Home ইতিহাস ও জীবনী আসাদউদ্দিন ওয়াইসি: যার কণ্ঠে প্রতিনিয়ত উচ্চারিত হয়, সাহস জাগানিয়া কথা

আসাদউদ্দিন ওয়াইসি: যার কণ্ঠে প্রতিনিয়ত উচ্চারিত হয়, সাহস জাগানিয়া কথা

।। মুফতি এনায়েতুল্লাহ ।।

বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠীর বাস ভারতে। যা সর্বমোট মুসলমানের ১০-১১ শতাংশ। সরকারি আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী মুসলিম জনগোষ্ঠী ১৪ শতাংশ, সংখ্যায় প্রায় ২০ কোটি। ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পরই কোনো দেশে এত বেশি মুসলমান আছে। জনসংখ্যায় ১৪ ভাগ হলেও ৫৪৫ সদস্যের ভারতীয় লোকসভায় বর্তমানে মুসলমান সদস্য মাত্র ২৭ জন অর্থাৎ ৫ শতাংশের কম।

অন্যদিকে ১৬তম লোকসভায় মুসলমান এমপি ছিলেন ২২ জন। ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসলমান এমপি নির্বাচিত হয়েছিল ১৯৮০ সালে, সংখ্যায় সেবার ছিল ৪৯ জন। ২০০৯ সালের নির্বাচনে জিতেছিল ৩৩ জন মুসলিম প্রার্থী। সবচেয়ে কম মুসলিম সাংসদ ছিল ১৯৫২ সালে, সেবার লোকসভায় তাদের প্রতিনিধি ছিল মাত্র ১১ জন।

১৯৮৪ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর পুত্র রাজীব গান্ধী ক্ষমতায় এলে লোকসভায় মুসলিম এমপির সংখ্যা ছিল ৪২ জন। ২০০৪ সালে ১৪তম লোকসভায় মুসলিম সংসদ সদস্যের সংখ্যা ছিল ৩০। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ৩০৩ আসনে বিজয়ী হলেও, তাদের একজন সাংসদও মুসলিম নন।

ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের ফল হিসেবে ভারতে প্রভাবশালী মুসলিমপ্রধান কোনো রাজনৈতিক দল নেই। বরাবরের মতো কংগ্রেসকে ধরা হয় মুসলিমবান্ধব দল হিসেবে। যদিও তাদের শাসনামলেই ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছে উগ্র হিন্দুরা।

তবে কেরালা, আসাম, কাশ্মীর ও তেলেঙ্গানায় চারটি ছোট আঞ্চলিক দল রয়েছে। অনেকে এদের ‘এক এমপি’, ‘দুই এমপি’র দল বলেন। এসব দলের পক্ষে ভারতের ২৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত ৯ অঞ্চলে মুসলমানদের কণ্ঠ হওয়া দুরূহ। কেন্দ্রীয় ও জাতীয় পর্যায়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে নেতৃত্বের সংকট আছে। পুরো জনগোষ্ঠী নানান উপদলে বিভক্ত। এর মধ্যে ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি কিছুটা ব্যতিক্রম। অন্যদের থেকে আলাদা।

আসাদউদ্দিন ওয়াইসি হায়দরাবাদ থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। লোকসভার পুরোনো মুসলমান সদস্যদের অন্যতম তিনি। এর আগে ১৯৯৪-২০০৩ পর্যন্ত দু’বার অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভার সদস্য ছিলেন। তখনও অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলেঙ্গানা রাজ্যে হয়নি।

বর্তমানে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) [All India Majlis-E-Ittehadul Muslimeen (AIMIM)] প্রধান তিনি।

ইতিহাসখ্যাত নিজাম শাসিত হায়দরাবাদে ১৯২৭ সালে দলটির জন্ম। চলতি লোকসভায় এআইএমআইএমের সদস্য মাত্র দু’জন। একজন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, অন্যজন ইমতিয়াজ জলিল (অওরাঙ্গাবাদ, মহারাষ্ট্র)। তবে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি প্রায়শই ভারতজুড়ে মুসলমানদের স্বার্থের জায়গা থেকে বিতর্ক তোলেন, তাদের অধিকারের কথা বলেন। ২০ কোটি মানুষের হতাশাকে ভাষা দেন তিনি। ৫১ বছর বয়সী ওয়াইসি ২৬ বছর ধরে বিধানসভা ও লোকসভায় মুসলমানদের হয়ে লড়াই করছেন, আইন প্রণয়নের কাজে যুক্ত রয়েছেন। ভারতীয় সংবিধানের চৌহদ্দিতেই তার চলাচল। তবে আসাদউদ্দিনের ভঙ্গি, সাহস ও উচ্চাভিলাষ প্রতিনিয়ত আলোচনায় রাখে তাকে। এসব দেখে ভক্তরা তাকে বলেন, ‘নকিব-ই-মিল্লাত।’ অর্থাৎ সম্প্রদায়ের জন্য ভবিষ্যতের বাহক। বয়সে বড়রা আদর করে ডাকেন ‘আসাদ বাবা’, সাধারণভাবে তিনি ‘আসাদ ভাই’ নামে পরিচিত।

আরও পড়তে পারেন-

১৯৬৯ সালের ১৩ মে জন্ম নেওয়া ওয়াইসি তরুণ বয়সে ক্রিকেট খেলতেন। অসাধারণ দেহ গঠন, লম্বায় ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সাড়া জাগানো ফাস্ট বোলার ছিলেন। উর্দু ও ইংরেজিতে দারুণ বাগ্মী। আইন শাস্ত্রে পড়েছেন লন্ডনে। শেষ পর্যন্ত দাদা আবদুল ওয়াহেদ ওয়াইসির ধারাবাহিকতায় ‘ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’-এর দায়িত্ব নিয়েছেন পিতা সুলতান সালাউদ্দিন ওয়াইসির মৃত্যুর পর। সুলতান সালাউদ্দিন ওয়াইসি ১৯৮৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত লাগাতার সাত বার হায়দরাবাদ কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সাংসদ ছিলেন। ভাই আকবরউদ্দিনও এআইএমআইএমের বড় নেতা ও তেলেঙ্গানার বিধায়ক। ঐতিহ্য ও অর্থ-সম্পদের জোর আছে এই পরিবারের।

স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে ১৭৮ বছর হায়দরাবাদ ‘নিজাম’দের রাজধানী ছিল। এই শহরেই ১৯২৭ সালে ৯৩ বছর আগে এআইএমআইএমের যাত্রা। শহরটিতে এখন মুসলমানের ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। ২০০৮ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত সুলতান উদ্দীন ওয়াইসি ছিলেন এখানকার সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ। তাকে ‘সালার-এ-মিল্লাত’ (সম্প্রদায়ের অধিনায়ক) বলা হতো। তার অঙ্গুলি হেলনে মুসলমান ভোটব্যাংক নড়াচড়া করত তখন। পুত্র আসাদউদ্দিন সেই প্রভাবকে হায়দরাবাদের বাইরে নিতে ইচ্ছুক।

পুরোনো অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে ইতোমধ্যে তেলেঙ্গানা নামে আরেক রাজ্য হয়েছে এবং হায়দরাবাদ সেই রাজ্যে পড়ে গেছে। তবে আসাদউদ্দিন কেবল তেলেঙ্গানার রাজনীতিবিদ নেই আর। সমগ্র ভারতের মুসলমান বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা অনেক বিষয়ে তার মতামত জানতে উদগ্রীব থাকেন। টুইটার ও ফেসবুকে রয়েছে তার অসংখ্য ফলোয়ার। ২০১৪ সালে বেসরকারি এক সংস্থা লোকসভায় ১২ জন শ্রেষ্ঠ পার্লামেন্টেরিয়ানের তালিকায় রেখেছিল ওয়াইসিকে।

এআইএমআইএমের রাজনৈতিক সাফল্য আপাতত লোকসভার সদস্য দুই জন। অন্যদিকে তেলেঙ্গানা বিধানসভায় সাতজন, মহারাষ্ট্রে দুইজন ও বিহার বিধানসভায় একজন বিধায়ক রয়েছে তাদের। দলটির নির্বাচনী প্রতীক ঘুড়ি। আশার কথা হলো, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস ও বিজেপি জোট করে নির্বাচন করা সত্ত্বেও এআইএমআইএম তাদের বিরুদ্ধে ২টি আসনে জিতেছে; ৪টিতে দ্বিতীয় হয়েছে। এআইএমআইএম মহারাষ্ট্রে ৪৪টি আসনের মনোনয়নের মধ্যে ১২টি দিয়েছিল অমুসলিম সম্প্রদায় থেকে। হায়দরাবাদে তাদের মনোনীত অনেক মেয়র ও ব্লক নেতা রয়েছেন অমুসলিম। এর দ্বারাই বুঝা যায়, এআইএমআইএমের জনভিত্তি দিন দনি বাড়ছে।

২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো এআইএমআইএম তেলেঙ্গানা আর মহারাষ্ট্রের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিহার বিধানসভার নির্বাচনে অংশ নিয়ে একটি আসন পায়। আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এআইএমআইএম ভালো করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চৌকস রাজনীতিক ওয়াইসি পশ্চিমবঙ্গেও কাজ শুরু করেছেন ২০২১ সালের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে।

রাজনীতির মাঠে বারবার এআইএমআইএম ছোট দল বলে অবজ্ঞার শিকার হলেও ওয়াইসি বরাবরই বলেন, ‘কংগ্রেস-বিজেপি কিংবা ক্ষমতা কিছুই নয়। তিনি কেবল চাইছেন, ভারতের প্রতিটি রাজ্যে অন্তত একজন মুসলমান নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকুন, যিনি নিজের শক্তিতে জিতে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বড় দলগুলোর কাছে জানতে চাইবেন, ১৪ ভাগ সংখ্যালঘু মুসলমানের জন্য গত ৭০ বছরে তারা কে কী করেছে? এখনও কেন ধর্মের নামে দাঙ্গা হয়, মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়?’

নিঃসন্দেহে ভারতীয় সেক্যুলারিজমের কাছে এমন প্রশ্নের উচ্চকণ্ঠে দেওয়ার মতো উত্তর নেই। এই অনুভূতি ও দরদ থেকে বিশ্বাসভাজন নেতা হিসেবে তিনি স্বীকৃতি পেয়েছেন ওয়াইসি। তাই শান্ত স্বভাবের আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এখন ক্রোধের প্রতীক। যে ক্রোধ আর দ্রোহ মিশ্রিত কণ্ঠে আমরা প্রতিনিয়ত শুনি সাহস জাগানিয়া কথা। তিনি বলেন, ‘করোনার অজুহাতে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে মুসলিমদের।’ ‘দেশের অন্যান্য নাগরিকদের মতোই মুসলমানরাও সমান, তারা কেউ প্রজা নন।’ ‘আমাদের (মুসলমানদের) সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো ব্যবহার করা হয়, যা ঠিক নয়।’ ‘বিজেপির মতাদর্শই হচ্ছে মুসলিমদের সঙ্গে অসামঞ্জস্য বজায় রেখে চলা।’ ‘বিজেপির ভন্ডামি হলো, উত্তর প্রদেশে গরু মাম্মি (মা) এবং উত্তর-পূর্বে তা ইয়াম্মি (মুখরোচক)।’ ‘তিন তালাক বিল বৈষম্যমূলক আইন।’ ‘চীন হাজার বর্গকিলোমিটার জমি দখল করে নিল, প্রধানমন্ত্রী ময়ূরের সঙ্গে খেলা করতে ব্যস্ত।’ ‘আমি আমার বাবরি মসজিদ ফেরত চাই।’ এভাবেই ওয়াইসি প্রশ্ন তুলেন, আপত্তি করেন, অভিযোগ আনেন, ক্ষমতাসীনদের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করান।

ভারতের এই মুসলিম রাজনীতিবিদ ১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন ফারহিন ওয়াইসিকে। পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তাদের সুখের সংসার। ইতিহাস ও ধর্ম নিয়ে পড়াশোনায় তার বেশি আগ্রহ। অবসরে বই পড়ে, বাচ্চাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে সময় কাটান। রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত কারণে সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে দারুস সালাম ট্রাস্ট ও শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০১ সাল থেকে মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সদস্যও তিনি।

২০১৯ সালে লোকসভায় পাস হওয়া নাগরিকত্ব বিলের কাগজ ছিঁড়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান। কখনও ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ১৭তম (চলতি) লোকসভায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়ার সময়, ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ভারত মাতা কী জয়’ ও ‘বন্দে মাতরম’ বলে স্লোগান দেয়। জবাবে শেরে হিন্দ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি শপথ শেষে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে পাল্টা স্লোগান দেন।

লোকসভায় এমপি হিসেবে দায়িত্বপালনকালে তিনি স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্প, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন, প্রতিরক্ষা, নীতি প্রণয়ন ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে কাজ করেছেন। চলতি সংসদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং পরিবেশ ও বন সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পাশাপাশি সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

রাজনীতিতে প্রবলভাবে আত্মবিশ্বাসী ও আশাবাদী ওয়াইসি সবসময় ভাবেন মুসলমানরা জোট কিংবা বড় দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি ছেড়ে ঐক্যবদ্ধ হলে এখনও পরিবর্তন সম্ভব। বাস্তববাদী এই রাজনীতিবিদের উপস্থিত বৃদ্ধির প্রশংসা তার প্রতিপক্ষরাও করেন।

লেখার শুরুতেই বলেছি, আসাদউদ্দিন ওয়াইসির লক্ষ্য তেলাঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর পদ নয়। আরও বড় নেতা হওয়াও লক্ষ্য নয়। তার লক্ষ্য মুসলিম জাগরণ। মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ ও সংহত করা। মুসলমানরাও এই ভারতের নাগরিক, এই ভারতের অংশ, ভারতীয় সংস্কৃতিতে তাদের বিশাল অবদান রয়েছে, ভারতের ইঞ্চি ইঞ্চি মাটিতে মুসলমানদের অধিকার রয়েছে। এই কথাগুলো দেশব্যাপী মুসলমানদের কানে পৌঁছে দেওয়া। যেন তাদের চেতনা ফিরে আসে। হারানো মনোবল ফিরে পায়। আমরা ভারতে রাজনীতিতে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির আরও উন্নতি কামনা করি।

– মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম, বার্তা২৪.কম।

উম্মাহ২৪.কম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।