Home ইতিহাস ও জীবনী আমেরিকার যে দ্বীপে ৫০০ বছর আগে ইসলাম পৌঁছেছিল

আমেরিকার যে দ্বীপে ৫০০ বছর আগে ইসলাম পৌঁছেছিল

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপাঞ্চল পুয়ের্তো রিকোর অবস্থান ওয়েস্ট ইন্ডিজে।

ডোমিনিকা থেকে ৮০ কিলোমিটার পূর্বে, ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ থেকে ৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে ১৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ১০০টি ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত।

১৩ হাজার বর্গকিলোমিটারের ছোট অঞ্চলটিতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বসবাস। উত্তর-পূর্ব উপকূলের শহর সান জুয়ান দেশটির রাজধানী ও প্রধান নগরী।

সরকারি ভাষা স্প্যানিশ ও ইংরেজি। পর্যটনশিল্পে সমৃদ্ধ দেশটিতে ইসলামের ইতিহাস অন্তত পাঁচ শ বছরের পুরনো।

মুসলিম আগমন : স্পেন-পর্তুগাল ও আধুনিক বিশ্বের মধ্যকার ট্রান্স-আটলান্টিক ঔপনিবেশিক বিনিময়ের কারণে মুসলিমরা সর্বপ্রথম এই দ্বীপে আগমন করেন। স্প্যানিশ উপনিবেশের শত আইনি জটিলতা ও বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ১৬ শতকে অনেক নির্যাতিত মুসলমান এখানে পা রাখেন।

আরও পড়তে পারেন-

তাদের কেউ ব্যবসায়ী, কেউ পরিব্রাজক এবং কেউ দাস হিসেবে বসবাস শুরু করেন। এ ছাড়া একই শতকে পশ্চিম আফ্রিকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মুসলমানকেও দাস হিসেবে এখানে নিয়ে আসা হয়।

তবে উপনিবেশবাদী আইনকানুন ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার কারণে এখানকার মানুষ ক্যাথলিক খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মে দীক্ষিত হয় এবং ইসলাম ধর্ম দ্বীপে বিলুপ্তির মুখে পড়ে।

আত্মপরিচয় ফিরে পাওয়ার চেষ্টা : ১৮৯৮ সালে আমেরিকা স্পেনের কাছ থেকে পুয়ের্তো রিকো দখল করে নেয় এবং ক্রীতদাসদের কিছুটা স্বাধীনতা দেয়।

ফলে মুসলিম বংশোদ্ভূত এসব মানুষ আত্মপরিচয় ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেন এবং স্বাধীনভাবে সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে শুরু করেন।

এরই মধ্যে ১৯ শতকের শেষের দিকে এবং ২০ শতকে আরববিশ্ব থেকে অনেক মুসলিম এখানে বসতি স্থাপন করেন, যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ফিলিস্তিন থেকে বিতাড়িত নির্যাতিত আরব জনগোষ্ঠী।

এ ছাড়া রয়েছে জর্দান, লেবানন, মিসর, সিরিয়া ও পাকিস্তান থেকে আসা বহু অভিবাসী।

বাড়ছে ইসলাম গ্রহণ : ২০১০ সালের এক জরিপ মতে, পুয়ের্তো রিকোয় পাঁচ হাজার মুসলমান বসবাস করেন, যা দেশটির জনসংখ্যার ০.১ শতাংশ।

তবে সামপ্রতিক সময়ে অনেক পুয়ের্তো রিকান তাদের পূর্ব পুরুষদের ধর্ম ইসলামে ফিরে আসছেন। গবেষকরা বলছেন, এখানকার প্রতিটি মসজিদেই স্থানীয় মানুষের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বাড়ছে।

বর্তমানে ইসলাম ও মুসলমান : বর্তমানে পুয়ের্তো রিকোয় নয়টি মসজিদ ও ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র  রয়েছে। রিও পিয়েদ্রাস শহরে পুয়ের্তো রিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম মসজিদটি নির্মিত হয়।

১৯৯২ সালে দেশটির সর্ববৃহৎ ও সর্বাধুনিক প্রাসাদসম মসজিদটি নির্মিত হয়, দ্বীপের দীর্ঘতম হাইওয়ে থেকে যা পর্যটকদের নজর কাড়ে।

পর্যটনের জন্য বিখ্যাত পূর্ব উপকূলের ফাজার্দো শহরে ১৯৯৯ সালে নীল গম্বুজের একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যা শুধু রমজানেই চালু থাকে।

সপ্তাহান্তে মুসলিম শিশুদের আরবি ও ধর্মশিক্ষা দানে মসজিদের সঙ্গে রয়েছে আল-নুর স্কুল নামে একটি ইসলামী বিদ্যালয়। ইসলামে দীক্ষিত নওমুসলিমদেরও এখানে নিয়মিত ধর্মশিক্ষা দেওয়া হয়।

দেশটির বেশির ভাগ মুসলিম রাজধানী সান জুয়ানের কাগুয়াস শহরে বসবাস করে। পুয়ের্তো রিকোর ব্যবসা-বাণিজ্য ও সমাজব্যবস্থায় মুসলমানদের বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।

আরব ও মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে তাদের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। অনেক ধনাঢ্য মুসলিম এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।

আবার অনেকে সাময়িক সময়ের জন্য ব্যাবসায়িক ভ্রমণ করেন। মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন এবং অধ্যাপনার সঙ্গেও যুক্ত হয়েছেন।

তবে পুয়ের্তো রিকোসহ পুরো ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মূলধারার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ইসলাম ধর্ম এখনো খুব বেশি পরিচিত নয়।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক ব্যবহারের ফলে ধীরে ধীরে স্থানীয়দের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়ছে।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।