Home মহিলাঙ্গন মোবাইলে করোনা উৎপাত!

মোবাইলে করোনা উৎপাত!

।। ফারজানা ইসলাম লিনু ।।

করোনা আসার পর থেকে জরুরি দরকারে মোবাইলের কল করতে রীতিমতো ডর লাগে। নিতান্ত দরকারে কল বাটন চাপলে সেরেছে। করোনা নিয়ে সচেতনতার পাশাপাশি হেল্প লাইনের যাবতীয় টিকুজি শুনতে শুনতে কল করার আসল প্রয়োজনীয়তা বিস্মরণ হয়।

অথচ শুনেছি এইসব হেল্পলাইনে ফোন করে সাহায্য চাওয়া অরণ্যে রোদন মাত্র। ভুক্তভোগীরা নাকি তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করে বিকল্প উপায়ে সহায়তা নিতে বাধ্য হন।

অবশ্য সবার ক্ষেত্রে একই ঘটনা নাও ঘটতে পারে। অনেকেই ফোন করে সুবিধা ভোগ করেছেন নিশ্চিত।

আন্দুচান্দু বলান কথা বলার অপরাধে আমাকে আবার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে!

ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার আমার আবার বিরাট এক বদ অভ্যাস। অতি তুচ্ছ ঘটনার বর্ণনায় লম্বা কিচ্ছা । যাই হউক, করোনার চরম উৎপাতের দিনে আমরা করোনার ভয়ে তটস্থ। পুত্রকন্যার বাপ একদিকে একশো চার ডিগ্রি জ্বর নিয়ে হোম আইশোলেশনে। বাড়ি থেকে খবর এসেছে, মেঝো ভাইয়ের করোনা পজেটিভ। সবকিছু মিলিয়ে জানের ডিপ ডিপানি তখন নিত্য সঙ্গী। সেই দুঃসময়ের এক সন্ধ্যায় বড় কন্যা অসাবধানে উষ্টা খেয়ে পড়ে নাকে ব্যাথা পায়।

সেকি আর যেই সেই আঘাত? একেবারে রক্তারক্তি অবস্থা। ফ্রিজ থেকে বরফ, ঠান্ডা জল চেপে ধরেও ব্লিডিং বন্ধ হয় না। এর মধ্য নাক ফুলে ফেঁপে কচ্ছপের বাচ্চার মতো হয়ে আছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অমন অসহায় নাস্তানাবুদ চেহারা, আহারে। নিজেরও ভাবনা হয় নাকের হাড্ডি ভেঙে গেলো না তো?

আরও পড়তে পারেন-

মোবাইল হাতে নিয়ে বেহুশের মতো ডাক্তার আপনজন ও পরিচিতজন দেখে দেখে নাম্বারে ফোন দিতে থাকি।

উফ কি যন্ত্রণা! নাম্বার টিপা মাত্রই শুরু হয় করোনার কাসুন্দি। অনুনয় বিনয় করে বলি, বইন তুই এখন থাম। আমি করোনা নয় নাকের চিকিৎসা চাচ্ছি।

কে শুনে কার কথা?

করোনা বইনের যন্ত্রণায় একের পর এক লাইন কেটে ফোন দিতে থাকি, সব জায়গায় সে আমারে করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে উপদেশ ও দিক নির্দেশনা দিতে থাকে।

রাগ করে ফোন রেখে আমি ম্যাসেঞ্জারের শরণাপন্ন হলে একাধিক ডাক্তারের সহায়তা পেতে সক্ষম হই।

আরেকদিনের ঘটনা। অনলাইনে হোম ডেলিভারি প্রোডাক্ট হাতে নিয়ে আমি তব্দা। ডেলিভারি ম্যানকে ফোন দিলাম, ভাই আমি কি অর্ডার করলাম আর আপনি কি দিলেন?

ও মোর কপাল, করোনা বইনের উপদেশ শুনতে শুনতে ডেলিভারি ম্যান মিরাবাজার আউট। ব্যাটা ফোন ধরে বলে, আফা আমিতো জিন্দাবাজার পার হইয়া আইচ্ছি।

কি আর করা?

করোনা বইনকে ব্লক করার কোন উপায় বের করতে পারি না।

আজকে কেয়ারটেকারকে বাজারের ফর্দ দিয়ে দোকানে পাঠিয়েছি। বেচারা দুই কদম যেতে না যেতেই সাফিয়া ফরমায়েশ করে, মামি আরো একখান জিনিস লাগবো। কইতে ভুলি গেছি। আনোয়ার ভাইরে একটা ফোন দেন তো।

ফোনের ওপাশে করোনা বইন সদা সর্বদা তৎপর।

আনোয়ার, মনোয়ার যারেই ফোন দেই করোনা বইন শুরু করেন…।

তাইনের মূল্যবান বয়ান শুনতে শুনতে আনোয়ার বাজারের ব্যাগ নিয়া হাজির।

কেউ কি বলতে পারবেন, করোনা বইন কবে মোবাইল থেকে বিদায় নিবেন? আর বন্ধ হবে উপদেশের উৎপাত।

– ফারজানা ইসলাম লিনু
শিক্ষক, কথাসাহিত্যিক।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।