারি সংস্থা টিসিবি ৫০ টাকা কেজিতে চিনি ও ডাল এবং ৮০ টাকা লিটার দরে ভোজ্যতেল বিক্রি করত। সেই কার্যক্রম গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে।

সংস্থাটি ভালো পণ্য বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়েছিল। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা ছিল সামান্যই। বাজারে তেল ও চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর কমানোর সুপারিশ করেছিল, যা আমলে নেয়া হয়নি। করোনাকালে বাসভাড়া বাড়ানোর বদলে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে বাস মালিকদের ক্ষতি পোষানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন বিশ্লেষকেরা। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর সুযোগ দেয়া হয়।

করোনাকালে একদিকে মানুষের আয় কমেছে। অন্য দিকে বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। তাই কিভাবে সাধারণের জীবনমান বাড়ানো যায়; সে দিকে সরকারের নজর দেয়া উচিত। একই সাথে দর স্থিতিশীল রাখতে প্রধান খাদ্যশস্য চালের মজুদ বাড়িয়ে খোলাবাজারে বিক্রি বাড়ানো দরকার। টিসিবির মাধ্যমে আরো বেশি পরিমাণে পণ্য বিক্রি করা, যাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পায়। তাদের স্বস্তি দিতে জরুরি ভিত্তিতে এই দুঃসময়ে সরকারি উদ্যোগ বাড়ানোই একমাত্র উপায় বলে আমরা মনে করি।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।