Home ইতিহাস ও জীবনী আল্লামা কাসেমী (রাহ.)এর মিশন ছিল দেওবন্দী নীতি-দর্শনকে এগিয়ে নেওয়া

আল্লামা কাসেমী (রাহ.)এর মিশন ছিল দেওবন্দী নীতি-দর্শনকে এগিয়ে নেওয়া

- শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)। ছবি- উম্মাহ।

।। আতাউর রহমান মারুফ ।।

লেখাটি ২০১৮ সালের জুলাই মাসের ৬ তারিখে লেখা। আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহ. এর দ্বীনের প্রত্যেক লাইনে কাজ করার একটি সরেজমিন প্রতিবেদন। আজ হুজুর নেই আমাদের মাঝে। স্মৃতি হিসেবে লেখাটি আবারো নজরে ছানী করলাম।

দ্বীনের বহুমুখী খেদমাতের একজন রাহবার। আজকের গল্প একজন হামাগেরি ফিকিরমান্দ ব্যক্তিত্বকে ঘিরে। আকাবিরে দেওবন্দের এক দীপ্তমান প্রতিচ্ছবিকে ঘিরে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সে ব্যক্তি। ধরে ধরে হাঁটাতে হয় তাঁকে। হুইলচেয়ারে করেও কভু দেখা যায়। এই দৃশ্যটা রাজপথ খুব ভাল করে দেখেছে। পল্টন এলাকার রাস্তাগুলোর যদি ব্যক্তিগত ডায়েরী থেকে থাকে তবে হয়তো তাদের সবচে’ দামি কলমটা দিয়েই এই বীরের গল্পটা লেখে রাখবে। গল্পের সেই মহানায়কের নাম ‘নূর হুসাইন কাসেমী’। একটি চেতনাময় আলোকবর্তিকা। প্রেরণাময় গুল-বাগিচা।

হজরতের ব্যাপারে কম আর বেশি সবাই অবগত যে, তিনি দ্বীনের সকল লাইনে কাজ করার জন্য সর্বদা সবাইকে উৎসাহিত করতেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিজেও শরিক থাকতেন। নিজ কানে বহুবার তাঁকে বলতে শুনেছি যে, ‘তুমি যেই লাইনে দ্বীনের কাজ করছো সেটাই দ্বীন, এমন বলবেনা; বরং বলবে এটাও দ্বীন’। নিজে এক জায়গায় জমে থেকে কাজ করবে। অপরদের সাধ্যমত সহায়তা করবে। সমর্থন দিবে।

আরও পড়তে পারেন-

বহুদিনের ন্যায় গতকালও (০৫.০৭.১৮) দেখলাম হজরতকে একটি কর্মমুখর দিন অতিবাহিত করতে। বাদ ফজর টু রাত দশটা। তবে এই দিনটায় লক্ষ করলাম বড় এক বিষয়! একদিনে চতুর্মুখী কাজ! এবং অনেকটা শারিরীক অংশগ্রহণেই !

তালীম তরবিয়ত

বাদ ফজর আল্লামা কাসেমী মাদরাসা থেকে বের হলেন। চলে গেলেন সাভারের হরিণধরা মাদরাসায়। সবকের ইফতেতাহ করলেন। তারপর মিরপুর মাদরাসাতুল ইহসানেও সবকের ইফতেতাহ করলেন। উত্তরার রাওজাতুস সালিহাত মহিলা মাদরাসায়ও সবকের ইফতেতাহ করলেন। এভাবে আরোও বেশ কটি মাদরাসায় সবকের ইফতেতাহ্ শেষে জোহর বাদ ফিরে এলেন বারিধারায়।

ইসলামী সিয়াসাত

দুপুরে সামান্য বিশ্রাম সেরেই হজরত রওয়ানা করলেন পল্টনের উদ্দেশে। জমিয়ত কার্যালয়ে। কেন্দ্রীয় ছাত্র জমিয়তের কাউন্সিল ছিলো সেদিন। প্রধান অতিথির গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখলেন। ছাত্র সমাজকে সঠিক ইসলামী সিয়াসাত করার প্রেরণা দিলেন। দেশ-জাতীর ক্রান্তিলগ্নে ছাত্র জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এখলাসের সাথে কাজ করে যাওয়ার আদেশ দিলেন। পরে বিকাল চারটার দিকে মাদরাসায় ফিরে আসলেন।

দাওয়াত ও তাবলীগ

পুরো পৃথিবীতে দাওয়াতে তাবলীগের মত মোবারক মেহনত আজ করুণ অবস্থায় পতিত। এক বিতর্কিত সাদ সাব ও তার অন্ধানুসারিদের কারণে। বাংলাদেশের নানা জায়গায় একের পর এক ঝামেলা করার চেষ্টা চালাচ্ছে তার অনুসারীরা। আর উলামায়ে কেরাম তা বুদ্ধিদীপ্তের সাথে প্রতিহত করে যাচ্ছেন। এতে নূর হুসাইন কাসেমী রহ. ও বারিধারা জামিয়ার অবদান শুরু থেকেই উল্লেখযোগ্য ছিল।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) ও তা পিছিয়ে থাকেনি। সাদপন্থীরা চেয়েছিল সাবগুজারীকে কেন্দ্র করে এসে ইজতেমার মাঠকে দখলে নেবে। এ খবর এসে যায় আল্লামা কাসেমীর নিকট। তিনি বাদ আছর পাঁচশর মতো ছাত্রের এক কাফেলা সেখানে প্রেরণ করেন। তাদের সে চক্রান্তকে প্রতিহত করতে। হজরত সেখানে নিজে উপস্থিত হতে না পারলেও হজরতের প্রতিনিধিত্ব করেন বারিধারা জামিয়ার স্বনামধন্য বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম হজরত মাও. নাজমুল হাসান সাহেব। সন্ধ্যা রাতে ইজতেমা মাঠে সাদপন্থীরা জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা চালায়। কিন্তু প্রভূর মেহেরবানিতে ছাত্রদের কঠিন প্রতিরোধে তারা চলে যেতে বাধ্য হয়।

তাযকিয়ায়ে নফস

আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহ. একজন হক্কানী পীরও বটে। তিনি মুফতী মাহমূদ হাসান গাঙ্গুহী রহ. এর খলিফা। মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে প্রতি ইংরেজি মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার হজরতের তরবিয়তি ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে হজরতের মুরিদানরা আগমন করেন। হজরতের পাক জবান থেকে নসিহত শ্রবণ করেন। গতকাল সেই দিনটিই অতিবাহিত হয়ে গেলো।

বাদ মাগরীব শত শত মুরিদানের আগমনে মাদ্রাসার আঙিনা ভরে উঠল। শুভ্রসফেদ জামাধারী হজরত আল্লামা কাসেমী আত্মশুদ্ধি নিয়ে তাৎপর্য বহুল বয়ান করলেন। ইশা পর্যন্ত চলল সে বয়ান। ইশার আগে-পরে মিলিয়ে চলতে থাকলো নতুনদের মুরিদ করার কাজ। এ যেন নতুন করে জেগে উঠা এক খানকায়ে মাহমুদিয়া!

একজন মানুষের জন্য দীনের সকল তরিকায় এভাবে কাজ করাটা বিরল। তবে নূর হুসাইন কাসেমী রহ. এর মত ব্যক্তিত্বদের জন্য এটা একেবারে সহজ সাধ্য। সাধারণ বিষয়। এই বটবৃক্ষ আজ আমাদের মাঝে নেই। ভাবতেই কেমন লাগে! আল্লাহ হজরতকে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে দিক। আমিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।