Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ সংখ্যাতত্ত্বের পরম বিস্ময় আল-কোরআন

সংখ্যাতত্ত্বের পরম বিস্ময় আল-কোরআন

- ফাইল ছবি।

আল-কোরআন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর নাজিল হওয়া ঐশীগ্রন্থ। এটি একমাত্র গ্রন্থ যাতে কোনোরকম সন্দেহ নেই তাদের জন্য- যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনেন, সালাত কায়েম করেন।

জাকাত আদায় করেন যারা পরকালের ওপর নিশ্চিত বিশ্বাস রাখেন। মুত্তাকিদের জন্য এটি একটি পরিপূর্ণ জীবনযাপন পদ্ধতি এবং তাদের মুক্তির সনদ। আল-কোরআন এমন এক গ্রন্থ যেখানে শিক্ষা, সমাজ, পরিবার, রাজনীতি, বিজ্ঞান, ব্যবসায়, ইহকাল, পরকাল সবই রয়েছে।

এ যে এক ঐশীগ্রন্থ তার প্রমাণ মেলে নানাভাবে। ছোট এ লেখায় মহাগ্রন্থ কোরআনের সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে এক টুকরা আলোচনা পেশ করছি। এতে বোঝা যাবে এটা কোনো মানবসৃষ্ট গ্রন্থ নয়, বরং তা এক বিস্ময়কর ঐশীগ্রন্থ।

আরও পড়তে পারেন-

সৃষ্টির সূচনা থেকেই কোরআন মজিদ যে লাওহে-মাহফুজে সুরক্ষিত ছিল, তার উল্লেখ এ গ্রন্থেই রয়েছে, ‘বরং তা সেই কোরআন যা লাওহে মাহফুজে সুরক্ষিত রয়েছে’ (সূরা বুরুজ, আয়াত ২১-২২)। এরপর দুই পর্যায়ে তা নাজিল হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে সম্পূর্ণ কোরআন একই সঙ্গে এক লাইলাতুল কদরে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা নিকটতম আসমান ‘বাইতুল মামুরে’ নাজিল হয়েছিল। এটি বাইতুল-ইজ্জত নামেও পরিচিত, যা কাবা শরিফ বরাবর প্রথম আসমানে অবস্থিত ফেরেশতাদের ইবাদত ঘর।

এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে ২২ বছর ৫ মাস ১৪ দিনে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দিলে আল্লাহ পাকের বিশেষ দূত ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে তা নাজিল করা হয় (আল-এতকান, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪১)। সহিহ বর্ণনায় জানা যায়, দ্বিতীয় পর্যায়ের অবতরণ ও শুরু হয়েছিল লাইলাতুল কদরে।

সমগ্র কোরআনে মোট সূরার সংখ্যা ১১৪। এর কিছু নাজিল হয়েছে নবীজী (সা.)-এর হিজরতের আগে। এগুলো মাক্কি সূরা। যে সূরাগুলো হিজরতের পর নাজিল হয়েছে, সেগুলো মাদানি সূরা হিসেবে পরিচিত। এভাবে সমগ্র কোরআন শরিফে ৮৬টি মাক্কি ও ২৮টি মাদানি সূরা রয়েছে। দীর্ঘতম সূরা হচ্ছে ‘সূরা বাকারা’ (২৮৬টি আয়াতবিশিষ্ট) আর সবচেয়ে ছোট ‘সূরা কাউসার’ (৩ আয়াত)। সর্বপ্রথম আয়াত সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি এবং সর্বশেষটি সূরা বাকারার ২৮১ নম্বর আয়াত।

আর সর্বশেষ নাজিল হওয়া সূরা ‘আন-নাসর’। কোরআন শরিফ সমান ত্রিশ খণ্ডে বিভক্ত, যার প্রতিটি ‘পারা’ নামে অভিহিত। এই বিভক্তি কোনো বিষয়ভিত্তিক নয়। পাঠ করার সুবিধার জন্য সমগ্র কোরআনকে ত্রিশটি পারায় ভাগ করা হয়েছে। তাই অনেক পারাতেই দেখা যায় কোনো এক প্রসঙ্গের মধ্যে এক পারা শেষ না হতেই আরেক পারা শুরু হয়ে গেছে। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের অনেকেই সপ্তাহে অন্তত এক খতম কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করতেন। এ জন্য তারা দৈনিক তেলাওয়াতের জন্য কোরআন শরিফের একটি নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারণ করে নিয়েছিলেন, যা ‘মনজিল’ নামে পরিচিত। এ হিসাবে কোরআন শরিফকে মোট সাত মনজিলে ভাগ করা হয়েছে।

সংখ্যাতত্ত্বে এই ঐশীগ্রন্থ মহাবিশ্বের এক চরম বিস্ময়! কোরআন শরিফের মোট ১১৪টি সূরার সর্বমোট আয়াত সংখ্যা ৬৬৬৬টি। এতে জান্নাত ও জাহান্নামের ওয়াদার আয়াত ১০০০টি, ভীতিপ্রদর্শক আয়াত ১০০০টি, আদেশসূচক আয়াত ১০০০টি, নিষেধসূচক আয়াত ১০০০টি, উদাহরণ সংবলিত আয়াত ১০০০টি, ঘটনা সংবলিত আয়াত ১০০০টি, হালাল নির্দেশক আয়াত ২৫০টির মতো, হারাম নির্দেশক আয়াত ২৫০টি, তাসবিহ সংবলিত আয়াত ১০০টি এবং নানা প্রসঙ্গে আয়াত ৬৬টি।

পবিত্র এই গ্রন্থে অনেকবার একের সঙ্গে অন্যের তুলনা করা হয়েছে। এই তুলনীয় নাম বা বস্তু দুটিকে আল্লাহতায়ালা সমান সংখ্যাতেই উল্লেখ করেছেন। এখানে ‘তিনি বললেন’ এবং ‘তারা বলল’ শব্দ দুটি এসেছে ৩৩২ বার করে। ‘আব্দ (গোলামি)’ ও ‘আবিদ (গোলাম)’ কথা দুটি এসেছে ১৫২ বার করে। ‘জীবন’ ও ‘মৃত্যু’ ১৪৫ বার, ‘দুনিয়া’ ও ‘আখেরাত’ ১১৫ বার, ‘কষ্ট’ ও ‘ধৈর্য’ ১০২ বার, ‘শয়তান’ ও ‘ফেরেশতা’ ৮৮ বার, ‘বেহেশত’ ও ‘দোজখ’ ৭৭ বার, ‘বিপর্যয়’ ও ‘কৃতজ্ঞতা’ ৭৫ বার, ‘চন্দ্র’ ও ‘সূর্য’ ৩৩ বার, ‘জাকাত’ ও ‘জাকাত প্রদানের ফলে বরকত’ ৩২ বার, ‘ঈমান’ ও ‘কুফর’ ২৫ বার, ‘পবিত্র’ ও ‘অপবিত্র’ সাতবার, ‘গরম’ ও ‘ঠাণ্ডা’ পাঁচবার করে এসেছে। কোরআনে ‘সাত আসমান’ (সাব্য়া সামাওয়াত) কথাটি সাতবার রয়েছে; আসমানগুলোর সৃষ্টি (খালাকাস সামাওয়াত) কথাটিও সাতবার এসেছে। সাতটি আসমান আছে বলেই হয়তো আসমান প্রসঙ্গে এমন সংখ্যা। আল্লাহু আকবার, আল্লাহ ভালো জানেন।

আবার যেখানে তুলনাটি অসম, সেখানে সংখ্যা দুটিও অসম, কিন্তু ইঙ্গিতবহ। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে সমগ্র কোরআনে ‘শাস্তি’ শব্দটি এসেছে ১১৭ বার, আর ‘ক্ষমা’ ২৩৪ বার। এ সংখ্যা দিয়ে বোঝা যায় আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি এতই দয়াবান যে, তিনি তাদের শাস্তি প্রদানের চেয়ে ক্ষমা করতে বেশি আগ্রহী। এভাবে, দরিদ্রতার কথা বলা হয়েছে ১৩ বার। আর ঐশ্বর্য বা সচ্ছলতার কথা বলা হয়েছে ২৬ বার। আমাদের আল্লাহ তো মঙ্গলময়। তাই তাঁর বাণীতে সচ্ছলতার সংখ্যা দ্বিগুণ। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহু আকবর।

পবিত্র কোরআন নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রদান করেছে। তাই সমগ্র গ্রন্থে ‘নারী’ ও ‘পুরুষ’ শব্দ দুটি এসেছে ২৩ বার করে। এখানে বিশেষভাবে বলা যায়, মানবদেহের ক্রমোজমের মোট সংখ্যা ৪৬টি। এর ২৩টি এসেছে মায়ের থেকে এবং ২৩টি বাবার থেকে।

‘মানুষ’ শব্দ ব্যবহার হয়েছে ৬৫ বার। এরপর মানুষের গঠনের বিল্লেষণমূলক সংখ্যাগুলোর যোগফল বর্ণিত হয়েছে মাট ১৭ বার, শুক্রাণু ফোঁটা ১২ বার, ভ্রূণ ৬ বার, অর্ধগঠিত মানবপিণ্ড ৩ বার, হাড় ১৫ বার এবং মাংস ১২ বার। আর এর সবক’টির যোগফল হল ৬৫। কী বিস্ময়কর ব্যাপার আল্লাহু আকবর। – জিশান আরা আরাফুন্নেছা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।