Home মহিলাঙ্গন ইসলামের আলোকে ‘চল্লিশ’ গুরুত্ব বয়সসীমা

ইসলামের আলোকে ‘চল্লিশ’ গুরুত্ব বয়সসীমা

-সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় নয়নাভিরাম ‘আল কিবলা, মসজিদ।

।। ডা. তানজিনা রহমান ।।

ইসলামের দৃষ্টিকোণে চল্লিশ খুব ভাইটাল একটা বয়স। এই বয়সে জ্ঞান পরিপক্ক হয়, বোধবুদ্ধি পরিপূর্ণ হয়, সহিষ্ণুতা আসে। রাসূল (সা.) নবুয়্যাত প্রাপ্ত হয়েছিলেন ৪০ বছর বয়সে। “……. তাঁর গর্ভধারণ ও দুধ ছাড়াবার সময়কাল ছিল ত্রিশ মাস। ক্রমে তিনি পূর্ণ শক্তি প্রাপ্ত হন এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হওয়ার পর বলেন- হে আমার রাব্ব! আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন যাতে আমি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। আমার প্রতি ও আমার মাতা-পিতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন, তার জন্য এবং যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি; যা আপনি পছন্দ করেন। আমার জন্য আমার সন্তান সন্ততিদেরকে সৎকর্মপরায়ণ করুন, আমি আপনারই অভিমুখী হলাম এবং আত্মসমর্পণ করলাম।” (সূরা আল আহক্কাফ)।

এই আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে, ৪০ হল মানুষের সবদিক থেকে পরিপূর্ণতা লাভের বয়স। এরপর বিবেক বিবেচনায় আর তেমন বড় কোন পরিবর্তন আসে না। ৪০ এ মানুষের যেরকম অবস্থা থাকেন, বাকী জীবনও তেমনই থাকেন। (ইবনে কাসীর)।

হযরত মাসরুক (রাযি.)এর কাছে জানতে চাওয়া হল- “কখন মানুষকে তার গুনাহের জন্য পাকড়াও করা হয়? তিনি উত্তরে বলেন, “যখন তোমার বয়স ৪০ বছর পূর্ণ হবে, তখন থেকে নিজের মুক্তির জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করবে”। অর্থাৎ- ৪০-এ পৌঁছে যাবার পর মানুষের উচিৎ হবে আন্তরিকভাবে আল্লাহ আযা ওয়া জাল্লাহর কাছে তওবা করা এবং এমন কাজ শুরু করা, যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন।

আরও পড়তে পারেন-

আগে যা হবার হয়েছে। আগের যাপিত জীবনে যদি বদ আমলের পাল্লা ভারি হয়ে থাকে, তো এখন আল্লাহর রাস্তায় ফিরে আসবার সময় এসে গেছে। কারণ, হাতের সময় ফুরিয়ে আসছে। আর যদি কেউ আল্লাহর রাস্তায় থেকে নেক আমলের চেষ্টায় এতদিন নিজেকে ব্যস্ত রেখে থাকেন, তো এখন তার দ্বিগুণেরও বেশি বেগে দৌড়ানোর প্রস্তুতি নেবার সময় এসে গেছে। কারণ, হাতের সময় ফুরিয়ে আসছে।

অথচ গন্তব্য নির্দিষ্ট করবার ঠিক এই বয়সটাতেই দুনিয়াবী ফিতনা আমাদের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ফেলে। আখিরাত ভুলে আমরা দুনিয়া নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি।

সপ্তাহ দুয়েক আগে ৪০ এ পা রাখলাম; আলহামদুলিল্লাহ। সুতরাং অনুভব করছি, সময় দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে। আখিরাতের অনন্ত জীবনের প্রতি আরো অনেক বেশি মনোযোগী হবার সময় এসে গেছে। প্রিয় রাসূল (সা.)এর দেয়া মেসেজগুলোর প্রতি আরো যত্নশীল হবার সময় এসে গেছে।

কুরআনকে সুললিত কণ্ঠে কেবল তিলাওয়াত ও সহি শুদ্ধভাবে কেবল উচ্চারণে সীমাবদ্ধ করলে হবে না; আরশীল আযিম আমাদের সবাইকে কুরআনের বাক্য গুলোকে বোঝার এবং তার প্রতিফলন যেন আরো বেশি করে নিজেদের জীবনে ঘটাতে পারি সেই তাওফীক দান করুন। বেশি বেশি ইস্তেগফার করার, আল্লাহর যিকরে জিহবাকে সিক্ত রাখার তাওফীক দান করুন।

“রাসূল (সা.) তাঁর রাব্ব হতে তাঁর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা বিশ্বাস করে এবং মু’মিনগণও (বিশ্বাস করে); তারা সবাই আল্লাহকে, তাঁর মালাইকাকে, তাঁর গ্রন্থসমূহকে এবং তাঁর রাসূলগণকে বিশ্বাস করে; (তারা বলে) আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কাউকেও পার্থক্য করি না। এবং তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং স্বীকার করলাম; হে আমাদের রাব্ব! আমরা আপনারই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনারই দিকে শেষ প্রত্যাবর্তন।” (সূরা বাকারাহ)।

রাব্বে কারীম আমাদের অন্তরকে “শুনলাম এবং মানলাম” এর উপর প্রতিষ্ঠিত করে মু’মিন বান্দায় পরিণত করে দিন। জান্নাতের প্রতিযোগীরা সকলে যেন এই প্রতিযোগীতায় সফল হতে পারি, রাব্বে কারীমের কাছে সেই সাহায্য চাই। আমীন, সুম্মা আমীন। “ওয়ামা তাওফীকুনা ইল্লাহ বিল্লাহ..”।

[৪ জানুয়ারী, ২০২১ খ্রীস্টাব্দ, ১৯ জুমাদাল ঊলা, ১৪৪২ হিজরী]

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।