Home সোশ্যাল মিডিয়া কওমী মাদ্রাসার ক্ষতি করবে যে শিক্ষা আন্দোলন

কওমী মাদ্রাসার ক্ষতি করবে যে শিক্ষা আন্দোলন

।। সৈয়দ শামছুল হুদা ।।

সম্প্রতি কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক দলসমূহের তারুণ্যদীপ্ত নেতৃবৃন্দ একটি শিক্ষা আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। সম্মিলিতভাবে প্রেসক্লাবের সামনে রাজপথে মানববন্ধন করেছেন। বাংলা এবং ইংরেজিতে লেখা ব্যানার সমূহে শোভা পেয়েছে ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দে অবারিত শিক্ষার সুযোগ লাভের দাবী।

আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে বর্তমান তারুণ্যদীপ্ত সকল কওমী নেতৃত্ব। বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। তাদের দাবী, বাস্তবতা, আন্দোলন গড়ে উঠার নেপথ্য কাহিনী সবকিছুই বিশেষভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

আন্দোলন কেন গড়ে উঠেছে, সে সম্পর্কে জানা যায়, কিছুদিন পুর্বে দারুল উলূম দেওবন্দে অধ্যায়ন শেষে একদল বাংলাদেশি ছাত্র ত্রীপুরা সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে। সহজ সরল এ সকল বাড়ী ফেরত ছাত্রদের উপর নানা ধরণের অপবাদ দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টি অবশ্যই বিবেচ্য। বাংলাদেশি আলেমদের জন্য গুরুত্ববহ। বিশেষকরে দারুল ঊলুম দেওবন্দে যারা পড়াশোনা করেছেন, পড়তে আগ্রহী, পড়ার স্বপ্ন দেখেন তাদের সকলের জন্য।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, প্রায় ৫০ জন ছাত্র এক সাথে বিনা ভিসায় কীভাবে জড়ো হলো? সীমান্তে দারুল ‍উলুম দেওবন্দই শুধূ নয়, মাদ্রাসা পড়ুয়া যে কোন ছাত্রকেই হয়রানী করা হয়। এটা সকলের কাছেই জানা বিষয়। তাহলে কেন তারা সতর্কতা অবলম্বন করলো না?

এছাড়া যে প্রশ্নটি সামনে আসছে, সেটা হলো, ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের দাওরায়ে হাদীস বা অন্যান্য জামায়াতে পড়তে যদি অবাধে যাতায়াতের সুযোগ দেওয়া হয়, তা বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসা সমূহের জন্য তা কতটা কল্যাণকর হবে?

ভারতের সাথে যাতায়াত খুব সুবিধাজনক হওয়ায় যদি সীমান্তের সকল বাধা তুলে দেওয়া হয়, তাহলে যা হবে, সেটা হলো- ব্যাপকহারে ভারতমুখী হবে বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসার উচ্চশিক্ষার্থীরা। তারা আর হাটহাজারী, পটিয়া বা রাহমানিয়ায় পড়ার জন্য উপচে পড়বে না, তারা লাইন ধরে সকলেই ভারতমুখী হবে। তখন দারুল উলুম দেওবন্দ কতজনকে গ্রহণ করতে পারবে?

দেখা যাবে, মূল দেওবন্দে সুযোগ না পেয়ে দুর্বল মানের প্রতিষ্ঠান সমূহে পড়ার জন্য ভীড় করবে। লজ্জায় কেউ দেশে ফিরে আসবে না। এর ফলে ছাত্রদের দুটি ক্ষতি হবে। প্রথমত: বাংলাদেশে দাওরায়ে হাদীসের যে মান ঘোষিত হয়েছে তা অর্জন থেকে বঞ্চিত হবে। দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসাসমূহ উচ্চতর জামায়াতে ছাত্র সংকট সৃষ্টি হবে।

যাতায়াতের অবাধ সুযোগ দেওয়া হলে কওমী শিক্ষাক্ষেত্র থেকেও ভারত ভালো মানের রেমিটেন্স পাবে। কলকাতার পাঠকলগুলোর মতো ভারতের মাদ্রাসা সমূহে ছাত্রদের উপচে পড়া ভীড় থাকবে। বাংলাদেশ ছোট্ট একটি রাষ্ট্র হওয়ায় সেখানে মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদীস বা মেশকাত জামাতে ছাত্র সংকট আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে। গোটা কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা পর্যায়ক্রমে ভারতমুখি হয়ে উঠবে।

দারুল উলুম দেওবন্দে সীমিত সংখ্যক ছাত্রকে পড়ার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই ভারতে পড়ার ক্ষেত্রে সকল প্রকার বাধা অপসারণ করা উচিত হবে না। দারুল উলুম দেওবন্দের সাথে বাংলাদেশের বিশেষ বিশেষ মাদ্রাসার শিক্ষাচুক্তি হতে পারে। সেটাও খুব নিবিড় পর্যবেক্ষণের পর ছাত্রদের যাতায়াতে অনুমোদন হতে পারে। নতুবা ভারতে অবাধ যাতায়াত ও শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হলে বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসা সমূহেরই বেশি ক্ষতি হবে।

[ 25.05.2018 ]