Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন ইসলামে আলেমের উচ্চ মর্যাদা

ইসলামে আলেমের উচ্চ মর্যাদা

আলেম শব্দটি ইলম থেকে। যার অর্থ হলো জ্ঞানী, শিক্ষিত ও জান্তা ইত্যাদি। আরবরা ইলম ও আলেম শব্দ দ্বারা যেকোন সাধারণ বিষয়ের জ্ঞান এবং ওই বিষয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিকে বুঝিয়ে থাকেন, কিন্তু বাংলাদেশে ইলম বলতে দ্বীনি বা ধর্মীয় জ্ঞান এবং আলেম বলতে দ্বীনি বা ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিকেই বোঝানো হয়।

যারা প্রকৃত আলেম তাদের মর্যাদা আল্লাহর দরবারে অতি উচ্চে। সাধারণ মানুষের মাঝে আলেমরা হলেন নক্ষত্ররাজিতুল্য। যাদেরকে অনুসরণ করার মাধ্যমে মানুষ সঠিক পথের সন্ধ্যান লাভ করে থাকে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পৃথিবীতে আলেমদের উদাহরণ হলো নক্ষত্ররাজির মতো। এদের সাহায্যে জল ও স্থলের অন্ধকারে পথের দিশা পাওয়া যায়। আর যদি তারকারাজি নির্মিলিত হয়ে যায়, তবে পথিকদের পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। [মুসনাদে আহমাদ ও জামিউস সগীর]

কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াতে আলেমদের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সূরা জুমার এর ৯ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, “যারা আলেম এবং যারা আলেম না; তারা কী সমান হতে পারে?” কুরআনের অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “অন্ধ আর চক্ষুষ্মান কী সমান হতে পারে?”[সূরা রাদ : ১৬]

সাধারণ মানুষের মাঝে আলেমরাই অনুসরণ ও অনুকরণযোগ্য। কোন বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগলে অথবা কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আলেমদের শরণাপন্ন হওয়ার জন্যে কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনে বলা হয়েছে, “ তোমরা যদি না জানো তবে আলেমদের জিজ্ঞাসা করো।” [সূরা নাহল : ৪৩]

আলেমদের মর্যাদাদানের কারণ সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা আলেম তারাই তাঁকে অধিক ভয় করে।” [সূরা ফাতির : ২৮]

এছাড়া আলেমদের মর্যাদাদানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা সাধারণ মানুষের উপর আলেমদের দায়িত্বশীল বানিয়ে পাঠিয়েছেন।

আরও পড়তে পারেন-

কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, “আলেমরা কেন তাদেরকে পাপ কথা বলতে এবং হারাম ভক্ষণ করতে নিষেধ করে না?” [সূরা মায়েদা : ৬৩]

আলেমরাই আল্লাহর কল্যাণ ও অনুগ্রহপ্রাপ্ত বলে কুরআনে বলা হয়েছে, “যাকে প্রজ্ঞা (গভীর জ্ঞান) দান করা হয়েছে, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়েছে।” [সূরা বাকারা :২৬৯]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদীসেও আলেমদের সম্মান ও মর্যাদার কথা গুরুত্বের সাথে বলা  হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “একজন আলেমের মর্যাদা একজন সাধারণ মানুষের উপর ততটুকুন, যতটুকুন তোমাদের উপর আমি একজন নবীর মর্যাদা।” [সহীহ তিরমিজি]

অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, “দ্বীন সম্পর্কে শিক্ষিত একজন আলেম শয়তানের মোকাবেলায় একজন অজ্ঞ ব্যক্তির চেয়ে হাজার গুণ অধিক শক্তিশালী।” [সহীহ তিরমিজি ও ইবনু মাজাহ]

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলেমদের সম্মান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি আলেমদের সম্মান করলো সে যেনো আমাকেই সম্মান করলো।” [দারেমী]

কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দ্বীনী ইলমের শিক্ষা ও চর্চা কমে যাবে এবং মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে দ্বীনী বিষয়ে মূর্খতা বিরাজ করবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মানুষের মাঝে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবেমুমিন। [বুখারি, অধ্যায় : কিতাবুল ইলম] এখানে ইল্‌ম বলতে ইলমে দ্বীন তথা কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান উদ্দেশ্য।

রাসুল ( স. ) আরো বলেন, আল্লাহ তা’আলা মানুষের অন্তর থেকে ইলম টেনে বের করে নিবেন না; বরং আলেমদের মৃত্যুর মাধ্যমে ইল্‌ম উঠিয়ে নিবেন। এমন কি যখন কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবেনা তখন লোকেরা মূর্খদেরকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করবে। তাদেরকে কোন মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বিনা ইলমেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরা গোমরাহ হবে এবং মানুষদেরকেও গোমরাহ করবে। বুখারি, অধ্যায় : কিতাবুল ইলম]

 নিকৃষ্ট আলেমদের ব্যাপারেও ইসলামে হুশিয়ারি এসেছে:

রাসুল (সাঃ) বলেছেন:“তিন শ্রেণীর মানুষকে সর্ব প্রথম জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তার মধ্যে:- প্রথম শ্রেণীটা হলঃ একদল জ্ঞাণী আলেম যারা দুনিয়াবী স্বার্থে ইলম গোপন করতো এবং যালিম শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলতো না।” (সংক্ষেপিত)। ***জামে আত তিরমিযী।

রাসূল (সাঃ) আরও বলেছেনঃ  “তোমরা আমাকে মন্দ জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না বরং ভাল জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো।তিনি এই কথা তিনবার বললেন। পরে বললেনঃ ‘তোমরা জেনে রাখ সব খারাপের মাঝে সবচেয়ে বড় খারাপ হচ্ছে আলেমদের মাঝে যারা খারাপ তারা আর সব ভালোর মাঝে সবচেয়ে ভাল হলো আলেমদের মাঝে যারা ভালো তারা।”  ***দারেমী, মিশকাত আল মাসাবীঃ পৃষ্ঠাঃ ৩৭।

রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ  “আল্লাহ তাআ’লার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট আলেম তারা যারা সম সাময়িক শাসকগোষ্ঠীর(স্বৈরাচারী) দরবারে যাতায়াত করে।” ***ইবনে মাযাহ।

হযরত আলী (রাদিঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ ”আমি অচিরেই লোকদের উপর এমন একটি সময় আসার আশংকা করছি যখন কেবলমাত্র নাম ছাড়া ইসলামের আর কিছুই থাকবে না এবং কুরআনের লিখিত রূপটি ছাড়া তার বাস্তবায়ন থাকবে না। মসজিদগুলো চাকচিক্যে ভরপুর হলেও হিদায়াত থেকে বঞ্চিত হবে। ঐ সময়কার আলেমরা হবে আসমানের নিচে বিচরণকারী সর্ব নিকৃষ্ট জীব। তাদের থেকেই বিভিন্ন ফিৎনা ছড়াবে এবং তারা নিজেরাও সেই ফিৎনায় আবর্তিত হবে।”  ***বায়হাকী, শু’আবুল ঈমান। হাদিস সহীহ।

শায়খূল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহিঃ) বলেছেনঃ “যদি কোন শায়খ কুরআন এবং সুন্নাহ হতে অর্জিত শিক্ষা অনুযায়ী আমল ত্যাগ করে এবং এমন বিচারকের অনুসরণ করে যে আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলের শিক্ষা অনুযায়ী বিচার করেনা, তখন সে একজন ধর্মত্যাগী এবং কাফের হিসেবে বিবেচিত হবে, যে দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত।“  ***আল ফাতওয়া, ইবন তাইমিয়া, খন্ডঃ ৩৫, পৃষ্টাঃ ৩৭৩। ##

উম্মাহ২৪ডটকম: এফইউবি

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।