Home লাইফ স্টাইল ত্বকে ও চুলে সরিষের তেলের ব্যবহার কি খারাপ?

ত্বকে ও চুলে সরিষের তেলের ব্যবহার কি খারাপ?

সরষের তেলের সঙ্গে আমাদের সকলেরই ছোটবেলার সম্পর্ক বেশ গভীর। এই লেখার শিরোনামটি দেখে আপনাদের অনেকের হয়তো মনে পড়ে যাবে শৈশবে বারান্দায় রোদে বসে আম্মি বা বাড়ির বড়দের কাছে সরষের তেল মাখার কথা।

তবে এখন অনেকেই সরষের তেল দেখলে নাক সিঁটকোন, বদলে বাচ্চাদের নানারকম দামি ব্র্যান্ডেড তেল মাখাতেই পছন্দ করে তাঁরা। অনেকসময় ডাক্তাররাও সরষের তেল গায়ে বা চুলে মাখতে বারণ করে থাকেন।

সরষের তেলের গুণাগুণ

সরষের তেল বা মাস্টার্ড অয়েল ব্যবহারের ইতিহাস বেশ পুরনো। প্রাচীনকাল থেকেই সরষেকে রান্নায় ব্যবহার করা হত। সম্প্রতি বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় সরষের তেলের ক্ষতিকর নানা দিকের কথা বলা হলেও বাঙালি বাড়িতে মাছ, মাংস বা অন্যান্য রান্নায় সরষের তেলের জনপ্রিয়তা এখনও অক্ষুণ্ণ।

তাছাড়া সরষের তেলের সহজলভ্যতা ও উপকারিকতার কারণে রান্নার পাশাপাশি ত্বক ও চুলের যত্নেও অনেকে একে ব্যবহার করে থাকেন।

হাঁটু, বিভিন্ন রকম জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সরষের তেলের মালিশ দারুণ কাজে লাগে। আজকের আলোচনায় আমরা ত্বকে ও চুলে সরষের তেল লাগানোর উপকারিতা কী কী এবং সরষের তেলের ব্যবহার আমাদের ত্বক ও চুলের ক্ষেত্রে আদৌ খারাপ কিনা, সে নিয়ে আলোচনা করব।

আরও পড়তে পারেন-

ত্বকের ক্ষেত্রে সরষের তেলের উপকারিতা

সরষের মধ্যে ওলেয়িক অ্যাসিড, লিনোলেয়িক অ্যাসিড, ওমেগা ৩, ওমেগা ৬-এর মতো বেশ কিছু ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এছাড়া এর মধ্যে জীবাণুনাশক, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে।

সরষের তেল ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এর অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট ত্বকের অ্যালার্জি, র‍্যাশ, ইনফেকশন ইত্যাদিকে দূর করে। ত্বকের শুষ্কতা, চুলকানি কমিয়ে ত্বককে নরম করতে সরষের তেল সাহায্য করে। এইজন্য শীতকালে শুষ্ক ত্বকে সরষের তেল ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

বাইরে বেরলেই যাদের ট্যান পড়ে, ত্বক রোদে পুড়ে যায়, তাঁরা মুখে নিয়ম করে সরষের তেল ম্যাসাজ করতে পারেন। এটি প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা ভিটামিন ই ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি ও পরিবেশের টক্সিন থেকে রক্ষা করে।

মুখে কালো দাগ, পিগমেন্টেশনের সমস্যা থাকলেও সরষের তেল মাখলে উপকারে দেয়। সরষের তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে, যা ত্বককে ভাল রাখতে সাহায্য করে।

সরষের তেল ত্বককে উজ্জ্বল রাখে, মুখে বয়সের ছাপ, বলিরেখা থাকলে সরষের তেল সেসব দূরে রাখতে সাহায্য করে। শীতকালে ঠোঁট ফাটার সমস্যাতেও থাকলে সরষের তেল ব্যবহার করা যায়।

চুল ভাল রাখে সরষের তেল

আপনার যদি চুল পড়ার সমস্যা থাকে, তাহলে সরষের তেলকে কাজে লাগাতে পারেন। চুলে নিয়ম করে সরষের তেল ম্যাসাজ করলে তা স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে থাকা ভিটামিন এ, ডি, ই, কে প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চুলে পুষ্টি জোগায়, চুলের গোড়া শক্ত করে। এছাড়া সরষের তেল

চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এর জীবাণুনাশক ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণ স্ক্যাল্পকে ইনফেকশন থেকে মুক্ত রাখে এবং চুল পড়া কমায়। সরষের তেলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে যাদের খুশকির সমস্যা রয়েছে, তাঁরা খুশকি দূর করতে সরষের তেলকে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় নিয়ম করে মালিশ করতে পারেন।

রুক্ষ, শুষ্ক চুলকে কন্ডিশনিং করে সরষের তেল। কারণ এতে থাকা উচ্চমানের আলফা ফ্যাটি অ্যাসিড চুলকে ভিতর থেকে নরম করে প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে এবং চুল ভেঙে যাওয়া, আগা ফেটে যাওয়া ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা করে।

তাছাড়া নিয়ম করে চুলে সরষের তেল মালিশ করলে এতে থাকা ভিটামিন ই, জিঙ্ক, সেলেনিয়ামের মতো খনিজ উপাদান চুলকে কম বয়সে পেকে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

ত্বক ও চুলে সরষের তেল লাগানো কি খারাপ?

তবে সরষের তেলের নানারকম উপকারিতা থাকলেও সবার ক্ষেত্রে কিন্তু তা নাও কাজে লাগতে পারে। কোনওরকম অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে সরষের তেল ত্বক বা চুলে হালকা চুলকানি, অ্যালার্জি বা র‍্যাশের কারণ হতে পারে। কারণ এতে থাকা অ্যালাইল আইসোথিয়োসায়ানেট, এরুসিক অ্যাসিড, ক্যাপসাইসিনের মতো উপাদান ত্বকের মধ্যে থাকা সূক্ষ্ম রোমকূপ, চুলের গোড়াকে বন্ধ করে দিতে পারে, ফলে নানারকম ইনফেকশন, ফোঁড়া, র‍্যাশ ইত্যাদি হতে পারে। ফলে আপনার ত্বক যদি সংবেদনশীল হয়, তাহলে সরষের তেল ব্যবহার না করাই ভাল। আর অত্যধিক পরিমাণে সরষের তেল মুখে মাখলে তা ধুলো-ময়লাকে টেনে আনে, ফলে মুখের রোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মুখে র‍্যাশ বেরয়।

অনেক ক্ষেত্রে সরষের তেল ব্যবহারে চোখ জ্বালাও করতে পারে। ফলে সরষের তেল ব্যবহারের আগে সবসময় আগে শরীরের অল্প কোনও স্থানে ব্যবহার করে দেখুন অ্যালার্জি বা চুলকানি হচ্ছে কিনা। না হলে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন।

তবে ইদানিং বেশ কিছু সমীক্ষা অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে ত্বকে নিয়ম করে সরষের তেল লাগালে তা ত্বকের রক্ষাকারী আবরণকে নষ্ট করে দেয়। ফলে সরষের তেল রোজ ব্যবহার করার বদলে সপ্তাহে দু’-তিনদিন ব্যবহার করতে পারেন।

শিশুদের ত্বক সাধারণত অতিরিক্ত নরম ও সংবেদনশীল হয়, ফলে তাদের ক্ষেত্রে এই তেল ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকুন।

চুলের ক্ষেত্রেও সরষের তেল প্রথমে পরীক্ষা করে ব্যবহার করাই ভাল। অতিরিক্ত সরষের তেলের ব্যবহার চুলের গোড়া বন্ধ করে দেয়। ফলে স্ক্যাল্পে নানারকম ইনফেকশন হতে পারে।

এছাড়া সরষের তেল অনেকসময় চুলকে আরও বেশি তেলতেলে করে দেয় যা বাইরের ধুলো-ময়লাকে আকর্ষণ করে। এইসমস্ত ধুলো-ময়লা চুলের গোড়ায় বসে চুলের ক্ষতি করে দেয়। বাইরে বেরনোর থাকলে তাই সরষের তেল ব্যবহার না করাই ভাল।

চুলের ক্ষেত্রেও প্রথমে এক চামচ মতো সরষের তেল নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। তাছাড়া চুলে তেল ব্যবহারের ৩০ মিনিটের মধ্যেই কিন্তু সেটি ভাল করে ধুয়ে ফেলা উচিত।

সুতরাং সরষের তেলের নানারকম উপকার থাকলেও এবং তা ত্বক ও চুলের ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল দিলেও বেশি সরষের তেল না ব্যবহার করাই উচিত। নিজের ত্বক ও চুলের সংবেদনশীলতা বুঝে তবেই সরষের তেলকে রূপচর্চার কাজে লাগান।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।