Home ইতিহাস ও জীবনী হারুন অল রশিদ- ন্যায় বিচারে দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন এই শাসক

হারুন অল রশিদ- ন্যায় বিচারে দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন এই শাসক

আব্বাসীয় খলিফা হারুন অর রশীদ। ইসলামী স্বর্ণযুগের খলিফা। রাতে ঘুরে ঘুরে প্রজাদের অবস্থা দেখতেন। ছদ্মবেশে শহরে ঘুরতেন। নিজের শাসন অধিভুক্ত রাজ্যে কেউ অপরাধ করলে তিনি খতিয়ে দেখতেন নিজের কর্তব্যপরায়নতার জায়গা থেকে।

অপরাধের জন্য নিজের ও রাজ্য অব্যবস্থার দায় খুঁজে পেলে সাজা মাথা পেতে নিতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। প্রতিষ্ঠা করেছেন ইসলামের আইনে ন্যায়বিচার। হারুন অর রশীদের শাসনামলে বিজ্ঞান, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির জন্য এই যুগকে সবচেয়ে উন্নত ধরা হয়। রাজনীতিতেও তিনি রেখেছিলেন বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা।

ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত চরিত্র হারুন অল রশীদ।

৭৬৩ অথবা ৭৬৬ সালের ১৭ মার্চ আব্বাসীয় খিলাফতের অধীনস্থ রাই নামক অঞ্চলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আল মাহদী ও মায়ের নাম খাইজুরান।

বাল্যকালে তিনি ইয়াহিয়া বর্মাকের কাছে বিদ্যা শিক্ষা লাভ করেন। বড় হয়ে শিক্ষাগুরু ইয়াহিয়ার মতই একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি হিসেবে পরিণত হন হারুন অর রশীদ।

আরও পড়তে পারেন-

৭৮৬ সালে হাদির মৃত্যুর পর আব্বাসীয় বংশের ৫ম শাসক হিসেবে ২০ বছর বয়সে খিলাফতের মসনদে আরোহণ করেন তিনি। দক্ষতার সঙ্গে দীর্ঘদিন শাসন করার পর ৮০৯ সালে তুস নগরীতে মৃত্যুবরণ করেন। সেখানেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়। মৃত্যুর সময় তিন ছেলেকে রেখে যান। তারা  আমিন, মাপুন ও মুহতাসীম।

তার ইচ্ছা অনুযায়ী পরবর্তী শাসক হিসেবে মনোনীত হন তার ছেলে আমিন। দাম্পত্য সঙ্গী ছিলেন জুবাইদা। হারুন অর রশীদের শাসনকালে বিজ্ঞান, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির জন্য তার শাসনকালকে আব্বাসীয় খিলাফতের স্বর্ণযুগ বলা হয়ে থাকে। এ সময় ইসলামী শিল্প ও সংগীতের যথেষ্ট প্রসার হয়।

তিনি বাগদাদের বিখ্যাত গ্রন্থাগার বাইতুল হিকমাহ প্রতিষ্ঠা করেন। তার শাসনামলে বাগদাদ জ্ঞান, সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এ সময় আব্বাসীয় খিলাফতের প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা বারমাকি পরিবারের ভূমিকা হ্রাস পেতে শুরু করে। ৭৯৬ সালে তিনি বর্তমান সিরিয়ার রাকা শহরে তার দরবার ও সরকারকে স্থানান্তর করেন।

এ সময় আব্বাসীয় খিলাফতের প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা বারমাকি পরিবারের ভূমিকা হ্রাস পেতে শুরু করে। ৭৯৬ সালে তিনি বর্তমান সিরিয়ার রাকা শহরে তার দরবার ও সরকারকে স্থানান্তর করেন।

খলিফা হারুন অল রশীদের শাসনামলে সিরিয়ার রাকা শহরের বিচারক অসুস্থ থাকায় নতুন বিচারকের ব্যবস্থা করলেন।

দিন কয়েক যেতেই প্রহরীরা একজন বৃদ্ধা মহিলাকে আসামি হিসেবে দরবারে হাজির করলেন। বৃদ্ধা শহরের এক রেস্তোরাঁ থেকে কিছু রুটি আর মধু চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। বিচারে বৃদ্ধা স্বীকার করলেন তিনি গত এক সপ্তাহ যাবত অভুক্ত ছিলেন। তার সঙ্গে থাকা এতিম দুই নাতিও না খেয়ে ছিল।

ওদের ক্ষুধার্ত চেহারা ও কান্না সহ্য করতে না পেরেই তিনি চুরি করেছিলেন। বৃদ্ধার কথা শুনে বিচারক পুরো দরবারে চোখ বুলালেন। ঘোষণা দিলেন, কাল যেন নগর, খাদ্য, শরিয়া, পুলিশপ্রধান ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকেন। সবার সামনে রায় দেওয়া হবে।

পর দিন সকালে সবার উপস্থিতিতে বিচারক রায় ঘোষণা করলেন ‘বৃদ্ধা মহিলার চুরির অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৫০টি চাবুক, ৫০০ দিনার রৌপ্য মুদ্রা আর অনাদায়ে এক বছর কারাদ- দেওয়া করা হলো। তবে অকপটে সত্য বলার কারণে হাত কাটা মাফ করা হলো। বিচারক প্রহরীকে চাবুক আনার নির্দেশ দিয়ে নিচে নেমে ওই বৃদ্ধা মহিলার পাশে দাঁড়ালেন।

বিচারক বললেন, “যে নগরে একজন ক্ষুধার্ত বৃদ্ধ মহিলা না খেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় চুরি করতে বাধ্য হয় সেখানে সবচেয়ে বড় অপরাধী সে দেশের খলিফা। আর আমি এসেছি খলিফার প্রতিনিধি হয়ে। তাই ৫০টি চাবুকের ২০টি আমার হাতে মারা হোক। আদেশ অনুযায়ী বিচারকের হাতে ২০টি চাবুক মারা হলো। চাবুকের আঘাতে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।”

কেউ একজন বিচারকের হাত বাঁধার জন্য এগিয়ে গেলে বিচারক নিষেধ করেন। এরপর বিচারক বললেন ‘যে শহরে নগরপ্রধান, খাদ্যগুদাম প্রধান ও অন্যান্য সমাজ হিতৈষীরা একজন অভাবগ্রস্ত মহিলার ভরণ-পোষণ করতে পারেন না। সেই নগরে তারাও অপরাধী। তাই বাকি ৩০টি চাবুক সমানভাবে তাদের মারা হোক।’

এরপর বিচারক নিজ পকেট থেকে বের করা রুমালের ওপর ৫০টি রৌপ্য মুদ্রা রাখলেন। তারপর বিচারপতি উপস্থিত সবাইকে বললেন, ‘যে সমাজ একজন বৃদ্ধমহিলাকে চোর বানায়, যে সমাজে এতিম শিশুরা উপবাস থাকে সে সমাজের সবাই অপরাধী। তাই উপস্থিত সবাইকে ১০০ দিনার রৌপ্য মুদ্রা জরিমানা করা হলো।’

এবার মোট ৫০০ দিনার রৌপ্য মুদ্রা থেকে ১০০ দিনার রৌপ্য মুদ্রা জরিমানাবাবদ রেখে বাকি ৪০০টি রৌপ্য মুদ্রা থেকে ২০টি চুরি যাওয়া দোকানের মালিককে দেওয়া হলো। বাকি ৩৮০টি রৌপ্য মুদ্রা বৃদ্ধাকে দিয়ে বললেন ‘এগুলো আপনার ভরণ-পোষণের জন্য। আর আগামী মাসে আপনি খলিফা হারুন অর রশীদের দরবারে আসবেন। খলিফা হারুন অর রশীদ আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থী।’

এক মাস পরে বৃদ্ধা খলিফার দরবারে গিয়ে দেখেন; খলিফার আসনে বসা সেই লোকটিই বিচারক। খলিফা চেয়ার থেকে নেমে এসে বললেন, আপনাকে ও আপনার এতিম দুই নাতিকে উপোস রাখার জন্য সেদিন বিচারক হিসেবে ক্ষমা চেয়েছিলাম। আজ দরবারে ডেকে এনেছি প্রজা অধিকার সমুন্নত করতে না পারা অধম এই খলিফাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য। আপনি দয়া করে আমাকে ক্ষমা করুন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।