Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ কৃষকের ক্যান্সার আর মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য

কৃষকের ক্যান্সার আর মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য

- প্রতিকী ছবি

।। আল আমিন হুসাইন ।।

‘তার খাটুনি সার্থক হয়েছে। সে কি যেমন-তেমন খাটুনি! রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে ক্ষেত চষো রে, ঢেলা ভাঙ্গো রে, ‘উড়া’ বাছো রে। তারপর বৃষ্টি হলে আর এক চাষ দিয়ে বীজ বোনো। পাটের চারা বড় হয়ে উঠলে আবার ঘাস বাছো, ‘বাছট’ করো। ‘বাছট’ করে খাটো চিকন গাছগুলোকে তুলে না ফেললে সবগুলোই টিঙটিঙে থেকে যায়। কোষ্টায় আয় পাওয়া যায় না মোটেই। এত পরিশ্রমের ফসল কিন্তু তার একার নয়। সে-তো শুধু ভাগচাষী।

জমির মালিক ওয়াজেদ চৌধুরী ঢাকায় বড় চাকরি করেন। দেশে গোমস্তা রেখেছেন। সে কড়ায় গণ্ডায় অর্ধেক ভাগ আদায় করে নেয়। মরশুমের সময় তার ছেলে ইউসুফ ঢাকা থেকে আসে। ধান পাট বিক্রি করে টাকা নিয়ে আবার ঢাকা চলে যায়। গত বছর বাইনের সময়ও একবার এসেছিল। এসে কাগজে কাগজে টিপসই নিয়ে গেছে ভাগচাষীদের। এর আগে জমির বিলি-ব্যবস্থা মুখেমুখেই চলত। দীর্ঘ সুপুষ্ট পাট গাছ দেখে যে আনন্দ হয়েছিল ওসমানের, তার অনেকটা নিভে যায় এসব চিন্তায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে ভাবে আহা, তার মেহনতের ফসলে যদি আর কেউ ভাগ না বসাত!’ প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক আবু ইসহাকের বিখ্যাত গল্প জোঁকের অংশ এটি।

গল্পের নায়ক ওসমানের এমন ভাবনা কেবল তার নিজের নয়। বাংলায় এক সময়কার মহাজন, জোতদার শ্রেণির হাতে নিষ্পেষিত হওয়া কৃষককূলের প্রতীকী চরিত্র যেন ওসমান। সময়ের পরিক্রমায় এসব মহাজন-জোতদার নাম-পরিচয়, ঠিকানা পাল্টেছে ঠিকই। কিন্তু ওসমানদের ঠকানোর সেই চিত্র পাল্টায়নি। কৃষকদের বঞ্চনার হাতিয়ার আর পদ্ধতিতেও এসেছে ঢেড় পরিবর্তন। হালের কৃষিতে ওসমানদের জীবনযাত্রার কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। চাষাবাদে ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। উৎপাদন বৃদ্ধিতে ব্যবহার হচ্ছে উন্নতমানের সার, বীজ ও কীটনাশক। তবে ওসমানদের বঞ্চনা নানা উপায়ে কেবল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িতই হচ্ছে।

কৃষিশুমারি ২০১৯-এর তথ্যমতে, দেশের ৪৬ দশমিক ৬১ শতাংশ পরিবারই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে ৫৩ দশমিক ৮২ শতাংশ গ্রামে, আর ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ শহরে বাস করছে। দেশে জমির মালিকানা নেই এমন পরিবার রয়েছে ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। শহরে বসবাসকারী পরিবারগুলোর মধ্যে এ হার বেশি। শহরের ২৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ পরিবারের ভূমির মালিকানা নেই। আর গ্রামে জমির মালিকানা নেই এমন পরিবার রয়েছে ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এ পরিসংখ্যান থেকে এটি স্পষ্ট হয়, দেশে ওসমান গোছের কৃষকদের সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। বিপরীতে নিজস্ব জমিতে চাষাবাদ করা কৃষকের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু মহাজন-জোতদারদের মাঝে উৎপাদিত ফসলের ভাগ বাটোয়ারা না হলেও এখন কৃষককে ভাবতে হয় উৎপাদিত ফসলের দাম নিয়ে। তাদের মেহনতের ফসলের উপর্যুক্ত দাম পাওয়ার শঙ্কা যেন সারাক্ষণ কৃষককে তাড়া করে বেড়ায়। কারণ মহাজন-জোতদার মতো দেশে মধ্যস্বত্বভোগী একটি শ্রেণী গড়ে উঠেছে। যাদেরকে আবার সমাজের উচ্চবর্গীয় বলে ধরা হয়। যারা ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ বাগধারাটির মতো কৃষকের চেয়ে বেশি মুনাফা করতে সিদ্ধহস্ত।

দেশের কৃষকদের মাঝে কৃষি পণ্য উৎপাদনের অনীহার অন্যতম কারণ হিসেবেও ধরা হয় ন্যায্যমূল্য না পাওয়াকে। কৃষকের মাথায় ঘুরপাক খায় রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবেন কিনা এ চিন্তা। বছর জুড়েই বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য উৎপাদনের পর কৃষক পর্যায়ে যে পরিমাণ লাভ হয়, তার চেয়ে বেশি লাভ করে এই মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা শহুরে, দলবদ্ধ। কৃষি পণ্যের বাজার, দাম তাই তাদের হাতে জিম্মি। 

এখন শীতের সময় হিসেবে সবজির দামের কথায় ধরা যাক। মাঠ পর্যায়ে একজন কৃষক একটি ফুলকপি ৫ টাকা বা তার চেয়ে একটু কম বা বেশিতে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে এসে সেগুলোর দাম হয়ে যাচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা। আবার কৃষক পর্যায়ে একজন কৃষক প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি থেকে দাম পাচ্ছেন ৫ থেকে ৬ টাকা। যেখানে ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে সেটি ঢাকা বা অন্য শহরে এসে হয়ে যাচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা।

এভাবে প্রতিকেজি শিম কৃষক পর্যায়ে ৬ টাকার একটু কম বেশি হলেও শহুরে ভোক্তা পর্যায়ে এসে সেটি ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা হয়ে যাচ্ছে। একইভাবে যখন আগাম শীতের সবজি বাজারে আসে তখন কৃষকের তুলনায় দ্বিগুণ, তিনগুণ বা তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়। মুনাফা ঘরে তোলে এই মধ্যস্বত্বভোগীরা, পকেট কাটা যায় ভোক্তার। আর বঞ্চিত হয় কৃষক। এটি হলো কৃষি পণ্য উৎপাদনে কৃষকের বঞ্চনার একটি ছোট দৃষ্টান্ত। চাল, ডাল, আলু, পটল, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে প্রতিটি ফসলের ক্ষেত্রেই প্রায় একই চিত্র উঠে আসে।

অথচ ওসমানের মতো কৃষকরা যারা বুক সমান পচা পানিতে ডুব দিয়ে পাট কাটে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিঁজে ফসল উৎপাদন করে তারাই ন্যায্যমূল্য পায় না। কৃষককের ঘাম আর রক্ত মাখা এ ফসল থেকে যেন জোঁকের মতো করে মুনাফা চুষে নেয় হালের মধ্যস্বত্বভোগী নামের মহাজন-জোতদাররা। কৃষক আর মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভের ফারাক কত সেটি উঠে এসেছে বণিক বার্তায় গত ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে। ‘প্রতি কেজি চালে মিলারদের মুনাফা পাঁচ টাকা’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দেশে এখন চালের বাজারের বড় প্রভাবক ও নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে চালকল মালিক বা মিলাররা। চাল প্রক্রিয়াকরণের পর বাজারজাত করার সময় অস্বাভাবিক মুনাফা করছেন তারা। গত বছর বোরো মৌসুমে কেজিপ্রতি চালে তাদের গড় মুনাফার পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ টাকা ৭০ পয়সা। আমন মৌসুমে তা আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ২০ পয়সায়। 

আরও পড়তে পারেন-

গত চার বছরে মিলাররা চাল প্রক্রিয়াকরণ থেকে আহরিত মুনাফা নিয়ে সমপ্রতি এক গবেষণা চালায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ব্রি)। ‘অ্যাভেইলেবিলিটি অ্যান্ড প্রাইস ভোলাটিলিটি অব রাইস ইন বাংলাদেশ: অ্যান ইন্টার ইনস্টিটিউশনাল স্টাডি ইন ২০২০’ শীর্ষক এ গবেষণার ফলাফলে চালের বাজার থেকে মিলারদের বিপুল পরিমাণ মুনাফা তুলে নেয়ার তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে আমন মৌসুমে মিলারদের প্রতি কেজি চালে মুনাফা ছিল সাড়ে ৯ টাকা। পরের বছর তা নেমে আসে ৫ টাকা ৪০ পয়সায়। এরপর ২০১৯ সালে ৪ টাকা ৬০ পয়সায় নামলেও গত বছর তা আবার ৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়। গত বছর মিলাররা আমন মৌসুমের চাল প্রক্রিয়াকরণ থেকে মুনাফা তুলে নিয়েছে কেজিতে ৫ টাকা ২০ পয়সা করে। অন্যদিকে বোরো মৌসুমে ২০১৭ সালে প্রতি কেজি চালে মিলারদের মুনাফা হয়েছে ৭ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর বোরো মৌসুমের চালে মিলারদের ২০১৮ সালে মুনাফা হয়েছে ৮ টাকা ২০ পয়সা, ২০১৯ সালে ৫ টাকা ৩০ পয়সা ও ২০২০ সালে মুনাফা হয়েছে ৪ টাকা ৭০ পয়সা।

ধান ও চালের বাজারে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে চালকল মালিকদের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি বলে এ প্রতিবেদনে উঠে আসে। এতে দেখা যায়, বাজার নিয়ন্ত্রণে মিলারদের ভূমিকা প্রায় ৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ভূমিকা যথাক্রমে ২৯ ও ১৭ শতাংশ। অন্যদিকে ভোক্তা ও কৃষকদের ভূমিকা মাত্র ১০ শতাংশ। বাজারে এ একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের সুবাদে মিলাররা সেখান থেকে অস্বাভাবিক মুনাফা তুলে নিতে পারছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একচ্ছত্র আধিপত্য থাকার কারণে মিলারদের মধ্যে এক ধরনের বাজার নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ দেখা যায়। তার প্রমাণও ব্রি-এর এ সমীক্ষায় দৃশ্যমান হয়েছে। তারা এমনকি প্রকাশ্যেই সরকারের সংগ্রহ মৌসুমে চাল কেনার চুক্তিতে না যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে কৃষকরা মৌসুমের শুরুতেই ধান বিক্রির চাপে থাকেন। ধার ও দেনা পরিশোধের চাপ থাকে বিধায় মৌসুমের শুরুতে কম দামে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষকরা, যার সুযোগ নিচ্ছে মিলার ও ফড়িয়ারা। মিলারদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, তারা বাজার থেকে সবচেয়ে কম দামে ধান ক্রয় করতে পারে। পরবর্তী সময়ে এ ধান প্রক্রিয়া করে মিলাররা বিক্রি করছে বাজারে বা সরকারের কাছে। সেখান থেকেই অপ্রত্যাশিত মুনাফা করছে মিলাররা।

নামে-বেনামে কৃষকের এ বঞ্চনার ইতিহাসটা যেন অনেকটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। অথচ এসব কৃষকদের ঘামেই এ ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। তাদের ফসল ফলাতে গিয়ে নিতে হচ্ছে মৃত্যুঝুঁকিও। যেহেতু কৃষকের জমির সীমাবদ্ধতা রয়েছে, রয়েছে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতাও। তাই একই পরিমাণ জমিতে তাকে অধিক ফসল ফলাতে হয়। আর এটি করতে গিয়েই কৃষকরা অতিমাত্রায় অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ও কৃষি রাসায়নিকের ব্যবহারের করছে। ফলে তারা ক্যান্সারসহ নানাবিধ শারীরিক জটিলতায় ভুগতে থাকেন। সম্প্রতি বণিক বার্তায় প্রকাশিত অন্য একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, দেশে ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশই কৃষক। 

দেশের একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি ক্যান্সার চিকিত্সা প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) ক্যান্সার এপিডেমিওলজি বিভাগের সমপ্রতি প্রকাশিত ‘ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট: ২০১৫-১৭’ প্রতিবেদনের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর হাসপাতালটিতে যত রোগী ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশই কৃষক। এছাড়াও শনাক্তকৃতদের মধ্যে কৃষকের হারও এখন উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে হাসপাতালটিতে ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয় ১০ হাজার ৩১০ জন। তাদের মধ্যে ৩০ দশমিক ২ শতাংশই কৃষক। ২০১৬ সালে শনাক্তকৃত ১১ হাজার ১৫ জনের মধ্যে কৃষক ছিলেন ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৭ সালে ১৪ হাজার ৪৪ জন ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়, তাদের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ছিলেন কৃষক। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগের সময় সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার না করেই কৃষকদের মধ্যে মৃত্যু ঝুঁকির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ এই কৃষকদেরই উৎপাদিত ফসল থেকে লাভ করে ফুলে ফেঁপে বড় হয়ে উঠছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। 

সম্প্রতি ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতার জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। উৎপাদক এবং ভোক্তার মাঝামাঝি এই ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি সে সময় বলেন, এসি ঘরের সোফায় বসে মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা খাচ্ছে। উৎপাদক এবং ভোক্তার মাঝামাঝি এই দালাল, ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য কমাতে কঠোর মনিটরিং করা হবেও বলে জানান তিনি।

কিন্তু এই মধ্যস্বত্বভোগীরা কী শুধুই মাঝেমধ্যে আবির্ভাব হয়। নাকি জোঁক গল্পের সেই জমির মালিক ওয়াজেদ চৌধুরী ও তার ছেলে ইউসুফেরই বিবর্তিত রূপ। যারা সব ধরনের আইনের ফাঁক ফোঁকর বের করে বাজার জিম্মি করে কৃষক ও আর ভোক্তাকে ঠকিয়ে লাভ চূষে নেই। জোঁক গল্পে ইউসুফ যেমন বলেছিলেন, ‘আইন! আইন করে কি আর আমাদের আটকাতে পারে! আমরা সুঁচের ফুটো দিয়ে আসি আর যাই। হোক না আইন। কিন্তু আমরা জানি, কেমন করে আইনকে ‘বাইপাস’ করতে হয়।’ 

আসলেই এসব মধ্যস্বত্বভোগীরা আইনকে বাইপাস করে চলে এসেছেন বছরের পর বছর। ফলে দিনে দিনে তারা সিন্ডিকেটে রূপ নিতে স্বক্ষম হয়েছে। আর যে কৃষক সে তো কেবল নিজের সন্তানের মতো যত্ম করে ফসল ফলিয়ে যায়। তার এসব সিন্ডিকেট নিয়ে ভাবনা নেই। আপন মনে দেশের জনগণের খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করাই যেন তার মূল লক্ষ্য। কিন্তু দীর্ঘ পরিশ্রমের পর যখন ফসল ফলিয়ে দাম না পান, যখন দেখেন তার উৎপাদিত সোনাভরা ফসলই ভোক্তা পর্যায়ে গিয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তখন কৃষক ওসমানের মতো রেগে গিয়ে বলতেই পারেন ‘ব্যাডা তো ঢাকার শহরে ফটেং বাবু অইয়া বইসা আছে। থাবাডা দিয়া আধাডা ভাগ লইয়া যাইব। ব্যাডারে একদিন পচা পানির কামড় খাওয়াইতে পারতাম।’ 

তবে কৃষকের সেই আক্ষেপ শুধু আশ্বাসের ভেলায় ভাসতে থাকে। তারপর বছর ঘুরে বছর আসে। তার ঝিমিয়ে পড়া রক্ত জেগে ওঠে। আবার কৃষক ফসল ফলায়, খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করে, অল্প লাভেই খুশি থাকে। তারা প্রতিবাদের ভাষা পায় না, ইচ্ছে হলেও পারে না। অন্যদিকে ফরিয়াদের দৌরাত্ম্যও কমে না, বরং বাড়ে। তারা জোঁকের মতো মুনাফা চুষতেই ব্যস্ত থাকে। যেন এটি কৃষক ঠকানোরই বিবর্তন ধরে রাখার কাণ্ডারি তারা! 

লেখক: সংবাদকর্মী।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।