Home পরিবার ও সমাজ ফুটন্ত গোলাপগুলো আর ঝরতে দেওয়া যাবে না

ফুটন্ত গোলাপগুলো আর ঝরতে দেওয়া যাবে না

।। বিনতে মুহাম্মদ আলী ।।

যে ভেষজদ্রব্য প্রয়োগে মানবদেহে মস্তিষ্কজাত সংজ্ঞাবহ সংবেদন হ্রাস পায় বা থাকে না বললেই চলে তাকে মাদকদ্রব্য বলে। মাদকদ্রব্য গ্রহণে মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় না থেকে অস্বাভাবিক অবস্থায় চলে যায় এবং তার ফলে এক সময় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

আধুনিক অগ্রসর সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়েছে জীবনবিনাশী ক্ষতিকর মাদকদ্রব্য। বর্তমান সমাজে জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে মাদকের ব্যবহার বেড়েই চলছে। মাদক দ্রব্যের নীল দংশনে দংশিত হচ্ছে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ। যার অপব্যবহার ও অবৈধ বিস্তারে বিশ্ববাসী আজ শঙ্কিত। এর ব্যবহার মানুষকে দিন দিন চরম অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ এর কুপ্রভাবে সমাজ বিশেষত তরুণ সমাজ আজ হুমকির মুখে। এতে তরুণ সমাজের তারুণ্য শক্তির অপচয় হচ্ছে। নেশাগ্রস্ত দিক ভ্রান্ত তরুণ সমাজ কত সহজে মাদকদ্রব্য কাছে পাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবা, বিয়ার ইত্যাদির মতো বিষাক্ত পদার্থ আজ হাতের নাগালে। এসব নিষিদ্ধ পন্যে আকৃষ্ট হয়ে জীবনের সর্বনাশ ডেকে এনেছে কত তরুণ। মাদকদ্রব্য গ্রহনের ফলে ব্যক্তির মেধা বিনষ্ট হয়, স্মরণশক্তি কমে যায়। শিক্ষা জীবনের শেষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি কত তরুণ! একদিন যে তরুণদের কত স্বপ্ন ছিল সমাজটাকে বদলাবে, দুর্নীতি ও শোষণ থেকে সোনার দেশকে বাঁচাবে, আজ তারাই কেউবা হয়তো সমাজের অপাঙতেয়। কেউবা হয়তো মৃত্যুর হিমশীতল ওপারে।

নেশাগ্রস্ত লোকের ব্যক্তিত্ব্যের অবলুপ্ত ঘটে এবং স্বাভাবিক জীবনে বেঁচে থাকার সামর্থ্য থাকে না। এদের পক্ষে কোন গুরুদায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।দুঃসহ বর্তমানকে ভুলতে হয়তো নেশা দ্রব্যে আসক্ত হয়েছে কিন্তু এ নেশা দ্রব্য ধ্বংস করেছে সোনালী অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত। নেশাদ্রব্য সেবনের ফলে মানুষ ক্রমান্বয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়।ধীরে ধীরে প্রাননাশা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। কিডনি ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে পড়ে। রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়। এছাড়া চামড়া খসখসে, চুলকানি, ঘা, ফোঁড়া ইত্যাদি হয়ে অনেকসময় শরীরে পচন ধরে। এভাবে দুরারোগ্য ও জটিল এক সমস্যার মধ্যে পড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অথবা কর্মক্ষমতা হারিয়ে সুন্দর সোনালী পবিত্র জীবনটাকে নষ্ট করে ফেলে।

আরও পড়তে পারেন-

পৃথিবীর প্রতিটি দেশের লক্ষ্য করা গেছে যে ধর্মীয় বিধি নিষেধের প্রতি অবজ্ঞা মাদকাসক্তি বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পিতা-মাতাকে সন্তানদের সাথে ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে কথা বলতে হবে। পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে মাদক বিরোধী অভিযান এক্ষেত্রে মা-বাবা কিংবা বড় ভাই-বোন মাদকের কুফল ও ভয়াবহতা সম্পর্কে পারিবারিক আলোচনা ও তা থেকে বিরত থাকতে পরিবারকে উৎসাহিত করবেন। বাংলাদেশের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ‘মুক্তি’র প্রধান আলি আসকার কোরেশী বলছেন, ”কেউ মাদকাসক্ত হয়ে উঠলে একদম শুরুর দিকে বুঝা আসলে একটু শক্ত। তারপরেও বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে, যা দেখা গেলে সন্তানের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।”

”যদি দেখা যায় যে, সন্তানের আচার আচরণে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, যে শান্তশিষ্ট ছেলেটা হঠাৎ করে অপরিচিতের মতো আচরণ করছে। ঘুমের প্যাটার্ন পাল্টে যাচ্ছে। আগে যে সকালে স্কুলে যেতো, এখন সে নানা অজুহাতে স্কুলে যেতে চাইছে না। বিভিন্ন অজুহাতে টাকা চাইছে যে, আজকে এটা কিনতে হবে, কাল অন্য কাজে টাকা লাগবে। তখন সতর্ক হতে হবে।”

মাদকের সহজলভ্যতা হয় মাদকের উৎপাদন, আমদানি এবং চোরাচালানের মাধ্যমে। অতএব মানুষ নেশা করার সুযোগ পাবে না যখন তার হাতের কাছে সহজলভ্য দ্রব্যের মতো বিষাক্ত মাদক না থাকবে। কতিপয় অসাধু মাদক ব্যবসায়ী দ্বারা আজকের দেশের মূল চালিকা শক্তি।

এ কথা খুবই সত্য যে বন্ধুত্ব যদি হয় মাদকাসক্তদের সাথে তবে বন্ধুরা নেশাদ্রব্য পান করাতে বাধ্য করে। তাই পিতা-মাতাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে তার সন্তান কোথায় যাচ্ছে কাদের সাথে মিশছে। কারণ, ছেলে মেয়েদের সঠিক তথ্য জানানোর দায়িত্ব স্কুল ও অভিভাবকের উপর। তা না হলে ভুল মাধ্যমে তারা বিষয়টিকে সঠিকভাবে বুঝতে নাও পারে। যৌবন ও কিশোরে এমন একটা সময় আসে যখন অজানাকে জানার আগ্রহ বাড়তে থাকে। কৌতুহলের বশে কেউ যদি মাদকের জালে আটকা পড়ে তাহলে তা থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কষ্ট। মানুষ অনেক সময় ভুল করে সহজে আনন্দ লাভের বাসনায় সহজ উপায় হিসেবে মাদকের প্রতি ঝুঁকে পরে একপর্যায়ে তা নেশায় পরিনত হয়।

আমাদের সকলের উচিত গণসচেতনতার মাধ্যমে বা গণসচেতনতা সৃষ্টি করে মাদকদ্রব্য থেকে জনগণকে বিরত রাখার মাধ্যমে জাতিকে অতিসত্বর ধ্বংসের কালো থাবা থেকে রক্ষা করা। মনে রাখতে হবে একটি ফুটন্ত গোলাপ যতক্ষণ গাছে থাকে ততক্ষণ তার সৌন্দর্যে সবাই মুগ্ধ। তাই ফুটন্ত গোলাপগুলো আর ঝরতে দেওয়া যাবে না।

  • হাটহাজারী, চট্টগ্রাম থেকে।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।