Home রাজনীতি রাসূল (সা.) অবমাননার প্রতিবাদে ঢাকায় মহানগর জমিয়তের বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ

রাসূল (সা.) অবমাননার প্রতিবাদে ঢাকায় মহানগর জমিয়তের বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি আল্লামা আবদুর রব ইউসূফী বলেছেন, হাদীসে কুদসীর ভাষ্যমতে আল্লাহ তাআলা সমগ্র মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, দুনিয়ার মানুষ জাহান্নামের কিনারায় চলে গিয়েছিল। আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবী (সা.)কে মানবজাতিকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। যারা সেই নবীকে ভালবাসবে না, নিজের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতিসহ দুনিয়ার সকল ধন-সম্পদ ও প্রিয়জনদের চেয়ে বেশি ভাল বাসতে পারে না, তারা কখনো মুমিন হতে পারবে না।

তিনি বলেন, ফ্রান্সে আল্লাহর নবী (সা.)কে বার বার অপমান করা হচ্ছে। নবীর কার্টুন বানিয়ে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ নেতৃত্ব ও উস্কানী দিয়ে এই জঘন্য কাজকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আমাদের ঈমান থাকতে এটা বরদাশত করতে পারি না। বাংলাদেশের জনগণের কাছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি যেমন অবাঞ্ছিত হয়ে আছে, আগামীতে আসতে চাইলেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে, তেমনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বিষয়েও একই ঘোষণার জন্য আমাদের কাছে জনগণের কাছ থেকে দাবি আসছে।

আল্লামা ইউসুফী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ সরকার ফ্রান্সের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় এখনো চুপ হয়ে আছে। সরকার জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পারছে না। জনগণের ভাষা না বুঝলে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ, এটা সরকারকে বুঝতে হবে। অবিলম্বে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সরকারীভাবে রাসূলের অবমাননার প্রতিবাদ জানাতে হবে।

তিনি বলেন, প্রিয় ভাইয়েরা, আমরা ঈমানী তাগিদ থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করছি। জিতব, না হয় প্রয়োজনে শহীদ হবো।

আরও পড়তে পারেন-

আল্লামা ইউসুফী বলেন, আগামী ৩০ অক্টোবর শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে সমমনা ইসলামী দলসমূহের উদ্যোগে ফ্রান্সে মহানবী (সা.)এর অবমাননার প্রতিবাদে বিশাল গণমিছিল বের করা হবে। আপনারা সকলে তাতে শরীক হবেন।

ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মহানবী (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের প্রতিবাদে জমিয়তের উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর কর্তৃক আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা ইউসুফী এসব কথা বলেন।

জমিয়তের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মতিউর রহমান গাজিপুরী এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক মুফতী বশিরুল হাসান খাদিমানীর পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আল্লামা আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপুর), যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজীজ, প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নাল আবেদীন, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস (মানিকনগর), মাওলানা লোকমান মাজহারী, মাওলানা মাহবুবুল আলম, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা ইখলাসুর রহমান, মাওলানা হেদায়েতুল ইসলাম, মাওলানা নূর মুহাম্মাদ কাসেমী, মাওলানা নূরে আলম ইসহাকী ও মাওলানা আব্দুস সালাম প্রমূখ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আল্লামা আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপুর) বলেন, ঢাকা মসজিদের নগরী, বাংলাদেশে ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। এই দেশের সরকার প্রধানও শুধু মুসলমানই না, বরং তিনি তাহাজ্জুদ গুজার, ইবাদত গুজার ও তিলাওয়াত করেন। তিনি কি দেখেন না ফ্রান্সে আমদের নবীর বিরুদ্ধে কি চলছে?  তিনি ঘরে বসেই বাংলাদেশের সবকিছু দেখেন, পদ্মা সেতু দেখছেন, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, আপনি যদি তাহাজ্জুদ গুজার হয়ে থাকেন, তাহলে মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের মতো হয়ে থাকুন। মুসলিম জনতার সাথে শামিল হয়ে আপনিও ফ্রান্সের দ্রুত নিন্দা জানান। ফ্রান্সের দূতাবাস ঘেরাও করতে গেলে আপনার বাহিনী যদি বাধাপ্রদান করে, তাহলে বুঝতে হবে আপনি ফ্রান্সের। আপনি ফ্রান্সের হয়ে ভূমিকা রাখবেন, নাকি মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করবেন, এই বিবেচনার ভার আপনার উপর রেখে গেলাম।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন- এ সময়ে সারাবিশ্বে সবচেয়ে বড় গর্দভের নাম হলো ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বিশ্বের সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কাছে তিনি সর্বোচ্চ ঘৃণার পাত্র। এই পাগলের থাকার কথা পাগলাগারদে। তিনি কেন থাকবেন রাজপ্রাসাদে? মস্তিস্ক বিকৃত এই মানুষটার কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া মানায় না। বর ছাড়া যেমন বরযাত্রা হয় না, বর ছাড়া যেমন বিয়ের আসর হতে পারে না। প্রিয় নবী (সা.)এর ইজ্জতের সুরক্ষা ছাড়া আমাদের জীবনও কল্পনা করা যায় না।

এ সময় সমাবেশে স্লোগান শুরু হয়- ম্যাক্রোঁর গালে গালে, জুতা মার তালে তালে।

মাওলানা আফেন্দী বলেন, আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, নবী হিসেবে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, সন্তান হিসেবে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান, স্বামী হিসেবে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ স্বামী, পিতা হিসেবে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ পিতা, প্রতিবেশি হিসেবে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিবেশি, সমাজ সংস্কারক হিসেবে তিনি দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপ্রধান, সেনা প্রধান হিসেবে তিনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সেনা প্রধান। তিনি পৃথিবীতে শুভাগমন করেছেন, অসভ্য পৃথিবীকে সভ্যতা শেখাতে। তিনি পৃথিবীতে এসেছেন, অশান্ত পৃথিবীকে শান্ত করার জন্য। তার সম্মানে যদি কোন আঁচড় আসে, আমরা তখন শহীদ হওয়ার স্বপ্ন দেখি।

তিনি বলেন, মুসলমানদের জীবনের সবচেয়ে বড় গর্বের বিষয় শাহাদাতের সুধা পান করা। নবী (সা.)এর ইজ্জতে আঘাত আসবে, আর আমরা বসে আঙ্গুল চুষব, এই চিন্তা কোন আহম্মক ছাড়া করতে পারে না। ফ্রন্সের আহাম্মক প্রেসিডেন্ট হয়তো ভাবতে পারেন, ফ্রন্সে মুসলমানের সংখ্যা মাত্র ৫.৬ শতাংশ। সঙ্গত কারণে তিনি হয়তো মনে করে থাকতে পারেন, এখানে মহানবী (সা.)এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করা হলে এই তামাশার কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। আমি তাকে আহাম্মক ও মস্তিষ্ক বিকৃত মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করতে চাই। আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এই ৫.৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে ফ্রান্সের মাটিতে মুহাম্মদ (সা.)এর পাগল ১৮ বছর বয়সী ওই যুবক ছিল। গোটা দুনিয়ার সকলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এই নবীর ইজ্জতে আঘাত আসলে শুধু ১৮ বছর বয়সী এক যুবক নয়, লক্ষ লক্ষ যুবক বুকের তাজা রক্ত ঢালতে প্রস্তুত।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা আগামী ৩০ অক্টোবর শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে সমমাননা ইসলামী দলসমূহের গণজমায়েত ও গণমিছিল সফল করার জন্য বিশেষ আহ্বান জানান।

প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বিশাল এক বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মুকাররম উত্তর গেইট থেকে বের হয়ে নাইট্যাঙ্গেল মোড় গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফীর পরিচালনায় আখেরি মুনাজাত শেষে কর্মসূচীর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।