Home ইসলাম ধর্ষণ-ব্যভিচার বন্ধে সন্তানদের দ্রুত বিবাহে উদ্যোগ নিন: অভিভাবকদের প্রতি আল্লাহ ও রাসূল...

ধর্ষণ-ব্যভিচার বন্ধে সন্তানদের দ্রুত বিবাহে উদ্যোগ নিন: অভিভাবকদের প্রতি আল্লাহ ও রাসূল (সা.)এর বার্তা

আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন পবিত্র কোরআনে ক্বারীমের সূরা-নূরের ৩২নং আয়াতে গোটা পৃথিবীর সমস্ত অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে একটি নির্দেশ জারি করেছেন। আর তাহল- “তোমরা তোমাদের অধিনস্থদের বিবাহ দেওয়ার বন্দোবস্ত করো। যদি তারা অভাবের মধ্যে থাকে, তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন তাদেরকে আপন অনুগ্রহে অভাব দূর করে দিবেন।”

এ আয়াতের মাধ্যমে অভিবাবকদের উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যে নির্দেশ জারি হলো তা হলো, অধিনস্তদের বিবাহের ব্যবস্থা করে দেওয়া।

বেশিরভাগ অভিভাবকগণ তাদের অধিনস্তদেরকে, বাবা তার ছেলে-মেয়েকে, বড় ভাই তার ছোট ভাই-বোনদেরকে বিবাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করে থাকেন যে অজুহাতের ভিত্তিতে তা হলো, তারা নিজের পায়ে নিজে এখনো দাঁড়ায়নি।

মূলত এই পায়ে দাঁড়ানোর বিষয়টি আপেক্ষিক। কেননা অনেকের দৃষ্টিতে শুধুমাত্র ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করতে পারাটাই পায়ে দাঁড়ানো। আবার অনেকের দৃষ্টিতে অনেক পয়সা-কড়ি করে ফেলা, বিশাল ব্যাংক-ব্যালেন্স করতে পারাটাই হলো পায়ে দাঁড়ানো। কিন্তু মূলত: কোনো মানুষ যদি কোনোরকম একজন স্ত্রীর মোহরানা আদায় ও ডাল-ভাত খেয়ে জীবনধারনের সামর্থ থাকে, তাহলে সে ব্যক্তিকে সামর্থবান হিসেবে বিবেচিত করে “ইসলাম”। আর তাই সে ব্যক্তির বিবাহে বিলম্ব করানোটা একজন মুসলমানের জন্য উচিত নয়।

এছাড়াও হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “তোমাদের নিকট যদি স্বীয় সন্তান বা অধিনস্তদের ব্যপারে এমন কোনো ব্যক্তির পক্ষ থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসে যার চরিত্র ও দ্বীনদারিতা তোমরা সন্তোশজনক মনে করো, তাহলে তাকে দ্রুত বিবাহ দাও এবং সেক্ষেত্রে তোমরা বিলম্ব করিও না। যদি (তাকে বিবাহ) না দাও, তাহলে এ পৃথিবীতে ব্যাপক ফিতনা-ফাসাদ ও নৈরাজ্যের সৃষ্টি হবে।” -(ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ১৯৬৭)।

আর আজ আমরা ঠিক এমনটাই দেখতে পাচ্ছি। আমাদের সমাজে ব্যাভিচার, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন যেগুলো আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি তার পিছনে বিলম্বে বিবাহের কারণটি অনেক বড় দাগে কাজ করে। মনেরাখা উচিত, যে সমস্ত অভিভাবক নিজ সন্তানদেরকে, ছোট ভাই-বোনকে বা অধিনস্তদেরকে সময়মতো বিবাহ দিচ্ছেন না এবং বিলম্ব করছেন তথাকথিত পায়ের উপর দাঁড়ানো নিয়ে, তারা কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের দৃষ্টিতে অসামী এবং অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। শুধুমাত্র ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা এটা কোনো কঠিন বিষয়ই নয়। একজন মুসলিমের কাছে তার চরিত্র হেফাজত করতে পারা- এটা হলো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের বিষয়, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো বাবা-মায়ের অবহেলার কারণে বা তাদের গড়িমসির কারণে যদি তার সন্তান বিপথগামী হয়, গোপনে গোপনে গুনাহে লিপ্ত হয়, চোখের গুনাহ বা হস্তমৈথুনসহ নানাবিধ অপরাধে সে পা বাড়ায় তাহলে সেক্ষেত্রে বাবা এবং মাকে সেই অপরাধের জন্য দায়ী হতে হবে।

আরও পড়তে পারেন-

আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন বলেন- “কেয়ামতের ময়দানে মানুষ তার বাবা-মা থেকে পলায়ন করবে”। (সুরা- আবাসা, আয়াত- ৩৫)।

সেদিন যদি বাবা-মা বলে, আমরা তোমার ভালোর জন্য তোমাকে বিলম্বে বিবাহ করিয়েছিলাম কিন্তু তুমি গুনাহে লিপ্ত হয়ে ছিলে। সুতরাং এখন এই গুনাহের দায়ভার তুমি নাও, তখন কিন্তু সন্তান বাবা-মায়ের এই গুনাহের দায়ভার বহন করবে না।

এছাড়াও আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন বলেছেন- “হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজ পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।” (সূরা- তাহরিম, আয়াত- ৬)।

সুতরাং সমাজের স্বাভাবিক বিকাশ ও স্থিতিশীলতার জন্য, সন্তানদের চরিত্র হেফাজত করার জন্য প্রত্যেক ঈমানদার বাবা-মায়ের কর্তব্য হলো যথাসময়ে ও যত দ্রুত সম্ভব বিবাহ দেওয়া। কেননা অনেক বেশি ভালোর জন্য অপেক্ষা করাটা অনেক ক্ষেত্রে তাদের জন্য গুনাহের কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে।

খলিফাতুল মুসলিমিন হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এরশাদ করেন- “ঐ ব্যক্তির প্রতি আমার আশ্চর্য হয়, যে স্বচ্ছলতা চায় কিন্তু সে বিবাহ করে না।”

একথা দ্বারা তিনি এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, কেউ যদি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন তার রিজিকে বরকত দান করেন এবং তাকে স্বচ্ছলতা দান করেন। কেননা স্ত্রী হয়ে যে আসবেন, তিনি তার রিজিকতো অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের কাছ থেকে পাবেন। অর্থাৎ স্ত্রীর রিজিকটাও স্বামীর কাছে আসবে, ফলে স্বামীর স্বচ্ছলতা অবশ্যই বাড়বে।

তাছাড়া নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- “তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করাটা আল্লাহ তা’আলা নিজ জিম্মায় নিয়ে নিয়েছেন। তারমধ্যে প্রথমজন হলেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত মুজাহিদ ব্যক্তি। দ্বিতীয়ত ঐ কৃতদাস, যে মালিকের সাথে অর্থের বিনিময়ে মুক্তির স্বদিচ্ছায় চুক্তিতে আবদ্ধ। তৃতীয়ত ঐ ব্যক্তি, যে নিজ চরিত্র হেফাজতের ইচ্ছায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।” (তিরমিযি, হাদীস- ১৬৫৫)।

সুতরাং অভাবে, স্বচ্ছলতার অজুহাতে কোনো অবস্থাতেই বিবাহের ক্ষেত্রে বিলম্ব করা জায়েজ নেই। তবে হ্যাঁ- কোনো ব্যক্তির যদি স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করার মতো অবস্থা না থাকে, স্ত্রীর মৌলিক চাহিদা পূরণ করার কোনো উপায় না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে ইসলাম তাকে কোনোমতেই বিবাহের অনুমতি দেয় না। বরং সে ব্যক্তি সবর করবেন।

অতএব, অভিবাবকদের কর্তব্য হলো অধিনস্তদের বিবাহের ক্ষেত্রে বিলম্ব না করা। বরং যত দ্রুত সম্ভব চরিত্র হেফাজতের জন্য তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করা। বিশেষকরে এযুগে চতুর্দিকে ফিতনার যেই জোয়ার চলছে, এই জোয়ারের মাঝে আমাদের যুব সমাজ একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে। অনেক সময় বাবা-মা সেটা লক্ষ্যও করতে পারেন না। আর সন্তানরা বাবা-মাকে সেকথা বলতেও পারে না।

এজন্য সম্মানিত অভিভাবক-অভিভাবিকাবৃন্দের নিকট আমার বিনীত আরজ, আপনারা বিবাহের পথকে সহজ করে ব্যভিচার ও অশ্লীলতার পথকে বন্ধ করে দিন।

আর যে মেয়ে অল্পতে তুষ্ট থাকবে, কোরআন-হাদীসের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী হবে- সেরকম মেয়েদের সাথে নিজ ছেলে ও ছোট ভাইদের বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করুন। ‘ইনশাআল্লাহ’ অল্প উপার্জনের মধ্যেই তারা সুখে-শান্তিতে থাকবে।

মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ বিধান অক্ষরে অক্ষরে পালন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

অনুলিখনে- মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম মুন্সী

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।