Home কবিতা আমার বাংলাদেশ!

আমার বাংলাদেশ!

।। মালেকা ফেরদৌস ।।

[ এক ]

ছেলেবেলায় আমার মা আমাকে এক আশ্চর্য সবুজের
গল্প শোনাতেন,দিগন্তচারী এক অশ্বারোহী কি করে
তার অলৌকিক ঘোড়ায় সওয়ার হতেন,
মাঠ, নদী,অরণ্যের প্রান্ত ছুঁয়ে সমুদ্রের তরঙ্গ পেরিয়ে-
অরুণ বর্ণের অশ্বারোহী সবুজ শস্যের মাঠে ভোরের আলোয়
মেঘস্পর্শী পাহাড়ের মত ঝলমলিয়ে উঠতেন,
অন্ধকারে বিদ্যুতের ঝিলিক ছড়াতেন,তার অশ্বখুরের ধ্বনি কায়াহীন সব
প্রেতাত্মাদের ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল, সে ছিল
এক অফুরন্ত বীরত্বের গল্প-এক অনন্য সবুজের বিবরণ….!

[ দুই ]

মা বলতেন, কত বীরের জন্ম দিয়েছে এ সুফলা ভূমি–
কত পূণ্যবানেরা আশ্রয় নিয়েছেন এ মাটিতেই
কত লাঞ্ছনা আর দাসত্বের ইতিহাস
পেরিয়ে এসেছি আমরা।
চৈতন্যের গভীর হতে আজ যে তরঙ্গের কল্লোল বইছে
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, মাঠে মাঠে জ্বলে উঠছে
যে সোনা রং ধান,স্বচ্ছতোয়া জলের আধার এই নদী,
পরম মমতায় তোমার সমুখে তুলে ধরা
এই যে পরমান্নের বাটি-এই-ই আমাদের স্বাধীনতা,
নীলিমায় উড্ডীন লাল সবুজের পতাকা
প্রদীপ্ত সূর্যের মত জ্বলছে এই – ই আমাদের স্বাধীনতা।

[ তিন ]

মা বসন্তের বিবরণ দিতেন-
ভাষা আর স্বাধীনতা লড়াইয়ের কথা বলতেন-
জ্যোতিষ্মান নক্ষত্র্যের মতই জ্বলে উঠত তার দু’চোখ,
সহস্র শ্বেত কপোতের পক্ষ-সঞ্চালনের শব্দ তরঙ্গে
বুকের ভেতরের স্বপ্নগুলো তখন গলে হয়ে যেত দিকপ্লাবী এক নদী,
আর আকাশে উড়তে থাকত হাজার লাল সবুজের পতাকা।

[ চার ]

বার বছর বয়স থেকে আমি গনতন্ত্রের সংজ্ঞা মেলাতে চেয়েছি
বরফ শীতল নির্বাক মা আর কোনদিন বিজয়ের গল্প করেননি,
আমরা তো হানিফের ঘোড়ার অপেক্ষায় ছিলাম,সময় অন্ধকারে
গড়াতে থাকে, চারদিকে লুটেরা,ডাকাত,ধর্ষক আর খুনিদের উল্লাস
বই,বাবার পান্ডুলিপি পুড়তে থাকে, কারণ জানিনা,বুঝবার চেষ্টা করি।
নিজের বাগানের ফল,খেতের ফসল বর্গীরা লুটে নেয় তাকিয়ে দেখি,
বর্গীর ভয়ে অতটকু আমায় শহর গ্রাম করতে করতে মা তখন ক্লান্ত।
সব অর্জন ভেসে যেতে দেখি, দুর্ভিক্ষ,লাশ, ক্ষুধা, নাৎসি প্যারেড
আমাদের ভয়ত্রস্ত করে তোলে।অনেকদিন কথা বলিনা- সবাই বোবা।
একজন ঘোড়সওয়ার এসেছিলেন, আসলে আমরা তাকে হত্যা করেছি।
সব কিছুই রূপকের মত লাগে,কেমন রুদ্ধশ্বাস অস্থিরতা,সময় থমকে থাকে,
সেই ঘোড়সওয়ার, যিনি ছিলেন এশিয়ার সুন্দরতর যিশু।হায় যিশু !

[ পাঁচ ]

এখন কোন সময় নিয়ে কথা বলব,নাকি ক্ষুধা
আর আমাদের সব স্বপ্ন নির্বাসনে পাঠানোর গল্প?
কেন আজ আমরা নিজেদের মৃত জাতী ভাববো?
কেন এখন কাতরতায় পার হয় প্রতিটি স্বাধীনতার বছর?
কেন কাঁদে স্বাধীনতা-,আমার বাংলাদেশ,
আমার সূর্য সন্তানের রক্তের স্রোত বুড়িগঙ্গা হ’য়ে লাল হয় মেঘনার জল,
শোকের স্বরগ্রাম তোলে বঙ্গোপসাগর থেকে পৃথিবীর সব মহাসাগর?
সিদ্ধহস্ত খুনীর অদৃশ্য হাতের থাবায় ডানাভাঙ্গা পাখির মতই কেন
তড়পায় আমার স্বাধীনতা? এ কেমন শোক? প্রতিহিংসা?
শিশুর মৃত্যু, লুন্ঠিত নারীর সম্ভ্রম! যে সফলতার গল্প হয়- শোকের বিলাপ
যে সবুজ, রক্তের দাগে লাল হয় বার বার, সে সফলতা আর রক্তের দাম দেব কতকাল?

[ ছয় ]

নীলগিরি পাহাড় আর সমুদ্রের দোহাই
দোহাই বট আর দেবদারু বৃক্ষের,
ঝাঁক বেঁধে আসা সুন্দর পাখিদের দোহাই,
সবুজ হে তরুণেরা, একবার, শুধু একবার
হাতে হাত রেখে দাঁড়াও, মেরুদন্ড টান করে দাঁড়াও
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে দাঁড়াও,
লাঞ্ছনা খুটে খাওয়া প্রেতাত্মার বিনাশ তবেই
গর্তে পালাবে সব হায়েনার দল।
নাগিনীর হিস হিস,বিষের উর্ণাজাল ছিন্ন করে দাও প্রভু!
হার না মানা নিশ্বাসের লবন আমাদের টেনে নিতে দাও,
আমরা তো কেবল তোমার অস্তিত্বেই বিশ্বাস করি।
বিশ্বের সব নির্যাতিত মানুষের স্বদেশ হোক আমার বাংলাদেশ-
হোক সবার সার্বভৌম ভূ-খন্ডের অধিকার।

– মালেকা ফেরদৌস, কবি , কথা সাহিত্যিক ও সমাজ চিন্তক।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।