Home ইতিহাস ও জীবনী চাঁপাইনবাবগঞ্জের দারাসবাড়ি মসজিদ-এর ইতিহাস

চাঁপাইনবাবগঞ্জের দারাসবাড়ি মসজিদ-এর ইতিহাস

-দারাসবাড়ি মসজিদ।

প্রাচীন আমলের অনেক স্থাপত্যকলায় এখনও আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়, আমরা মুগ্ধ হই সেই সময়ের নির্মাণশৈলী দেখে। ধর্মীয় কারণেও সেসবের গুরুত্ব প্রচুর। বাংলাদেশের আনাচকানাচ এখনও ভরে আছে সেই সময়ের অনেক চিহ্ন। সেরকম এক স্মৃতির ধারক দারাসবাড়ি মসজিদ।

সুলতানি যুগের নির্ভেজাল স্থাপত্যশৈলী দেখার জন্য দারাসবাড়ি মসজিদ অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থান। অনেক আগেই মসজিদের গম্বুজ ভেঙে গিয়েছে। তবে চারদিকের দেওয়াল বেশ ভালোভাবে টিকে আছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা দিলেও- এখন পর্যন্ত পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করে নি।

দারাসবাড়ি মসজিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুরে অবস্থিত।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর জেলা থেকে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দূরত্বে এর অবস্থান। সোনা মসজিদ এবং কোতয়ালি দরগার মধ্যবর্তী অমপুর নামক স্থানের নিকটে অবস্থিত। স্থানীয়রা স্থানটিকে দারাসবাড়ি নামেই সম্বোধন করে। স্থানটি বর্তমানে পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে।

আরও পড়তে পারেন-

শিলালিপি থেকে জানা যায় যে মসজিদটি সুলতান শামসুদ্দিন ইউসুফের শাসনকালে ১৪৯৭ সালে নির্মিত হয়। মসজিদটির নামকরনের ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ভারতের চামচিকা মসজিদের সাথে মিল রেখে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।

দারাসবাড়ি মসজিদটি টেরাকোটা ইট দিয়ে এতটাই পুরু যে চৈত্র মাসে যখন বাইরে প্রচণ্ড গরম থাকে তখন মসজিদের অভ্যন্তর থাকে ঠাণ্ডা। মসজিদটির মূল গম্বুজটি বেশ আকর্ষণীয়। মসজিদটির উত্তরে ৬০ বিঘা আয়তনের একটি দীঘি আছে।

দারাসবাড়ি মসজিদ এর ছবির ফলাফল

ছোট সোনামসজিদ ও কোতোয়ালী দরগার মধ্যবর্তী স্থানে ওমরপুরের সন্নিকটে দারাসবাড়ী অবস্থিত।

পুরুষানুক্রমে স্থানীয় জনসাধারণ এই স্থানকে ‘দারসবাড়ী’ বলে থাকেন। বর্তমানে এই স্থান পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। দর্স অর্থ পাঠ। সম্ভবতঃ একসময় মসজিদ সংলগ্ন একটি মাদ্রাসা ছিল এখানে।

ঐতিহাসিক অনুসন্ধানের সময় মুনশী এলাহী বখশ কর্তৃক আবিস্কৃত একটি আরবী শিলালিপি অনুযায়ী (লিপি-দৈর্ঘ্য ১১ ফুট ৩ ইঞ্চি, প্রস্থ ২ফুট ১ ইঞ্চি) ১৪৭৯ খ্রিস্টাব্দে (হিজরী ৮৮৪) সুলতান শামস উদ্দীন ইউসুফ শাহের রাজত্বকালে তাঁরই আদেশক্রমে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। ইট নির্মিত এই মসজিদের অভ্যন্তরের আয়তক্ষেত্র দুই অংশে বিভক্ত। এর আয়তন ৯৯ ফুট ৫ ইঞ্চি, ৩৪ ফুট ৯ ইঞ্চি। পূর্ব পার্শ্বে একটি বারান্দা, যা ১০ ফুট ৭ ইঞ্চি।

বারান্দার খিলানে ৭টি প্রস্ত্তর স্তম্ভের উপরের ৬টি ক্ষুদ্রাকৃতি গম্বুজ এবং মধ্যবর্তীটি অপেক্ষাকৃত বড় ছিল।

উপরে ৯টি গম্বুজের চিহ্নাবশেষ রয়েছে উত্তর দক্ষিণে ৩টি করে জানালা ছিল। উত্তর পশ্চিম কোণে মহিলাদের নামাজের জন্য প্রস্তরস্তম্ভের উপরে একটি ছাদ ছিল। এর পরিচয় স্বরূপ এখনও একটি মেহরাব রয়েছে।

এতদ্ব্যতীত পশ্চিম দেয়ালে পাশাপাশি ৩টি করে ৯টি কারুকার্য খচিত মেহরাব বর্তমান রয়েছে। এই মসজিদের চারপার্শ্বে দেয়াল ও কয়েকটি প্রস্তর স্তম্ভের মূলদেশ ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এ মসজিদটিও বাংলার প্রথম যুগের মুসলিম স্থাপত্যের কীর্তির একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।

এখানে প্রাপ্ত তোগরা অক্ষরে উৎকীর্ণ ইউসুফি শাহী লিপিটি এখন কোলকাতা যাদুঘরে রক্ষিত আছে। জেনারেল ক্যানিংহাম তাঁর নিজের ভাষাতে একে দারসবাড়ী বা কলেজ বলেছেন। এই ঐতিহাসিক কীর্তির মাত্র কয়েকগজ দূরেই ভারতীয় সীমান্ত।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।