Home সম্পাদকীয় ধর্ষণ-গণধর্ষণ: দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ...

ধর্ষণ-গণধর্ষণ: দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে না

সিলেটের এমসি কলেজ হোস্টেলের অভ্যন্তরে একজন তরুণীর গণধর্ষণের যে পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে তাকে নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর ভাষা আমাদের নেই। যে কলেজ ১২৮ বছর ধরে জ্ঞানের আলো বিস্তার করছে, সেই কলেজেরই ছাত্রনামধারী কতিপয় অন্ধকারের বাসিন্দা এই বর্বরোচিত অপকর্মের মাধ্যমে তাকে গভীর ও অমোচনীয় অন্ধকারে ডুবিয়েছে। এই কলেজের চৌহিদ্দিতে আর কখনো এ ধরনের কলংকজনক ঘটনা ঘটেনি।

যারা এই ঘৃণ্য অপরাধ করে ঔদ্ধত্যের চূড়ান্ত নজির স্থাপন করেছে, দু:খজনক হলেও বলতে হচ্ছে, তারা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এমন- ওই তরুণী তার স্বামীসহ শুক্রবার সন্ধ্যায় কলেজ হোস্টেল এলাকায় নিজেদের গাড়িতে করে বেড়াতে যান। সেখানে প্রথমে তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উত্তক্তের শিকার হন। স্বামী প্রতিবাদ জানালে তাকে মারধর করা হয়। অত:পর স্বামীসহ তরুণীকে হোস্টেলের অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্বামীকে আটকে রেখে পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করা হয়। তারা বাঁচাও বাঁচাও বলে চীৎকার করলেও কেউ তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। পরে রাত ১০টার দিকে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

মানুষের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করারও যে নিরাপত্তা নেই, বলাবহুল্য, এ ঘটনা তারই সাক্ষী। স্মরণ করা যেতে পারে, যে হোস্টেলের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটেছে, সেটি ২০১২ সালে পুড়িয়ে দেয়া হয়। অত:পর সরকারী সহায়তায় গড়ে ওঠে নতুন হোস্টেল। এখানে শুরুতেই ছাত্রলীগের দখল প্রতিষ্ঠিত হয়, যা এখনো বহাল আছে।

আরও পড়তে পারেন-

এ ঘটনায় শাহপরান থানায় মামলা হয়েছে। মামলা করেছেন তরুণীর স্বামী। নয় জনকে আসামী করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ছয় জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নামোল্লেখকারীদের সবাই কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। পুলিশ আসামীদের থাকার কক্ষ তল্লাশী করে আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্র পেয়েছে। এ নিবন্ধ লেখার সময় পর্যন্ত পুলিশ তাদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। হোস্টেল বন্ধ থাকলেও তারা কিভাবে সেখানে থাকতো, সেটা অবশ্যই একটা বড় প্রশ্ন।

ঘটনার পর এখন অনেক কিছুই জানা যাচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের যাদের আসামী করা হয়েছে, দৌর্দন্ডদের প্রতাপ ছিল। তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দ করার ক্ষমতা কারো ছিল না। তারা হোস্টেল জোর করে খোলা রেখেছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষ ছিল এ ব্যাপারে নির্বিকার। অন্য কারো কথা বলার তো প্রশ্নই ওঠেনা। এখন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, এরা এদের কক্ষগুলোতে মাদকের হাট বসাতো। রাতবিরাতে মেয়েদের আনাগোনাও হতো।

পর্যবেক্ষকদের মতে, গত পাঁচ-সাত বছর ধরে এমসি কলেজে ছাত্রলীগের একচ্ছত্র অধিপত্য চলছে। খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ, মাদক কারবার, রাহাজানি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। পরিতাপজনক হলেও স্বীকার্য, ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠনটির নেতাকর্মীদের একাংশের অপরাধ-অপকর্মের কারণে এর ভাবমর্যাদা একেবারে তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে। তাদের অপরাধ-অপকর্মের বিষয়ে সংগঠনিকভাবে যেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না, তেমনি আইনী ব্যবস্থা কার্যকর হতেও খুব একটা দেখা যায় না। এই বিচার বা প্রতিকারহীনতাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একাংশের ঔদ্ধত্য সীমাহীন করে তুলেছে। ছাত্রলীগেরই এক কর্মী একদা ধর্ষণের সেঞ্চুরি করার কথা গর্বভরে বলেছিল, যা অনেকেই মনে থাকার কথা।

করোনাকালের প্রথম কয়েক মাসে সব ধরনের অপরাধ প্রবণতা ও অপরাধ সংগঠনের হার কমতে শুরু করলেও ইদানিং আবার বাড়াতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিদিনই ধর্ষণের খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। গণধর্ষণের খবরও তার মধ্যে আছে।

যেদিন এমসি কলেজ হোস্টলে সংঘটিত গণধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেদিন আরও একটি গণধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এটি ঘটেছে খাগড়াছড়ির শহরতলীর একটি গ্রামে। দুর্বৃত্ত ও ধর্ষকরা দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে এক তরুণীকে ধর্ষণ করেছে। তার আগে তারা বাড়ির লোকজনদের বেঁধে রাখে। জানা যায়, ধর্ষণের শিকার তরুণী বৃদ্ধিপ্রতিবন্ধী। পশু না হলে মানুষ এরকম কাজ করতে পারে না।

দেশে উদ্বেগজনকভাবে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে যেসব কারণ আছে, তার মধ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয় ও শাসনের অভাব এবং দায়মুক্তি বা বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিস্তার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

দেশে মূল্যবোধ শিক্ষা ও চর্চার ক্ষেত্র সীমিত হয়ে পড়েছে। পাঠ্যবয়ে বা পাঠক্রমে নেতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার বিষয় প্রায় উঠে গেছে। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে এসব শিক্ষা লাভের সুযোগও কমে গেছে। আর সামাজিক শাসন নেই বললেই চলে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় শাসন ও বিচারের নিশ্চয়তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে কম। যারা সরকারী দলের লোক, তাদের যেন সাত খুন মাফ।

এ পরিস্থিতিতে সরকারী দলের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অপরাধ ও অপকর্মের প্রবণতা সীমা অতিক্রম করে গেছে। এমসি কলেজ হোস্টেলে গণধর্ষণের ঘটনা এর অন্যতম প্রমাণ। ধর্ষণ-গণধর্ষণের সকল ঘটনার দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি হতে হবে। ত্বরিত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে এ ধরনের অপরাধ কমবে- আশা করা যায় না।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।