যুগে যুগে বহু মহামানব পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে মানবজাতিকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
জন্ম ও বংশপরিচয়
৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে আরবের বিখ্যাত কোরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন নবীজি (সা.)। তার পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম বিবি আমিনা। জন্মের আগেই পিতাকে হারানো এবং ছয় বছর বয়সে মাতার মৃত্যুর পর পিতামহ আবদুল মুত্তালিব ও চাচা আবু তালিবের তত্ত্বাবধানে লালিত হন।
বাল্যকাল ও শৈশব
শৈশব থেকেই নবীজি (সা.) চিন্তাশীল, পরোপকারী, সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। সততা ও ন্যায়পরায়ণতার কারণে তাকে ‘আল-আমিন’ বা ‘বিশ্বাসী’ উপাধি দেয়া হয়। কোমল, সহজ সরল স্বভাব এবং কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য তিনি শিক্ষিত ও সম্মানিত সমাজে পরিচিত হন।
নবুয়ত লাভ
নবীজি (সা.) কোনো মক্তব বা পাঠশালায় শিক্ষালাভ করেননি; তিনি আল্লাহপ্রদত্ত জ্ঞান দ্বারা মহাজ্ঞানী ছিলেন। চারপাশের অন্যায়, অত্যাচার ও ব্যভিচার থেকে মানবজাতিকে শান্তির পথে নিয়ে যাওয়ার চিন্তায় তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। চল্লিশ বছর বয়সে, ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে, জিব্রাইল (আ.) এর মাধ্যমে আল্লাহর বাণী লাভ করেন।
ইসলাম প্রচার
নবুয়ত প্রাপ্তির পর নবীজি (সা.) ইসলাম প্রচার শুরু করেন। প্রথমে বিবি খাদিজা ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর আবু বকর (রা.), আলী (রা.) ও জায়েদ বিন হারেস প্রমুখ মুসলমান হন। ক্রমেই মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে, যা কুরাইশদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে এবং তারা নবীজিকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে থাকে।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
মদিনায় হিজরত
কুরাইশদের অত্যাচার এড়াতে নবীজি (সা.) ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন। এ হিজরতের দিন থেকে হিজরি সাল গণনা শুরু হয়।
মক্কা বিজয় ও বিদায় হজ
মদিনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নবীজির প্রভাব বৃদ্ধি পায়। কুরাইশরা শঙ্কিত হয়, ফলে হুদাইবিয়ার চুক্তির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমঝোতা হয়। ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে নবীজি (সা.) ১০ হাজার মুজাহিদসহ বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। মক্কা বিজয়ের পর তিনি সাহাবিদের সঙ্গে পবিত্র হজ পালন করেন।
ওফাত
হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মহাপুরুষ। তিনি ৬৩ বছর বয়সে, হিজরি একাদশ বছরে, ১২ রবিউল আউয়াল তারিখ (৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুন) সোমবার দ্বিপ্রহরে ওফাত লাভ করেন।
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ও আদর্শ মানবজাতির জন্য ন্যায়, সততা, ধৈর্য ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠার চিরন্তন দৃষ্টান্ত।
উম্মাহ২৪ডটকম:আইএএ