Home ইতিহাস ও জীবনী চিকিৎসা এবং ওষুধ প্রস্তুতির ইসলামী ইতিহাস

চিকিৎসা এবং ওষুধ প্রস্তুতির ইসলামী ইতিহাস

-ফাইল ছবি।

প্রাচীন আমলে মুসলমান চিকিৎসকরা মূলত হাকিম বা তাবিব নামেই পরিচিত ছিলেন। তবে হাকিম শব্দের অর্থ বিজ্ঞানী বা এক জন জ্ঞানী ব্যক্তি, আর তাবিব শব্দের আক্ষরিক অর্থ চিকিৎসক। জারাহ বলা হত মূলত শল্যচিকিৎসকদের, অস্ত্রোপচার-কে বলা হত এলমে জারাহাত। সেই আমলে বেশিরভাগ চিকিৎসা ও বিজ্ঞান সংক্রান্ত বই আরবী এবং ফারসি ভাষায় লেখা হয়েছিল।

চিকিৎসার সূচনা ভারতেঃ

ভারতে ইসলামী চিকিৎসার ভিত্তি ছিল জাকারিয়া রাজী এবং হাকিম ইবন সেনা নামক দুই ফারসি চিকিৎসকের লেখা বই। তেগিনের শাসনামলে (১০৯৮-১১২৭) চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত একটি বই রচিত হয়েছিল, যার নাম জাখিরাহ খাওয়াজিম। এই বইটি দ্বাদশ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।

এই বইয়ে ছিল ওষুধের সংজ্ঞা, নির্ভুল ভাবে রোগনির্ণয় (ডায়াগনোসিস) করার পদ্ধতি। রোগের কারণ, নানা ধরনের জ্বর, বিভিন্ন ধরনের  বিষ এবং মানবদেহের গঠন সম্পর্কে বর্ণনা। আরও একটি বই আখরাজ আল-তিব এই সময়ে স্থানীয় চিকিৎসকদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। এছাড়াও চিকিৎসক নাফিস ইবন কিরমানি চিকিৎসা নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন, যার নাম টিববে আকবরী। 

আরও পড়তে পারেন-

জন্মসূত্রে ফারসি হলেও হাকিম মনসুর ইবন আহমদ স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন কাশ্মীরে। তিনি মহিলা ও শিশুদের রোগ এবং তাদের চিকিৎসার বিষয়ে কাফায়া আল-মুজাহিদিন বইটি লিখেছিলেন। এই বইটি তিনি উৎসর্গ করেছিলেন দিল্লর দ্বিতীয় সিকন্দর শাহকে। সম্রাট হুমায়ুনের অন্যতম সচিব ইউসুফ ইবন মহম্মদ হেরাতি বিভিন্ন রোগ ও তাদের প্রতিকার সম্পর্কিত একটি বই লিখেছিলেন।

বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতিঃ

হাকিম আলি গিলানী (১৫৫৪-১৬০৯) শুধুমাত্র একজন চিকিৎসকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী। তিনি আকবরের সভাসদ ছিলেন।

সম্রাট নিজে তাঁকে জলিনুস আল জামান উপাধি দিয়েছিলেন। তিনিই একমাত্র ভারতীয় চিকিৎসক যিনি আল-কানুনের পাঁচটি খণ্ডের ভাষ্য লিখেছিলেন। ওষুধ সম্পর্কিত তাঁর আরও একটি বইয়ের নাম, মুজাররাবতে গিলানী (পরীক্ষিত প্রতিকার)। 

শিরাজের মহম্মদ রাজা ওষুধ, খাবার ও পোশাকের নিয়ে রিয়াজ-ই-আলমগিরি নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন এবং সেটি ঔরঙ্গজেবকে উৎসর্গ করেছিলেন।

ঔরঙ্গজেবের সভাসদ চিকিৎসক মহম্মদ আকবর আরজানী ১৬৭৮ সালে তিব্ব-ই-আকবরী লিখেছিলেন, যা আসলে শরহুল-আসবাবের অনুবাদ ছিল।

আরজানি তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাজরিবা-ই-আকবরীও লিখেছিলেন।

ইমাম গোলাম হাকিম ফারসিতে লিখেছিলেন এলাজ আল-ঘুরাবা (বিশেষ রোগের চিকিৎসা), এর উপযোগিতার জন্য ১৯ শতকেও এই বইটি বেশ কয়েকবার মুদ্রিত হয়েছিল।

সপ্তদশ এবং অষ্টদশ শতকে ফারসি চিকিৎসাপদ্ধতি যখন ইরানে আর ব্যবহৃত হত না, তখনও ভারতে তার ব্যবহার হত।

সিরিল এলগুড লক্ষ্য করেছেন, “পারস্যে যখন ফারসি ঔষধ প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল, তখন এটি দিল্লি ও লখনউয়ের হাকিমরা সেই জীবিত রেখেছিল।”

চিকিৎসা ও ফার্মেসিঃ 

সুলতান আলাউদ্দিন খলজি (১২৯৬-১৩১৬)-র রাজদরবারে একাধিক বিশিষ্ট হাকিম ছিলেন। এই রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা ভারতে ইউনানি/আরবি চিকিৎসা বিকাশের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল।

ভারতের মুঘল শাসনামলে কারাবাদাইন শিফাই, কারাবাদাইন জাকাই, কারাবাদাইন কাদরি  এবং এলাজ-উল-আমরাজের মতো বেশ কয়েকটি কারাবাদাইন সংকলিত হয়েছিল।

এই ফার্মাকোপিয়াসে প্রেসক্রিপশনে ওষুধের পরিমাণ এবং তা প্রস্তুত করার পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা হয়েছিল।

হাকিম আলি গিলানি সম্রাট আকবরের প্রধান চিকিৎসক ছিলেন এবং তাঁর সমস্ত সফরে তাঁর সাথে থাকতেন। এই সফরগুলিতে হাকিম গিলানি তাঁর সাথে প্রয়োজনীয় সমস্ত ওষুধপত্র বহন করতেন। 

ব্রিটিশ শাসনকালে, পূর্বের ওষুধের ব্যবহার ভারতে হ্রাস পেয়েছিল। তবে, দিল্লির হাকিম শরিফ খানের ঘরানা ইউনানী ওষুধের ক্ষয়িষ্ণু অস্তিত্ব পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একযোগে চেষ্টা করেছিল।

হাকিম আজমল খান দিল্লিতে হিন্দুস্তানি দাওয়ানা এবং টিববিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

টিববিয়া কলেজে ডাঃ সলিমু-জামান সিদ্দিকী কিছু শক্তিশালী রাসায়নিক ব্যবহার করে ওষুধ তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন।

মুসলিম শাসনামলে রাসায়নিক প্রযুক্তি মূলত পাঁচটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হত:

১. ওষুধ প্রস্তুতকরণ 2. সুগন্ধি এবং প্রসাধনী প্রস্তুতি 3. পানীয় প্রস্তুতকরণ 4. রঞ্জক তৈরি 5. গান-পাউডার তৈরি, এবং পাইরোটেকনিকস।

লাহোরে হাকিম গোলাম নবী এবং হাকিম গোলাম জিলানী তারিক আল-ইত্তিবা, এবং মাখজান আল-আদ্বিয়িয়ার মতো বই লিখে পূর্বের চিকিৎসার প্রচার করেছিলেন।

হাকিম আজমল খানের মৃত্যুর পরে, হাকিম আবদুল মজিদ ১৯০৬ সালে একটি ফার্মাসি শুরু করেন যা হামদর্দ ওয়াক্ফ ল্যাবরেটরিতে পরিণত হয়। হামদর্দ এখন ভারত ও পাকিস্তানের অন্যতম খ্যাতনামা ওষুধপ্রস্তুতকারী সংস্থা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।