Home ইতিহাস ও জীবনী কাসেমী (রাহ.) চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে খুবই স্বচ্ছ ছিলেন: মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ

কাসেমী (রাহ.) চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে খুবই স্বচ্ছ ছিলেন: মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ

আল আমীন: রাহবারে মিল্লাত আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারী) বিকেল ৩টায় আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া ইদারাতুল উলূম আফতাবনগর মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আফতাব নগর মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মুহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রেখেছেন- আল্লামা নূরুল ইসলাম জেহাদী, আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, ডা. মাওলানা মুশতাক আহমদ, মাওলানা আরশাদ রহমানী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমূদ, মাওলানা যাইনুল আবেদীন, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা জাবের কাসেমী, মাওলানা বশিরুল্লাহ কাসেমী প্রমুখ।

আল্লামা কাসেমী (রাহ.) প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, আমি যার সম্পর্কে আলোচনা করতে চাচ্ছি তিনি হলেন এ যুগের এক নন্দিত মানুষ। আল্লাহ তায়ালা তাকে তাঁর কাছে নিয়ে গেছেন। আমি তার স্মৃতিচারণ করতে পারছি না, করছি না। তার গুণাবলি আলোচনা করছি না। কারণ, তার স্মৃতিচারণ কিংবা গুণাবলি আলোচনা করার জন্য একটা বিরাট বড় দফতরের প্রয়োজন। আমি কেবল তার লালিত চেতনার বিষয়ে কথা বলব। আমরা কি চেতনাকে সামনে নিয়ে একত্রিত হয়েছিলাম, সেটা আমি কয়েকটা শব্দে, কয়েকটা বাক্যে প্রকাশ করব।

তিনি বলেন, আমি যখন দারুল উলূম দেওবন্দে যাই, হযরত মাওলানা কাজী মুতাসীম বিল্লাহ সাহেব (আমার উপরে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি তাদের অন্যতম) আমাকে নিজে জবরদস্তি করে সেখানে পাঠালেন।

তিনি বলেন, তখন পর্যন্ত দেওবন্দের প্রতি আমার তেমন কোনো শ্রদ্ধা ছিল না। সেখানে গিয়ে দেখি, একটা লোকের নাম কেউ বলে না, শুধু বলে “সদর সাহেব, সদর সাহেব”। আমি একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এই সদর সাহেব কে? তো সে আমাকে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী সাহেবের কথা বলল। এর আগে নূর হোসাইন সাহেবের সাথে আমার দেখা হয়নি। রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, তার ভিতরে একটা সাংগঠনিক প্রতিভা ছিল। যার ফলে দেওবন্দের মতো জায়গায়, বিদেশি হয়েও সকল বাঙালি ছাত্রকে তিনি সুসংগঠিত করে তাদের ‘সদর’ হয়ে ছিলেন। এই জন্য তিনি (নূর হোসাইন) নামে পরিচিত ছিলেন না। সদর সাব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আর এই সাংগঠনিক প্রতিভাই মৃত্যুপূর্বে তাঁর উপর বিকশিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, দেওবন্দ থেকে আসার পরে ফরিদাবাদ মাদরাসায় আমার উস্তাদ হযরত মাওলানা আশরাফ আলী (রাহ.) সাহেব আমাকে জোর করে ফরিদাবাদ নিয়ে গেলেন। তখন ফরিদাবাদ মাদরাসা একটা উঠতি মাদরাসা ছিল। তো তিনি ও মাদরাসার পরিচালক মাওলানা ফজলুর রহমান সাহেব চাচ্ছিলেন কোথায় একটা প্রতিভা পাওয়া যায়। তো আমি ফজলুর রহমান সাহেবকে বললাম, হযরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)এর কথা। যেহেতু দেওব্ন্দেই তাঁর সাথে পরিচয় হয়ে গেছে। এই রকম একজন প্রতিভাবান মানুষ গ্রামে পড়াচ্ছেন। তো আমার থেকে শুনে প্রথমে আমাকে উস্তাদ হিসেবে নিলেন। এরপর কাসেমী সাহেবকে নিয়ে আসলেন। এদিকে হযরত মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক সাহেব, সিলেটি মানুষ, আমরা একসাথে ছিলাম। তিনি খুবই প্রতিভাবান মানুষ, বিদ্বান ও জ্ঞানী মানুষ। তিনি খুবই ভালো মানুষ। তাঁকেও মাওলানা ফজলুর রহমান সাহেব রেখে দিলেন। এই যে তিন চেতনা একত্রিত হলো ঘন্টার পর ঘন্টা, ঘন্টার পর ঘন্টা এটা নিয়ে আলোচনা হতো এই ফেতনার বিষয়ে যে —তখনকার একটা ফিতনা ছিল। যাদেরকে বাতিলের সার নির্যাস বলা হয়, সেই মওদূদীবাদিরা চেয়েছিলো যে ছাত্রের বেশে কওমি মাদরাসায় মওদূদীবাদের অনুপ্রবেশ ঘটাতে। তিনজনের একটা চেতনা ছিলো যে, ছাত্রদেরকে ভেতর থেকে এইভাবে গড়ে তুলতে হবে যে, হক বাতিল চিনতে যেন কোন প্রকার কষ্ট না হয়। কীভাবে করা যায়, কীভাবে করা যায়; এই নিয়ে অনেক আলোচনা হত। এই ফিকির নিয়ে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)এর মালিবাগ আসা, মালিবাগ থেকে বারিধারায় আসা।

তিনি বলেন, তখন আমাদের চেতনাটা ছিলো এটাই যে ছাত্রদেরকে কেমন করে গড়ে তোলা যায়। আর এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি পারঙ্গম ছিলেন হযরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)। হযরত মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক সাহেব ছিলেন ছাত্রদের জেহনিয়্যাত গঠনে অত্যন্ত পারঙ্গম। আমিও তাঁদের সাথে ছিলাম। কিন্তু জ্ঞানে, গুণে নূর হোসাইন কাসেমী সাহেব ও উবায়দুল্লাহ ফারুক সাহেবরা অনেক অগ্রগামী ছিলেন। আমি ছিলাম শুধু একদিক দিয়ে অগ্রগামী। আর সেটা হচ্ছে, আমি ভাল শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারতাম। তাঁরা ছিলেন উত্তম চেতনাধারী। আর এই চেতনার প্রকাশ করতে ভাষা লাগে। সে জন্য আমি অধমকে তাঁরা দয়াপরবশ হয়ে তাঁদের সাথে রাখলেন।একসাথে বহু দিন চললাম, অনেক ছাত্র গড়ে উঠল।

মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, কিন্তু একসাথে চলতে চলতে কখন যে মাওলানা নূর হোসাইন সাহেব ভাবতে শুরু করলেন আমি তাঁর দুশমন, আর আমিও যে কখন থেকে ভাবতে শুরু করলাম যে তাঁকে দিয়ে আমার চলবে না; সেটা আমি টেরও পাইনি। কিন্তু একটা বিষয়— প্রথম দিকে যেভাবে মানুষ জানতো যে তাঁর সবচেয়ে বড় বন্ধু ফরিদ উদ্দনি মাসউদ, মৃত্যুর পূর্বেও জানতো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর ফরিদুদ্দীন মাসউদ। কিন্তু মাওলানা নূর হোসাইন সাহেব নিজে ব্যক্তিগতভাবে দেওবন্দ থাকতে আমাকে হুজুর ডাকতেন, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত হুজুরই ডেকে গেছেন। তিনি আমার নাম নেননি কখনো। অগাধ ভালোবাসা ছিল আমার প্রতি। আমার মনে একটা সন্দেহ এখনো কাজ করে, তাঁর সাথে ঘটে যাওয়া বিষয় এটা নিছক ভুল বুঝাবুঝি ছিলো কিনা। এটাকে আশপাশ থেকে বাতাস দিয়ে বড় করা হয়েছে কিনা। কারণ, না তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধার অভাব ঘটেছে, আর না তাঁর পক্ষ থেকে আমার প্রতি শ্রদ্ধার অভাব ছিল। তাঁর ভিতরগত তো গুণ অনেক ছিল, কিন্তু বাহ্যিক দুইটা গুণ ছিলো। একটা তো বললাম তাঁর মাঝে সাংগঠনিক প্রতিভা ছিল। আর দুই নাম্বার গুণ ছিল, তিনি ছাত্র দেখেই বুঝে ফেলতেন যে তার ভিতর কি প্রতিভা লুকায়িত আছে। আর তাকে তার মেযায অনুযায়ী গড়ে তুলতেন। ছাত্র গড়ার ক্ষেত্রে তাঁর নজির নেই। তিনি চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে খুবই স্বচ্ছ ছিলেন। তিনি আকাবিরদের মাসলাকের সুস্পষ্ট অনুসারী ছিলেন। তিনি কোন বাতিলের সাথে কখনো আপোস করেননি। কষ্ট করতেন, কিন্তু কখনো আপোস করতেন না এবং হতাশও হতেন না। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে উঁচু মাক্বাম দান করুন। আমীন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।