Home ইসলাম ঈমানদারের অন্তর কখনোই জোর-জুলুম, দুর্নীতি ও গুনাহের কাজে সায় দেয় না: আল্লামা...

ঈমানদারের অন্তর কখনোই জোর-জুলুম, দুর্নীতি ও গুনাহের কাজে সায় দেয় না: আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক

জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা’র শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, “লাক্বাদ খালাকনাল ইনসানা ফী আহসানি তাক্বভীম”। মানুষকে আমি খুব সুন্দর গড় গড়ন দিয়ে সৃষ্টি করেছি। মর্যাদার দিক দিয়ে আমি মানুষকে সকল সৃষ্ট জীবের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা অঙ্গ আমি আল্লাহ নিজে দিয়েছি। কোনো মাখলুক তা কোনো দোকান থেকে খরিদ করেনি। কেউ কোন অর্ডার দিয়ে হাসিল করেনি। নিজের ক্ষমতায় এগুলো সংগ্রহ করে শরীরে সংযোজন করতে পারেনি, বরং আল্লাহ তায়ালা দয়া ও মেহেরবানী করে এগুলো দিয়েছেন।

রাজধানী ঢাকার অন্যতম বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার ছাত্রদের উদ্দেশ্যে এক উপদেশমূলক বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।

বয়ানে তিনি আরো বলেন, আমরা যারা আল্লাহর ফরমাবরদারি করি, আল্লাহর হুকুম মেনে চলি, তারা আল্লাহর দেওয়া শরীর, মস্তিষ্ক, হাত-পা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার করেই ইবাদত-বন্দেগী করি। অন্যদিকে আমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর নাফরমানি ও গুনাহে মশগুল থাকেন, তারাও আল্লাহর দেয়া শরীর, মস্তিষ্ক, হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার করেই গুনাহ ও নাফরমানি করে থাকেন। তারা আল্লাহর বিরোধিতা করতে আল্লাহর দেয়া মস্তিষ্ক ও শরীরকে ব্যবহার করেন। গুনাহের আলাপ-আলোচনা করতে আল্লাহর দেওয়া বাকশক্তিকে ব্যবহার করেন। নাফরমানি বা গুনাহের কাজ করতে আল্লাহর দেয়া শরীরকে ব্যবহার করেন। সকলের মনে রাখা চাই, কেয়ামতের দিন অতি অবশ্যই সকল বান্দাকে তার দুনিয়াবী যিন্দেগীতে আল্লাহর দেওয়া এই দেহ, মন, মস্তিষ্ককে কোন কাজে খরচ করা হয়েছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ সব কিছুর জন্য জবাবদেহি হতে হবে।

আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَىٰ أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ অর্থাৎ- আমি কিয়ামতের দিন মানুষের মুখ বন্ধ করে দিবো, তাতে কথা বলতে পারবে না। আর তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নালিশ করতে থাকবে যে, এই লোক আমাকে অমুক অমুক গুনাহের কাজে ব্যবহার করেছে। এভাবে এক এক অঙ্গ গুনাহের বিষয়ে আল্লাহর দরবারে নালিশ ও সাক্ষ্য দিতে থাকবে। যদি আমরা আমাদের জিন্দেগীকে ইসলাম নির্দেশিত পন্থায় উত্তম উপায়ে পরিচালনা করতে না পারি, তাহলে কেয়ামতের দিন এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে।

আল্লামা ফারুক আরো বলেন, আমরা এমন এক ধরনের ঈমান এনেছি, এটা ঈমানী না বেইমানি তা-ও বুঝা যাচ্ছে না। আমাদের অবস্থা হলো এই, মুখ দিয়ে না বললেও দৈনিক চলাফেরায় ঘোষণা দিচ্ছে যে, জীবন হলো দুনিয়ার জীবন। এখানে যা লুটতরাজ করা যায়, আনন্দ করা যায়, অর্থ-সম্পত্তি সংগ্রহ করা যায়, এটাই জিন্দেগীর সফলতা ও কামিয়াবী। যে কারণে এই অর্থসম্পদ ও ভোলবিলাসিতা চরিতার্থ করতে যত রকমের অন্যায়, গুনাহ এবং সুদ, ঘুষ, দুর্নীতিসহ যত অপরাধ করতে হয়, যত হারাম পন্থা অবলম্বন করতে হয়, যত জবর দখল ও লুটপাট করতে হয়, এভাবে যত অপরাধ আছে সবই অবলীলায় করে যাচ্ছে শুধু মাত্র ধনসম্পদ, ভোগবিলাসিতা ও ক্ষমতা হাসিল করার জন্য।

আরও পড়তে পারেন-

তিনি বলেন, এই যে অন্যায় ও পাপ কর্ম করা হয়- এটা মুখে কেউ স্বীকার না করলেও তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে স্পষ্ট মনে হবে যে, জীবন মানেই হলো দুনিয়ার জীবন; মৃত্যুর পর জীবন বলতে কিছুই নেই। যদিও তারা মুখে বলে থাকেন, মৃত্যুর পর পুুণরুত্থা হবে, হাশর, বিচার, পুলসিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম সবই ঘটবে। আল্লাহর দরবারে জবাবদেহি হতে হবে। এসব তারা মুখে বললেও তাদের কাজেকর্মে এসবের উপর কোন বিশ্বাস বা এক্বিন আছে, এটা মোটেও মনে হবে না।

তিনি বলেন, পরিপূর্ণ ঈমান, তাক্বয়া, আল্লাহর দৃঢ় আনুগত্য সে মানুষের মাঝে আছে যার কাছে একটা গুণ পাওয়া যাবে। যে মনেপ্রাণে ধারণ করে যে, দুনিয়ার জীবন হল এক অনিশ্চিত ও ক্ষণস্থায়ী জীবন। অতি অবশ্যই কবরে যেতে হবে এবং এই কবরে যাওয়া কখন হবে আমি জানি না। এটা এক মুহূর্ত পর, নাকি কাল বা পরশু অথবা কত দিন পর আমি জানি না। শুধুমাত্র এটা যদি মনে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা যায়, তখন তার অন্তর তাকে সবসময় নেক কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে এবং গুনাহ থেকে মুক্ত থাকতে প্রেরণা যোগাবে। এসব বিশ্বাস অন্তরে যে দৃঢ়ভাবে পোষণ করবে, সে কখনোই গুনাহের কাজ ও জুলুম করতে পারে না। যদি গুনাহের কাজ, জবর দখল, জোর-জুলুম ও দুর্নীতিতে শামিল হয়, তাহলে বুঝতে হবে সেই লোকের ঈমান ক্বলবে স্থান করে নিতে পারেনি।

আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, আদালতে ডেথ রেফারেন্স সম্পন্ন হওয়ার পর ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামী যখন বুঝবে আগামী সাপ্তাহেই তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হবে, তখন সেই ব্যক্তির যদি সামান্যতমও ঈমান থাকে, তাহলে তার নাওয়া-খাওয়া, ঘুম, সবই উবে যাবে। সে কত ধরণের তাওবা, ইসতিগফার, কান্নাকাটি, নামায, ইবাদত করতে থাকবে। তারপর সে আর স্বাভাবিক হাসিখুশিতে থাকতে পারবে না। তাকে স্বাভাবিক হাসিখুশিতে থাকতে বলা হলেও সে পারবে না হাসিখুশিতে থাকতে। ঠিক এভাবে যদি আমাদের অন্তরে দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ীত্ব ও অনিশ্চয়তা দৃঢ় হয়, তখন কবর, হাশর, বিচার, পুলসিরাত চোখের সামনে ভাসতে থাকবে। এই মানুষের মন কখনোই তাকে গুনাহের কাজে সায় দিবে না।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।