Home লাইফ স্টাইল ইসলামের আলোকে ভালবাসা এবং কথিত ভালবাসা দিবস

ইসলামের আলোকে ভালবাসা এবং কথিত ভালবাসা দিবস

।। মাওলানা তাজুল ইসলাম আশরাফী ।।

‘ভালবাসা’ এক পবিত্র জিনিস, যা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর পক্ষ হতে আমরা পেয়েছি। ‘ভালবাসা’ শব্দটি ইতিবাচক। আল্লাহ তাআলা সকল ইতিবাচক কর্ম-সম্পাদনকারীকে ভালবাসেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- “এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না। তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয় আল্লাহ মুহসিনদের ভালবাসেন”। (সূরা বাকারা- ১৯৫ আয়াত)।

ভুলের পর ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পবিত্রতা অবলম্বন করা; এ দুটিই ইতিবাচক কর্ম। তাই আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকেও ভালবাসেন। আল্লাহ ইরশাদ করেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা বাকারা- ২২২ আয়াত)।

তাক্বওয়া সকল কল্যাণের মূল। তাই আল্লাহ মুত্তাক্বীদেরকে খুবই ভালবাসেন। তিনি ইরশাদ করেন- “আর নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাক্বীদেরকে ভালবাসেন।” (আলে ইমরান- ৭৬ আয়াত)।

পবিত্র এ ভালবাসার সাথে অপবিত্র ও নেতিবাচক কোন কিছুর সংমিশ্রণ হলে তা আর ভালবাসা থাকে না, পবিত্রও থাকে না; বরং তা হয়ে যায় ছলনা, শঠতা ও স্বার্থপরতা।

ইসলামের আলোকে ভালবাসা এবং কথিত ভালবাসা দিবস। কোন দিন কাউকে না দেখেও যে ভালবাসা হয় এবং ভালবাসার গভীর টানে রূহের গতির এক দিনের দূরত্ব পেরিয়েও যে দুই মু’মিনের সাক্ষাত হতে পারে, তা হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.)এর এক বর্ণনা থেকে আমরা পাই। তিনি বলেন, ‘কত নিয়ামতের নাশুকরি করা হয়, কত আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হয়, কিন্তু অন্তরসমূহের ঘনিষ্ঠতার মত (শক্তিশালী) কোন কিছু আমি কখনো দেখিনি’। (বুখারী, হাদীস নং- ২৬২)।

ভালবাসার মানদন্ডঃ কাউকে ভালবাসা এবং কারো সাথে শত্রুতা রাখার মানদন্ড হলো একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসতে হবে এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই। এটাই শ্রেষ্ঠ কর্মপন্থা। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারো সাথে শত্রুতা রাখা’। (আহমদ, হাদীস নং- ২০৩৪১)।

ঈমানের পরিচয় দিতে হলে, কাউকে ভালবাসবার আগে আল্লাহর জন্য হৃদয়ের গভীরে সুদৃঢ় ভালবাসা রাখতে হবে। কিছু মানুষ এর ব্যতিক্রম করে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালবাসার মত তাদেরকে ভালবাসে। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ভালবাসায় তারা সুদৃঢ়’। (সূরা আল-বাকারা-১৬৫)।

আরও পড়তে পারেন-

শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসতে হবে, নতুবা কোন ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পাবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে সে ঈমানের স্বাদ পায়- ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে প্রিয় হওয়া। ২. শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা। ৩. কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা’। (বুখারী শরীফ, কিতাবুল ঈমান, হাদীস নং-১৫)।

আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালবাসার ফযীলতঃ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের মহত্ত্বের নিমিত্তে যারা পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন করে, ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে তিনি তাঁর রহমতের ছায়ায় জায়গা দেবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের নিমিত্তে পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া দান করব। আজ এমন দিন, যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই”। (মুসলীম শরীফ, হাদীস নং- ৪৬৫৫)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা নবীও নয় শহীদও নয়; ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তাঁদের সম্মানজনক অবস্থান দেখে নবী এবং শহীদগণও ঈর্ষান্বিত হবেন। সাহাবীগণ (রাযি.) আরয করলেন- হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমাদেরকে বলুন, তারা কারা? তিনি বলেন, তারা ঐ সকল লোক, যারা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালবাসে। অথচ তাদের মধ্যে কোন রক্ত সম্পর্কও নেই এবং কোন অর্থনৈতিক লেন-দেনও নেই। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় তাঁদের চেহারা হবে নূরানী এবং তারা নূরের মধ্যে থাকবে। যে দিন মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে, সে দিন তাঁদের কোন ভয় থাকবে না। এবং যে দিন মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে, সে দিন তাঁদের কোন চিন্তা থাকবে না…’। (আবু দাঊদ, হাদীস নং- ৩০৬০)।

পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি করার উপায়ঃ ইসলাম বলে, পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপিত না হলে পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া যায় না, শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করা যায় না, এমনকি জান্নাতও লাভ করা যাবে না। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য একটি চমৎকার পন্থা বাতলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার না হবে। তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপন করবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের কথা বলব না, যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হবে? সাহাবীগণ বললেন, নিশ্চয় ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)! (তিনি বললেন) তোমাদের মধ্যে বহুল পরিমাণে সালামের প্রচলন কর’।

বিশ্ব ভালবাসা দিবস কীঃ এক নোংরা ও জঘন্য ইতিহাসের স্মৃতিচারণের নাম বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এ ইতিহাসটির বয়স ১৭শত সাঁইত্রিশ বছর হলেও ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ নামে এর চর্চা শুরু হয় সাম্প্রতিক কালেই। দুইশত সত্তর সালের চৌদ্দই ফেব্রুয়ারীর কথা। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন ক্লডিয়াস। সে সময় ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধু, তরুণ প্রেমিকদেরকে গোপন পরিণয়-মন্ত্রে দীক্ষা দিত। এ অপরাধে সম্রাট ক্লডিয়াস সাধু ভ্যালেন্টাইনের শিরোচ্ছেদ করেন। তার এ ভ্যালেন্টাইন নাম থেকেই এ দিনটির নামকরণ করা হয় ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ যা বর্তমানের কথিত ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’।

বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ইং সালে। কিছু ব্যবসায়ীর উৎসাহে তৎকালীন সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমানের মাধ্যমে এটি প্রথম এদেশে চালু হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে অপরিণামদর্শী মিডিয়া কর্মীরা এর ব্যাপক কভারেজ দিতে শুরু করে। আর যায় কোথায়! লুফে নেয় বাংলার আদর্শ ও নৈতিকতায় দিকভ্রান্ত তরুণ-তরুণীরা। এরপর থেকে ঈমানের ঘরে ভালবাসার পরিবর্তে ভুলের বাসা বেঁধে দেয়ার কাজটা যথারীতি চলছে। আর এর ঠিক পিছনেই মানব জাতির আজন্ম শত্রু শয়তান এইডস নামক মরণ-পেয়ালা হাতে নিয়ে দাঁত বের করে হাসছে। মানুষ যখন বিশ্ব ভালবাসা দিবস সম্পর্কে জানত না, তখন পৃথিবীতে ভালবাসার অভাব ছিল না। আজ পৃথিবীতে ভালবাসার বড় অভাব। তাই দিবস পালন করে ভালবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়! আর হবেই না কেন! অপবিত্রতা নোংরামি আর শঠতার মাঝে তো আর ভালবাসা নামক ভালো বস্তু থাকতে পারে না। তাই আল্লাহ তাআলা মানুষের হৃদয় থেকে ভালবাসা উঠিয়ে নিয়েছেন।

বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে চেনার জন্য আরও কিছু বাস্তব নমুনা পেশ করা দরকার। দিনটি যখন আসে তখন শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো একেবারে বেসামাল হয়ে উঠে। নিজেদের রূপ-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। শুধুই কি তাই ! অঙ্কন পটীয়সীরা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে রাস্তার ধারে। তাদের সামনে তরুণীরা পীঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্য। তারপর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিবৃতে প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে খোশ গল্প। এ হলো বিশ্ব ভালবাসা দিবসের কর্মসূচি! বিশ্ব ভালবাসা দিবস না বলে ‘বিশ্ব বেহায়াপনা দিবস’ বললে অন্ততঃ নামকরণটি যথার্থ হতো। নারী-পুরুষের বিয়ে বহির্ভুত এমন সম্পর্ক ইসলামে অনুমোদন তো দূরেরর কথা, বরং নিজের ঈমান-আমল ঠিক রাখতে হলে এসব থেকে শুধু নীরবে দূরে থাকাই যথেষ্ট নয়, বরং নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী এসব অনাচার, ব্যভিচার ও বেহায়াপনা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। যে মুসলমানের অন্তরে সামান্যতমও ঈমান আছে, সে কখনো এমন বেহায়াপনায় লিপ্ত হতে পারে না।

বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালনের ক্ষতিকর কিছু দিকঃ ১. ভালবাসা নামের এ শব্দটির সাথে এক চরিত্রহীনের স্মৃতি জড়িয়ে যারা ভালবাসার জয়গান গেয়ে চলেছেন, পৃথিবীবাসীকে তারা সোনার পেয়ালায় করে নীল বিষ পান করিয়ে বেড়াচ্ছেন।

২. তরুণ-তরুণীদের সস্তা যৌন আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তাআলা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “আর তারা তো পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়। আর আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না”। (সূরা আল মায়িদাহ- ৬৪)।

৩. নৈতিক অবক্ষয় দাবানলের মত ছড়িয়ে যাচ্ছে।

৪. নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করছে। যারা ঈমানদারদের সমাজে এ ধরণের অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’। (আন-নূর- ১৯)।

বস্তুতঃ যে সমাজেই চরিত্র-হীনতার কাজ ব্যাপক, তথায় আল্লাহর নিকট থেকে কঠিন আযাবসমূহ ক্রমাগত অবতীর্ণ হওয়া অবধারিত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশমান, পরে তারা তার ব্যাপক প্রচারেরও ব্যবস্থা করে, যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারি, সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনই দেখা যায়নি’। (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ৪০০৯)।

৫. তরুণ-তরুণীরা বিবাহপূর্ব দৈহিক সম্পর্ক গড়তে কোন রকম কুণ্ঠাবোধ করছে না। অথচ তরুণ ইউসুফ (আ.)কে যখন মিশরের এক রানী অভিসারে ডেকেছিল, তখন তিনি কারাবরণকেই এহেন অপকর্মের চেয়ে উত্তম জ্ঞান করেছিলেন। রোমান্টিক অথচ যুব-চরিত্রকে পবিত্র রাখার জন্য কী অতুলনীয় দৃষ্টান্ত! আল্লাহ জাল্লা শানুহু সূরা ইউসুফের ২৩-৩৪ নম্বর আয়াত পর্যন্ত এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

৬. শরীরে উল্কি আঁকাতে গিয়ে নিজের ইজ্জত-আব্রু পরপুরুষকে দেখানো হয়, পরপুরুষের সম্পর্শ নেওয়া হয়। যা প্রকাশ্য কবিরা গুনাহ। যে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে তা আঁকা হয়, উভয়য়ের উপরই আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পর-চুলা লাগায় এবং যাকে লাগায় এবং যে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে আঁকে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন’। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৪৭৭)।

মূলতঃ যার লজ্জা নেই, তার পক্ষে এহেন কাজ নেই, যা করা সম্ভব নয়। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যদি তোমার লজ্জা না থাকে, তাহলে যা ইচ্ছা তাই করতে পার’। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৩২২৫)।

৭. ভালবাসা দিবসের নামে নির্লজ্জতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ও খুন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরকীয়ার মতো সমাজবিধ্বংসী অবৈধ সম্পর্কের বিস্তার ঘটছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে সন্দেহ বাড়ছে। এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়ছে সন্তানদের উপর। এতে করে পরিবার ও সমাজে অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। নবদম্পতিরা পরস্পরের পূর্বেকার জীবনাচার নিয়ে অহেতুক প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাচ্ছে। যাতে দেখা দিচ্ছে অশান্তি।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে জনগোষ্ঠীর-মধ্যেই ব্যভিচার ব্যাপক হবে, তথায় মৃত্যুর আধিক্য ব্যাপক হয়ে দেখা দেবে’। (মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং- ৮৭০)।

উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসসমূহের ভাষ্য বর্তমান বিশ্বের বাস্তব চিত্র এর প্রমাণ বহন করে। অবাধ যৌন মিলনের ফলে ‘অওউঝ’ নামক একটি রোগ বর্তমানে মহামারি আকারে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা এমনি মারাত্মক যে, এ রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যু অবধারিত বলেই মনে করা হয়। কিছু পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।

৮. বিশ্ব ভালবাসা দিবসের এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্ম-কান্ডের ফলে মুসলিম যুব-মানস ক্রমশ ঈমানী বল ও চেতনা হারিয়ে ফেলছে। ভোগবাদিতা ও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার বিধ্বংসী প্রতিযোগিতা লিপ্ত হচ্ছে। এতে করে শান্তি হারিয়ে যাচ্ছে।

৯. মানুষের হৃদয় থেকে তাক্বওয়া তথা আল্লাহর ভয় উঠে যাচ্ছে।

শেষ কথা: সুপ্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলব, ভালবাসা কোন পর্বীয় বিষয় নয়। এটি মানব জীবনের সুখ-শান্তির জন্য একটি জরুরী সার্বক্ষণিক মানবিক উপাদান। সুতরাং আমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য ইসলাম নির্দেশিত সার্বক্ষণিক পন্থা তথা বৈবাহিক নিয়ম অনুসরণ করি।

বিশ্ব ভালবাসা দিবসের নামে বেহায়াপনা ও বেলেল্লাপনার সয়লাবে গা ভাসানো এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্মকান্ড হতে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাযত করুন। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যেন কাউকে ভালবাসী এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই রাখি এবং নারী-পুরুষের চিরন্তন ভালবাসা যেন হয় বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমেই। আমীন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।